Jump to ratings and reviews
Rate this book

দেবযান

Rate this book

168 pages, Hardcover

First published January 1, 1944

54 people are currently reading
541 people want to read

About the author

Bibhutibhushan Bandyopadhyay

204 books1,090 followers
This author has secondary bangla profile-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.

Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.

The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
119 (30%)
4 stars
133 (33%)
3 stars
96 (24%)
2 stars
33 (8%)
1 star
13 (3%)
Displaying 1 - 30 of 50 reviews
Profile Image for Shadin Pranto.
1,471 reviews560 followers
October 2, 2019
অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস। ততধিক বিচিত্র এই উপন্যাসের কাহিনিবিন্যাস। বিভূতিভূষণ বাডুজ্জে একেবারেই নবরূপে আবির্ভূত হয়েছেন এই উপন্যাসে।

বামুনের ছেলে যতীন। উচ্চশিক্ষিত ছেলে হিসেবে গাঁয়ের লোকে বেশ সম্ভ্রমের চোখেই দেখতো। বৌ আশা আর দুই সন্তান নিয়ে সুখেই ছিল যতীন। সেইসব সুদিন এখন অতীত। যতীনের সবকিছু হারিয়ে গেছে। বৌ ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে গেছে। গ্রামের লোকের কাছে যতীন এখন কিছুটা করুণা আর অনেকটাই অনাদরের পাত্র। চরম দারিদ্র্যে জীবনপ্রদীপ নিভু নিভু করছে। এমনই পরিস্থিতিতে একপ্রকার না খেতে পেয়ে অসুখে ভুগে মারা গেল যতীন। যতীনের মৃত্যুর পর থেকেই 'দেবযান'-এর কাহিনি শুরু। মৃত্যুটি উপক্রমণিকা মাত্র।

মৃত যতীন নিজেকে এক ভিন্ন জগতে আবিষ্কার করল। সেখানে প্রথমেই দেখা হলো তার বাল্যসখি পুষ্পের সঙ্গে। কিন্তু পুষ্প তো অনেকবছর আগেই মারা গিয়েছে। সে এখানে কী করছে?

যতীন বুঝতে পারল সে স্বর্গে চলে এসেছে। পৃথিবীর দুনিয়া থেকে এই জগতের ভিন্নতা, প্রেমের মাহাত্ম্যে বিশ্বাসী এবং মনুষ্যত্বের জয়গান যারা গেয়েছে, সেইসব মহৎপ্রাণ যতীনদের স্বর্গে অত্যুচ্চ অবস্থানে আছে। দেব-দেবীরা আছেন। আছেন এমন এক মহত্তম সত্তা যার বর্ণনা ঔপন্যাসিক দেননি। কিন্তু বুঝিয়েছেন তিনিই সবকিছুর নিয়ন্তা। তাঁকে যে যেভাবে চায়, সেই রূপের তিনি হাজির হন। বৈষ্ণবের কাছে এই মহাপবিত্র অস্তিত্ব আসেন রাধা-কৃষাণের রূপে। শাক্তর কাছে তিনিই আবার কালী। তাঁরই অন্যরূপ দুর্গা। অর্থাৎ স্রষ্টার কোনো নির্দিষ্ট রূপের কথা বলেন নি বিভূতিভূষণ। এখানে তিনি যেন রামকৃষ্ণপরমহংসের 'যত মত, তত পথ' বাণীতে আস্থা রেখেছেন৷

হিন্দু পুরাণের সাথে বাস্তব জগৎ মিশিয়ে যে কথার যান বিভূতিভূষণ তৈয়ার করেছেন তাই 'দেবযান'।

এই উপন্যাসে একটা বার্তা বারবার দিতে চেয়েছেন ঔপন্যাসিক। তিনি পাঠকের উদ্দেশে নিবেদন করেছেন, সৎ পথের চলার আহ্বান। দেখেছেন, মানবপ্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে মঙ্গলময় পৃথিবীর গড়ার স্বপ্ন।
Profile Image for Rifat.
501 reviews327 followers
January 15, 2021
দেবযানের শুরুটা আর চারটা সাধারণ উপন্যাসের মতোই সাধারণ ছিল। আর এই সাধারণত্ব ছিল সূচনামাত্র!

দেবযান:এক অন্য বিভূতি কিংবা অনন্য বিভূতি!

বামুন পরিবারের ছেলে যতীন। বিদ্যার্জন করায় ক'দিন গাঁয়ের লোকের সুনজরে থাকলেও এই গৌরবময় সময় বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অর্জিত জ্ঞান যতীনের দীনতা ঘুচাতে পারে নি। যার ফলে যতীনের স্ত্রী আশালতা সন্তানাদি নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। অবশেষে না খেতে পেয়ে অসুখে ভুগে মারা যায় যতীন। আর এখান থেকেই বিভূতি বাবুর অনন্যতা এবং এই উপন্যাসের মূল কাহিনীর শুরু।

মারা যাওয়ার পর যতীন হঠাৎ করেই ঘরে তার শৈশবকালের প্রিয় সখী পুষ্পকে দেখতে পায় অথচ পুষ্প মারা গিয়েছে সে কত বছর হল! ক্ষণকাল পরেই পুষ্পের সহায়তায় ভাল করে বুঝতে পারে- সে মারা গিয়েছে এবং স্বর্গে আছে। ধীরে ধীরে যতীন সব কিছু বুঝতে শুরু করে পুষ্পের সহায়তায়। ওরা আছে তৃতীয় স্তরে। পুষ্পের স্থান যদিও আরও উপরে কিন্তু যতীনের জন্য সে তৃতীয় স্তরেই আছে। মোট সাতটি স্তর; সর্বনিম্ন স্তরের নাম প্রেতলোক যাকে পৃথিবীর ভাষায় নরক বলা হয়। বাদ বাকি অতি উচ্চ স্তরে দেবতাদের আনাগোনা। আর আছেন এক মহাশক্তি- যিনিই সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা। বিভূতি বাবু বিভিন্ন জটিল বিষয়কে দেবযানে তুলে এনেছেন- স্রষ্টা, পুনর্জন্ম, দেহাতীত প্রেমের স্বরূপ, জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কিংবা ভক্তির দ্বারা আত্নার পরিশুদ্ধি। তাছাড়া বিভূতি বাবু From the core of human eye to infinity অর্থাৎ এই বিশ্বের সৃষ্টি, জীব, ভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র, বিভিন্ন ছায়াপথ, প্যারালাল ইউনিভার্সের বিভিন্ন বর্ণনা করেছেন



আমি বিভূতি বাবুর চিন্তা-ভাবনা দেখে সত্যিকার অর্থেই অবাক হয়েছি। দেবযান প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে, লেখা হয়েছে তারও আগে। তখনকার সময়ে এস্ট্রোফিজিক্সের মতো টপিক নিয়ে কথাবার্তা বলে গেছেন!!
বলতে গেলে পানির তেমন কোনো স্বাদ নেই। আমার কাছে অন্তত ভাল লাগে না। তারপরও পানি পান করতে হয়। সাধারণ বইকে যদি পানির সাথে তুলনা করা যায়, তবে পাঠক হিসেবে আপনার এই বই ভাল লাগুক আর নাই লাগুক তবুও পড়তেই পারেন! পড়ার পর এই বইকে আপনি কত তারা দেবেন সেটা কোনো বিষয় না। এই বই যে ভাল লাগবেই তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আলোচনার টপিকই অদ্ভুত।

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় লাগলো কেমন?
আমি বলবো, তেমন ভালোও লাগে নি আবার এক তারা দেয়ার মতো বিরক্তিও হই নি কিংবা মন্দও লাগে নি।

~১৫ জানুয়ারি, ২০২১
Profile Image for হামিম কামাল.
79 reviews29 followers
March 2, 2025
সনাতনী বহুত্ববাদী দর্শন ও কল্পনামূল্যের দিক থেকে এ উপন্যাস আমার কাছে পাঁচ তারকারও ঊর্ধ্বে।
Profile Image for Dev D..
171 reviews26 followers
January 9, 2019
বিভূতি ভূষণ এই লেখা অনেক আগেই লিখতে চেয়েছিলেন দেবতার ব্যাথা নাম দিয়ে। বিভিন্ন কারণে লেখার সময়টা পিছিয়ে যায়, দেবযান নামে ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয় এই বই। ততদিনে বিভূতি ভূষণ লেখক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। তবে এই বইটি তিনি যতোটা পরিশ্রম করে বা যতোটা সময় নিয়ে লিখেছিলেন, সেই অনুপাতে পাঠকপ্রিয় হয় নি, বরং অনেকেই এই বই পড়ে হতাশ হয়েছেন, সমালোচনা করেছেন। আসলে উপন্যাসের বিষয়বস্তুটাই এমন যা সবাই সমানভাবে গ্রহণ করতে পারবে না। মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে এই উপন্যাস। প্রথমত মৃত্যু পরবর্তী জীবন আছে কি নেই সেটাই নিশ্চিত নয়, এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের বিশ্বাসও আলাদা। হিন্দু ধর্মেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ, বিভিন্ন মতের মানুষ বিভিন্ন আঙ্গিকে এর ব্যাখ্যা করেছেন। বিভূতি ভূষণ ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন, ধর্ম বিশ্বাসীও ছিলেন। মূলত উপনিষদের তত্ত্ব বিচার করেই বোধহয় তিনি এই উপন্যাস সাজিয়েছিলেন। ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মায়া, সব কিছু আসলে একক সত্ত্বারই অংশ, তিনি নিজেই নিজেকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে নিজেকে ভোলান এরকম একটা ধারণাই এই উপন্যাসে দেয়া আছে। উপনিষদকেও অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, কেউ দ্বৈতবাদী, কেউ অদ্বৈতবাদী কেউ দ্বৈতাদ্বৈতবাদী বা বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী। দেবযান মূলত অদ্বৈতবাদী মতবাদকে উপজীব্য করে লেখা। তবে তিনি এই উপন্যাসে হিন্দু ধর্মের অন্য বিশ্বাসকেও সমন্বয় করতে চেয়েছেন, বৈষ্ণব ধ্যান ধারণাকেও তিনি এই উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন। ঈশ্বরকে দেখিয়েছেন এক ধারণাতীত সত্ত্বা হিসেবে যার উপলব্ধি হওয়াটা অনেক সাধনা, অনেক স্তর পেরোনোর পর হওয়া সম্ভব। দেহাতীত প্রেম, পুর্নজন্ম যেমন এই উপন্যাসে আছে তেমনি আছে ভিন্নগ্রহে সভ্যতা, বিশ্বের সৃষ্টি, ধ্বংস, আবার সৃষ্টি, অগুণিত বিশ্বব্রহ্মান্ড বা প্যারালাল ইউনিভার্স এর মতো অধুনা চর্চিত বিষয়গুলো। প্রেমকে এখানে তিনি দেখিয়েছেন শ্বাশত, দেহাতীত বিষয় হিসেবে, জন্মে জন্মেও যা ফুরোয় না। যতীন এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলেও নায়ক মোটেও নয়। তার আত্মজ্ঞান লাভে এখনও অনেক বাকী, কর্মফল অনেক রয়ে গেছে, পুষ্প বরং অনেক উন্নত আত্মা তবে তার সেই উন্নতির পেছনে রয়েছে প্রেম বা ভক্তি, জ্ঞান নয়। বিভূতি আত্মাকেও নারী পুরুষ এই দুই ভাগে দেখিয়েছেন, দেখিয়েছেন এই দুই ধরনের আত্মার আত্মোউন্নয়ন এর পথও আলাদা। এই জায়গায় অবশ্য তিনি তার ব্যক্তিগত ধারণা প্রয়োগ করেছেন কি না জানিনা , তবে আত্মায় আত্মায় এমন বিভেদ কি ধর্মীয় ধারণাপ্রসুত? আমারও ঠিক জানা নেই, তিনি সম্ভবত বিভিন্ন মতের একটিকে গ্রহণ করেছেন। আশালতার প্রতি যতীনের যতোটা টান দেখানো হয়েছে, মৃত্যুর পর সন্তানদের প্রতি সেরকম কোন ভালাবাসা না দেখানোটাও একটু অদ্ভুত লেগেছে। ভালো লেগেছে পথিক দেবতার চরিত্রটি। সবমিলিয়ে অন্য ধরণের একটি উপন্যাস। প্রথমবার পড়ে আমার এতোটুকুও ভালো লাগেনি, পুরোটা পড়তেই পারিনি। দ্বিতীয়বার পড়ার পর কিন্তু ভালোই লাগলো। মৃত্যুর পর কিছু আছে কি না জানি না, থাকলেও তা এমন সুন্দর সম্ভাবনাময় কিছু কিনা জানি না, এই বই পড়ে যে এসবে আমার বিশ্বাস চলে আসবে তাও না, তবে বিভিন্ন মতের সমন্বয় করে সেই গত শতকের চল্লিশের দশকে লেখা উপন্যাসটি একদিকে যেমন প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপজীব্য করে লেখা, সেই সাথে আধুনিক অনেক মতের কথাও মিলিয়ে দিয়েছেন বিভূতি ভূষণ দেবযানে।
Profile Image for Shoroli Shilon.
167 reviews72 followers
June 18, 2025
বেশ কয়েকদিন যাবত নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘলা আকাশ ভাল লাগলেও সবসময় একধরনের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থাকে তাই বর্ষাকাল মোটেও পছন্দের ঋতু নয়। তবে মেঘ ডাকলে, আকাশ অন্ধকার হয়ে গেলে বাতাসে যে ঘ্রাণ সৃষ্টি হয়—তাতে মনে হয় একটা কাপ চা হাতে একটা ভয়ের গল্প পড়ার জন্য হলেও বর্ষাকাল মন্দ নয়।

