Jump to ratings and reviews
Rate this book

আমি বীরাঙ্গনা বলছি

Rate this book
ভূমিকা
১৯৭২ সালে যুদ্ধজয়ের পর যখন পাকিস্তানি বন্দিরা ভারতের উদ্দেশ্যে এ ভূখণ্ড ত্যাগ করে, তখন আমি জানতে পারি প্রায় ত্রিশ-চল্লিশজন ধর্ষিত নারী এ বন্দিদের সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছেন। অবিলম্বে আমি ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার অশোক ডোরা এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে নিয়োজিত মরহুম নুরুল মোমেন খান যাঁকে আমরা মিহির নামে জানতাম তাঁদের শরনাপন্ন হই। উভয়েই একান্ত সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে এসব মেয়েদের সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ আমাদের করে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নওসাবা শরাফী, ড. শরীফা খাতুন ও আমি সেনানিবাসে যাই এবং মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা লাভ করি।পরে নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে নারকীয় বর্বরতার কাহিনী জানতে পারি। সেই থেকে বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে আমার আগ্রহ জন্মে। নানা সময়ে দিনপঞ্জিতে এঁদের কথা লিখে রেখেছিলাম। ইচ্ছা ছিল, জনসমাজের এঁদের পরিচয় তুলে ধরার। এ ক্ষুদ্র গ্রন্থ সে আগ্রহেরই প্রকাশ। এখানে একটি কথা অবশ্য উল্লেখ। চরিত্রগুলি ও তাঁদের মন-মানসিকতা, নিপীড়ন, নির্যাতন সবই বস্তুনিষ্ঠ। তবুও অনুরোধ অতি কৌতূহলী হয়ে ওদের খুঁজতে চেষ্টা করবেন না। এ স্পর্শকাতরতা আমাদের অবহেলা এবং ঘৃণা ও ধিক্কারের দান। ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি অনেক দিন ধরেই প্রস্তুত করছিলাম। প্রকামে শঙ্কা ছিল। কিন্তু আমার স্নেহভাজনীয় ছাত্রী কল্যাণীয়া বেবী মওদুদ উৎসাহ, প্রেরণা ও তাঁর অদম্য কর্মক্ষমতা নিয়ে এগিয়ে এলেন। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারির বইমেলার জন্য ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ ১ম খণ্ডের পাণ্ডুলিপি ভীত কম্পিত হস্তে, সংশয় শঙ্কাকূল চিত্তে প্রকাশকের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু না, প্রজন্ম একাত্তর এই দেশপ্রেমিক রমণীদের মাতৃসম্মানে সমাদৃত করেছে। তারা জানতে চেয়েছে সেই সাহসী বীরাঙ্গনাদের কথা। তাই সাহসের ভর করে এগুলাম। অনেকে সংবর্ধনা ও সম্মান জানাবার জন্য এঁদের ঠিকানা চেয়েছেন। তার জন্য আরও একযুগ অপেক্ষা করতে হবে। যদি জীবনে সময় ও সুযোগ পাই তৃতীয় খণ্ড প্রকাশের বাসনা রইল ধর্মান্ধতার কালিমা দূরীভূত করতে। আমার প্রকাশকের সঙ্গে অগণিত পাঠকের প্রতি রইলো সকৃতজ্ঞ শুভেচ্ছা।
নীলিমা ইব্রাহিম

160 pages, Hardcover

First published January 1, 1998

34 people are currently reading
734 people want to read

About the author

Nilima Ibrahim

4 books16 followers
Nilima Ibrahim (Bangla: নীলিমা ইব্রাহীম) was an Bangladeshi educationist and social worker. She is well known for her depiction of raped and tortured women in the 1971 Bangladesh Liberation War in her book Ami Birangona Bolchhi (I, the heroine, speaks).

She earned bachelors' degrees in arts and teaching from the Scottish Church College, which was followed by an MA in Bangla literature from the University of Calcutta in 1943. She would also earned a doctorate in Bengali literature from the University of Dhaka in 1959.

She was a professor in the department of Bangla in the University of Dhaka. She also served as the chairperson of the Bangla Academy, and as the Vice Chairperson of the World Women's Federation's South Asian Zone.

She was honored with Bangla Academy Award (1969), Ananya Literary Award (1996), Ekushey Padak (2000).

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
239 (63%)
4 stars
100 (26%)
3 stars
30 (7%)
2 stars
3 (<1%)
1 star
4 (1%)
Displaying 1 - 30 of 65 reviews
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews621 followers
March 5, 2017
কিছু বলার মত মনের অবস্থা বা ভাষা কোনটাই আমার নেই। কিন্তু কিছু না বললে শান্তি পাচ্ছি না।

বীরাঙ্গনা...। তাদের মর্যাদা কি দিতে পেরেছি আমরা? এই স্বাধীন বাংলার মানুষেরা? না পারি নি। আমার মনে হয় আজও পারবো না। সমাজের হাতে গোনা কিছু মানুষ এইসব বীর নারীদের আজ সম্মান দিতে প্রস্তুত। বেশিরভাগই পারবে না বীরাঙ্গনাদের মন থেকে যথার্থ সম্মান দিতে। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়, আজ যদি একটি মেয়ে ধর্ষিত হয় তবে সমাজ মেয়েটির দোষ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগে যায়। যেন কোন দোষ থাকলেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করাটা ন্যায্য। আরও একটি ঘটনা বলি যেটা আমাকে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি নাটক মঞ্ছস্থ করা হয়। একটি মেয়েকে গ্রামের রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। তারপর যুদ্ধ শেষ হলেও মেয়েটির জীবনের যুদ্ধ শেষ হয় না। খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময় মেয়েটির দিকে যে ধরণের মন্তব্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে এরপর নিজেকে এই জেনারেশনের একজন বলতে দ্বিধা হয়।

"আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটিতে কয়েকজন বীরাঙ্গনার উপর অত্যাচার আর স্বাধীনতা পরবর্তী অবিচারের কথা বলা আছে। যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা সবাই সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন অসীম সাহসিকতায় আর পরম ধৈর্য দিয়ে। কিন্তু এমন অনেক বীরাঙ্গনা আছেন যারা স্বীকৃতি পাননি। সমাজের অবিচার তাদের তিল তিল করে মেরেছে। তাদের দুঃখ গাঁথা অজানাই থেকে গেল। থাক, যেটুকু জানলাম তাতেই মর্মে মর্মে আঘাত পেয়েছি। মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের যে অবমাননা তাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দেয়।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews417 followers
December 12, 2022
বিশেষ ভালো লাগে নাই। বইটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব মাথায় রেখেই বলছি, বীরাঙ্গনাদের বয়ানে অনাবশ্যকভাবে লেখিকা মেলোড্রামার আবহ সৃষ্টি করেছেন।রূঢ় বাস্তব ঘটনা না, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাজানো গল্প পড়ছি বলে মনে হয়েছে।সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বইটিকে বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লেখা প্রতিনিধিত্বশীল রচনা বলা হয়।কিন্তু যাদের কথা বইতে আলোচিত হয়েছে তারা প্রত্যেকে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়লেও তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন এবং নিজের পরিবার বা কাউকে পাশে পেয়েছেন চরম বিপদে(উজ্জ্বল ব্যতিক্রম)। প্রায় প্রত্যেকটা পরিসমাপ্তিই "তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো।" বাস্তবতা কী এমন?দুই লক্ষ মতান্তরে তিন/সাড়ে তিন লক্ষ বীরাঙ্গনার মধ্যে কতজন সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পেরেছেন? যারা ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে ছিলেন বা বাঁচতে পারেননি, সমাজ যাদেরকে টিকতে দ্যায়নি, উঠে দাঁড়াতে দ্যায়নি,ভয়ংকর মানসিক নির্যাতন করে জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের সংখ্যাটাই বেশি। যারা বীরাঙ্গনাদের পরিণতি নিয়ে ধারণা লাভের জন্য বইটি পড়বেন বা প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে কিছুই জানেন না তারা ভাববেন বীরাঙ্গনারা চরম বিপদে পড়লেও সমাজ তাদের জায়গা দিয়েছে এবং তারা ভালোই ছিলেন শেষমেশ। অথচ যারা যুদ্ধ বা বীরাঙ্গনাদের নিয়ে যৎসামান্য পড়ালেখা করেছেন তারা জানেন ধারণাটায় কতো বড় গলদ আছে।
Profile Image for Zunaed.
54 reviews119 followers
February 12, 2017
"একটা মেয়ে তার জীবনে যা কামনা করে আমি তার সব পেয়েছি। তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে উঠে। কীসের অভাব আমার, আমি কী চাই? হ্যাঁ, একটা জিনিস চাই, একটি মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রয়ে যাবে। এই প্রজন্মের একটি তরুণ বা তরুণী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওই পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সঙ্গীতে তোমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।"

মনে হচ্ছিল, আমি চলে যাই, বলি, আমরা তোমাকে প্রণতি করি। কিন্তু থমকে গেলাম, আমরা কি সত্যিই প্রণতি করি? আমি একা বা আমার মত সমাজের একটা বিচ্ছিন্ন অংশ গিয়ে কোন অধিকারে "আমরা" শব্দটা উচ্চারণ করবো? বাংলাদেশি বাঙালি সমাজ, অন্তত এই ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজও বীরাঙ্গনাদের বারাঙ্গনা বলতে দ্বিধা করে না।
"বলতাম, জেরিনা এই মেয়েদের মনে আগুন জ্ব্রেলে দিতে পারিস না, ওরা কেন মাথা নিচু করে চলে? নীলিমাদি ওদের চারদিকে তোমাদের সমাজ যে আগুন জ্বেলে রেখেছে তারই উত্তাপে ওরা মাথা তুলতে পারে না। বেশি বেশি বক্তৃতা দিও না।"

বইটা পড়লাম। অনেকটা সময় নিয়ে। এই আকারের একটা বই পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে। বই পড়ার সময় মাথাটা স্বাভাবিকভাবেই নিচের দিকে ঝুকে থাকে, চোখ দুটোকে বইয়ের পাতার দিকে রাখতে হয় বলে। বইটা পড়ার পর মাথাটা আরো অনেক বেশি নিচের দিকে ঝুকলো। অপমানে, লজ্জায়, ঘৃণায়। কাদের প্রতি ঘৃণা? পাকিস্তানিদের? বিহারীদের? রাজাকারদের? না। তাদের নতুন করে ঘৃণা করার কিছু নেই। “পাকিস্তানিদের আমি
অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।”


এখন করছি সেইসব বাঙালিদের, যারা বীরাঙ্গনাদের বারাঙ্গনার সম্মান দিয়েছে। আমি অবিশ্বাস করি সেই সমাজকে, সেই সমাজের মানুষকে, যারা বীরাঙ্গনাকে স্বাধীনতার পর ফিরিয়ে নিতে পারে না, সমাজে আরো পাঁচজনের সাথে বাঁচতে হবে বলে। আমি ঘৃণা করি সেই দালানকে, যে দালান বীরাঙ্গনার পুনর্বাসনের টাকায় আকাশে মাথা তোলে, আর নিজের মাঝে স্থান দেয় না সেই পাপী উচ্ছিষ্ট বীরাঙ্গনাকে।
"না না, তবুও হ্যাঁ, তোমাকে শেষ কথাটা বলে যাচ্ছি নীলা আপা, আমি নিকেলকেও বলে রেখেছি আমার মৃত্যুর পর আমাকে কেউ বাংলাদেশে নেবার চেষ্টা করোনা। জন্ম দিলে জননী হওয়া যায়, কিন্তু লালনপালন না করলে মা হওয়া যায় না। আমি জন্মেছিলাম সোনার বাংলায়, লালিত হচ্ছি ডেনমার্কের কঠিন ভূমিতে। তবু সেই মাটিতেই হবে আমার শেষ শয্যা। দেশে ফিররে আমি সামান্য একটি অজ্ঞাত উপেক্ষিত মেয়ে। কিন্তু প্রতি নিশ্বাসে আমি অভিশাপ দেই বাঙালি সমাজকে তার হীনমন্যতার জন্য, মাকে অসম্মান, অপমান করার জন্য। একটি মাত্র মানুষ ও দেশে জন্মেছিল, তার স্নেহস্পর্শে আমি ধন্য হয়েছি। আমি তো তুচ্ছ অনাদরে কন্যা। তোমরা পিতৃঘাতী, সমস্ত বিশ্ব আজ তোমাদের ধিক্কার দিচ্ছে, কুচক্রী পিতৃহন্তা, লোভী ইতর। বিশ্বসভায় তোমাদের স্থান নেই।"

