Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
আমি বেশ কিছুদিন বই পড়তে পারছিলাম না অথবা বলতে পারেন বই পড়া হচ্ছিল না। বই পড়া শুরু করলেও ১০ পৃষ্ঠার মতো পড়ার পরে আর মনোযোগ থাকছে না। তো হুমায়ূনের এই বইটি পড়া শুরু করলাম... এই লোকটিকে "জিনিয়াস" বলা হয় কথাটা মিথ্যা না, কারণ যেখানে আমি বই পড়তেই পারছিলাম না সেখানে এই বইটি একটানে অনেকটুকু পড়তে লাগলাম..... হুমায়ূন আহমেদ জানতেন কিভাবে পাঠককে বইয়ের জগতে ফিরিয়ে আনতে হয়, কিভাবে পাঠককে ধরে রাখা সম্ভব। আমার অনেকবার এমন হয়েছে এবং হুমায়ূন আমাকে উদ্ধার করেছেন, বইয়ের দিকে আনলেন আবার। তাই আমি হুমায়ূনের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ ❤️
তো এখন কেমন লাগলো তা নিয়ে একটু বলি----- এটি আসলে মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে কিশোর উপন্যাস..... আসলে গল্পটা খুব সুন্দরভাবে চলছিল, খারাপ লাগার মতো অনেককিছু ছিল শেষের দিকে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে গেল গল্পটা! মনে হচ্ছিল, শেষ হয়েও হলো না শেষ! গল্পটা আরো বড় করা যেতো এবং আরো বাড়ালে গল্পটা আরো ভাল লাগতো বৈকি! তবে এতটুকুতেও বেশ ভাল লেগেছে 🌻
কিশোরদের উপযোগি করে লেখা অনবদ্য একটা উপন্যাস 'সূর্যের দিন'। এই উপন্যাসের একটি বিশেষত্ব হল, একাত্তরের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক কিছু টপিকের পক্ষ-বিপক্ষের মনোভাব লেখক চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আর তার মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন যে কোন ধারণাটা আসলে সঠিক ছিল। একাত্তর বিষয়ে বর্তমান প্রজন্ম এখন অনেকটাই অন্ধকারে। 'সূর্যের দিন' তাদের সাহায্য করবে একাত্তর সম্পর্কে নিজেদের জানা ও বোঝাকে আলোকিত করতে। পাশাপাশি তারা এ-ও বুঝতে পারবে যে দেশের প্রয়োজনে সূর্যের দিন আনয়নে তাদের মত কিশোরদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিৎ।
এই উপন্যাসে প্রথমেই দেখা মিলবে খোকন নামে এক কিশোরের যারা ছয় বন্ধু মিলে ঠিক করেছে বিশ্বভ্রমনে বেরুবে। নিজেদের দলের নাম দিয়েছে 'ভয়াল ছয়'। ঠিক সেই সময়টাতেই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে শুরু করল। সত্তরের নির্বাচন পরবর্তি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে লাগল আওয়ামী লীগ অনুসারি তথা সমগ্র বাঙালির মধ্যে। শোষক গোষ্ঠীরাও তাদের প্রতিহত করতে চাইছে। নিয়মিত ঢাকা শহরে মিছিল মিটিং হচ্ছে। খোকনরা মাঝেমধ্যেই তাতে অংশ নেয়। বড়রা খোকনদের সাথে দেশ নিয়ে আলোচনা করে, নিজেদের মতামত জানায় আবার খোকনদের এ থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেয়। এইভাবে অবস্থা দিনকে দিন জটিল হতে থাকে। খোকনের দুই বন্ধু সাজ্জাদ আর শাহজাহান একদিন কার্ফুতে পড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় এক বৃদ্ধের বাড়ি। পরদিন বাড়ি ফিরে সাজ্জাদ জানল তাঁর দুলাভাই তাকে খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। তাকে অনেক খুঁজেও পাওয়া গেল না। এইভাবে একদিন চলে এল ২৫ মার্চ। হানাদারেরা ধ্বংসযজ্ঞ চালাল সারাদেশে। বড়রা যথারীতি ছোটদের এসব থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে তো ছোটদেরও সামিল হতে হবে লড়াইয়ে। তারা এগিয়ে না এলে কিভাবে অন্ধকার কেটে আসবে সূর্যের দিন?
