What do you think?
Rate this book


160 pages, Hardcover
First published January 1, 1998
"একটা মেয়ে তার জীবনে যা কামনা করে আমি তার সব পেয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে উঠে। কীসের অভাব আমার, আমি কী চাই? হ্যাঁ, একটা জিনিস চাই, একটি মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রয়ে যাবে। এই প্রজন্মের একটি তরুণ বা তরুণী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওই পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সঙ্গীতে তোমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।"
"বলতাম, জেরিনা এই মেয়েদের মনে আগুন জ্ব্রেলে দিতে পারিস না, ওরা কেন মাথা নিচু করে চলে? নীলিমাদি ওদের চারদিকে তোমাদের সমাজ যে আগুন জ্বেলে রেখেছে তারই উত্তাপে ওরা মাথা তুলতে পারে না। বেশি বেশি বক্তৃতা দিও না।"
"না না, তবুও হ্যাঁ, তোমাকে শেষ কথাটা বলে যাচ্ছি নীলা আপা, আমি নিকেলকেও বলে রেখেছি আমার মৃত্যুর পর আমাকে কেউ বাংলাদেশে নেবার চেষ্টা করোনা। জন্ম দিলে জননী হওয়া যায়, কিন্তু লালনপালন না করলে মা হওয়া যায় না। আমি জন্মেছিলাম সোনার বাংলায়, লালিত হচ্ছি ডেনমার্কের কঠিন ভূমিতে। তবু সেই মাটিতেই হবে আমার শেষ শয্যা। দেশে ফিররে আমি সামান্য একটি অজ্ঞাত উপেক্ষিত মেয়ে। কিন্তু প্রতি নিশ্বাসে আমি অভিশাপ দেই বাঙালি সমাজকে তার হীনমন্যতার জন্য, মাকে অসম্মান, অপমান করার জন্য। একটি মাত্র মানুষ ও দেশে জন্মেছিল, তার স্নেহস্পর্শে আমি ধন্য হয়েছি। আমি তো তুচ্ছ অনাদরে কন্যা। তোমরা পিতৃঘাতী, সমস্ত বিশ্ব আজ তোমাদের ধিক্কার দিচ্ছে, কুচক্রী পিতৃহন্তা, লোভী ইতর। বিশ্বসভায় তোমাদের স্থান নেই।"
"তোকে কেউ যদি অপমান করে আমি তো খুনাখুনি করে ফেলবো। অপমান করবে কেন? কি করেছি আমি? আমার কণ্ঠে বিস্ময়। ভাইয়া উত্তর দিলো, কিছু করলে তো তোকে দোষ দেওয়া যেতো। আমরা তোদের রক্ষা করতে পারি নি সেই লজ্জা আর দুর্বলতাকে চাপা দেবার জন্য তোদের উপর অত্যাচার করতে পারি। তুই বুঝিস না আপু। মুক্তিযুদ্ধ এতো রক্ত নিয়েছে। কিন্তু আমাদের নোংরা স্বভাবটা ধুয়ে মুছে দিতে পারে নি। যত্তোসব রাজাকারের বাচ্চা ।"যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু কলুষিত মন মুক্তি পায় নি। অধিকাংশের ক্ষেত্রে নিজের বাবা-মা, প্রিয় স্বামী, ভাই, পরিবার সমাজ কেউ মেনে নেয় নি। বাজে ইঙ্গিত আর অপবিত্র আখ্যা দিয়ে ত্যাগ করেছে সেই নারীদের। বঙ্গবন্ধু যাদের মা বলে বীরাঙ্গনা সম্বোধন করলেন তাদের শুনতে হল বারাঙ্গনা ডাক!!
একটি মেয়ে তার জীবনে যা কামনা করে আমি তার সব পেয়েছি । তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। কিসের অভাব আমার, আমি কি চাই? হ্যাঁ, একটা জিনিস, একটি মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যু মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে যাবে। এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তোমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।কি ছোট্ট একটা আকাঙ্ক্ষা! একটু সম্মান! আমরা রোজই এখন একটা না একটা পাশবিক নির্যাতনের খবর পাই, তাই না? কিন্তু সেই নারীর যন্ত্রণাকে কতটুকুই বা উপলব্ধি করতে পারি! একজন পুরুষ হয়তো তার স্বজাতির এহেন নীচ কর্মকান্ডে বিব্রত হয়, পরিবারের নারীদের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়। আর আমার স্বজাতি শিউরে ওঠে! কেউ কেউ আতঙ্কে নীল হয়ে যায় আর হয়তো ভাবে বাসে তো শুধু একটু স্পর্শই করেছিল, আমি হয়তো বেঁচে গেছি। তার সাথে কি ঘটলো এটা!!? নারীরা হয়তো সেই বীরাঙ্গনাদের বা আজকের ধর্ষিতাদের সাথে হওয়া পাশবিক নির্যাতনের কতক শতাংশ বুঝতে পারে। কিন্তু পুরোটা নয়! কারণ আমরা তো ভুলে যাই সব। কিন্তু বীরাঙ্গনারা তো না চাওয়া সত্ত্বেও সেই যন্ত্রণা দেহের প্রতিটি কোষে আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন। তাহলে কেন তারা আমাদের থেকে ঐটুকু আশা করতে পারেন না!?