নিঃসন্দেহে আমরা এই অভিশাপের যোগ্য। জানিনা কোনোদিন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবো কিনা। শুধু জানি, না, জানিনা, বিশ্বাস করি, মায়ের অভিশাপের মাঝেও যেমন সন্তানের জন্য মঙ্গলকামনা লুকিয়ে থাকে, তেমনি আমাদের মায়েদের অভিশাপের লুকিয়ে বখে যাওয়া সন্তানের জন্য মঙ্গলকামনা। এই সাহসী মহিয়সী মায়েদের প্রার্থনা বৃথা যেতে পারে না। একদিন মায়েরা তাঁদের সম্মান ফিরে পাবে, আর সেদিন বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবেই। হয়তো আমার চোখ দেখবে না, কিন্তু আমার চোখ যে মাটির সাথে মিশে যাবে, সেই মাটি দেখবে। দূর থেকে বীরাঙ্গনারা দেখবেন। তাদের ত্যাগের সাফল্যে হয়তো তাদের মুখে সেদিন হাসি থাকবে, যে হাসিটা আমরা স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এনে দিতে পারিনি।

পুনশ্চঃ
কিছু কিছু বই আছে যেগুলোকে পাঁচতারা দেয়ার পরেও মনে হ���়, কম হয়ে গেল। এই বইটা তেমনই একটা বই।
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
November 1, 2020
"তোকে কেউ যদি অপমান করে আমি তো খুনাখুনি করে ফেলবো। অপমান করবে কেন? কি করেছি আমি? আমার কণ্ঠে বিস্ময়। ভাইয়া উত্তর দিলো, কিছু করলে তো তোকে দোষ দেওয়া যেতো। আমরা তোদের রক্ষা করতে পারি নি সেই লজ্জা আর দুর্বলতাকে চাপা দেবার জন্য তোদের উপর অত্যাচার করতে পারি। তুই বুঝিস না আপু। মুক্তিযুদ্ধ এতো রক্ত নিয়েছে। কিন্তু আমাদের নোংরা স্বভাবটা ধুয়ে মুছে দিতে পারে নি। যত্তোসব রাজাকারের বাচ্চা ।"
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু কলুষিত মন মুক্তি পায় নি। অধিকাংশের ক্ষেত্রে নিজের বাবা-মা, প্রিয় স্বামী, ভাই, পরিবার সমাজ কেউ মেনে নেয় নি। বাজে ইঙ্গিত আর অপবিত্র আখ্যা দিয়ে ত্যাগ করেছে সেই নারীদের। বঙ্গবন্ধু যাদের মা বলে বীরাঙ্গনা সম্বোধন করলেন তাদের শুনতে হল বারাঙ্গনা ডাক!!

বইটিতে আছে ৭টি কাহিনী। তারা, মেহেরজান , রীনা, শেফালী, ময়না, ফাতেমা এবং আমিনা- এই সাতজন নারীর মাথা উঁচু করে গর্বিত হয়ে "আমি বীরাঙ্গনা" শব্দ উচ্চারণের গল্প। তাদের কেউ কেউ পাশে পেয়েছিলেন আপনজনকে, আবার দুইএকজন পেয়েছিলেন অপরিচিতের মাঝে আপনজনের খোঁজ।
কিন্তু আদতে কতজনই বা এভাবে সাহসের উপর ভর করে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল। আর কতজনই বা কাউকে পাশে পেয়েছিল। দেশমাতৃকার জন্য লাল রক্ত আর ঘরের মায়ের প্রতি ঘৃণা আর লাঞ্ছনা। বাংলা মায়ের সন্তানেরা একই সাথে এমন মিশ্র অনুভূতি কিভাবে যে লালন করলো!

তবে হতবাক হতে হয়! আজ প্রায় অর্ধ শত বছর পরেও সমাজ বদলায় নি, নোংরা স্বভাব বদলায় নি। কোনো নারী যদি ধর্ষণের স্বীকার হয়, কিছু নোংরা মানুষ কত প্রশ্ন তোলে? কত বিশ্লেষণ তাদের! ধর্ষিতা হয়ে, নির্যাতন সহ্য করে সেই যেন পাপী, তার কপালে যেন এটাই লেখা ছিল।

বীরাঙ্গনা রীনা বলেছিলেন-
একটি মেয়ে তার জীবনে যা কামনা করে আমি তার সব পেয়েছি । তবুও মাঝে মাঝে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। কিসের অভাব আমার, আমি কি চাই? হ্যাঁ, একটা জিনিস, একটি মুহূর্তের আকাঙ্ক্ষা মৃত্যু মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে যাবে। এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তোমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।
কি ছোট্ট একটা আকাঙ্ক্ষা! একটু সম্মান! আমরা রোজই এখন একটা না একটা পাশবিক নির্যাতনের খবর পাই, তাই না? কিন্তু সেই নারীর যন্ত্রণাকে কতটুকুই বা উপলব্ধি করতে পারি! একজন পুরুষ হয়তো তার স্বজাতির এহেন নীচ কর্মকান্ডে বিব্রত হয়, পরিবারের নারীদের কথা ভেবে আতঙ্কিত হয়। আর আমার স্বজাতি শিউরে ওঠে! কেউ কেউ আতঙ্কে নীল হয়ে যায় আর হয়তো ভাবে বাসে তো শুধু একটু স্পর্শই করেছিল, আমি হয়তো বেঁচে গেছি। তার সাথে কি ঘটলো এটা!!? নারীরা হয়তো সেই বীরাঙ্গনাদের বা আজকের ধর্ষিতাদের সাথে হওয়া পাশবিক নির্যাতনের কতক শতাংশ বুঝতে পারে। কিন্তু পুরোটা নয়! কারণ আমরা তো ভুলে যাই সব। কিন্তু বীরাঙ্গনারা তো না চাওয়া সত্ত্বেও সেই যন্ত্রণা দেহের প্রতিটি কোষে আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন। তাহলে কেন তারা আমাদের থেকে ঐটুকু আশা করতে পারেন না!?


এইবার বইয়ের লেখনির ব্যাপারটা! ভয় পাবেন না বীভৎস বর্ণনা নেই, বেঁচে গেছি। এই প্লটের বীভৎসতার বর্ণনা সহ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি নারীর হবে নাহ!
লেখিকা নীলিমা ইব্রাহিমকে এজন্য ধন্যবাদ। যদিও কাহিনীর বর্ণনাতে একটু প্যাঁচ লেগে গিয়েছিল। একবার লেখিকার জবানিতে আরেকবার বীরাঙ্গনাদের জবানিতে, তবুও পাঁচ তারা। লেখিকা এবং তাকে যারা যারা এই তথ্য সবার সামনে আনতে সাহায্য করেছিল সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

~৩১ অক্টোবর, ২০২০
Profile Image for Nu Jahat Jabin.
149 reviews241 followers
July 12, 2016
বইটা পড়ার পর আমার বলার মত কোন ভাষা নাই । বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই মন মানসিকতায় যে পশুর সমান রয়ে গিয়েছে সেটা খুব ভাল বুঝা যায় বীরাঙ্গনা সাথে আচরণ দিয়ে। এই কথা বলে লাভ নাই যে তখনের চেয়ে পরিস্থিতি চেঞ্জ হয়েছে, কিছুই পরিবর্তন হয় নি । আমরা দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক আবেগতাড়িত বক্তব্য দেই। কিন্তু একটা জিনিস সযতনে এড়িয়ে যাই সেটা হল সেই সময়ে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে লাঞ্ছিত মেয়েদের কথা।


সমাজকে তাও তুচ্ছ জ্ঞান করা যায় কিন্তু নিজের পরিবার যখন ত্যাগ করে তখন? একটা মেয়ের জন্য এমনিতেই চলার পথ খুব একটা মসৃণ না। ধর্ষিত মেয়েদের জন্য তো আরো না। ঠিক কতটা কঠিন বুঝা যায় যখন মাত্র একজন বীরাঙ্গনার কথা কেউ জানবে। পরিবার সমাজ নিজের চেনা জানা গন্ডিটাও নরকের সমান হয়ে গিয়েছিল এই নারীদের জন্য।
আমি বইটা পড়ে ঠিক যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে বেশি হয়েছি হতাশ- বাবা , ভাই, প্রেমিক , স্বামী সমাজের কাপুরুষতার :/

ভাগ্যিস নিষ্টুরতা পরিমান করার কিংবা অন্যায় পরিমাপের কোন স্কেল নাই । আমি ঠিক জানি না পাকিস্তানী সেনারা নাকি বাংলাদেশী কারা ঠিক বেশি অন্যায় করেছেন, কারা ঠিক বেশি নিষ্টুরতা দেখিয়েছেন । তবে কেউ যে কারো চেয়ে কম করেছেন সেটাও না। এত দিন পাকিস্তানীদের, রাজাকারদের অভিশাপ দিতাম এখন দেখি এই সমাজের ভিতরেই সমস্যা -_-
হতাশ হতাশ হতাশ .........
বিধাতার প্রতি আমার খুব একটা সম্মান বোধ আছে তেমন না, বিধাতার বিচারের উপর ও খুব একটা আস্থা নাই । মানুষ যা পায় না সেই যন্ত্রনাটাও দেবার মত অসাধারন ক্রেডিট বিধাতার আছে। এই প্রথম বারের মত বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখালাম সেই সময়ে কিংবা কোন যুদ্ধের ভিতরে না থাকার কারনে।

মুদ্রার উল্টা পিঠ থাকে – এই কারনে আতাউরের মত কাপুরুষ পালিয়ে গেলেও আর্মি ডাক্তার নাসির যে পরিমান শ্রদ্ধা সম্মান দেখিয়েছেন সেটা মুগ্ধ করেছে। সমস্যা হল মুদ্রার উল্টো পিঠটা খুবই কম । বেশির ভাগের জন্য এইটায় সত্য যে সমাজ , পরিবার দেশ তাদের ত্যাগ করেছে। তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।


বাংলাদেশ এখন ও গর্ব করে বলতে পারে না , আমার বীরাঙ্গনা আছে। এই দেশের স্বাধীনতায় তাদের অবদান ও কম নাই ।আফসোস আর আফসোস। এত লজ্জা রাখার জায়গাটা কোথায় ?


আমি খুব জঘন্য রিভিউ দাতা একে তো মনের ভিতরে যে তোল পাড় হচ্ছে বইটা পড়ে সেটা প্রকাশ করার সামর্থ্য নাই তার উপর বইটার ঘটনাগুলো ঠিক কতটা মর্মস্পর্শী সেটাও তুলে ধরতে পারলাম না
Profile Image for Shabnam Nadiya.
Author 22 books73 followers
January 8, 2020
I've read and reread Neelima Ibrahim's Ami Birangona Bolcchi (I, the Birangona, Speak) many times through the years, and just finished reading it again. It compiles the testimonies of seven women who were raped during our War of Liberation and survived; seven among the estimated 200,000-400,000.

No matter how many times I read this book, I can never read it without breaking down again and again. Every single time what devastates and horrifies me more than the wartime sexual violence and atrocities carried out by the Pakistani army and their collaborators, is how the Birangona were, and continue to be, treated in our liberated country by our own people. And every single time I encounter my first moment of rage when I read Dr. Ibrahim's 1997 preface where she explains why she never worked on the companion volume she had planned: “I desist for two reasons…The second being the conservative mindset of contemporary society. Our current society is more conservative than that of 1972. They do not even hesitate to label the Birangona ‘sinful.’ The normal, easeful life from which they were deprived twenty five years ago — I hesitate to humiliate them again…It is wrong to rub salt in old wounds, to humiliate and hurt anew, those who we once cast aside from our society.”