ভয়ের গল্প পড়ব বলে হাতে নিলাম ‘দেবযান’। অল্প পাতার বই নয়। শুরুটা খুব সুন্দর। পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বয়সী ব্রাহ্মণ এক যুবকের গল্প। দাম্পত্য কলহের জোরে স্ত্রী—ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। বাপ-মা হীন যতীন ভীষণ একা। তার উপর দারিদ্রের ঘোর কষ্ট। হঠাৎ একদিন জ্বরের ঘোরে যতীনের প্রাণনাশ হয়। নিজেকে খুঁজে পায় স্বর্গের কোন এক স্তরে গিয়ে। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় তার কিশোর বয়সের প্রেমিকা ‘পুষ্প’ এর সঙ্গে। তবুও স্ত্রী আশালতার ঘোর যেন কিছুতেই কাটে না। স্বর্গে গিয়েও বার বার পৃথিবীর প্রতি, আশালতার প্রতি মোহ তাকে পুনর্জন্মের শাস্তি দেয়।

স্বর্গে যাওয়ার পরে এভাবে যতীনের সাক্ষাৎ হয় বিভিন্ন দেব-দেবীর সঙ্গে। তাদের মাধ্যমে একটাই বার্তা দিতে চেয়েছেন বিভূতিভূষণ। হিন্দু পুরাণের বড় সড় প্রভাব রয়েছে পুরো বই জুড়ে।

ব্যাতিক্রম গল্পকাহিনী। শুরুটা দারুণ। তবে ব্যাক্তিগতভাবে মনে হয়েছে বইটা আরেকটু কম দীর্ঘ হলে বোধহয় ভালো হত! একই অর্থের পুনরাবৃত্তি হলে পড়তে গেলেও ভীষণ অবসাদ চলে আসে। (বিশেষ করে স্বর্গে যাওয়ার পরের কিছু অংশ) তখন ভালো লেখাও অনেকসময় বিরক্তির কারণ হয়।

সবমিলিয়ে ‘দেবযান’ আমার-আপনার বোধগম্যের বাইরে। ভয়ের গল্প ভেবেছিলাম বলে খানিকটা আশাহত হলাম।
Profile Image for Omar Faruk.
263 reviews16 followers
March 31, 2023
একদম ভালো লাগেনি। হয়তো এটা একটা সুন্দর ছোটগল্প হতে পারতো। কিন্তু, উপন্যাস বানাতে গিয়ে একই ব্যাপার ভিন্নভাবে বার বার বলাটা কেমন যেন বিরক্তিকর লেগেছে।
Profile Image for Dhiman.
177 reviews14 followers
January 21, 2025
ম্যাজিকাল! বইয়ের মাধ্যমে ঈশ্বর দর্শন করলাম।
Profile Image for Joynab Rimu.
75 reviews115 followers
March 21, 2017
বিভূতিভূষণের অন্য সব লেখা থেকে বেশ আলাদা,পড়তে গিয়ে কঠিনই লেগেছিল বেশ কিছু জায়গায়!
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,833 reviews360 followers
July 11, 2025
মৃত্যুর পর কী হয়—এই চিরন্তন প্রশ্নটি বহু শতাব্দী ধরে মানুষের চেতনাকে নাড়া দিয়েছে, ধর্মগ্রন্থ থেকে দর্শন, কবিতা থেকে বিজ্ঞানের জল্পনা—সব জায়গায় এর ছায়া পড়েছে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেবযান উপন্যাসে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার যে আধ্যাত্মিক ও কল্পবিজ্ঞানের সংমিশ্রণে নির্মিত প্রতিকৃতি, তা একেবারে অনন্য। এখানে মৃত্যু কোনও সমাপ্তি নয়, বরং এক মহাযাত্রার সূচনা। যতীন নামক এক নিঃসঙ্গ, ক্লান্ত, অপত্যবিচ্ছিন্ন ব্রাহ্মণ পুরুষ যখন গ্রামবাংলার এক কোণায় জ্বরে কাতর হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তখন পাঠক প্রথম বুঝতে পারে—এই উপন্যাস জীবনের চেনা ছকে বাঁধা নয়। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যতীনের চোখে ধরা পড়ে তার প্রাচীন বান্ধবী পুষ্পা, যিনি বহু বছর আগে দেহত্যাগ করেছেন। পুষ্পা কেবল তার বন্ধুত্বের স্মৃতি নিয়ে আসেনি, বরং এসেছে আত্মার পথপ্রদর্শক হয়ে, দেবযানের রথচালক হয়ে। এখান থেকেই শুরু হয় আত্মার ভ্রমণ—যা অতিক্রম করে স্বর্গ, তপস্যার ভূমি, মোহের নিচু স্তর, এবং সেইসব গূঢ় ক্ষেত্র যেগুলো শুধু চিন্তার শক্তিতে গঠিত।

উপন্যাসে বিভূতিভূষণ আত্মার বিভিন্ন স্তরের রূপায়ণ করেছেন—যেখানে আত্মা তার নিজস্ব চিন্তাশক্তি দিয়ে পরিবেশ সৃষ্টি করে, একটি গোলক তৈরি করে, যেখানে সময় তার নিজের নিয়মে চলে, এবং বাস্তবতা কোনও কঠিন নিয়মের দ্বারা নয়, বরং চেতনার স্তরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পুষ্পা, যিনি তৃতীয় স্তরের আত্মা, সেখানে গঙ্গার ঘাট, শিবতলার ছায়া, শৈশবের স্মৃতিপথ পুনর্গঠন করে যতীনকে এক ধীরে-ধীরে প্রাক্‌মুক্তির প্রান্তে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু যতীনের আত্মা পড়ে থাকে আশার টানে—তার স্ত্রী, যে জীবদ্দশায় তার প্রতি উদাসীন ছিল, এমনকি অবিশ্বস্তও ছিল, তবু মৃত্যুর পরও যতীনের প্রেম আর আকর্ষণ কাটে না। পুষ্পা বারবার তাকে বোঝায়—এই মায়া কাটানোই মুক্তির প্রথম শর্ত। কিন্তু যতীন আবার পৃথিবীতে ফিরে যায়, আশার বর্তমান অবস্থা দেখতে, তার প্রতি মোহ কাটাতে না পারায় তাকে আবার পুনর্জন্ম নিতে হয়। এই পুনর্জন্ম, এই মায়ার বলয়—এটাই দেবযান-এর কেন্দ্রীয় ট্র্যাজেডি, আবার এটাই আত্মার সত্য অনুসন্ধানের সূচনাবিন্দুও।

এখানে গীতা ও উপনিষদের দর্শন বারবার এসে মিশে যায় কাহিনির বুনোটে। যেমন গীতার অষ্টম অধ্যায়ে (শ্লোক ২৬–২৭) বলা হয়েছে—“শুক্লকৃষ্ণে গতি হ্যেতে জগतः শাশ্বতে মতে। একয়া যান্ন অনাবৃত্তিম, অন্যয়া য়াতি আবৃত্তিম।" অর্থাৎ আত্মার দুটি পথ—একটি দেবযান বা শুভ্র গতি, যা মুক্তির দিকে নিয়ে যায়; অন্যটি কৃষ্ণ গতি, যা আত্মাকে পুনর্জন্মের আবর্তে ফিরিয়ে আনে। যতীনের ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট—পুষ্পার হাত ধরে সে মুক্তির পথে চলতে চাইলেও আশার প্রতি তার টান তাকে বারবার মাটির দিকে ফিরিয়ে আনে।

পুষ্পা এই উপন্যাসের আত্মিক আলো, তার চরিত্র যেন গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে বর্ণিত ভক্তের মূর্ত প্রতীক—নির্মোহ, অসংগতিতে অনাসক্ত, প্রেমের অর্ঘ্যে আত্মস্থ। পুষ্পার কোনও ব্যক্তিগত চাওয়া নেই; তার প্রেম বিশুদ্ধ, ঈশ্বরীয়, মুক্তিকামী। সে চায় যতীনের পরিত্রাণ, তার মায়ার আবরণ ছিঁড়ে মুক্তির দিকটা দেখাতে। কিন্তু সে জানে, এই মোহ—এমন এক জড় শক্তি, যা প্রেমের মতই গভীর, এবং একে কাটিয়ে ওঠা সহজ নয��। তাই সে পাশে থাকে, পথ দেখায়, কিন্তু বাধ্য করে না। এই অসীম সহনশীলতা, এই শান্ত প্রজ্ঞা—পুষ্পাকে বাংলা সাহিত্যের এক অতুলনীয় নারী চরিত্রে উন্নীত করে।