It's 2017: Our society's perception of rape survivors, and the blame-game still hasn't changed.
Profile Image for সান্তা রিকি.
Author 13 books70 followers
March 13, 2017
আমি বীরাঙ্গনা বলছি...এমন একটা বই নিয়ে যেটাকে অনেকেই হয়ত বিসিএসের বাংলার এমসিকিউ হিসেবে অন্য অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের নামের মধ্যে শুধুমাত্র নাম কে ওয়াস্তে খেয়াল করে...পড়ার উপযোগী কোন বই হিসেবে নয়! বইটির নাম মেলা আগে দেখলেও সত্যি বলতে পড়ার সৌভাগ্য এতদিন পরে এসে হয়েছে। কিছুটা দুর্ভাগ্যই বলতে হয়; সময়ের হিসাব খুটিয়ে খুটিয়ে রাখলেও এই ক্ষেত্রে বেশ দেরি করে ফেলেছি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি পড়তে শুরু করেছিলাম স্বাদ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে কিন্তু পড়া শেষ করার পর এটা আমার পড়া বেস্ট বইগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অনেকে ইতিমধ্যে হয়ত পড়েও ফেলেছেন...কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই অসাধারণ বইটা পড়া হলো এতটা কাল গিয়ে! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে...এই ভিত্তিক গল্প অনেকভাবে আমরা ফিকশনের মাধ্যমে জেনেছি, দেখেছি...... তাহলে অন্য কোন বই না, এটাই এত মনে ধরলো কেন? এই বই মনে ধরার অন্যতম কারণ, ড. নীলিমা ইব্রাহিমের বইয়ের চরিত্রগুলো বাস্তব, জলজ্যান্ত...সাতজন বীরাঙ্গনার হাহাকার, আক্ষেপ এবং অভিমান আছে এতে। এবার প্রশ্ন আসবে সব বাদ দিয়ে ড. নীলিমা ইব্রাহিম এই বীরাঙ্গনা নিয়েই লিখেছিলেন কেন ! বইয়ের ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন তিনি, ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে বীরাঙ্গনাদের যুদ্ধ পরবর্তীকালীন অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে লেখিকা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা পরবর্তীকালে তাঁর মনে ভীষণ প্রভাব ফেলেছিলো। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি যেসব বীরাঙ্গনাদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই রচিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি। বইটা দুই খন্ডে লিখেছিলেন তিনি যার প্রথমটা ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়টা ১৯৯৭ সালে বেরিয়েছিল। তৃতীয় খন্ড লেখার চিন্তা করলেও শারীরিক অসুস্থতা এবং অভিমানের কারণে পরে সেটা আর সম্পূর্ণ করেননি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ যেখানে জাতির সবথেকে উপেক্ষিত অংশ বীরাঙ্গনা এবং তাদের করুণ গল্পগুলোকে নিজস্ব আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম। বইয়ের শুরুর দিকের কিছু অংশ তুলে দিলাম.....শব্দগুলো খেয়াল করে দেখুন অনেক চাপা অভিমান যেন ব্যক্ত করা হয়েছে।

“এ জীবনে সবকিছুর স্পর্শই আমি পেয়েছি; কখনও মৃদু কোমল স্পর্শ বা আঘাত আবার কখনো অশনি পতনের দাবদাহ। সেকথা, আমার সে অনুভূতির গভিরতাকে কখনও দ্বিতীয় ব্যাক্তির শ্রবণগোচর করবো এমন সাহস আমার ছিল না। কারণ এ সাহস প্রকাশের শিক্ষা শৈশব থেকে কখনও পেয়ে আসিনি। নামতা পড়ার মতো শুধু আউড়িয়েছি আমি মেয়ে, আমাকে সব সইতে হবে; আমি হবো ধরিত্রীর মতো সর্বংসহা। প্রতিবাদের একটিই পথ, সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা বা পাতাল প্রবেশ। সীতা ছিলেন দেবী। তাই ও’দুটোর কোনটারই সদ্ব্যব্যবহার আমি করতে পারি নি। যখন চারিদিকে শুধু ছিঃ ছিঃ ধ্বনি শুনেছি, সমাজপতি এবং অতি আপনজন বলেছেন, ‘মরতে পারলি না হতভাগী, আমাদের মারবার জন্য এই কালোমুখ নিয়ে ফিরে এসেছিস?’ তাদের মুখ ফুটে বলতে পারি নি, ‘না মরতে আর পারলাম কই? তার পথও তো তোমরা করে দিলে না। বাঁচাবার জন্য হাত বাড়াও নি, মরবার পথেও তো সহায়তা করো নি। না সে কথা মুখে বলতে পেরেছো, না কাজে পরিণত করবার মতো সৎসাহস সেদিন তোমাদের ছিল, আজও নেই, ভবিষ্যতের কথা ভবিতব্যই জানেন।”

তারা, মেহেরুন্নেসা, রিনা, শেফা, ময়না, ফতী পাগলী এবং আমিনার মাধ্যমে লেখিকা বীরাঙ্গনাদের সামগ্রিক অবস্থার একটা ক্ষুদ্র চিত্র তুলে ধরেছেন। বীরাঙ্গনা শুধু যেন উপাধিই ছিল না, তাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের একটা নিয়ামকও ছিল। ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে যখন তারা ছিল, তাদের মধ্যে অনেকেরই পরিবার তাদের সাথে দেখা করতে আসত কিন্তু তাদেরকে কখনও নিজেদের সাথে নিয়ে যাবার কথা বলত না কিংবা নিয়ে যেত না। অনেকের তো পরিবার তাদের বলেই দিয়েছিল যেন তারা যোগাযোগ না করে। কারও কারও সংসার সারা জীবনের মতো ভেঙে গেছিলো। মনে মনে একটু প্রেক্ষাপটটা কল্পনা করুন তো....অনুভব করতে পারছেন? দুঃখের কথা তো এটাই...আমরা তাদেরকে অনুভব করতে পারি না। বুক ফুলিয়ে আমরা বলতে পছন্দ করি আমি রক্ষা করব, আমি পাশে থাকব...কিন্তু কাজের সময় আমরা নিরব দর্শক কিংবা কাপুরুষ হয়ে যাই। সম্ভ্রমও হারিয়েছে তারা, সমাজের কাছে লজ্জার বিষয়ও হয়েছে তারাই। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী...এর অর্থ হলো জননী এবং জন্মভূমি স্বর্গ অপেক্ষা পবিত্র। আমরা জন্মভূমিকে রক্ষা করতে পারলেও জননীকে পারিনি এবং প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় ‘কলঙ্কিনী’ অ্যাখ্যায়িত করেছি। বিশ্বকবি হয়ত আক্ষেপের সুরে ভবিতব্যের কথা আগেই বলে গেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি।’ বইটাতে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর কেউ দিতে পারবে না, উত্তর দেয়া হয়ত সম্ভবও না। সামাজিক প্রেক্ষাপটেই বলি বীরদেরকে মানুষ যেভাবে সদর্পে গ্রহণ করে, বীরাঙ্গনাদের কথা মানুষ উল্লেখ করতে যেন কুণ্ঠাবোধ করে। বীরাঙ্গনারা যেন সমাজের লজ্জা, কলঙ্ক কিংবা জাদুঘরে রাখার মতো বিষয়। ‘ও... বীরাঙ্গনা.....এখনও বেঁচে আছে’...ভ্রু কুঁচকে দেখে অনেকেই, শ্রদ্ধার চোখে নয়! যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্মানের সাথে সামনে আসলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। আমরা হলাম বিবেকমান জাতি আর এটা আমাদের বিবেকের দৃষ্টান্ত...বীরাঙ্গনারা নষ্টা, পাপিষ্ঠা...তাদের কথা উল্লেখ করাও পাপ! তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শত্রু শিবিরে অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ সংসারের হাতে তারা বারবার নিহত হয়েছেন। তাদের বেঁচে থাকাটাই যেন অখন্ডনীয় পাপ। গল্পটা সেসব মানুষেরই...যাদের সত্ত্বাকে উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বইয়ে উল্লেখকৃত আক্ষেপের কিছু দৃষ্টান্ত দেখুন-

“আমি নিজে সচেতন ও দৃঢ় বিশ্বাসী যে আমি একজন বীরাঙ্গনা। আমার রাষ্ট্র আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার পিতামাতা হাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের জুলুমবাজির ভয়ে আমি তাদের ঘরে যেতে পারি নি। তবে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন আপনাদের দৃষ্টিতে আমি বীরাঙ্গনা না হলেও নিঃসন্দেহে বারাঙ্গনা নই।”

বুদ্ধি হবার পর থেকে খুব সামান্যই বই পড়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে কিছু কিছু বই মুগ্ধ করেছে, কিছু কিছু বই স্বপ্ন দেখিয়েছে, আবার কিছু বই চরম বিরক্তও করেছে। কিন্তু...এই প্রথম কোন বই মনের গভিরে গিয়ে বিঁধেছে। কষ্ট লেগেছে...তারপরেও আচ্ছন্নের মতো পড়েছি। বেশিক্ষণ পড়তে গেলে নিজের অজান্তেই ফুঁপিয়েছি। তারপরেও আমি বীরাঙ্গনা বলছি’র আবহ থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
June 26, 2016
বেশী বড় বই নয় তবে বিষয়বস্তু নিয়ে বলার যোগ্যতা আমি সামান্য পাঠক রাখি না। একটু পড়েছি আর বারবার চোখ ভিজে গিয়েছে।বারংবার মনে হয়েছে যেসব মা-বোনের মহান ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তাঁদের মিনিয়াম ঋণ শোধ করার ভদ্রতাও রাষ্ট্র বা আমরা দেখাই নাই এই ফ্যাক্টটাই শ্রদ্ধেয় নীলিমা ইব্রাহীম তুলে ধরেছেন।
9 reviews9 followers
March 11, 2015


যুদ্ধের সবচেয়ে বড় শিকার হয় নারী ও শিশু। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। বহুদিন ধরে পড়তে চাওয়া নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটি পড়ে শেষ করলাম। খুব সহজ ভাষায় সাতটি মেয়ের বীরত্বের কাহিনী এতে লেখা আছে। একশো ষাট পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে খুব বেশী সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু আমার অনেক সময় লেগেছে। আমি পাঁচ দিনে সাত জনের গল্প পড়লাম কারণ আমি হজম করতে পারতাম না। অনেকক্ষণ ধরে ভাবতে হয়, থমকে থাকতে হয়। কীসের মধ্যে দিয়ে গেছেন তাঁরা। কিছু লিখবো না লিখবো না ভেবেও শেষ পর্যন্ত ��িখছি। তাদের নাম-পরিচয়, পুর্নবাসন, তাদের সংগ্রাম নিয়ে, তথ্য উপাত্ত ভিত্তিক পূর্নাঙ্গ কোন বই আছে কীনা, তাও জানা নেই। আমি বাংলাদেশের অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা দেখেছি কিন্তু শুধু তাদের ওপর করা অত্যাচার এবং যুদ্ধ পরবর্তী তাদের মানসিক কষ্টের ওপর কারো কোন কাজ দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না। তাদের পুর্নবাসনের কার্যক্রমের ওপরে চমৎকার সব ছবি তৈরী হতে পারতো। তাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের আত্মত্যাগ নিয়ে জানতো, তাতে করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের উপলব্ধি ও শ্রদ্ধা বাড়তো। আজকে যুদ্ধ বিরোধী পক্ষ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতো ধোঁয়াশা তৈরী করে নতুন ছাগু প্রজন্ম তৈরী করতে পারতো না। এই থেকে কিছুটাতো বুঝতে পারি আমাদের সমাজ বীরাঙ্গনাদের মূল্যায়ন কীভাবে করেছে। যুদ্ধের সময় শারীরিক অত্যাচার আর যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে মানসিক অত্যাচার নিয়ে বীরাঙ্গনারা ধরতে গেলে একাই লড়ে গেছেন এবং তাদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছেন।

এই বইটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক আমার চোখে পড়েছে, জীবন যুদ্ধে যারা শত কষ্টের মাঝেও হেরে যায় নি শুধু তাদের গল্প দিয়েই বইটি সাজিয়েছেন লেখিকা। আমি সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝতে পারি, সবাই এতো মানসিক, শারীরিক যন্ত্রনা পোহানোর মত শক্ত ছিলো না। সবাই সাঁতরে তীরে ভিড়তে পারেনি। অনেকেই হেরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। লেখিকা হয়তো ইচ্ছে করেই তাদের কথা সযতনে এড়িয়ে গেছেন। এই বইটি দিয়ে হয়তো লেখিকা আমাদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন, আমরা যারা সহজে হতাশ হই, হাল ছেড়ে দেই, নৈরাশ্যের অন্ধকারে হারিয়ে যেয়ে মুক্তি খুঁজি তারা যেনো যুদ্ধ করার, লড়ার মনোবল রাখি। আমাদের ইতিহাস অন্তত তাই বলে। বইটির সাত জন বীরাঙ্গনা ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক অবস্থা থেকে এসেছে। দর্জির মেয়ে আছে, গ্রামের বিত্তশালী কৃষকের মেয়ে আছে আবার শহরের উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা থেকে রাজনীতিবিদের মেয়ে আছে। যাদের অনেকেই আজো ঘুমোতে পারে না, আজো সেই পদশব্দ শুনতে পায়, শরীরে বিভিন্ন রকমের কষ্ট, যন্ত্রনা, ব্যাধি যা মুখ খুলে কাউকে বলতে পারে না। তারা কী আজও অপেক্ষা করে নেই, তাদের পরিবার কী আজও অপেক্ষা করে নেই, এই হায়েনাদের বিচারের জন্যে? রাজনীতিবিদগন কবে তাদের আতর্নাদের দিকে কর্নপাত করবে? আর কত দিন বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদবে? এক মহাসাগর দীর্ঘশ্বাসে আজো বাংলা আকাশ ভিজে আছে মা। পয়তাল্লিশ বছর আশায় আছেন তাঁরা .........

মেহেরজান চরিত্রটি বলছে, “জীবনটা তো সরল সমান্তরালরেখায় সাজানো নয়। এর অধিকারী আমি সন্দেহ নেই, কিন্তু গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেন – কি বললেন আল্লাহ, পাগল হয়েছেন! বাঙালি মেয়ের জীবন পরিচালিত হবে আল্লাহর নির্দেশে! তাহলে এদেশের মৌলবী মওলানারা তো বেকার হয়ে থাকবেন, আর রাজনীতিবিদরাই বা চেঁচাবেন কি উপলক্ষ করে? না এসব আমার মতামত, অভিযোগের নিজস্ব বাঁধা আটি নয়।“

“যে কথা তাহের (ফাতেমার স্বামী) জানে না সেই কথাই চাঁপা ডাক্তারকে বললো। সে নির্মম কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে সে নিজেও কেঁদে উঠলো। ডাক্তার নিচু হয়ে চাঁপাকে প্রণাম করলো। দিদি, আপনারা প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আশ্চর্য এতো ত্যাগ স্বীকার করে দেশ স্বাধীন করলো বাঙালিরা, আর মা বোনদের দেয়া ত্যাগের মূল্য দিতে পারলো না। দূর্ভাগ্য সে দেশের!”