বিভূতিভূষণ তাঁর চিরাচরিত মাধুর্যময় ভাষা দিয়ে কল্পনার এমন সব চিত্র নির্মাণ করেছেন যা আধুনিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনির গঠনকেও হার মানায়। স্বর্গের স্তরভাগ, যেখানে কিছু আত্মা শুধুই ধ্যানে নিমগ্ন, কিছু আত্মা গ্রহ-নক্ষত্র অতিক্রম করে ভিন্ন জগতে বিচরণ করে, কেউ কেউ তপস্যায় অনন্ত শক্তি অর্জন করে চিন্তাবলে বস্তু সৃষ্টি করে—এসব যেন কোনো আধিভৌতিক ব্ল্যাক হোল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা কোয়ান্টাম রিয়ালিটির ব্যাখ্যার সাহিত্যিক প্রতিচ্ছবি। যতীন সেখানে এক-একবার এক-এক মহাপুরুষের দর্শন লাভ করে—কারও সাথে কথা হয় ভাষার বাইরে, চিন্তার তরঙ্গের মাধ্যমে। এ যেন এক মহাজাগতিক টেলিপ্যাথির জগৎ।

উপন্যাসে আছে দেবী করুণা—তিনি ঈশ্বরতুল্য এক সত্তা, যিনি মহাসাধকদের পাশে দাঁড়ান, পথহারা আত্মাকে উদ্ধার করেন। যতীন ও পুষ্পা তাঁকে দেখা করেন। তাঁরা সাক্ষাৎ করেন এক গোঁড়া বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর সঙ্গে, যিনি রঘুনাথ দাস গোস্বামীর স্মৃতিতে ভক্তিভাবে মগ্ন। দেখা হয় এক অদ্বৈতবাদী তপস্বীর সঙ্গেও, যিনি নির্বিকল্প সমাধিতে বসে চেতনার সব স্তর অতিক্রম করেছেন। এই বৈচিত্র্যের ভেতর দিয়ে বিভূতিভূষণ যেন হিন্দু ধর্মতত্ত্বের বৃহত্তর বিতর্ক—অদ্বৈত বনাম দ্বৈত, কর্ম বনাম ভক্তি, মুক্তি বনাম প্রেম—সব কিছু ছুঁয়ে যান এক শাস্ত্রীয় সংযমে।

এই উপন্যাসে জীবন যেন একটা বৃহৎ পরীক্ষাগার—যেখানে আত্মা নিজের বিকাশের মাধ্যমে ঈশ্বরতুল্য এক সার্বিক সত্তায় পরিণত হয়। আর এই আত্মার পথ চলার মাঝে প্রেমই তার সবচেয়ে বড় অনুঘটক। পুষ্পা ও যতীনের সম্পর্ক সেই দৃষ্টান্ত—যেখানে পার্থিব প্রেম নয়, বরং আত্মিক ভালবাসা মুক্তির পথের সঙ্গে মিশে যায়। তবু, এই প্রেম মোহমুক্ত না হলে সেটাই হয়ে ওঠে বন্ধন।

দেবযান শুধুমাত্র এক আধ্যাত্মিক ফ্যান্টাসি নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক দর্শনের কাহিনিমূলক পাঠ্যপুস্তক। বিভূতিভূষণ যেন এখানে শ্রীমদ্ভাগবতগীতা, উপনিষদ, পুরাণ, প্রেম ও তপস্যার দর্শনকে একটি সাহিত্যিক মহাযজ্ঞের মধ্যে জুড়ে দেন। তাঁর ভাষা মাধুর্যপূর্ণ, অলংকৃত, অথচ হৃদয়গ্রাহী। প্রতিটি স্তবক যেন কোনো তপস্বীর ধ্যানের অনুরণন।

এই উপন্যাস পড়ে শেষ করার পর মনে হয়—জীবন বড় নয়, চেতনা বড়। মৃত্যু শেষ নয়, আত্মার যাত্রা। প্রেম শুধু বন্ধন নয়, মুক্তির রূপও হতে পারে। এবং সাহিত্যের কাজ শুধু আনন্দ দেওয়া নয়, পাঠককে এমন প্রশ্নে ফেলে দেওয়া, যার উত্তর সে হয়তো সারাজীবন খুঁজবে।

দেবযান সেই বিরল ক’টি উপন্যাসের একটি, যা সময়ের ধারায় পুরোনো হয় না, বরং প্রতিটি পাঠে নতুন করে পাঠককে দার্শনিক করে তোলে। এটি সেই বই যার শেষ পৃষ্ঠার পরও গল্প শেষ হয় না—কারণ পাঠকের ভিতরে তখনও আত্মা ঘোরে, প্রশ্ন করে, ভালবাসে, আর মুক্তির পথ খুঁজে ফেরে।

এই উপন্যাস পড়ে আমি বলতেই পারি—অপুর রচয়িতা ছিলেন বিভূতিভূষণ। কিন্তু যতীনের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন আমাদের আত্মার রচয়িতা। আর পুষ্প? সে চিরকাল রয়ে গেল এক ধ্যানী আত্মার আকারে—যে ভালবাসতে শিখিয়েছিল, ত্যাগ করতে বলেছিল, আর কখনোই তার নিজের ভালবাসা চাইনি।

“তোমার প্রেমে আমার মুক্তি হবে”—এ যেন পুষ্পার নীরব মন্ত্র। আর সেটাই তো প্রেমের চূড়ান্ত রূপ।
Profile Image for Farhanatul .
24 reviews11 followers
June 20, 2020
পড়তে গিয়ে কয়েক জায়গায় কঠিন লাগলেও তিনি লিখেছেন অসাধারণ।
Pure classic......
Profile Image for Titas.
Author 4 books34 followers
February 21, 2017
মৃত্যুর পর কি? একথা ভেবেছে অনেকে কিন্তু এমন লেখা আর কৈ| জন্ম - জীবন - মৃত্যু - পুনর্জন্ম - ইহকাল - পরকাল - মায়া - ভগবান - পাপ - পুন্য - কোনো কিছু ই এ বই তে বাকি নেই. আদৌ কি বেছে বলা যায় যে ঠিক কোন টা আসল? ইহকাল থেকে পরকাল, আবার পরকাল থেকে ইহকাল - এই আবর্ত চিরকালের| তাহলে কি করে বলি কোনটা ইহ আর কোনটা পর​?

এ রকম লেখা যে আর কটা আছে তাতে খুব সন্দেহ. গল্পের বেশ কিছু যায়্গা অপ্র​য়োজনীয় লাগলেও সব কিছু কি আর নিজেও বুঝেছি| এটা এক অন্য জগ​ৎ এর বই| না এরকম কখনো প​ড়েছি আর মনেও হয় না যে প​ড়ব| সব কিছু কে ওলট পালট করে নতুন করে ভাবার মত বই|
Profile Image for Sneha Dey.
149 reviews3 followers
May 3, 2023
এক্ই জিনিস বার বার repeat করা। Same exact জিনিস বার বার!
Profile Image for Jannatul Firdous.
89 reviews178 followers
November 15, 2021
চমৎকার একটা ফ্যান্টাসি জনরার গল্প। হলফ করে বলতে পারি বিভূতি ছাড়া এরকম জটিল একটা বিষয় এমন সাবলীলভাবে আর কেউ লিখতে পারতো না।
Profile Image for Debashish Chakrabarty.
108 reviews94 followers
July 24, 2020
মৃত্যু পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এমন সুবিস্তারিত উপন্যাসের নজির বাংলা ভাষায় বিরল । হয়তো দ্বিতীয় কোন নজির নেই । তবু বিভূতিভূষণের এই উপন্যাস হয়তো সবচেয়ে কম পঠিত এবং তার চেয়েও কম আলোচিত । বোধ করি তার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে । উপন্যাসের কাহিনীর পাটাতন গড়ে উঠেছে উপনিষদের মতো সনাতন ধর্মের কিছু পুরাণের উপর ভিত্তি করে । মোট কথা, সমগ্র উপন্যাসের গা জুড়ে পরিষ্কার সনাতনী আভা লেগে আছে । আর ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে অগ্রাহ্য বা সার্বজনীন ভাবা অথবা চাপিয়ে দেয়ার মানেও হয় না । তাছাড়া, দ্বিতীয় একটা কারণ হতে পারে প্রবল সংস্কৃত বাংলার চাপ । এটা হয়তো প্রথম কারণেরই সম্প্রসারণ । গত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে যে উপন্যাসটি দুর্ভেদ্য-অনাধুনিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত-আলোচিত তার পেছনে এসব কারণ কাজ করে থাকতে পারে ।

ঘোরতর উপনিবেশিত বাংলা অঞ্চলের মানুষ – তা সে পশ্চিম বা পূর্ব বাংলাই হোক অথবা হিন্দুই হোক বা মুসলমানই হোক । এনলাইটেনমেন্ট থেকে শুরু করে পশ্চিমা আধুনিকতার যে প্রবল জোয়ার তা লিবারেলিজম এবং নিওলিবারেলিজমের হাত ধরে এখন পর্যন্ত জারি আছে । এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা জ্ঞানে দীক্ষিত এবং যুক্তি দ্বারা পরিচালিত কোন বঙ্গসন্তানের পক্ষে এই উপন্যাসের কাহিনী পরম্পরাকে হজম করা খুব কঠিন হবে । মুখ্যত তারা কোন ঘটনা-বিষয় যে ঠিক না বেঠিক তা বিবেচনার জন্যও কখনোই পশ্চিমা জ্ঞান কাঠামোর বাইরে যান না-যাবেন না । এই সিদ্ধান্তগ্রহণের পেছনে স্থানিক কোন চিন্তা-দর্শন-ইতিহাস কাজ করে না । যদিওবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কিছু ধর্মীয় নীতি কাজ করে থাকে তারপরেও তা একান্ত নিজস্ব ধর্মীয় পরিসরে এবং ভিন্ন ধর্ম মতকে অগ্রাহ্য করেই । সুতরাং দেখা যাছে যে এই উপন্যাসটিকে কাজে লাগানো বা ভোগ করার বিপরীতে বেশ কিছু চিন্তাপ্রবাহজনিত প্রতিবন্ধতা হাজির আছে । তারপরও এটা উপন্যাস এবং কেউ কেউ বিভূতিভূষণের নাম দেখে হাতে তুলে পড়া শুরু দিতে পারেন । তাদের মধ্যে সনাতন ধর্মীয় চিন্তায় আগে থেকে নিবিষ্টরা খুব সঙ্গত কারণেই আপ্লুত হয়ে যেতে পারেন । তাই বলে কি সনাতনী সীমানার বাইরের কেউ এই উপন্যাসকে উপভোগ বা নিজের জীবনে কাজ লাগাতে পারবেন না? কোন বিশেষ উপলব্ধিতে পৌঁছাবেন না?

আগেই বলেছি এর বিরুদ্ধে কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনা কাজ করছে আর সামস্টিক অর্থে আমাদের সাহিত্য পাঠের গলদ কাজ করছে । হতে পারে এর কাহিনীর পাটাতন বিজাতীয় এবং প্রাচীন কেতাবাদি সম্বন্ধীয় জ্ঞান ঘেঁষা । যদি ধরেই নেই সব কল্পনা তাতেই বা ক্ষতি কি! কল্পনা ধরে নিয়েই, এই সুবিস্তৃত কল্পনালোকে মৃত বা হয়তো জীবনের প্রাকৃতিক যে ইতিহাস-ছবি বিভূতি এঁকেছেন তা যেকোনো বাংলা ভাষাভাষী পাঠক বেড়িয়ে ���সতে পারেন, চিন্তিত হতে পারেন । ভাবনার খোরাকের অভাব হবে না ।
Profile Image for   Shrabani Paul.
395 reviews23 followers
March 11, 2025
বইটি যে সময় কিনেছিলাম নিছকই উপন্যাস ভেবে কিনে ছিলাম। পড়া শুরু করার পর একটু এগোতেই দেখি এ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী উপন্যাস, অজানা জগতের গল্প.... আকর্ষণীয় অতি তীব্র পৃথিবীর জীবনের পর মানুষ যেখানে যায়, তা হলো পৃথিবীর ঊর্ধ্বের স্তর....
উপন্যাসটি মৃত্যু ও জীবন উপলব্দি নিয়ে রচিত!
এই ধরনের উপন্যাস আগে কখনো পড়িনি। লেখক স্বর্গ, মর্ত্য ও নরক নিয়ে লিখেছেন এই উপন্যাস! উপন্যাসে 'ব্রহ্মাচক্র'-এর অনেক কথা জানা যায়। যা সত্যিই অকল্পনীয়......
মৃত্যু-পরবর্তী জীবন নিয়ে লেখা অসামান্য একটি উপন্যাস।

উপন্যাসে মূখ্য চরিত্রে রয়েছে যতীন নামে একজন ব্যক্তি। তাকে ঘিরেই এই উপন্যাসের সৃষ্টি, শুরুতেই দেখতে পাই যতীন মারা যায়। স্ত্রী আশা রাগ করে বাপের বাড়ী চলে গেছে দীর্ঘ ৫ বছর হলো......
আশাকে ভীষণই ভালোবাসতো যতীন। সেই শোকে যতীন পরলোকগমন করে!
যতিন কিছুতেই পৃথিবীর মায়া কাটাতে পারে না। সে বার বার ফিরে আসতে চায় পৃথিবীতে শুধুমাত্র আশাকে দেখার জন্য......
উচ্চস্তরের আত্মারা যতিন কে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় না!
যতিন কি তবে সত্যিই স্বর্গ ছেড়ে আবারো ফিরে আসবে কষ্টের পৃথিবীতে? নাকি যতিন এর জন্য নতুন মোড় অপেক্ষা করছে?
জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাসটি পড়তে হবে!

উপন্যাসের নাম ~ #দেবযান
লেখক ~ #বিভূতিভূষণ_বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশক ~ #মিত্র_ও_ঘোষ_পাবলিশার্স
মুদ্রিত মূল্য ~ ৩০০/-
Profile Image for Peal R.  Partha.
211 reviews13 followers
April 29, 2025
সৌভাগ্যবানদের কাতারে বিভূতিবাবুকে রাখা গেলেও, রাখা যাবে না তাঁর এক অসমান্য স্পিরিচুয়াল ফিলোসফিক্যাল সৃষ্টি ‘দেবযান’-কে!?

প্রত্যক চিন্তক ও ভাবুক লেখক তাঁর জীবদ্দশায় এমন কিছু সৃষ্টি করেন, যা কেবল উপলব্ধির বিচারে হয়ে থাকে তাঁর একান্ত নিজের। তবুও কেন সেগুলো তাঁরা প্রকাশ করেন এর উত্তর খুঁজতে গেলে জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়, উপলব্ধি করতে হয়। কিন্তু যে উপলব্ধি শত বলে-কয়ে তারপর বোঝানো লাগে, জাদুর মতো কাজ করে না—সেই উপলব্ধির কোনো মূল্য নেই। ‘দেবযান’ বিভূতিবাবুর সেই সৃষ্টি—যা তাঁর অন্যান্য কালজয়ী শক্তিশালী সৃষ্টি থেকে অভিন্ন এবং পরিণামদর্শী। আমি যদি ব্যাসিক ‘গুডরিডস’ সমীকরণ টেনে এনে বলি তাহলে দেখা যায় তাঁর চাঁদের পাহাড়, পথের পাঁচালী, আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, অপারিজত সাহিত্যগুলো যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই অনুযায়ী ‘দেবযান’ পিছনে পড়ে আছে ভীষণ। হোক সেটা রেটিং বিচারে অথবা জনপ্রিয়তার তুমুল আচারে।

তবে বিভূতিবাবু চাইলে কি পারতেন না তাঁর ‘দেবযান’-কে ষষ্ঠ প্রকাশিত উপন্যাস না করে প্রথম বা দ্বিতীয় হিসেবে প্রকাশিত করতে? কেন তা করেননি সেই বিবেচনা বা বিশ্লেষণে এলে একটা কথা বারবার মগজে ঘাঁই মারে, তা হলো—তিনি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করছেন বইকি। ‘দেবযান’ সম্ভবত লেখা হয়েছিল বহু আগে। ‘দেবতার ব্যথা’ নাম দিয়ে সেটা একবার প্রকাশের তোড়জোড়ও বোধ হয় উঠেছিল। কিন্তু ষষ্ঠ প্রকাশিত উপন্যাস হওয়ার পরেও ‘দেবযান’ যে জনপ্রিয়তা, পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার কথা ছিল সেটা কি পেয়েছিল? —প্রকাশের ৮১ বছর পরও আমার সোজা-সাপটা উত্তর হলো ‘না।’ এখন অবধি না। ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত যে সাহিত্য নিয়ে তুমুল চর্চা হওয়ার কথা ছিল, প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বা কোনো সাহিত্য আড্ডায় বারবার জীবন্ত হওয়ার কথা ছিল—তা কভু হয়েছে কি-না জানা নেই। এখনও বিভূতিবাবুর লেখাজোখা নিয়ে কথাবার্তা উঠলে বেশিরভাগ অন্যান্য উপন্যাস নিয়ে যেমন কথাবার্তা হয়, ‘দেবযান’ নিয়ে সেটা হতে দেখা যায় না। কেন?

কী ছিল ‘দেবযান’-এ? আর ‘দেবযান’-ই বা কেন রচনা করতে হলো বিভূতিবাবুকে?

‘দেবযান’ পুরোপুরি একটি ফিলোসফিক্যাল জার্নি। আপনি এটাকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, মেটাফিজিক্স, অদ্বৈত মতবাদ, ফোর্থ ওয়াল ব্রেকিং কনসেপ্ট, আফটার লাইফ থিউরি, কসমিক ফ্যান্টাসি, স্ট্রং স্পেকুলিটিভ ফিকশন, সুপারন্যাচারাল ভিশন-সহ নানান জঁরা বা টার্মে কনভার্ট করতেই পারেন। এবং সবই সত্য। লেখক বহু তত্ত্ব-উপাত্ত-তথ্যের সংমিশ্রণে এমন কিছু সৃষ্টি করেছেন, যা জীবনকেই প্রতিফলিত করে সবচেয়ে বেশি। এই উপন্যাসটি লেখকের যে স্বাভাবিক সরলতার ছন্দে শুরু হয়েছিল তার শেষটা কিন্তু অতটাও সরল ছিল না। বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, আপনি কেন, খোদ কোনো বাঙালি বিজ্ঞ সম্পাদকও পর্যন্ত থরথর করে কেঁপে উঠবে যখন সে শুনবে এ উপন্যাসের শেষ দুই চ্যাপ্টারে ঠিক কত হাজার শব্দ করে রেখেছেন লেখক।

মোট ১৭টি অধ্যায় নিয়ে রচিত ‘দেবযান’-এর ১৬ নম্বর অধ্যায় তিনি রেখেছেন ১১ হাজার শব্দ আর শেষ অধ্যায়ে রেখেছেন ২৫ হাজার শব্দ। অর্থাৎ শেষ অধ্যায় আস্ত একখানা উপন্যাসিকা আর শেষের আগের অধ্যায় একটি বড়ো গল্প। এবং যৌক্তিক বিচারে শেষ অধ্যায়টাতে লেখক এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, যা একটানা, একনাগাড়ে কখনোই পড়া যায় না।

‘দেবযান’-এর ভাষা, শৈলী বিভূতীয় বিশেষণে ভরতি। আপনি যদি একান্তই বিশেষণ-বিদ্বেষী হয়ে থাকেন, রিপিটেশনে ভরপুরে বিরক্ত হয়ে থাকেন, জ্ঞানের তত্ত্ব আলোচনায় চোখে ঘুম নামিয়ে থাকেন, পরলোক চিন্তায় উদাসীন হয়ে থাকেন, জীবন দর্শন বিমুখ হয়ে থাকেন, রূপক বোঝার জ্ঞানে কাঁচা হয়ে থাকেন—তবে এ বই আপনার জন্য না। আর এই কারণেই উক্ত উপন্যাসের পাঠক কম, সমালোচনা বেশি, অনীহা বেশি। কারণ এটা লেখকের সেই আটপৌরে লেখা নয় যা সুখ সুখ-দুঃখ দুঃখ অনুভূতি নিয়ে পড়ে যাওয়া যায় কেবল।

‘দেবযান’ পুরোটাই আবর্তিত হয়েছে সনাতন ধর্মের পরলোক প্রাপ্তির পরবর্তী জীবন নির্ভর করে। এর সাথে লেখক সুনিপুণভাবে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স আর মেটাফিজিক্সের যে ব্যবহার, বর্ণনা আর পরিণতি দেখিয়েছেন, তা ১৯৪৪ সালে বাংলা সাহিত্যে কী অবিস্মরণীয় কাজ হয়েছে—তা এখনও ভাবলে শিহরিত হতে হয়। যার এসবে অনীহা তার অনুভূতি এখানে অবশ্যই ভিন্ন হবে স্বাভাবিক।

আপনি হয়তো বিরক্ত হচ্ছেন, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে এসে কীসব বিষয় নিয়ে আমি বকে চলেচি। লেখক যা বলেছেন সেগুলোই যদি আমি এখানে রিপিট করি তাহলে এটাকে বড়োজোর প্রতিক্রিয়া বলা যায় আলোচনা না। কিছু বই লেখা হয় আলোচনার জন্য, চর্চার জন্য, ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেখার জন্য। তবুও এইবার একটু বইয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলা যাক। না-হয় রিডার হিসেবে আপনি আশাহত হতে পারেন। কারণ, আমরা সাধ্যমতো, ইচ্ছামতো, সুযোগ মতো, সুবিধা মতো, চাহিদা মতো, সহজ মতো কিছু না পেলেই হুটহাট আশাহত হই।