“আমি মাঝে মাঝে ওর ঘরে গিয়ে বসতাম। চোখ নিচু করে মিনা বেরিয়ে যেতো অথবা ঘরে ঢুকতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে খুব কুন্ঠিতভাবে জবাব দিতো। বলতাম, জেরিনা এই মেয়েগুলোর বুকে আগুন জ্বেলে দিতে পারিস না, ওরা কেন মাথা নিচু করে চলে? নীলিমাদি তোমাদের এ সমাজ ওদের চারিদিকে যে আগুন জ্বেলে রেখেছে তার উত্তাপেই ওরা মুখ তুলতে পারে না। বেশি বেশি বক্তৃতা দিও না। ওদের সম্পর্কে জেরিনা খুব বেশি স্পর্শকাতর ছিল।“

কয়েকবার একটি লাইন ঘুরেফিরে এসেছে বইটিতে, “পাকিস্তানি সেনারা যখন আমাদের পেয়েছে তখন আমরা রাজাকারদের উচ্ছিষ্ট” --- পুরো বইটির মধ্যে এই একটি লাইন আমার কাছে যথেষ্ঠ পীড়াদায়ক মনে হয়েছে। লেখিকা কেন এই ধরনের শব্দ চয়ন করেছেন, তিনি জানেন। একজন জীবন্ত মানুষ কী করে উচ্ছিষ্ট হতে পারে? যতো শারীরিক লাঞ্ছনাই তিনি ভোগ করে থাকুন। একজন প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখিকা যিনি হৃদয় দিয়ে বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্যে দিন রাত এক করে খেঁটে গেছেন তিনি কী অন্য কোন শব্দ চয়ন করে এই পারিপার্শ্বিকতার ছবিটা আঁকতে পারতেন না? কোন মানুষ সর্ম্পকে এ ধরনের কথা ভাবতে আমার হৃদয় মানে না। শারীরিক কারণে কেউ কী উচ্ছিষ্ট কেউ হতে পারে? পারে ক্ষতিকর স্বভাব চরিত্রের কারণে যেমন রাজাকাররা।

বইটিতে একটি ব্যাপার বার বার এসেছে, ধানমন্ডি নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনেক বীরাঙ্গনার স্বামী, ভাই, পিতা, নিকটাত্মীয় এসে দেখে করে গেছে, শাড়ি, খাবার উপহার এনেছে কিন্তু বাড়ি ফিরিয়ে নিতে পারবে না বলে দিয়েছে। অনেক পরিবার সরকার থেকে যুদ্ধক্ষতিগ্রস্তা এসব বীরাঙ্গনাদের জন্যে পাওয়া অনুদানের টাকা দিয়ে নিজেদের বাড়িঘর মেরামত করিয়েছে, কিংবা ব্যবসায় নিজেদের স্বচ্ছলতা খুঁজেছে। তাদের মধ্যে কোন কোন মুসলমান ধর্মালম্বী পিতামাতা তাদের কন্যাকে গ্রহন করলেও মোটামুটি বলা যায় (বইয়ের তথ্যানুযায়ী) কোন হিন্দু ধর্মালম্বীরা মুসলমান পিশাচ দ্বারা লাঞ্ছিত তাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নেয় নি। এমন কী যারা বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছে তারাও তাদের কন্যার সাথে কোন রকম সম্পর্ক রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কুমারী পূজা করা সনাতন ধর্মালম্বীরা কত সহজেই আত্মজাকে পাশ কাটিয়ে যায়। বার বার যুদ্ধের বলি আর ধর্মের বলি কেন মেয়েরাই? প্রসঙ্গতঃ কদিন আগে দেখা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি “ফিলেমোনা” মুভিটার নাম না উল্লেখ করে পারছি না। “ফিলেমোনা” ক্রিশ্চান ধর্মের বলি। অথচ ধর্মের আচার নিষ্ঠা পালনে মেয়েদেরকেই বেশি উদগ্রীব থাকতে দেখা যায়। কবে কোথায় এর শেষ কে জানে ..................


এই বাংলায় একজন মুক্তিযোদ্ধা গর্ব ভরে পরিচয় দিতে পারেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু একজন বীরাঙ্গনাকে লুকিয়ে যেতে হয় তার চরম দুঃখের আর নির্যাতনের কাহিনী। আমরা নিজেরা গর্ব ভরে বলি আমার চাচা, মামা, খালু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিন্তু চাতুরতার সাথে লুকিয়ে যাই আমার যেই আত্মীয়া ধর্ষিতা হয়েছিলেন তার কথা। এই পতাকায় কী তাদের আত্মত্যাগের রক্ত লেগে নেই? অনেক মহীয়সী বীরাঙ্গনা অনেক মনোঃকষ্টে আছেন, তারা দাবী করতে পারেন না যুদ্ধে তাদের অবদানের কথা। পরিবার-পরিজনদের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু এই লজ্জা কেন তাদের হবে? এই লজ্জাতো স্বাধীন বাংলাদেশের, বাঙালি জাতির। মানুষ হিসেবে আমাদের লজ্জা হওয়ার কথা। যে দেশ, জাতি তাদের মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি দায় তাদের .....সে দায় তোমাদের নয় মা।

(লেখাটা হয়তো বেশী আবেগতাড়িত, ক্ষমাপ্রার্থী সেজন্যে, এরকম একটা বই পড়ে মেয়ে হিসেবে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন)
তানবীরা
১৬/০২/২০১৫
Profile Image for Tasnima Oishee.
140 reviews26 followers
May 18, 2021
সেই ক্লাস ওয়ান থেকে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী পড়তে পড়তে আমাদের আশেপাশের একটা অংশ বেশ বিরক্ত। "সেই তো রানি, সেই তো রাজা- সেই তো একই ঢাল-তলোয়ার" এরকম একটা অবস্থা, তাই না? না, একটু ভুল বলেছি। রাজাদের ঢাল তলোয়ার আর রাজাদের বীরত্বের কথা আমরা সবাই জানি, আমরা জানি কিভাবে একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য সে দেশের সাধারণ মানুষরা নয় মাসের জন্য অসম্ভব অসাধারণত্ব দিয়ে লড়ে গিয়েছিলো। এই গল্পে একটি জিনিসের খুব অভাব থাকে, আমাদের রাণীদের গল্প, আমাদের বীরাঙ্গনাদের কথা।

এই বইটি তাঁদের নিয়ে। সাতজন বীরাঙ্গনার গল্প এখানে উঠে এসেছে। ১৯৭১ এর আগে তাদের সহজ সুন্দর ভালোবাসায় ভরা জীবন আর সেই বছরের শেষে তাদের পরিণতির পুরো গল্পটাই এখানে আছে। ১৯৭১ সালের শুরুতে যারা ছিলেন একটি বাড়ির সবচে আদরের মেয়ে, ভাইদের সবচে আদরের বোন কিংবা কারো প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা কারো প্রেমিকা- সেই ৭১ এর শেষে তারা হয়ে গেলেন একটি অচ্ছুৎ সমাজ। তারা হারিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জীবন কেটেছিলো ভূ-গর্ভস্থ বাংকারে, নয়মাস পরে এদেশের সবাই যখন স্বাধীনতার স্বাদ পেলো, তারা পেলেন শুধু ধিক্কার।

কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বাড়ির মতো নিরাপদ আশ্রয় থেকে, কেউ বা নিজের ছোট্ট মেয়েটির জন্য ঔষধ কিনতে ফার্মেসীতে গিয়েছিলেন। যেখানেই থাকুক, গল্প একই। জলপাই রঙের একটা মিলিটারির জিপ এসে থামলো, আর ��াত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো কিংবা খুব পরিচিত গ্রামের চেয়ারম্যান মেয়েটিকে তুলে একটি ক্যান্টনমেন্টে দিয়ে আসলেন। এই মেয়েগুলোর উপর চললো অমানবিক এক নির্যাতন। মাসের পর মাস... দিনের পর দিন.... কেউ কেউ পৃথিবীর এই কদর্য রূপের পুরোটা দেখার আগেই মরে গিয়ে বেঁচে গেলো, আর বাকিরা রয়ে গেলো বাকিটুকু দেখার জন্য। দেশ স্বাধীন হলো। যারা জীবন্মৃত হয়ে ওই বাংকার গুলোতে কোনোমতে বেঁচে ছিলো, তাদেরকে উদ্ধার করে আনা হলো ঢাকায়। বাড়িতে খবর দেয়া হলো। মজার ব্যাপার হলো- এই মেয়েগুলোকে তাদের বাবারা গ্রহণ করতে চাইলেন না, মায়েরা এই মেয়েটা কেন পাকিস্তানিদের ভোগে লাগবার আগেই মরে গেলো না তা নিয়ে আফসোস করতে লাগলো, ভাইয়েরা চাইলোনা সমাজ জানুক তাদের বোন এক "কলংক" নিয়ে বেঁচে আছে, তাদের স্বামীরা তাদের নিতে এলো না। এই যে এদেশেদের মায়েদের কিংবা বোনেদের রক্ষা করার দায়িত্ব তারা পালন করতে পারে নি, সেটার কোটা তারা পূর্ণ করলো মেয়েগুলো বেঁচে ফিরবার পরে তাদের দায়িত্ব না নিয়ে।

এই মেয়েগুলো সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা এলো, দেশ স্বাধীনের পর বেশ অনুদান ও পেয়েছিলো তাদের পরিবার। মজার ব্যাপার হলো, সেই অনুদানের টাকায় তাদের পৈতৃক বাড়ি এক তলা থেকে তিন তলা হলো- অথচ মেয়েটি পড়ে রইলো ধানমন্ডি নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে। অথচ ওই বাড়িতে রয়েছে তার বাবা, ভাই- নিজের সবচে কাছের মানুষরা।

এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে গিয়ে তারা ব্যানার্জি থেকে মিসেস টি নিয়েলসন হয়ে গেলেন, যে সম্মান তার পাওয়ার কথা ছিলো এদেশের মাটিতে, তারা সেটা বিদেশে পেলো। কেউ পাকিস্তান চলে গেলো, কেউ কেউ খুব অপ্রত্যাশিত কোনো জীবনে সুখ খুঁজে নিলো। কেউ তাদের বীরত্বগাঁথা প্রচার করলো না, মাসের পর মাস তারা কীভাবে কাটিয়ে ফিরে এসেছে, আসার পরে তারা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেটা আশেপাশের অনেকেই বুঝতে চাইলো না।

আমরা সবাইকে মনে রেখেছি। আমরা অকুতোভয় যোদ্ধাদের মনে রেখেছি, বীরশ্রেষ্ঠ-বীরপ্রতীক-বীরবিক্রম দের মনে রেখেছি, অনিয়মিত বাহিনীর যারা সাধারণ মানুষ হয়েও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো তাদের মনে রেখেছি, শুধু একটা জায়গায় আমরা হয়তো পাশ কাটিয়ে যেতে চেয়েছি। তাদের আরো অনেক সম্মান পাওয়ার ছিলো, অনেক কিছুই পাওয়ার ছিলো হয়তো। তা তো তারা পায় ই নি, এর বদলে যতোদিন বেঁচে ছিলো, কি পরিমাণ লাঞ্চনার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে ভাবলেই কষ্ট হয়।

আমার আসলে ফেইরিটেইলস পছন্দ। গল্পের শেষে রাজা রাণীর মিল হয়ে যাবে, এইতো৷ বাস্তবের মুখোমুখি হতে আমার প্রচণ্ড ভয় করে। আর এই বইটি আমাকে তেমন একটা বাস্তবের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছিলো এ ক'দিন। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটি যে মোটেও এতো সহজ কিছু নয়,সেটি আরো একবার খুব তীর্যক ভাবে মনে করিয়ে দিলো। এতো কষ্ট হচ্ছিলো!

আজকাল একটা জিনিস প্রায়ই শুনি- "স্বাধীনত" কিংবা "১৯৭১", " মুক্তিযুদ্ধ" এই শব্দগুলো নাকি ওভাররেটেড হয়ে গেছে, এতো আলোচনা করার কিছু নেই এখানে। কিন্তু কে জানে, আমার কাছে ১৯৭১ সালের এই দীর্ঘ নয় মাসের কোনো গল্পই কখনো হয়তো ওভাররেটেড লাগবে না, কিংবা বিরক্তিকর মনে হবে না। কারণ একটাই,আমাদের এতো এতো সব নারীদের এতো স্যাক্রিফাইস আর ত্যাগ তীতিক্ষা এখানে মিশে আছে, যে একে অতিমূল্যায়ন তো অনেক দূরের বিষয়, একটা অংশকে আমরা এখনো সঠিক "মূল্যায়ন"ই করতে পারি নাই! :')

এবার আসি বইয়ের ভাষায়। বইতে দাঁড়ি,কমা ঠিকমতো দেয়া হয় নি, প্রথম দিকে কে কথা বলছে সেটা ধরতেই কষ্ট হচ্ছিলো। এইরকম অসাধারণ একটি ব্যাপারের উপর লেখা বই, ভাষাও চমৎকার কিন্তু প্যাটার্ন এবং এইসব যতিচিহ্নের কারণে একটু মন খারাপ লেগেছে। শুধু এই ব্যাপারটির জন্য আমি এটাকে ৮/১০ দিবো!

Happy Reading!
Profile Image for Maleeha Tarannum.
48 reviews2 followers
December 17, 2018
বীরাঙ্গনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় "ওরা ১১ জন" দেখতে গিয়ে। হানাদারদের নূতনের গায়ের কাপড় টেনে হিঁচড়ে খুলে নেয়া আর সিনেমার শেষে নূতনের নিজের বিধ্বস্ত শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখে ছোট্ট আমার ধারণা হয়েছিল, বীরাঙ্গনা হলো তাঁরা যাদেরকে পাকহানাদারেরা বেধড়ক পিটিয়েছে; পিটানোর সময় কাপড় খুলে নিয়েছে যেন ব্যাথা বেশি পায়। পরে যখন আমার উপলব্ধি করার বয়স হলো যে বীরাঙ্গনাদের ওপর আসলে কী নির্যাতন হয়েছিল তখন থেকে ৭১-এর প্রেক্ষাপটে যেকোন বই-সিনেমা নিয়ে বসলেই আমার আতঙ্ক হয় যে কখন বীরাঙ্গনাদের কাহিনী চলে আসবে।

বইটা পড়তে বসে তাই আমার সবচেয়ে ভালো লাগা দিক হলো লেখকের বীরাঙ্গনাদের ওপর হানাদারদের পাশবিকতার খুব বিস্তারিত-বিশাল বিবরণ এড়িয়ে যাওয়া। তারা, মেহের, রীনা, শেফা, ময়না, ফাতেমা আর মিনা- এই সাত বীরাঙ্গনার গল্প নিয়েই "আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটার বুনন।

আসলে পাকহানাদারদের হাতে পড়ার গল্প আর তাদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসার পরের গল্পটা এই সাত বীরাঙ্গনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও ক্যাম্পে থাকাকালীন তাঁদের ওপর চলা পাশবিক নির্যাতন ছিল অভিন্ন। সাত বীরাঙ্গনার গল্পে তাদের ওপরের নির্যাতন লেখকের মূল উপজীব্য হলে গল্পগুলো তাই একঘেয়ে হয়ে যেতো। লেখক বরং এই নির্যাতন আর যুদ্ধ পরবর্তী সময় স্বজন-সমাজের বঞ্চনা এই সাত বীরাঙ্গনার ওপর কী প্রভাব ফেলে আর সব ক্ষতকে শক্তিতে রূপান্তর করে তাঁরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, বীরাঙ্গনা থেকে 'বীর' হয়ে ওঠে - এই বিষয়টিকেই বইটার মূল উপজীব্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন। বইটা শেষ করার পর তাই বীরাঙ্গনাদের জন্য সমবেদনার চেয়ে শ্রদ্ধাটাই বেশি অনুভূত হয়।

বইটার গল্পগুলো অনেক হৃদয়স্পর্শী হওয়ার পরেও বইটা পড়ে "অসাধারণ" বলতে পারছি না বইটার লেখনী এলোপাথাড়ি মনে হওয়াতে। বইটা পড়ে মনে হয়েছে লেখক দ্বিধান্বিত ছিলেন যে গল্পগুলো বীরাঙ্গনাদের জবানিতে বলবেন নাকি নিজের জবানিতে। প্রতিটা গল্পেই বীরাঙ্গনার জবানিতে গল্প বলা শুরু হলেও মাঝপথে আবার লেখকের সংলাপ ঢুকে যাওয়াতে বেশ একটা জগাখিচুড়ি লেগে যায়। বিশেষ করে প্রথম গল্পে "ও আমার পরিচয় দিতে ভুলে গিয়েছি, আমি মিসেস টি.নিয়েলসেন"- এভাবে মিসেস নিয়েলসেন গল্প শুরু করার পর দুই প্যারা পরেই যখন "মিসেস টি. নিয়েলসেনের সাথে আমার প্রথম পরিচয়..." এমন একটা লাইন ঢুকে যায় তখন নিয়েলসেন, এ্যালিস, নীলা, নীলিমা- সব মিলিয়ে বেশ একটা জিলিপির প্যাঁচ লেগে গিয়েছিল।

গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বইয়ে আছে উদ্ধৃতি চিহ্ন (" ") ব্যবহার না করার সমস্যা। "তুমি?তুমি এসেছো? এই যে এইখানে, আমার ছোট ভাই পনাকে নাসির আলি আছড়ে মেরেছিল। জানি, আমি সব জানি, ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো তাহের। ফাতেমা বাড়ি চলো। বাচ্চারা কাঁদছে। অতি সহজে সে তাহেরে হোন্ডায় চড়ে বসলো।" - এই বাক্যে কে, কখন কথা বলছে, কার কথা কোথায় শুরু, কোথায় শেষ এইটা বুঝতে একটু হিজিবিজি লাগে। পুরো বইয়েই জায়গায় জায়গায় এই ঝামেলাটা আছে। এই জট ছাড়াতে গিয়ে পড়ার যে একটা স্বাভাবিক গতি তা ব্যাহত হয়েছে অনেকবার। আমার মতে, গল্পগুলো বীরাঙ্গনাদের জবানিতেই হওয়া উচিত ছিল। এরপর লেখক প্রতিটা গল্পের শেষে 'পরিশিষ্ট' হিসাবে নিজের সাথে ঐ বীরাঙ্গনার পরিচয় পর্বটা নিজের জবানিতে লিখলেই লেখাটা পড়তে অনেক সহজ হতো।

সত্যি বলতে, লেখনী বিচারে বইটা মাথায় গেঁথে যাওয়ার মতো না। কিন্তু বইটার বিষয়বস্তু নিজেই মাথায় গেঁথে যাওয়ার মতো। এই বই পড়ে আমি বেশ বুঝেছি কেন ধর্ষিতারা ধর্ষণের শিকার হয়েই আত্মহত্যা করে বসে না, করে ঘটনার দুই-তিনদিন পরে, যখন সে দেখে বিনা অপরাধে সম��জ তাকে ছিঃছিঃ করছে; যখন সে দেখে তার পরিবার তাকে মরে যাওয়ার অভিশাপ দিচ্ছে; যখন সে দেখে তার ভালোবাসার মানুষ তাকে ঘৃণা করছে। বইটা পড়ে বেশ বুঝেছি কেন ধর্ষিতা তার ধর্ষকের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে রাজি হয়ে যায়।

তাই, গল্পের লেখনীতে অভিভূত হই নি। কিন্তু যেই তিন লাখ মা-বোন আজকের লাল-সবুজ পতাকার জন্য নিজেদের সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন, তাঁরা সম্ভ্রমের সাথে আরো কী কী হারিয়েছিলেন আর এরপরেও কিভাবে নিজেরা বাঁচার পথ খুঁজে নিয়েছিলেন সেই সত্য জেনে ইচ্ছা হচ্ছে বীরাঙ্গনা রীনার মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলি, "তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তোমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তোমার কন্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার।"
Profile Image for Saleha .
17 reviews1 follower
March 27, 2023
জগতের নিয়মটাই এরকম যে, কোন কিছু পেতে গেলে তার জন্য মূল্য দিতে হয় ।স্বাধীনতা পেতে আমাদের জাতিকে ও বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে ।অগনিত প্রাণ যেমন বিসর্জিত হয়েছে তেমনিভাবে নির্যাতিত হয়েছে অগনিত মেয়েরা ।নীরবেই যাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে নয় মাস।যে যুদ্ধ আর ও বিভীষিকাময়।যুদ্ধ শেষে সবাই যখন মুক্তিযোদ্ধা, তারা ঘৃণার পাত্রী ।অনেকের পরিবার ও তাদের ফিরিয়ে নিতে চাই না লোকলজ্জার ভয়ে ।লেখিকা যথার্থই লিখেছেন 'মুক্তিযুদ্ধ এতো রক্ত নিয়েছে কিন্তু আমাদের নোংরা স্বভাবটা ধুয়ে মুছে দিতে পারি নি'।এইসব নির্যাতিতা, লাঞ্ছিতা রমনীদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ,মর্যাদা দিয়েছেন 'বীরাঙ্গনা' হিসাবে, তাদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছেন ।এ রকম কয়েকজন বীরাঙ্গনার গল্প নিয়ে অধ্যাপিকা নীলিমা ইব্রাহিমের রচনা 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি'।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অল্প যে কয়টা বই পড়েছি,তারমধ্যে এই বইটা পড়ার সময় সবচেয়ে বেশিবার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে।তাই মনোজগতে এই বইটা গভীরভাবে দাগ কেটে গেলেও এটাকে খুব প্রিয় বই বলতে পারি না!
Profile Image for Tamanna Binte Rahman.
184 reviews140 followers
March 21, 2021
বইয়ের রিভিউ লিখতে চেয়েছিলাম পড়া শেষ করবার পরেই। কিন্তু এমনি বই, এমনি লেখা, আমনি আখ্যান যে আঙ্গুল সামনে আগায়নি। বইটা পড়া শেষ করবার পরে নতুন কোন বই ধরিনি গত ৫ দিনে।
কী এমন লিখেছেন নীলিমা ইব্রাহিম? বীরাঙ্গনাদের একেকজনের জীবনে ঘটে যাওয়া দুস্বঃহ ঘটনাগুলো সংকলন করেছেন। যুদ্ধে মানুষ কী হারায়? যুদ্ধ শেষে জীবন ফিরে পেলে মানুষ কী আবার তার পূর্বের হাসিমাখা সময়গুলো পুনরায় শুরু করতে পারে? পারে হয়তো কিন্তু সেটা বাংলাদেশী সমাজে একজন পুরুষের থেকে একজন নারীর জন্য অনেকখানিই ভিন্ন। তাই বীরাঙ্গনার কন্ঠে হতাশা ঝড়ে পড়ে-বাংলাদেশের মানুষ দেহে স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মানসিকতায় স্বাধীন হতে পারেনি। কিংবা লেখায় উঠে আসে- ভাল মানুষ দেখা যায় কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সাহসী ভালমানুষ পাওয়া খুব কঠিন। উল্টো চিত্র যে উঠে আসেনি তাও নয়।
যুদ্ধে একজন নারী যা হারায় তার থেকে বেশি হারায় সম্ভবত তার পরে। সমাজের, ধর্মীয় কুসংস্কারের জটিল, কুৎসিত থাবায়। সেখানে হিন্দু নারী মুসলমানের কাছে যৌন নিগৃহীত হলে পরিবার/সমাজে জায়গা হয়না, মুসলমান নারী মুসলমানের কাছে যৌন নিগৃহীত হলে তিনি হন নষ্টা, ভ্রষ্টা, পাপীষ্ঠা। নারীকে সব বিবেচনাতেই ভোগ্যপণ্য ভাবা হয়। তারা হয়ে উঠে দ্বিতীয় লিঙ্গ। তাদের জীবনের দিক প্রবাহ ঠিক করার ভার যেন একান্তই প্রথম লিঙ্গের। কেন যেন মনে হল আলাদা করে 'বিরাঙ্গনা' বলবার কী খুব প্রয়োজন ছিল? মুক্তিযোদ্ধা হয়েই বেঁচে থাকতেন তারা। তারাও তো যোদ্ধাই ছিলেন। শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেছেন দেশকে স্বাধীনভাবে পাবার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কী আমরা মানে বাংলাদেশি সমাজ মুক্তি কী পেয়েছে নারীদের 'উচ্ছিষ্ট' কিংবা ভোগ্যপণ্য কিংবা নির্যাতনের জন্য সবথেকে সহজ টার্গেট ভাবা থেকে?
মুক্তিযুদ্ধের উপর বই পড়তে চাইলে এই বইটা অবশ্য পাঠ্য হিসেবে পড়া উচিৎ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে জানাই সকল নারী মুক্তিযোদ্ধাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
Profile Image for Ummea Salma.
125 reviews121 followers
April 25, 2021
প্রতিটা পাতা জুড়ে কি কষ্ট আর কি হাহাকার! এক সাথে ২০-৩০ পৃষ্ঠার বেশি একবারো পড়তে পারিনি!
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
Read
May 5, 2021
আচ্ছা 'বীরাঙ্গনা' আর 'বারাঙ্গনা' শব্দ দুটো এত পাশাপাশি কেন? ইচ্ছা আর অনিচ্ছার মাঝে কি এত অল্প ফারাক?