যতীন-পুষ্প-আশালতা এই তিনে এ উপন্যাসের মূল চরিত্র। কিন্তু পর্দার পেছনে মূল শক্ত চরিত্র ছিলেন খোদ বিভূতিবাবু। তিনি কেবল চরিত্রদের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন নিজের মনস্তত্ত্ব, জ্ঞান, পরিণতি, ভুল আর শুদ্ধের প্রতিচ্ছবি আঁকার জন্য। যতীন আর আশালতা দাম্পত্য জীবনে খুব কমই সুখী হতে পেরেছিল। অসুখী ছিল বেশি আশালতা। তার মনে যতীনের জন্য সত্যিকারের প্রেম ছিল না, কিন্তু সংসার ধর্ম পালন করতে তাকে যতীনের ছেলেমেয়ের মা হতে হয়েছিল। আশালতার মনেপ্রাণে চেয়েছিল অন্য কাউকে। আর এই অন্য কেউটার পরিণতি তাকে শেষ অবধি কোন ভোগান্তিতে উপনীত করে, সেটা দেখে যতীনই কেন বারবার পৃথিবীতে ফিরে আসে, কেন পুষ্প তার সঙ্গ দেয়, কী বোঝাতে চায় ও, বাধা কেন দেয়—এ সবকিছু কেন্দ্র করে পুরো উপন্যাস আবর্তিত হয়।

অবহেলা আর দৈন্যদশায় পর্যদুস্ত হয়ে যতীন যখন মারা গেল তখন তার আত্মা পৌঁছে যায় সনাতন ধর্মীয় তত্ত্ব, বিশেষ করে বিষ্ণু পুরাণ মতে স্বর্গলোকে। মহাবিশ্বকে চৌদ্দটি ভাগে বা জগতে বিভক্ত করা হয়েছে। ওপরের সাতটিকে বলা হয়—ঊর্ধ্বলোক, আর নিচের সাতটিকে বলা হয়—আধোলোক। যতীন স্বর্গলোকে গিয়ে দেখা পায় তার মরার ১৩ বছরের পূর্বে পৃথিবী ত্যাগ করে যাওয়া বাল্যসখী পুষ্পের সাথে। পুষ্প মহর্লোকের অর্থাৎ চতুর্থ স্তরের বাসিন্দা। বহু আগেই মারা যাওয়া ফলে কি-না, না-কি শুদ্ধ আত্মার আর মোহের ঊর্ধ্বে কিছুটা বিচরণ করার কারণে এই ১৩ বছরে পুষ্প বহু পুণ্য আত্মার সংস্পর্শে এসে জীবন সম্পর্কে জেনেছে বহুকিছু। জীবন কী, কেন ওই ভূলোকে বারবার জন্মানো ঠিক না, জন্মালে কী পুনরাবৃত্তি হয় ইত্যাদি।

উপন্যাসের পার্সপেক্টিভে কেউ যখন একবার স্বর্গ��োক প্রাপ্তি হয়, তখন তার পুনর্জন্ম নেওয়া মানা। তারপরেও সে যদি বারংবার পৃথিবীতে কাটানো মোহ ফেলে আসতে না পেরে কায়া হয়ে, মায়ার বাঁধনে পড়ে ভূলোকে ফিরতে চায় তবে সেটা অন্যায় বলে বিবেচিত হয়। বিবেচনায় আনা হয়, এবং দৈববলে, মতামতের ভিত্তিতে একেবারে শুদ্ধ আত্মা হতে তাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠানো হয় যা পুনর্জন্ম তত্ত্বের ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়ে থাকে।

পুষ্প যখন যতীনের সাথে পৃথিবীতে প্রায় নেমে আসে আশালতার জীবনের হালচাল দেখার জন্য তখন সে যতীনকে বলে,

‘কলকাতায় আসতে পারিনে, কষ্ট হয়। উঃ দেখে কেমন কালো কালো কুয়াসার মতো জিনিস! মানুষের অর্থলোভ, বিলাসিতা, নানারকম খারাপ চিন্তা, সকলের ওপর লোভ—এইসব এক ধরনের কালো কুয়াসার সৃষ্টি করেচে। ওর মধ্যে দিয়ে আসতে দম বন্ধ হয়ে যায় যেন—সব বড় শহরেই এরকম দেখেচি, এখানে মানুষ সব ভুলে শুধু ভোগ নিয়ে আছে।’

পুরো উপন্যাস জুড়ে পুষ্প কেবল যতীনকে বাধা দিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল জাগতিক অনুভূতিকে প্রাধান্য না দিতে। মহাজাগতিক বিষয়-আত্তি নিয়ে ভাবতে, সত্য নিয়ে ভাবতে। তাকে চেয়েছিল স্বর্গপ্রাপ্তি হওয়ার পরও জীবনের আসল উদ্দেশ্য বোঝাতে। কিন্তু পুষ্প কি সফল হয়েছিল? যে প্রেমে সে পড়েছিল, যে দুটো পূর্বজন্ম কিংবা পুনর্জন্ম সে কাটিয়ে এসেছিল যতীনের সাথে—তারই ফল অথবা বিপরীত কর্মই কি তার শেষটা শূন্যতা আর ঈশ্বরের সঠিক রূপ দর্শন প্রাপ্তির আশায় অনন্ত নক্ষত্রবিথীর অপেক্ষা নিয়ে বসেছিল? অথবা মনে মনে গেয়ে চলেছিল: মিলন হবে কত দিনে/আমার মনের মানুষের সনে?

পুষ্প, যতীনের জন্য করুণাদেবী, প্রেমদেবী, মহাপুরুষ, ভক্তদেব, পরিব্রাজক পথিক, জরবাদে বিশ্বাসী শক্ত আত্মা, কবি, সন্ন্যাসিনী-সহ কত কত চরিত্রের সান্নিধ্যে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওই যে ‘উপলব্ধি’ নামক অনুভূতি যতীনের আদৌ হয়েছিল কি-না, তা শুধু বুঝতেই এই উপন্যাসখানা পড়া জরুরি। সেই সাথে জরুরি অজ্ঞানতা, অনাচার আর মোহের ফাঁদে পড়ে আশালতা, কেবলারাম, তার ছেলের ঠিক কী পরিণীতি হয় তা জানতে।

‘দেবযান’ উপন্যাস কি সবার পড়া দরকার? মানে কেবল সনাতনী পাঠকদের জন্য কি এই উপন্যাস লেখা? যেমন করে রাহুল সাংকৃত্যায়ন লিখেছিলেন তাঁর ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’? —বাস্তবিক অর্থে না। যখন আপনি পাঠক হিসেবে প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়া দর্শন ছাড়া সত্যিকার অর্থে জীবন নিয়ে চিন্তা করবেন তখন সকল ধর্মীয় দর্শন আর তার বিপরীত দর্শন নিয়ে পড়াটা জরুরি। সে আপনি এইবার যে জাত, পাত, কূল, ধর্ম, বর্ণের মানুষ হন না কেন। এসবে অনীহা থাকলে পড়ার কোনো দরকার নেই। কারণ পড়ে কিছুই বুঝবেন না, হয়তো লেখকের চিন্তা ভাবনাকে পাগলের প্রলাপ ভাববেন, সংশয়বাদী বা আজ্ঞেয়বাদী বলে তুলোধুনা করবেন, আর বহুল চর্চিত নাস্তিক্য ট্যাগ তো রয়েছেই।

প্রসঙ্গ যখন উঠেছে তখন একটা খটকার কথা অবশ্যই এখানে উঠে আসবে। বিভূতিবাবু ঠিক কেন ‘দেবযান’ লিখেছিলেন বা তিনি কী প্রমাণ করতে এমনতর সাহিত্যের অবতারণা করেছেন।

প্রথমত উপন্যাসের গভীরে যত ঢুকে পড়ি তখন সেখানে লেখক আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদের একটা গোল টেবিল আলোচনার আসর বসিয়েছেন। তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী করা চরিত্র যেমন রেখেছেন যে সারাদিন পূজা-অর্চনা, সঙ্গীত রচনা আর ভক্তিতে বিশ্বাসী হয়ে দিনাযাপন করেন, আবার এমনও পরিব্রাজক পথিক রয়েছে যে মহাশূন্যের নানান স্তরে ঘুরপাক খেয়ে সেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে চলেছেন যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু কেউ কোনোভাবে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। দেখা পায়নি সেই মহাজাগতিক অস্তিত্বের কিংবা সত্তার। তারপরেও তারা ছিল সুখী। ভক্তিতে যেমন ভগবান মিলে, তেমনই অভক্তির কেন্দ্রেও ভগবান থাকে—এমনই একটা ন্যারেটিভ বিভূতিবাবু সেট করে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এই মহাবিশ্ব অনন্ত, যার কোনো শেষ নেই, আকার নেই। সনাতনে ধর্মে প্রবাদ আছে: ভক্তের মনে লুকিয়ে থাকেন ভগবান। এ উপন্যাস যেন তারই প্রতিচ্ছবি। বিশ্বাস করলে আছে, আবার না করলে নেই। এ নিয়ে অত তর্ক কীসের? তর্ক আসবে জীবনকে ভালোভাবে বুঝতে শিখেছে কি-না, জাগতিক মায়া-লোভ-অহংকার প্রতিটি খারাপ প্রবৃত্তিকে জয় করে শুদ্ধ আত্মায় বা মানুষে পরিণত হয়েছে কি-না তা নিয়ে। এ-ই হলো উপন্যাসের অন্তনির্হিত অর্থ। এর জন্য যে বিস্তর আলোচনা আর উপলব্ধির কথাবার্তা লেখক তুলে এনেছেন তা ছিল ভীষণ শ্রমসাধ্য আর জ্ঞানের চরম শিখরে পৃথিবী, স্বর্গলোক আর মহাজগৎ-কে দেখার অন্যতম একটি সফল কাজ। উউপলব্ধির মাধ্যম।

এক জায়গায় উল্লেখ আছে এমন: ঈশ্বরকে লেখক তুলনা করেছেন ‘বালকের’ সাথে।

সেই বালক সর্বদা ছুটতে থাকেন। তিনি খেলা করেন আপনার সাথে। ছুটতে ছুটতে তাকে ধরতে না পারার কারণে যদি হতাশ হয়ে পড়েন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যাবেন। তিনি চান জীব তাঁর পিছনে পিছনে খানিক ছোটে, হাঁপায়। তিনি বালকের মতো আমাদের সাথে খেলতে পারলেই মহাখুশি। না থেমে তবুও ছুটলে তিনি শেষে অকারণেই আবার ফিরে আসবেন, হাসতে হাসতে ধরা দেবেন।

‘অতএব, ভগবানকে নিরাশ কোরো না, তাঁকে একটু জীবকে নিয়ে খেলা করতে দাও। তিনি বড় একা—”

আমরা আক্ষরিক আর রূপকার্থ গোলেমেলে ফেলি। সবকিছুতেই আক্ষরিক চিন্তার পসরা সাজায়। কিন্তু দর্শন বুঝতে হলে বা গেলে সর্বপ্রথম বুঝতে হয়—মেটাফোর বা রূপক। ধরলাম এখানে যে ঈশ্বর বা ভগবানের কথা বলা হয়েছে সেটা আমাদের ইচ্ছা বা আশা। আমরা প্রতিনিয়ত জীবনে হোঁচট খাই, আশাহত হয়ে পড়ি, ক্লান্ত থাকি, বিরক্ত হই। সফলতা আমাদের নিকট সেই ঈশ্বরের মতো। শেষ চেষ্টা বা তাঁকে ধরা অবধি আমরা ছোটা থামাতে পারি না। শেষ পর্যন্ত যদি ধৈর্য ধরি আর আশাহত না হই—আশা নিয়ে যদি বেঁচে থেকে পরিশ্রম করে যায় তবে সেই ইচ্ছা কোনো না কোনোভাবে পূরণ হতে বাধ্য। কিন্তু এসব কি আমরা আদতেই করি?

যে কাজ করি, সেই কাজে বিশ্বাস আর ভক্তি কি আমাদের আছে? আমরা কি কাজের আগে ফলের চিন্তা করি না? পাওলো কোয়েলহোর ‘দি আলকেমিস্ট’ বইয়ে বলা অন্যতম উক্তির কথা স্মরণে আছে? যেখানে তিনি বলেছিলেন: ‘যখন তুমি মন থেকে কিছু চাও, তখন সমগ্র বিশ্ব তোমাকে তা অর্জনে সহায়তা করতে ষড়যন্ত্র করে।’

এখানে সেই বালক, মন থেকে চাওয়া, ঈশ্বর, মহাজাগতিক সত্তা, বিশ্বাস সব কি ‘মুক্তির’ দোরগোড়ায় এসে হুটোপুটি খায় না?

সত্যিকার অর্থে মন থেকে আমরা যা চাই, তা-ই আমাদের পাওয়া হয়। হোক সেটা ভালো কিংবা মন্দ। আমরা আমাদের ভাগ্যকে প্রভাবিত করি একটা সঠিক কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে। এ মরুভূমির খটখটে, শুষ্ক আবহাওয়ার মতো সত্য। আর ঈশ্বর দিয়ে বিভূতিবাবু আমাদের এই বিষয়টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝাতে চেয়েছেন।

এমনকি এই উপন্যাসে তিনি শ্রীকৃষ্ণ কে, তার লীলা কী, রাধা কে, রাম কে, সীতা কে... কেন তারা আবির্ভূত হয়েছিল কী তাদের উদ্দেশ্য তারও একটি দারুণ তত্ত্ব তিনি আলোচনায় এনেছেন। এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আলাদাভাবে একটি বই লিখতে হবে। এখানে সেই আলোচনা ফুটে উঠবে না।

পুষ্পের মহর্লোক থেকে ভূলোকে ফিরে যাওয়ার নিঃসঙ্গ আক্ষেপ, যতীন আর আশার পুনর্জন্ম নেওয়ার কারণ আর পরিণতি ঠিক কীভাবে প্রবাহিত হয় তা লিখেই ‘দেবযান’ শেষ হয়। যদিও একে শেষ বলা যায় না। এরপরেও অনেক কিছু তাদের সাথে ঘটতে পারে। সকল কিছু ওপর থেকে বসে ঠিক করা যায় না, মানব মনের সিদ্ধান্ত একান্তই নিজস্ব। ওখানে কারও হুকুম, জোর চলে না। তারপরেও মানুষ প্রভাবিত হয়, প্রভাবিত হয়ে ফাঁদে বা লোভের বশবর্তী হয়ে সেই কাজটা করে—যা তার করা কখনোই কাম্য নয়।

‘দেবযান’ এক অসাধারণ জার্নি। স্মরণীয়। বিভূতিবাবুর হয়তো অবহেলিত উপন্যাস এটি, সমালোচিতও। এ উপন্যাস বোঝার মতো বিপুল পাঠক এখনও তৈরি হয়নি। যেদিন হবে, সেদিন বোধ হয় তাঁর একজন ভক্ত হিসেবে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব।

‘দেবযান’ আমার ভাবনা চিন্তা, দর্শনের সাথে শতভাগ মিলে গেল। এমন উপন্যাস আমিও তো রচনা করতে চাইব একজন লেখক হিসেবে। হয়তো ইতোমধ্যে সেটা করে বসেছিও...
Profile Image for আসিক  হোসাইন.
2 reviews29 followers
Read
March 28, 2020
মানুষের মনের মন্দিরে অনেক কক্ষ, এক এক কক্ষে এক এক প্রিয় অথিতির বাস। সে কক্ষ সেই অতিথির হাসি কান্নার সৌরভে ভরা, আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারে না। প্রেমের এই অতিথিশালা বড় অদ্ভুত, অতিথি যখন দূরে থাকে তখনও যে কক্ষ সে একবার অধিকার করেছে সে তারই এবং তারই চিরকাল। আর কেউ সে কক্ষে কোনো দিন কোনো কালে ঢুকতে পারে না। সে যদি আর ফিরেও না আসে কখনো, চিরদিনের জন্যই চলে যায় এবং জানিয়ে দিয়েও যায় যে সে ইহজীবনের মত চলে যাচ্ছে - তখন তার সকল সকল স্মৃতির সৌরভ সুদ্ধ সে ঘরের কবাট বন্ধ করে দেওয়া হয়- তারই নাম লেখা থাকে সে দোরের বাইরে। তার নামেই উৎসর্গিকৃত সে ঘর আর কারো অধিকার থাকে নাহ দখল করবার।
Profile Image for Ainul Chowdhury.
141 reviews8 followers
November 10, 2020
I guess I picked the wrong book to get introduced to this famous author's works.
gosh, I was really having a hard time finishing this book. despite the book has an interesting theme, but there aren't any consistent storylines. One of the good things is, the philosophical thoughts about the afterlife are really fascinating, but for some reason i find the dialogues are boring.
Profile Image for Tanzim Tumul.
14 reviews1 follower
March 30, 2018
I wish i could give some negative stars on this book ! Never even thought I would have to write something this bad on a book of my most favorite writer. Excruciatingly painful journey it was
Profile Image for আশান উজ জামান.
Author 4 books31 followers
April 19, 2021
অসাধারণ উপন্যাস! অনবদ্য অবশ করা চিন্তা, আর অবাক করা লেখা।
মৃত্যুপরবর্তী আত্মার অবস্থা ও ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আয়োজন। অভিভূত হয়েছি, আবার কিছু সংকীর্ণ চিন্তার ফেনিয়ে তোলা দেখে অবাক হয়েছি যে, সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা একজন লেখক এসব লিখছেন কেন। কিছু কিছু জায়গায় পুনরাবৃত্তি আছে মনে হয়। আশার প্রতি যতীনের টান এবং ফিরে ফিরে যাওয়া খুব সুন্দর। কিন্তু সন্তানদের কাছে একবারও না যাওয়াটা কেমন লাগে। ছোটখাটো এসব ব্যাপার হজম করতে পারলে দুর্দান্ত। পড়তে পড়তে ভাবতে হয়, ১৯৪৪ সালে লেখা এই বই, কীভাবে সম্ভব!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তাঁর লেখা প্রিয় বইয়ের একটা হয়ে আছে দেবযানও।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
March 7, 2025
বিভূতিভূষণ বলতে আমরা যেমন সাহিত্য বুঝি, প্রকৃতি, মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, সারল্য, লড়াইয়ের গল্প, এটি তেমন নয়। বরং আজকালকার ভাষায় কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কাজ করার যে টার্ম প্রচলিত আছি এটি সেই শ্রেণির।
যতীন নামের এক ব্রাহ্মণ যুবক, যাকে বিবাহিত স্ত্রী পরিত্যাগ করেছে, তার মৃত্যু হয়। এরপরের জীবন ও বাল্যকালের এক সঙ্গিনীর সাথে কাটানো উর্ধ্বলোকের জীবনের ঘটনাই এখানে উপজীব্য। এসেছে বিভিন্ন ভারতীয় দর্শনের কথা, এসেছে ঈশ্বরের কথা।
এক কথায় উপভোগ্য।
Profile Image for Bookreviewgirl_xo.
1,172 reviews99 followers
dnf
November 18, 2025
DNF after Page-65


Quotes

- "দুঃখীকে কেউ দয়া করে না, সবাই ঘৃণা করে।
মানুষ হয়ে মানুষকে এত কষ্ট দিতে পারতো না যদি একটু ভেবে দেখতো। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের চিন্তার বালাই নেই তো!
"

- "প্রেমের এ অতিথিশালা বড় অদ্ভুত, অতিথি যখন দূরে থাকে তখনও যে কক্ষ সে একবার অধিকার করেছে সে তারই এবং তারই চিরকাল। আর কেউ সে কক্ষে কোনো দিন কোনো কালে ঢুকতে পারে না। সে যদি আর ফিরেও না আসে কখনো, চিরদিনের জন্যই চলে যায় এবং জানিয়ে দিয়েও যায় যে সে ইহজীবনের মতই চলে যাচ্ছে—তখন তার সকল স্মৃতির সৌরভ সুদ্ধ সে ঘরের কবাট বন্ধ করে দেওয়া হয়—তারই নাম লেখা থাকে সে দোরের বাইরে। তার নামেই উৎসর্গীকৃত সে ঘর আর-কারো অধিকার থাকে না দখল করবার।"
Profile Image for Soumitro Roy.
117 reviews
January 16, 2018
This is probably the most underrated novel in Bengali Literature. If it were an English novel it would have gained an tremendous status for itself because of the ideas on which the novel is structured. The philosophy and spirituality found in Upanishads and Bhagvada and other Hindu spiritual doctrines are infused as a framework to build up a story of Jatin-Pushpa-Ashalata who are going through an after-death phase. And not just philosophy and spirituality but the structuring of the novel was good like providing layers or stages through which one soul has to pass in order to merge with the Divine Consciousness.

The themes used in the novel are that of Love, Service, Sacrifice, Life after Death, The Cycle of Life, and Immortaity of Soul.

However, one couldn't deny, that this book falls flat in the middle where the writer has given huge concepts without any action taking pace in the story thus leading to boredom.

Moreover there were other problems such as Localism. Localism, because the characters even after their death, even after becoming soul were acting as if they were still living on Earth. The writer could have worked on it, more, giving out a more open outlook.