খানিকটা কম জানলে হয়তো ক্ষতি নেই খুব একটা। নিজস্ব চিন্তাভাবনার গণ্ডিতে থাকা যায়, নিজস্ব কল্পনার সুখে থাকা যায়। একটা সময় মুক্তিযুদ্ধের সব ধরণের বই পড়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি, ধারণা ছিল তখন এসবের মাহাত্ম্য বোঝার মতো বয়স হয়নি। তারপর বড়ো হতে হতে বুঝতে শুরু করলাম এই যুদ্ধের কাহিনিতে সবটা এমন মহৎ না। তারপরও মনকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছি, শেষতক খুব বেশি লাভ হলো না। যাই হোক।

বইটা পড়তে নিয়ে কী কী যেন ভাবলাম, এখন মনে পড়ছে না কিছুই। শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আচ্ছা 'বীরাঙ্গনা' আর 'বারাঙ্গনা' শব্দ দুটো এত পাশাপাশি কেন?
Profile Image for Pagladashu.
7 reviews37 followers
May 24, 2014
আমি খুব দ্রুত পড়তে পারি। চারশ পৃষ্ঠার বই বেশ মনোযোগের সাথেই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারি এক দিনে।
এই বইটা সে তুলনা বেশ ছোট; তারপরও একদিনে পড়ে শেষ করতে পারিনি। প্রচন্ড রকমের একটা চাপ পড়ছিল মানসিক অবস্থায় উপরে। আক্ষরিক অর্থেই হাত পা নিজের অজান্তেই কেমন কেঁপে কেঁপে উঠেছে।
অবশ্য পাঠ্য একটি প্রামাণ্য সংকলন এটা।
Profile Image for Mostaque Ahammed.
77 reviews
March 2, 2013
বিষয়বস্তু হিসেবে বিচার করলে এটি একটি অসাধারণ বই। বই-এ একাধিক বীরাঙ্গনার যুদ্ধ পূর্ববর্তী, যুদ্ধ সময়কালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী জীবন/অবস্থা নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

বীরঙ্গনাদের আমরা কখনই যথোপযুক্ত সম্মান দিতে পারি নি। তাদের ত্যাগ-কষ্ট-লাঞ্চনা-বঞ্চনা-কে যৌক্তিক ভাবে স্বীকার করা এবং তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা, তাদের এ আমরা সামন্য গ্রহণ ও করতে পারি নি। সেটা সামাজিক, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত যে কোন ভাবে-ই বিচার করা হোক না কেন। সমাজ তাদের কে ধিক্কার দিয়েছে। পরিবার তাদের বর্জন করেছে। ব্যক্তি তাদেরকে আক্রমণ করেছে নষ্টা বলে। অথচ তাদের তো কিছুই করার ছিল না এ ব্যাপারে। বাবা, ভাই, স্বামী সবাই দেশ উদ্ধার করার কারণেই হোক, আর আত্মরক্ষার কারণেই হোক, সমস্ত নারীদের তারা ফেলে চলে গিয়েছিলেন সেদিন। কেউ একবারের জন্যও ভাবেন নি, পেছনে ফেলে যাও মা, বোন, স্ত্রী-দের কি হবে। যুদ্ধ যে তাদেরই সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে সব-সময়।

বর্ণনা যতটা সাবলীল আশা করেছিলাম ততটা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই বর্ণনা লেখিকা ও বীরাঙ্গনার মধ্যে দ��রুত পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে খুব সহজেই ক্ষেই হারিয়ে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ লাইনেই লেখক বলছেন এক কথা আবার পরের লাইনেই বীরাঙ্গনা তা বর্ণনা করছেন। বীরাঙ্গনার সাথের আত্মীয় স্বজনদের ব্যাপারে মাঝে মাঝে মনে সামঞ্জস্য হারিয়ে যায়। কার ব্যাপারে বলা হচ্ছে তা বুঝতে কষ্ট হয়।
Profile Image for Shahidul Nahid.
Author 5 books141 followers
August 25, 2016
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শুধু ৩০লক্ষ মানুষই হত্যা হন নি, প্রায় ২লক্ষ মা-বোন তাদের নিজেদের ধর্ষিত হয়েছিলেন। অনেক পরিবার তাদের গ্রহণ করেছে, অনেক পরিবার গ্রহণ করে নাই। পরিবার গ্রহণ করলেও দেখা গিয়েছে সমাজের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে তাদের। কিন্তু ভাল মানুষও যে ছিল না, এমনটা কিন্তু হয়। সব জেনেও, ট্যাবু পরিত্যাগ করে তাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন, কারণ তাদের আত্মত্যাগ দেশ স্বাধীনে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এই বইটাতে মোট ৭জন বীরাঙ্গনার জীবনের সংগ্রামের কথা উঠে আসছে। তারা যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছেন, কখনো সফল, কখনওবা অতলজলে পড়েছেন, তার বর্ণনা রয়েছে বইটাতে।
একটা ব্যাপার সবসময়ই দেখা যায়, ধর্ষিতার উপর অবিচারের বিচার চায় সবাই কিন্তু সমাজ কিংবা ব্যক্তিনিজে কি মন থেকে পারে তাকে গ্রহণ করতে? ধর্ষিতা জেনেও ক'জন বিয়ে করতে চায়? সাহায্যে এগিয়ে আসে?..
বীরাঙ্গনারা বাংলার সব্বার মা, দূঢ়ভাবে সবসময়ই আমরা সকলে তাদের স্মরণ করি..
Profile Image for Hibatun Nur.
159 reviews
Read
March 19, 2022
এই বইকে কোন রেটিং এর আওতায় ফালানো উচিত নয় বলে আমি মনে করি।

প্রতিটি অধ্যায়ে আমার কতবার যে চোখে পানি চলে এসেছে তার হিসাব নেই। এক ধরণের হাহাকার পেয়ে বসত আমাকে, দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হত সেগুলো। বারবার পড়া রেখে দিয়েছি কেননা আমাদের ইতিহাসের এই নির্মম সত্যকে সহ্য করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে আমি। যার উত্তর পাওয়া হয় নি। মনুষ্যত্বের অভাব, নিজের জাতির সংকীরর্ণমনা পশ্চাৎপদগামিতা কেবল ছুরিকাঘাত করেছে আমাকে।
মানুষের মনুষ্যত্ব তাকে অন্যান্য পশুদের থেকে পৃথক করে। সেই মনুষ্যত্বকেই বিসর্জন দিয়েছিল একদল মানুষ। হায়রে......

যে সমাজে ধর্ষক মাথা উচুঁ করে চলতে পারে এবং নির্যাতিত বীরাঙ্গনাকে সমাজের নোংরামোর সম্মুখীন হতে হয় সেই সমাজকে ধিক্কার জানাই। হতাশার বিষয় হল যে, পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে দূরে ঠেলে দেয়া সংকীর্ণমনা মানুষেরা বেশি সরব, হয়ত সংখ্যায়ও তারা বেশি।

বইয়ের সংলাপের অংশগুলোর পাঠোদ্ধার করতে একটু কষ্ট হয়েছে। কেননা পাশাপাশি হওয়ায় কোনটা কে বলছে তা প্রথমে বুঝতে একটূ কষ্ট হয়। তাছাড়া তথ্যগত কিছু অসামাঞ্জস্যতাও চোখে পড়েছে।
যেমনঃ এক চরিত্রের এক পেজে বলা হল তার দু'টি মেয়ে কিন্তু সেই একই চরিত্রের অন্য পেজে বলা হয়েছে, তার কেবল একটি মাত্র ছেলে সন্তান আছে।
আবার এক জায়গায় একজন ছুরিকাঘাতের শিকার তো অন্য পেজে গিয়ে সেই একইলোকই গুলি খেয়ে জখম হয়েছে।
Profile Image for Rasel Khan.
170 reviews8 followers
July 25, 2020
বীরাঙ্গনা, মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের দেয়া উপাধি। লক্ষ লক্ষ বীরাঙ্গনাদের মাঝে মাত্র ৭ জনের জীবনের গল্প নিয়ে প্রবন্ধটি সাজিয়েছেন লেখিকা।

৭১ এ পুরুষদের হত্যা করে তাদের বাড়ির নারীদের তুলে নিয়ে করা হয় অকথ্য নির্যাতন। দিনের পর দিন মানসিক, শারীরিক অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটে বহু নারীর৷ এই কাজগুলো যে শুধু পাকিস্তানিরা করেছে এমন নয়। তাদের সাথে আমাদের দেশেরও বেশ কিছু মানুষ ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের প্রাপ্য সম্মানের বদলে আমরা তাদের দিয়েছি অপমান আর ঘৃণা। তাদেরকে সমাজ ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে আজো অনেক বীরাঙ্গনাই আছে করুন অবস্থায়। স্বামীতো মেনে নেয়ইনি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাবা মাও মেনে নেয়নি অনেক মেয়েকে।

যদিও বইটিতে বর্ণনা করা ৭ বীরাঙ্গনাই বর্তমানে ভালো আছে। তাদের এই ভালো থাকা সম্ভব হয়েছে তাদের ইচ্ছা শক্তির কারণে। মানসিকভাবে তারা ভেঙ্গে পড়েনি। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে নিয়েছে নিজেদের প্রাপ্য সম্মানটুকু। ৭১ এ তাদের জীবনের উপর হওয়া অত্যাচারের বর্ণনা ও পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়ানোর বাস্তব গল্পগুলোই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
Profile Image for Shamma Islam.
5 reviews12 followers
January 1, 2019
এই বইটিকে নিয়ে যা-ই বলবোনা কেনো কম হয়ে যাবে। বীরাঙ্গনাদের প্রতি যতটুকু সম্মান আগে মনে ছিলো, তার পরিমাণ এখন আকাশ ছুঁয়েছে। বাস্তবে তাদের জন্যে কিছু করতে চাই। এই বোধ হয়তো 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' বইটি না পড়লে হতোনা।
একদিন সময় করে হয়তো লিখবো এই বইয়ের রিভিউ...কিন্তু এই বই রিভিউ দেওয়ার উর্দ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের সকল বীরাঙ্গনা মায়েদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যাদের নারীত্বের বিনিময়ে পাওয়া দেশে বসে আজ আমরা নারীবাদ নিয়ে বড়ো বড়ো বুলি আওড়াই, অথচ তাঁদের প্রাপ্য স্বীকৃতি আমরা আজও দিতে পারিনি। আমি লজ্জিত মা, আমি লজ্জিত। ক্ষমা করে দিও তোমরা :(
Profile Image for Sudipta.
227 reviews
August 28, 2013
দারুন একটা বই ( তথ্যমূলক এবং লেখনীর শব্দ চয়ন দুটোই)। এটা অনেক আগে পড়েছিলাম। মানে আরেকটু কম বয়সে। এটা পড়ে আমি লজ্জিত বোধ করেছি যে, আমাদের যেসব মা বোনদের আমরা রক্ষা করতে পারি নি, দেশ স্বাধীনের পর তাদেরকে আমরা তাদের যোগ্য সম্মান, বাসস্থান, খাদ্য কিছুই দিতে পারি নি। ব্যক্তি হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত--রাষ্ট্র হিসেবে আমরা লজ্জিত। [ it's informative book ]
Profile Image for Depro Das.
26 reviews6 followers
September 28, 2017
৭ জন বীরাঙ্গনা, সহস্র নারীর প্রতিকী।
Profile Image for Raihan AR Khan.
10 reviews8 followers
June 8, 2020
"বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"
কিন্তু আমরা কখনো সেই অর্ধেক জনগোষ্ঠীর আত্মত্যাগকে আনুষ্ঠানিক, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক স্বীকৃতি দিতে পেরেছি কী?
স্বাধীন বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যতটা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ঠিক ততটাই অবজ্ঞার সঙ্গে উচ্চারণ করা হয় বীরাঙ্গনাদের নাম। কেন এই বৈষম্য?
এই উত্তর গুলো আমরা কখনোই দিতে পারব না কারণ জাতি হিসেবে আমরা যে অবিচার করেছি তা পৃথিবীর অন্যকোন জাতি করেছে কিনা তা আমার জানা নেই।

পাঠ প্রতিক্রিয়া :

১৯৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত নীলিমা ইব্রাহিমের এই বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক নির্মম নির্মোহ বেদনার চিত্র তুলে ধরেছে। 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' বইটি কোনো গল্প-উপন্যাস নয়, কোনো কল্পনাকে আশ্রয় করে তার সাথে সত্যের মিশেল ঘটিয়েও এটি লেখা হয়নি। বইয়ের প্রতিটি শব্দ সত্য, যা তুলে ধরেছে একটি নির্মম বাস্তবতাকে। যাকে বলা যায়, বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ।

নীলিমা ইব্রাহিম আমৃত্যু মানুষের শুভ ও কল্যাণী চেতনায় আস্থাশীল ছিলেন। মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতাবোধই ছিল তাঁর জীবনদর্শন। তিনি সর্বংসহা ধরিত্রীকে স্বর্গের চেয়েও সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত মনে করতেন এবং অধিকতর অস্থাশীল ছিলেন দেবত্বের চেয়ে মানবত্বে।
তার সেই চেতনার উন্মেষ ঘটেছে এই গ্রন্থে।