If I were the editor or publisher I would have advised Bhibhutibhushan to rewrite it again considering this fact. I fet that if the book was re-written in some parts it would have been a great one.
Still, some scenes and specially the end was tremendous (it reminded me of movies like: Eternal Sunshine Of The Spotless Mind and Inception because of a 'dream within a dream' and 'looping' sequence used in Ashalata in the last part)
And the end description of the supreme God just gave me goosebumps(God of Hinduism)
A must read.
Profile Image for Somiick Dasgupta.
1 review
October 11, 2018
আমার বিশেষ কিছুই বলার নেই। যতবার পড়েছি ততবারই কিছু বলার ছিলোনা। শুধু ভেবেছি......... আজও ভেবে চলেছি। কখনও মনে হয়েছে বৃথা সময় নষ্ট করছি। কখনও মনে হয়েছে "ওনারা" কি সত্যি আছেন? "ওনারা" কি সত্যই আমাদের কথা ভাবেন? সীমাহীন এই জগত, তার মধ্যে অগুন্তি জ্যোতির্মণ্ডল, তার মধ্যে কত লক্ষ কোটি নক্ষত্র, তার আশে পাশে ঘুরে চলা কিছু গ্রহ, তার মধ্যে একটি ছোট নীল গ্রহ, তার মধ্যে এত দেশ, তার মধ্যে এত জেলা, তার মধ্যে এত শহর, তার মধ্যে এত ছোট বড় রাস্তা; তার মধ্যে কোন এক ছোট রাস্তার পাশে থাকা একটি ছোট একটি বাড়িতে অতি ছোট একটি ঘরের কোণের জানলা থেকে রাতের আকাশ দেখা অতি ক্ষুদ্র আমি। আমার সুখ দুঃখের কি সত্যিই কোন মুল্য আছে? কোনদিন কি ছিল আদৌ? এই নশ্বর জীবনের অস্তিত্বের গুরুত্ব যদি এতটাই গুরুত্বহীন হয় তাহলে কি আমার আর কোন পরিচয় আছে যার মধ্যে আমি "আসল আমি" হয়ে উঠবো? এমন কোনও স্থান কি আছে যেখানে আমার আমি আর আসল আমি এর সাক্ষাৎ হবে?
মানুষ তার তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্কতার এর মধ্য দিয়ে আজও অসংখ্য প্রশ্ন এর উত্তর পায়নি। যতটুকু পেয়েছে তাতে সে ধ্বংস করতেই শিখেছে। সৃষ্টি করা তার যে আয়ত্তের বাইরে, তার প্রমান সে বারংবার দিয়েছে। তবুও আশা রাখি একদিন হয়ত সে এই প্রশ্নাদির উত্তর পাবে। তার মধ্যে হয়ত "আসল আমি" এর সত্যও থাকবে। অবশ্যই থাকতে হবে। তাই হয়ত কোন এক মহাপুরুষ বলে গেছিলেন.........ব্রহ্ম সত্য। জগৎ মিথ্যা।
Profile Image for Dhritisundar Datta.
10 reviews
June 21, 2018
The novel drags quite a bit at quite a few places and at others, it really shines. Sometimes Bibhutibhushan's language is cheesy, and sometimes you feel transcendental. And then you come across some parts that are moving enough to bring tears. He can often evoke an overwhelming affection towards the most mundane of life's gifts. That to me is Bibhutibhusan's genius and that is what brings me back to his works again and again. But then again he is not just exclusively a singer of the raw and dear earth, for he often takes the reader off to outer space, among the stars or the clouds of hot gases. Often, he inspires the reader to experience with him the vastness of existence and the mystery of subjectivity, or one's oneness with the universe or one's relationship with a God. What a brilliant mind truly!

Considering all, it is however not as great as his other more famous works. I give it 3.5.
Profile Image for Rudradeep Mukherjee.
64 reviews60 followers
December 18, 2017
Frankly speaking, this book was hardly enjoyable or profound. I read it in the original Bangla, to brush up my rusted skills. There are different branches of Hindu philosophy concerning God, life, death, afterlife, creation and salvation. The author (probably) preaches his views about those branches, by spawning a story about three people, set up on Earth and in various supernatural places. Though other branches are touched too, the core theme revolves around Bhakti/Vaishnavism. Since I am atheist, it bored me to death. And, it was hard to continue as I treat these philosophies as mere fantasies.

I wanted to give it 2.5 stars. Gave it 3, because I kind of felt bad to low-rate the author's effort(the book is dense). Certainly, not the best book of Bibhuti moshai.
Profile Image for Propa Zaman.
66 reviews10 followers
February 26, 2024
দেবযান পড়বার আগ্রহ জন্মেছিলো বইটির বিষয়বস্তু দেখে। বইটি মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে লেখা। ১৯৪৪ সালে বসে বিভূতিভূষণের মতোন লেখক মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে নিয়ে কি ভেবেছিলেন জানবার বড় ইচ্ছে ছিলো।
দেবযান মৃত্যুর পরের এক অনন্য যাত্রার গল্প। এ যাত্রার সাথে আপনার কিংবা আমার রিলেট করবার মতো জো নেই। আমি বলবো "দেবযান" একটি সম্পূর্ণ অন্য ধাঁচের অভিজ্ঞতা, তবে এই অভিজ্ঞতাকে স্পর্শ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে আপনি এখুনি এর জন্য প্রস্তুত কিনা! তাহলেই এর পূর্ণ রস আস্বাদন করতে পারবেন।

বইটির গভীরতা অনুভব করার পূর্ণ শক্তি আমার মতো নগন্যের এখনো হয়নি। তবুও এই ভেবে বার বার অবাক হয়েছি যে ততকালীন সময়ে বসে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের মতো সংবেদনশীল বিষয়টিকে নিয়ে এত গভীর পর্যালোচনা লিখার জন্য কতোটা চিন্তাশীল এবং শক্তিশালী লেখক হওয়া প্রয়োজন! এস্ট্রোফিজিক্স এর সাথে আধ্যাত্মিকতা, প্যারালাল ইউনিভার্সের সাথে হিন্দু পুরাণের দেব-দেবীর মিশেলে অদ্ভুত গাঢ় এক উপন্যাস "দেবযান" যতীন-পুষ্পের সাথে আপনাকেও এক অন্য লোকে ভ্রমণ করাবে। 

দেবযানে বিভূতিভূষণ যে জগতের কথা বলে গেছেন, সে জগত সত্য কিনা আমার জানার সুযোগ নেই। তবে ভগবানের বিশালত্ব এবং মানুষ হিসেবে আমাদের ক্ষুদ্রতার যে নমুনা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে, সেটা আসলে কেবল ধারণ করা সম্ভব কিন্তু ধারণা করা সম্ভব নয়। 

দেবযানের এক জায়গায় করুণাদেবী ভগবানকে তুলনা করেছেন এক দুষ্ট শিশুবালকের সাথে। যে বালক ভালোবাসা চায়, বালক চায় মানুষ তাকে ভালোবাসার জন্য তার পেছনে ছুটে চলুক। কিন্তু মানুষ ছুটতে শুরু করলে তিনি আরো জোরে ছুটে চলেন, যেন তাকে ধরা অসাধ্য। এই তার খেলা। এই বিশাল জগতসংসার তার খেলারই অংশ। কিন্তু তাই বলে মানুষ যদি হাল ছেড়ে দিয়ে তাকে ভালোবাসার চেষ্টাই না করে তাহলে তিনি মনে বড় কষ্ট পান। ভগবান বড় একা, তিনি ভালোবাসার কাঙাল। 
এই জগতের সমস্ত আয়োজন তাঁর কাছে ফিরে যাবার জন্যই। পৃথিবীর মানুষের প্রধান কর্তব্য প্রেম- এক ওর মধ্যেই সব। যুগে যুগে বহু অবতারে ভগবান এই কথাই প্রচার করে চলেছেন, তবু পৃথিবীর মানুষ তাকে বুঝতে পারেনি। অদ্ভুত চরিত্র তাঁর। বার বার সুযোগ দেন, বিরক্ত হন না। অপূর্ব তাঁর ধৈর্য, অপূর্ব তাঁর ক্ষমা। তবুও মানুষ কেবল অর্থ চায়, যশ চায়, খ্যাতি চায়, ভগবানকে কেউ চায় না। এই পৃথিবীতে ভগবানের তুল্য অবহেলিত প্রাণী বুঝি আর একটিও নেই।

এমন আরো অসংখ্য ছোট বড় মতবাদ নিয়ে "দেবযান" পরিবেষ্টিত। স্বভাবতই এই বই নিয়ে কন্ট্রোভার্সিও প্রচুর। বইটির বিষয়বস্তুই এমন যে সবাই সমানভাবে গ্রহণ কর‍তে পারবে না - এটাই স্বাভাবিক। তবে যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের চমৎকার মিশ্রণকে উপজীব্য করে লেখা এই "দেবযান" আপনাকে ঘুরিয়ে আনবে অন্য এক অলৌকিক ভুবন থেকে।
12 reviews
March 1, 2020
জীবন কি এই দৃশ্যমান জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি তথাকথিত 'জীবন-মরণের সীমানা ছাড়ায়ে' এর বিস্তার অনেক অনেক বেশি? হিন্দুধর্ম মতে শারীরিক মৃত্যুর পরে আত্মা দেহ ছেড়ে অনন্তের পথে তার অভিযাত্রা বজায় রাখে। সাধারণ আত্মা দেহত্যাগ করে পিতৃযান পথে লোকে-লোকান্তরে যাত্রা করে নব নব দেহধারণ করে। পুন্যাত্মারা দেবযান মার্গ অবলম্বনপূর্বক পুনর্জন্মরহিত হয়ে চিরঈশ্বরসান্নিধ্য লাভ করে। বিভূতিভূষণের এই উপন্যাসে মৃত্যু পরবর্তী অভিযাত্রা চিত্রিত হয়েছে। আত্মা তার অনন্ত অভিযাত্রায় একসময় পিতৃযান অতিক্রম করে দেবযান মার্গ প্রাপ্ত হয়ে চিরআনন্দময় ধামে লীন হয়ে যাচ্ছে। এই জন্মজন্মান্তরব্যাপী অভিযাত্রাই এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। অতএব বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে দেবযান বাংলা উপন্যাসজগতে এক বিরাট ব্যতিক্রম। প্রথম পড়েছিলাম যখন, মনে হয়েছিল 'এ কি আজগুবি গল্প রে বাবা!! মরে গেছে, তারপরেও প্রেম করছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ লোক সে লোক করে বেড়াচ্ছে, এটা কি ভূতের গল্প! এমন গাঁজাখুরি গল্প তো বাবা কোনোকালে পড়িনি কি শুনিনি!' গল্পের যে একটা নিটোল গড়ন, তা এতে নেই। এ যেন দর্শনের বই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এর দার্শনিকতা কিছু কিছু জায়গায় ভাল।লেগেছিল। এর কিছু পরেই আমার জীবনে এল চরমতম tragedy। আঘাত পেলাম, যেমন আঘাত আগে কখনো পাইনি। আবার দেবযান খুলে বসলাম। এবারে আপ্লুত হলাম। ব্রহ্মান্ড জুড়ে ধ্বনিত হওয়া 'অস্তি অস্তি' ধ্বনি আমার কানে এসে পৌঁছাল। মনে হল ''আছে, আছে, যা একবার ছিল তা চিরকাল ছিল, আজও আছে, চিরকাল থাকবে। আমাদের অনুভূতির অগোচরে হোক বা গোচরে, থাকবে সে বটেই। 'নেই' বলে ব্রহ্মাণ্ডে কিছু হয়না- 'হে পূর্ণ তব চরণের কাছে যাহা কিছু সবই আছে, আছে আছে'। এই পরম অস্তিত্বের ঘোষণা নতুন করে অস্তিকতার দীক্ষা দিল আমায়। যা আমি দেখতে পাচ্ছিনা, তাও আছে, যাকে দেখতে পাচ্ছিনা সেও আছে- 'হারানো মোর প্রিয় যারা, তোমার কাছে আছে তারা, আমার কাছে নেই তাহারা, হারায়নিকো তবু'। পরমেশ্বর আছেন, তাঁরই সর্বত্রব্যাপী অস্তিত্বে আমরাও আছি। জীবন মৃত্যু সব মায়া।'' দেবযান এই যে বার্তা নিয়ে এল আমার প্রাণে, তা আমাকে চরমতম শোককে জয় করতে অনেক সাহায্য করল, অনেক শক্তি দিল। এর জন্য আমি এই উপন্যাসের কাছে, তার লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ।
Profile Image for Amit.
771 reviews3 followers
September 21, 2023
এই বইটি আমি বলবো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি রচনা। বইটি পড়তে হলে আপনি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে পড়বেন তার উপর খানিকটা নির্ভর করে। আপনি নাস্তিক হলে আমার মনে হয় না এই বইটি আপনার জন্য। তবে বইটিতে মৃত্যু পরবর্তী অনেক বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। এক কথায় দারুন একটি উপন্যাস ছিলো এটি।।