বইয়ের পাতায় কী লেখা আছে তা জানার আগে জানা যাক বীরাঙ্গনা কী এবং শব্দটি কেন এতটা আলোচিত আমাদের দেশে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রথমদিকে পাকিস্তানীরা ভেবেছিল মানুষ হত্যার মধ্যে দিয়েই তারা বর্তমান বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে পারবে। কিন্তু যুদ্ধের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যখন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি তখন তারা যুদ্ধের নীতি হিসেবে নারীদের ধর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। যুদ্ধ কৌশল হিসেবে গণধর্ষণ চালাই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।


প্রতিদিন মানুষ হত্যা, গ্রামের পর গ্রাম আগুন লাগিয়ে শেষ করা যেমন পশ্চিম পাকিস্তানীদের বর্বরতার প্রতিদিনকার অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি আরেকটি বর্বরতা ছিল নারীদের ধর্ষণ করা। পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে জাতিগতভাবে ধ্বংস করে দেওয়া, নারীদের ধর্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশের জনগণের মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ধর্ষণকে বেছে নেওয়া হয়। আর এ কারণেই পরিবারের সবার সামনেই নারীদের আক্রমণ করা হতো। পশ্চিম পাকিস্তানীদের ক্যাম্পে প্রতিদিন গাড়ি বোঝাই করে মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। কমান্ডারদের জন্য নতুন নতুন মেয়ের ব্যবস্থা করা হতো। সাধারণ সৈনিকেরা একই নারীকে ঢালাওভাবে ধর্ষণ করতো। নানা রকম নির্যাতনের পরেও তাদের বাঁচিয়ে রাখা হতো যেন তারা সন্তান জন্ম দিতে পারে।

নয় মাসের যুদ্ধে বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী ২ থেকে ৪ লক্ষ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। সঠিক সংখ্যা হয়তো কখনোই জানা যাবে না। যুদ্ধ শেষে এই নারীদের যখন ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন তাদেরকে ধর্ষিতা নামে ডাকাসহ বিভিন্ন অপামান করা হতো। বঙ্গবন্ধু এই ভাগ্যাহত নারীদের নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দেন এবং তাদের বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করেন। বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ বীর নারী। আসলেই তো তারা বীর ছিলেন, তাদের সম্ভ্রমের বিনিময়েই তো পেয়েছি এই স্বাধীন দেশ।

যুদ্ধ শেষে বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনের জন্য অনেকগুলো কেন্দ্র খোলা হয়। নীলিমা ইব্রাহিম বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন এবং সেখানেই তার আলাপ হয় ভাগ্যের পরিহাসে নির্মম নিয়তির শিকার হওয়া এসব নারীর সাথে। তাদের থেকে সাতজনের সাক্ষাৎকার নিয়েই রচিত হয় এই বই। সাতজনের সাক্ষাৎকার কিংবা সাতজনের জীবনের ভাগ্যলিপি প্রথমে দুটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়। নীলিমা ইব্রাহিমের তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করার কথা থাকলেও শারীরিক এবং এই নির্মম দুঃখগাঁথা লেখাকালীন মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় বলে তৃতীয় খণ্ড অপ্রকাশিতই থেকে যায়।


এখানে সাতজন নারীর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হওয়ার গল্প আছে। গল্প! হয়তো গল্প বলতে পারলেই ভালো হতো। কিন্তু এ ভীষণ বাস্তবতা যা সকল গল্প-কল্পনাকেও হার মানায়। কী অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমাদের নারীরা, কত প্রাণ ঝরে গেছে যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে! কিন্তু পাকিস্তানীদের নির্যাতনই কী শেষ?

না, এ যেন নির্যাতনের শুরু। যুদ্ধ শেষে, এই নারীদের পরিবারেরা তাদের নিতে অস্বীকৃতি জানায়। নিজের সমাজ আর পরিবারই যখন তাদের মেনে নিতে পারে না, এই অপমানের সামনে যেন সব অপমান ম্লান হয়ে যায়। নিজের পরিবার যখন দূরে ঠেলে দেয়, অস্বীকৃতি জানায়, এর চেয়ে যন্ত্রণার, কষ্টের বোধহয় কিছু হয় না।



বীরাঙ্গনাদের রাখা উচিত ছিল সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে, কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় আমরা তাদেরকে পায়ে পিষে ফেলেছি। তাদেরকে ন্যূনতম সম্মানটুকু দেইনি, তাদের থেকে কেড়ে নিয়েছি মানুষের মতো বাঁচার অধিকার। কত শত অপমানে জর্জরিত হয়ে তারা বেঁচে ছিলেন, সেই তীব্র দুঃখবোধের গভীরতা আমাদের বোঝার কথা না।



কী গভীর আঘাতে একজন তারা থেকে মিসেস টি নিয়েলসন হয়ে যায় আমাদের তা জানার কথা না। মেহেরজান, রীনা, শেফা, ময়না, ফাতেমা, মিনা এদের মধ্যে দিয়েই সেই সময়ে পাকিস্তানীদের বর্বরতা আর আমাদের রক্ষণশীলতা তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। পাকিস্তানিরা এতটাই নির্মম ছিল যে নির্মম বা বর্বরতা শব্দগুলোও যেন লজ্জায় কেঁপে উঠতো তাদের কাজকর্ম দেখে।

গণধর্ষনের পুরোটাই ছিল পাকিস্তানীদের সমর নীতির একটি অংশ। তারা ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করেছে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, চালিয়েছে অসহনীয় শারীরিক নির্যাতন। আমাদের মা-বোনেরা সেই অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে যেদিন জানতে পারল দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেদিন হয়তো ভেবেছিলো নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে । কিন্তু বড় আঘাতটা আসলো নিজের দেশ আর পরিবার থেকেই। শারীরিক যন্ত্রণা শেষে মানসিক অত্যাচারের মধ্যে দিয়েই কাটাতে হয়েছে দিন। আর এই সব কিছুই ফুটে উঠেছে নীলিমা ইব্রাহিমের লেখনীতে।

'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' আমাদের যুদ্ধের সময়কার নারীদের উপর নির্যাতনের চিত্রের এক প্রতিচ্ছবি। যে ছবি পাকিস্তানী হানাদারদের জঘন্যতম বর্বরতার পাশাপাশি আমাদের সমাজের অযাচিত রক্ষণশীল মনোভাবকেও তুলে ধরে, যার পরিবর্তন এত বছর পরেও খুব একটা হয়নি।


"এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তােমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তােমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তােমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তােমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তােমার অগ্রাধিকার । সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবাে।"



জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান,
মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি’ কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী


মুক্তিযুদ্ধ এতাে রক্ত নিয়েছে। কিন্তু আমাদের নােংরা স্বভাবটা ধুয়ে মুছে দিতে পারে নি।

আশ্চর্য এতাে ত্যাগ স্বীকার করে দেশ স্বাধীন করলাে বাঙালিরা, আর মা-বােনের দেয়া ত্যাগের মূল্য দিতে পারলাে না। দুর্ভাগ্য সে দেশের!

"বঙ্গবন্ধু আমরা বীরাঙ্গনা/আরে তাইতাে তােরা আমার মা। আজও সেই কণ্ঠস্বর, সেই উন্নত মস্তিষ্ক, প্রশস্ত ললাট আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ যেন আমার অন্তরে চির ভাস্বর। হারিয়ে গেলেন আমার পিতা যিনি আমাকে দেবীর সমান দিয়েছিলেন। আজ মনে হয় এ মাটিতে দয়ার্দ্র হৃদয়, উদার চেতা, পরােপকারীর ঠাই নেই। স্বার্থান্ধের হাতে তার নিধন অনিবার্য।"


শেফার এতে বড় তৃপ্তি, শেফা। বেঁচে আছে থাকবেও। যাদের দুনিয়াতে এনেছে তাদের মানুষ করবার প্রতিশ্রুতি আছে নিজের অন্তরের কাছে। সে একজন মা এবং ব্যতিক্রমধর্মী মা, যে মেয়ের সব চে��়ে বড় পরিচয় সে বীরাঙ্গনা, শেফা দেশের জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ নারীত্ব। কিন্জন দিয়েছে। সে তাে কোনও শহীদের চেয়ে কম ভাগ্যবান ও পুণ্যবান নয়। তারা প্রাণ দিয়েছে একবার, শেফা মান দিয়েছে বার বার। আজও তার স্বামী থেকে শুরু করে অনেকেই তাকে বাঁকা চোখে দেখেন। শেফা ওদের করুণা করে, কৃপা করে, সে এমনি বিজয়িনীর বেশে সংসার থেকে বিদায় নেবে। সেইদিন তার সাধনা সার্থক হবে যে-দিন সে তার যােগী, তার কুন্দর কাছে তার মূল্য তুলে ধরতে পারবে, এই তার একমাত্র ও শেষ প্রার্থনা আল্লাহর কাছে।

হ্যাঁ একটা জিনিস, একটি মুহূর্তের আকাক্ষা মৃত্যু মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে যাবে। এ প্রজন্মের একটি তরুণ অথবা তরুণী এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বলবে, বীরাঙ্গনা আমরা তােমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তােমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঐ পতাকায় তােমার অংশ আছে। জাতীয় সংগীতে তোমার কণ্ঠ আছে। এদেশের মাটিতে তােমার অগ্রাধিকার। সেই শুভ মুহূর্তের আশায় বিবেকের জাগরণ মুহূর্তে পথ চেয়ে আমি বেঁচে রইবো।

সত্যি লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি করা যায় কিন্তু মনের প্রসারতা বাড়াতে গেলে যে মুক্ত উদার পরিবেশ প্রয়ােজন ওরা তা থেকে বঞ্চিত। তাই ওদের করুণা করলাম মনে মনে, আর সরে এলাম দূরে।

নাই-বা পেলাম জাতীয় পতাকা, নাই-বা পেলাম আমার সোনার বাংলা, কিিন্তু আমি জাতির পিতার স্বপ্ন সফল করেছি। একজন যুদ্ধজয়ী বীরাঙ্গনা রূপে বাংলাদেশ ুয়ে এসেছি। এটুকুই আমার জয়, আমার গর্ব, আমার সকল পাওয়ার বড় পাওয়া।

আমি জীবনের সব পেয়েছি কিন্তু মাটি হারিয়েছি। মনে

মনে বললাম, আর কখনও আসবা না। হে আমার জন্মভূমি, আমাকে ক্ষমা করো । মরতে পারার সসাহসের অভাব, জীবনের প্রলােভনের বিনিময়ে আমি তােমাকে হারিয়েছি। এ আমার অপরাধ । তােমার কাছে আমি ক্ষমা চাইবাে না কারণ ক্ষমা আমি পাবাে না। আমি নামহীন গােত্রহীন ভেসে আসা একটি দুস্থ, লাঞ্ছিত রমণী।

জোয়ান অব আর্কের মতাে দেহে না দিলেও আমার শ্রেষ্ঠ সম্পদ নারীত্ব আমি দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি। তবুও কোনাে মিনারে আমাদের নাম কেউ খােদাই করেনি সম্ভবত লজ্জায়। কারণ রক্ষা তাে করতে পারে নি আমাকে সর্বনাশের হাত থেকে, হাততালি দেবে কোন মুখে? আমার অবস্থানের জন্য আমি উপেক্ষিত হয়েছি নির্মম নিষ্ঠুরভাবে কিন্তু জানি না কোন ঐশ্বরিক শক্তির বলে আমিও কখনও মাথা নােয়াই নি।

তবুও হ্যা, তােমাকে শেষ কথাটা বলে যাচ্ছি নীলা আপা, আমি নিয়েলকেও বলে রেখেছি আমার মৃত্যুর পর আমাকে কেউ বাংলাদেশে নেবার চেষ্টা করাে না। জন্ম দিলে জননী হওয়া যায় কি লালন পালন না করলে মা হওয়া যায় না। আমি জন্মেছিলাম সােনার বাংলায়, লালিত হচ্ছি ডেনমার্কের কঠিন ভূমিতে। তবুও সেই মাটিতেই হবে আমার শেষ শয্যা। দেশে ফিরে আমি সামান্য একটি অজ্ঞাত উপেক্ষিত মেয়ে। কিন্তু প্রতি নিশ্বাসে আমি অভিশাপ দেই বাঙালি সমাজকে তার হীনমন্যতার জন্যে, মাকে অসম্মান, অপমান করাবার জন্য। একটি মাত্র মানুষ ও দেশে জন্মেছিল, তার স্নেহস্পর্শে আমি ধন্য হয়েছি। আমি তাকে তুচ্ছ অনাদরে কন্যা। তােমরা পিতৃঘাতী, সমস্ত বিশ্ব আজ তােমাদের ধিক্কার দিচ্ছে কুচক্রী পিতৃহন্তা, লােভী ইতর। বিশ্বসভায় তােমাদের স্থান নেই।


সেদিনের বাঙালি-দেহে স্বাধীন হলেও মনটাকে তাে পরিচ্ছন্ন করেতে পারে নি। কই একজন বীরাঙ্গনার খোজ তো আমি অবিশ্ব। প্রদক্ষিণ করেও পাই নি। ছিঃ ছিঃ ধিক্কার দিলাম আমি নিজেকে নয়, বাঙালির জরাব্যাধিগ্রস্ত সামাজিক ন্যায়নীতি বােধকে। ওদের কাছে মানুষের চেয়ে প্রথা বড়!


এখন তাে রাজাকার পুনর্বাসন। চলছে, ও লাইন দিয়েছে। হয়তাে-বা কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী হয়ে যাবে। না, আমি নির্বাসিত হলেও রাজাকার আলবদর নির্বাসিত হয় নি। বরং আমাদের উপর অত্যাচার চালাবার জন্য পুরস্কার পেয়েছে ও পাচ্ছে।
Profile Image for Jannatul Rafi Mariya.
61 reviews12 followers
December 14, 2020
'আপা আমি একজন বীরাঙ্গনা। কিন্ত আপনাদের দেওয়া পরিচয় অঙ্গের ভূষণ হয়েই রইলো, তাকে না পারলাম পরতে, না পারলাম ফেলতে। লোকচক্ষে হয়ে গেলাম বারাঙ্গনা'⁣
কথাগুলো একজন বীরাঙ্গনার।⁣
যারা প্রত্যেকে ছিল বাবা মায়ের আদরের মেয়ে, ভাইয়ের স্নেহের বোন কিংবা স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী, কারো আবার জননী। কিন্তু বীরাঙ্গনা ভূষিত হওয়ায় এই নারীদের ভুলতে হয়েছে পিতৃপরিচয়, ভাইয়ের আদর, স্বামীর সংসার। ⁣
অনেকেই বাধ্য হয়েছে নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করতে। কারণ পিতামাতা হাত বাড়িয়ে বুকে নিতে চাইলেও সমাজের জুলুম বাজির ভয়ে অনেক নারী তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে নি। ⁣

পাকিস্তানি মিলিটারিরা কি অমানুষিক নির্যাতন করেছিল তার বর্ণনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি মিলিটারি ধরে নিয়ে যাওয়া নারীদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে, আমরা যাদের বীরপুরুষ, দামাল ছেলে বলি, নির্যাতিত নারীদের ছিল এদের উপর ভীষণ ক্ষোভ। তাদের প্রশ্ন বৃদ্ধ মা, যুবতী বোন, গর্ভবতী স্ত্রীকে কাদের কাছে রেখে গিয়েছিল তারা? ⁣

এমনকি যুদ্ধের পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নির্যাতিত নারীদের সাহায্যের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে ছোটাছুটি করছিল অনেক মেয়েরাই তখন সেই সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে। সেসময় ক্রোধে অস্থির ছিল বীরাঙ্গনারা। কারণ তাদের যারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তারা মিলিটারি ছিল, কিন্তু এতগুলো মেয়ের খোঁজ দিয়েছিল কারা। নিজ দেশের মানুষই তো। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা এমন গর্হিত কাজ করেছিল আর মুক্তিযুদ্ধের পরে বীরাঙ্গনা হওয়ার কারণে এই নারীদের যারা ঘৃণার চোখে দেখেছে, বাধ্য করেছে দেশ ছাড়তে তাদের কি বলা যায়?⁣

বইটি পড়ে "ভালো" লেগেছে বলতে পারবো না। কোন নারীর সম্ভ্রম হারানোর ঘটনা জানতে ভালো লাগার কথাও নই। আর যখন জানতে পারি এতটা লাঞ্চিত হয়েও এই নারীরা প্রাপ্য সম্মানটুকু ফেল না তখন কেমন কুঁকড়ে যায় মনে হয় যেন স্বাধীনতা শুধু আমরা ভোগ করছি আর যারা ভোগের বস্তুু হয়েছিল তারা আজ বীরাঙ্গনা থেকে বারাঙ্গনা। ⁣

একজন বীরাঙ্গনার আকুতি জানিয়ে ইতি টানবো, ⁣
'আমি চাই এ প্রজন্মের একজন তরুণ বা তরুণী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, আমরা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে, তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা। ঐ পতাকায় তোমার অংশ আছে, জাতীয় সংগীতে তোমার কন্ঠ আছে। এ মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। এই শুভ মূহুর্তের অপেক্ষায় রইলাম।' ⁣

সেই শুভ মূহুর্তটি বীরাঙ্গনাদের জীবনে এসেছিল কিনা জানি না, আসবে কিনা তাও জানি কারণ এ দেশে আসল মুক্তিযোদ্ধােদের সম্মান দেখানোর চেয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদপত্র পাওয়া আরো সহজ। কি লজ্জা!
Profile Image for Hridoy Banik.
4 reviews2 followers
June 29, 2025
যুদ্ধ শেষে নির্যাতিতা তারা ব্যানার্জির জায়গা হয় নি তার নিজের বাড়িতে, কিন্তু সেই তারা-ই যখন টি নিয়েলসন নামে ফিরলো , তখন তাকে তার স্বামী-সন্তান সহ বরণ করে নেয়া হলো।
কিন্তু সকল অভাগা বীরাঙ্গনার ভাগ্য এতটা সুপ্রসন্ন ছিল না যে, তারা নিয়েলসন সাহেবের মতো একজনকে আশ্রয় হিসেবে পাবেন। তাদের অনেকেই নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে ক্যাম্পেই আত্মাহুতি দিয়েছেন, আর যারা বেঁচে গেছেন তারা নিজ দেশে নিজের মানুষদের কাছেই এমন ভয়াবহ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যা মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা ধর্ষণ কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছিল এদেশের তিন লক্ষ মা-বোনের বিরুদ্ধে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর বাদে আজ এই বাংলাদেশেই যখন পাকিস্তানপন্থী ও রাজাকারদের রাষ্ট্রীয় মদদে জয়জয়কার দেখতে পাই তখন এই দুঃখ রাখার আর জায়গা কোথায়???
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
542 reviews
April 15, 2025
মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে কম আলোচনা হয় সম্ভবত বীরাঙ্গনাদের নিয়ে।
একাত্তরে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতে নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীদের স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন নিয়ে বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কাজ এই বইটি।
Profile Image for Masud Sojib.
35 reviews43 followers
August 11, 2016
মুক্তি আর স্বাধীনতা এ দুটোর মাঝে পার্থক্য কি? এ দুটোর মাঝে পার্থক্য ব্যাখা করতে হলে অনেক লম্বা রচনায় নামতে হবে, অসংখ্য যুক্তি আর উদাহারণ দিয়ে অনেক কিছু বুঝাতে হবে। অথচ একটি মাত্র বইয়ের কয়েকটি মানুষের গল্প যারা একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝ দিয়ে জীবনের বিভীষিকা কে দেখেছে এবং বিভীষিকাময় অন্ধকারের পর মুক্তি পেয়েছে বলে ভেবেছে তাদের গল্পই যথেষ্ট এদের মাঝে পার্থক্যটুকু বুঝাতে। হ্যাঁ নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি‘ বইটিই বাস্তব উদাহারণ দিয়ে এ ‍দুটোর মাঝে পার্থক্য বুঝাতে সক্ষম।

নয় মাস যুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ আর দু লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম ঠিকি কিন্তু মুক্তি পাইনি। এই মুক্তি সমাজের, এ মুক্তি মানুষের মননেন-বোধের, এ মুক্তি চিন্তায়-চেতনা আর বিশ্বাসের। স্বাধীনতা পেলেও আমাদের সমাজের, আমাদের পরিবারের মানুষগুলোর যে চিন্তার, মননের, বিশ্বাসের, বোধের মুক্তি হয়নি সেটিই সাতজন মহান বীরাঙ্গনার জীবন থেকে উঠে এসেছে এ বইয়ে।

আমাদের সমাজে সাধারণ নারীর ক্ষেত্রে মুক্তির সংগ্রাম কতোটা নির্মম, কতটা কন্টকময় সেটি আমরা জানি, ঠিক সে জায়গায় একজন বীরাঙ্গনার সংগ্রাম কতোটা সংগ্রামী আর বঞ্চনাময় হতে পারে সেটি এই লেখা না পড়ার আগে হয়তো ওভাবে বুঝে উঠা কারো পক্ষে সম্ভব না। যেমন এই বয়ানে বলা হচ্ছে, ‘ আমার পরিচয় জানতে চান? আমি প্রকৃতপক্ষে একজন বীরাঙ্গনা; শুধু দেহেরে নয়-মনে, মননে। হাসছেন তো? বীরাঙ্গনার আবার অন্তর, তার আবার মনন? জ্বী, দেহে আপনার সঙ্গে লড়াইতে জিততে পারবো কিনা জানি না তবে আপনি যদি বাঙালি মুসলমান ঘরের পুরুষ হন, আর আপনার বয়স যদি পঞ্চাশ পার হয়ে থাকে তাহলে মনোবলে আপনি আমার চেয়ে নিকৃষ্ট। কারণ একদিন আমি আপনাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম, আপনাদের আপদামস্তক দৃষ্টিপাত করবার এবং দেহ ভেদ করে অন্তরের পরিচয় পাবার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য আমার হয়েছিলো। যুদ্ধকালে যারা খেয়ে পরে সুখে ছিলেন তাদের আমি ঘৃণা করি, আজ এই পঁচিশ বছর পরও থুথু ছিটিয়ে দিই আপনাদের মুখে, সর্বদেহে। একজন বীরাঙ্গনার এতো অহঙ্কার কিসের? আমি তো বীরাঙ্গনাই ছিলাম। আপনারা বানাতে চেয়ছেন বারাঙ্গনা। তাইতো আপনারাও আমার কাছে কাপুরুষ, লোভী, ক্লীব, ঘৃণিত এবং অপদার্থ জীব। আজও আমি বীরাঙ্গানা, আজও আছি আপনাদের করুণার করবার অধিকার রাখি।’

এই যে ক্ষোভ, এই যে ঘৃণা এগুলা কি ব্যক্তি আক্রোশ থেকে জন্মেছে নাকি আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা থেকে জন্মেছে? এগুলো সামষ্টিক ব্যর্থতারি বিরুদ্ধে ক্ষোভ। আমরা যারা নিজেদের পুরুষ বলে সিনা টান টান করে চলি তারা কি নারীর উপর নিজের মত চাপিয়ে দেইনি চিরকাল? নিজেদের ব্যর্থতা, নিজেদের হীনমন্যতা ঢাকতে আমরা চিরকাল নারী কে ব্যবহার করে এসেছি, তাদের অবদান কে অস্বীকার করে এসেছি। সাতজন বীরাঙ্গনার গল্পে আমরা দেখলাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ, আমাদের পরিবার প্রথাগত চিন্তা, বিশ্বাস থেকে বের হতে পারেনি। আর তাই এই সমাজের প্রতি, এই সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী পুরুষের প্রতি বীরাঙ্গনাদের ক্ষোভ খুব স্বাভাবিক ঘটনা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই বীরাঙ্গনাদের কয়জনের খোঁজ রাষ্ট্র নিয়েছিলো, কয়জন কে সম্মান আর শ্রদ্ধায় ভূষিত করেছিলো? ঠিকি তো পদ্মা পার হয়ে নয় মাস পালিয়ে থেকে কতজন মুক্তিযুদ্ধার পদে ভূষিত হলো, অন্তরে রাজাকার থেকে মুখে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা দিয়ে দেশপ্রেমী বনেছিলো। এ ইতিহাস লজ্জার, এ ইতিহাস ব্যর্থতার, আমরা চাইলেই এ সীমাহীন ব্যর্থতার ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবো না।

‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ রক্তের অক্ষরে লেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্প নয় বরং লজ্জা-ঘৃণা আর ব্যর্থতার গ্লানিতে বুনা অপারেজয় কিছু মানুষের কথা, স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা সব দিয়েও নূন্যতম সম্মানটুকু পায়নি, পায়নি বদ্ধ প্রথার শিঙ্খল থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদান কে পুরষ্কিত করেনি বরং তারা নিজেরাই পথ সৃষ্টি করেছে, খুঁজে নিয়েছে নতুন মুক্তির পথ। শুধু একজন মানুষ এই বীরাঙ্গনাদের দিয়েছিলেন তার প্রাপ্য সম্মান, বলেছিনে ’বীরাঙ্গনা-রা আমার মা।’ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহামন। এই মানুষটি যে একাই বাংলাদেশের সমান হৃদয় ধারণ করতেন সেটি প্রায় প্রতিটি বীরাঙ্গনার জীবনের গল্পে উঠে এসেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান, ত্যাগ আর সংগ্রামের কথা জানতে এই বইটি প্রত্যেক মানুষের পাঠ আবশ্যক। ’আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ পাঠ ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পাঠ থেকে যাবে অসম্পূর্ণ, অর্ধ সত্যের ন্যায়।
Displaying 1 - 30 of 65 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.