যতিন নামে গরীব ব্রাহ্মণ একটি গ্রামে বসবাস করে। তার স্ত্রী আশালতা তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদিন হয়। দিন-আনে দিন খায় অবস্থায় যতিনের দিন অতিবাহিত হতে থাকে এবং একসময় সে মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর পর সে বুঝতে পারে সে অন্য কোথাও এসেছে, পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। সে কিছুই স্পর্শ করতে পারে না, কেউই তাকে দেখে না বা তার কথা শুনতে পায় না। সে মৃত। তবে সে পরপারে। তদাপি তার ছোটকালের খেলার সাথী পুষ্পের সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। সেই পুষ্প যে মেয়েটিরও অনেক আগেই মৃত্যু ঘটেছিলো। কিন্তু পুষ্প তার ছোটবেলার ভালোবাসার মানুষ যতিন-কে ভুলতে পারেনি। তাই ছুটে এসেছে যতিনের কাছে। মূলত এখান থেকেই মূল গল্পের শুরু।।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লেখনীর জাদুতে খুব নিখুঁত এবং সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মৃত্যু পরবর্তী স্থানের বিবরণ। পুষ্প যতিনকে বিভিন্ন লোকে নিয়ে যায়, বিভিন্ন অলৌকিক আত্মার সাথে সংযোগ ঘটায়। অতি উচ্চস্তর, নিম্নস্তর, ব্রক্ষ্মলোক, সন্ন্যাসী, সাধু, লীলা, মায়া আরও অসংখ্য বিষয়ের অবতারণা লেখক এই বইটিতে করেছেন। ১৯৪৪ সালে রচিত এই উপন্যাস পড়লে মনেই হয় না এত পুরাতন, মনে হয় যদিবা লেখন সদ্যই বইটি রচনা করেছেন। বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের লীলা খেলা, অচিন্তনীয় জগত, জন্মান্তরবাদ, মানুষে মানুষে হানাহানি হেতু, মানুষের মাঝে বিদ্যমান স্থুল চিন্তাধারার কারণ, মানুষের করনীয়, প্রতিকার প্রায় সকল বিষয়বস্তুর বর্ণনা আছে বইটিতে। মূলত বইটি লেখকের অনন্যসাধারণ চিন্তাধারার একটা বহিঃপ্রকাশও বলা যায়। সত্যি নিজের কাছে বেশ ভালো লাগছে বইটি পড়ে শেষ করতে পেরেছি বলে।।

সবশেষে বলবো আমার আরও জানার ইচ্ছা ছিলো। যেনো শেষ হয়েও হইলো না শেষ। যতিনের শেষ পর্যন্ত কি হলো, আশালতার কপাল কিভাবে খুললো; র্সবশেষ পুষ্পের কি হলো! সে কি আর যতিনের দেখা পেয়েছিল না অনন্ত, অসীম জগতে পুষ্প শুধু একা, নিঃসঙ্গ হয়ে রইলো।।
Profile Image for Arpan Kumar Basak.
22 reviews
July 13, 2025
দেবযান

আহা কী 'পড়িলাম' জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না !

Pun intented !

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর এই উপন্যাস পড়ে আমি বিমুগ্ধ , তৃপ্ত। অনেক বই পড়ি। কিছু বই ভালো লাগে, কিছু বই লাগে অসাধারণ, আর কিছু বই পুরোপুরি মুগ্ধ করে। দেবযান শেষ গোত্রে আসবে।

উপন্যাস শুরু হয় গ্রাম বাংলার এক বিবাহের দৃশ্য দিয়ে। আকাশে বাজি ফুটছে, বর যাত্রীকে পেট ভরে খাওয়ানো হচ্ছে। তারই মধ্যে গ্রামের কিছু গরিব মানুষ এক কোণে বসে রয়েছে খাবারের আশায়, তাদের দিকে কেউ আসছে না। সেই ভিড়ের মধ্যেই বসে রয়েছে উপন্যাসের নায়ক যতীন। যতীনের জীবনে খুব কষ্ট। তার বউ আশা দুই সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে। এজন্য গ্রামের মানুষ তাকে দিয়ে মজা করতে ছাড়ে না। দিনের পর দিন একাকীত্বে কাটে তার জীবন। এমনকি খোঁজ নেওয়ারও কেউ নেই। শরীর খারাপ হলেও কেউ দেখতে আসে না। এভাবেই কয়েকদিন টানা জ্বরে ভুগতে ভুগতে মারা যায় যতীন। হ্যাঁ, উপন্যাসের শুরুতেই নায়কের মৃত্যু হয়। খুব অনন্য কনসেপ্ট, বলাই বাহুল্য।

মৃত্যুর পর সত্যিটা উপলব্ধি করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায় যতীনের। সে তার ১৩ বছর বয়সের বান্ধবীকে তার খাঁটে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় কারণ অনেক বছর আগেই বান্ধবী পুষ্পর মৃত্যু হয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু বুঝতে পারে সে। এরপর পুষ্প নিয়ে যায় তাকে স্বর্গে। আর এখানেই শুরু হয় উপন্যাসের মূল পর্ব। 

যতীন পুরোপুরি নাস্তিক না হলেও তার অগাধ ভক্তি নেই। কিন্তু পুষ্পর বিশ্বাসে কোন ত্রুটি নেই। সে অনেক উঁচু স্তরের আত্মা। তাই বিভিন্ন স্বর্গ লোকের সুউচ্চ স্তরেও সে অবাধে যাতায়াত করতে পারে। যেখানে যেখানে সম্ভব, যতীনকেও সাথে নিয়ে যায় সে। কিন্তু যতীনের মন পড়ে থাকে পৃথিবীতে। মর্তলোক বারবার ডাকে তাকে। আশার প্রতি তার যুক্তিহীন ভালোবাসা তাকে বারবার তার কাছে নিয়ে যায়।

জগতের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ কাল হয় যতীনের জন্য। তার বউ তাকে ভালোবাসেনি, হয়েছে পরকীয়ায় লিপ্ত। তারপরেও আশার প্রতি টানের জন্য যতীনের হয় পুনর্জন্ম। পুষ্পর অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যতীনকে জন্মের এই বলয় থেকে বাঁচাতে পারেনা সে। কিন্তু পুষ্পর সহায়তায় সে ফিরে আসে স্বর্গলোকে। যদি মনে হয়ে থাকে পুরো গল্পটাই বলে দিলাম, তাকে একেবারেই নয়। সামান্য কিছু অংশই বললাম, বোঝার সুবিধার্থে। এরপরে বহু ঘটনাচক্রে জীবনের সারমর্ম ধরা দেয় আমাদের সামনে।

উপন্যাসে ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপের কথা বলা হয়েছে। একদিকে যেমন আছে প্রেমের দেবী, করুণার দেবী অন্যদিকে রয়েছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিষ্য রঘুনাথ দাস গোস্বামীও। সাথে রয়েছে পৃথিবীর দেবতা, অদ্বৈতবাদী সন্ন্যাসী, বৈষ্ণব কবি ক্ষেমদাস। স্বর্গে এসকলের সাথেই বারবার দেখা হয় পুষ্পর। বিভিন্ন লোকে ভ্রমণ করে তারা। অনেকবার আসে পৃথিবীতেও। পুষ্প ও যতীন বোঝার চেষ্টা করে সৃষ্টির রহস্য, কর্মের বন্ধন ও তার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়। মৃত্যুর বহুবছর পরেও বৃন্দাবনের মন্দিরে যখন আরতি হয়, বৈষ্ণব ভক্তগণের অবাধ আনাগোনা দেখা যায়। সেই দৃশ্য সত্যি মায়াবী !

যে সময় দাঁড়িয়ে লেখক এই উপন্যাস লিখেছেন, সেটা বিবেচনা করলে সত্যি স্তম্ভিত হতে হয় কারণ উপন্যাসের কন্সেপ্ট একদম অভিনব। কী অসাধারণ কল্পনা ! কী অপূর্ব ভাষা ! শব্দের বন্ধনে যেন সত্যিই জাদু আছে। এক একটি লাইন পড়ছিলাম, আর ভাবছিলাম, সময় নিচ্ছিলাম সেই লাইনটিকে আরো কয়েকবার পড়ার জন্য, আর সাহিত্যের এরকম চরম উৎকর্ষ উপভোগ করার জন্য। উপন্যাসে অসাধারণ উক্তির কোন অন্ত নেই। আলাদা করে তাই সেরকম মেনশন করা যাবে না।

শ্রীমদ্ভাগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণ মূলত তিনটি যোগের কথা বলেছেন। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি। এর মধ্যে কোন যোগ কার জন্য সেটি উপন্যাসে বলা হয়েছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। এই কথাটির পরাকাষ্ঠা পুষ্পর মাধ্যমে মূর্ত হয়ে ওঠে। পুষ্পর মত এত নির্মল চরিত্র সত্যিই এক অদ্ভুত শান্তি এনে দেয় মনে। ভালবাসতে শেখায় সে। গীতা একটু ভালোভাবে পড়া থাকলে এই উপন্যাস বুঝতে সুবিধা হবে। সাথে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রের সাথে একটু পরিচয় থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের বেদান্তের যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আছে তার সারমর্ম ও পার্থক্য সম্বন্ধে জ্ঞান থাকলে এই উপন্যাসটির মাধ্যমে লেখক যা বার্তা দিতে চেয়েছেন তা যথার্থভাবে বোঝা যাবে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্র ও বেদান্ত নিয়ে আমি অনেকদিন হল পড়াশোনা করে আসছি। তাই আমি সেই লেভেলে উপভোগ করেছি । আর এই কারণেই উপন্যাসটি অনন্যসাধারণ লেগেছে। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক উপন্যাস। উপন্যাসের রেশ কখনোই ভুলবার নয়।

উপন্যাসটি সম্বন্ধে আমি অন্তহীন কথা বলে যেতে পারবো হয়তো। কিন্তু তা তো হতে পারে না, থামতে হবেই। তো এখানেই শেষ করা যাক। আমার সর্বকালের প্রিয় উপন্যাসগুলির লিস্টে এটি ইনক্লুড করলাম। আর পুষ্প আমার প্রিয় নারী চরিত্র গুলির মধ্যে একটি হয়ে রইল।




©Arpan Kumar Basak
Displaying 1 - 30 of 50 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.