গল্পের মধ্যমণিরা কিশোর বয়সের। ছয়জন ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া কিশোর মিলে ১৯৭১ সালে তৈরি করেছিল ভয়াল-ছয় নামের এক বাহিনী যাদের কাজ হবে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো। প্রথম টার্গেট আফ্রিকা। কিন্তু এই কিশোররা কি জানতো এই ভয়াল ছয় বিচ্ছিন্ন হবে এবং আফ্রিকার বদলে মুক্তিযুদ্ধ এসে হাতছানি দেবে? না জানতো না, এই বয়সে এসব কেউ ভাবে না, রাস্তাঘাটে আন্দোলন হলেও অতোটা তারা ভাবে না। সূর্যের দিন উপন্যাসিকা কারফিউ, গোলাগুলি, রক্তাক্ত দৃশ্যের উপসংহার টেনে ঝলমলে দিনের আশার বাণী শোনায়। সূর্যের দিন আসলে অশ্রু আর অন্ধকারাচ্ছন্ন পালিয়ে বেড়ানো দিনের গল্পের উপক্রমণিকা।
যুদ্ধ পূর্ববর্তী আন্দোলন আর মিছিল খুব করে অনুভব করলাম জুলাই ২৪ খুব কাছ থেকে দেখার কারণে। জুলাই-আগস্ট কি কখনও ভুলতে পারবো!?
ছোটবেলায় একবার আম্মুর ট্রাংক থেকে নিয়ে বইটা পড়েছিলাম। অপুর্বকে শোনাতাম আর দুই ভাইবোন কান্না করতাম। আমি যদিও ঠিক ছিলাম, কিন্তু বইটা পড়ে আমার ভাইটা ওইদিন না খেয়ে ছিল। পরিশিষ্ট পড়ে আমার আম্মুকে শুধু প্রশ্ন করতো ওদের তারপর কি হয়েছে। সুন্দর ছিল শৈশবগুলো। অপুর্ব আমাদের বাসায় আসলে আমার জীবনে ঈদ শুরু হতো। আজ হঠাৎ ওর সাথে একটা দুইটা কথা বলতে গিয়ে এই বই নিয়ে কথা উঠলো। ঠিক করলাম দুইজন বইটা একসাথে আবার পড়বো। কিন্তু এখন আমরা আলাদা থাকি। ঈদ ছাড়া আর ওদের বাসায় যাওয়া ছাড়া ওর সাথে তেমন দেখা হয়না। দুই ভাইবোন বাডি রিডস করে একজন আরেকজনকে যখন নতুন করে পড়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছিলাম,দেখি ও চুপ করে আছে। আমিও আর কথা বাড়ালাম না। মুমের কাছে গিয়ে নিজের মনের কথাগুলো বলে এখানে রিভিউ লিখতে আসলাম৷ সেই ১০-১১ বছর পরেও বইটি এখনো অপুর্বর প্রিয় সাহিত্যের তালিকা থাকায় ৫তারা যেন খুব কম মনে হচ্ছে। আর ইয়ায়ায়ায়ায়া বড় ধন্যবাদ জানাই আমার আম্মুকে, যিনি ছোটবেলায় আমাকে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়ে আমাকে শ্রেষ্ট শৈশব দিয়েছিলেন।
এই বইটি প্রথম যখন পড়েছিলাম তখন বয়স কতো হবে?? সাজ্জাদ কিংবা খোকনের সমানই বোধহয়। ওই বয়সের পড়া বই একদম মনের মধ্যে ছাপ ফেলে যাওয়ার কথা। অথচ কোনো এক বিচিত্র কারণে এই অদ্ভুত সুন্দর বইয়ের চিত্রপট বেমালুম ভুলে বসে আছি!
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো বই পড়তে গেলে ভীষণ মন খারাপ হয়। যে দেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে তিরিশ লক্ষ মানু্ষ শহীদ হয়েছিল তাদের মর্যাদা রাখতে না পারার জন্য একটা সুক্ষ্ণ অপরাধবোধ কাজ করে। আজ সকালেও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভাইরাল হওয়া এক বর্বর নিউজ পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। হানিফ বাসের চালক, সুপারভাইজার আর আর হেল্পার মিলে অতি সুক্ষ্ণভাবে পায়েল নাম��র একটি ইউনিভার্সিটি পড়া ছেলেকে খুন করে গায়েব করে দেয়ার পায়তারা করছিল। ছেলেটার মুখ ভারী ইট দিয়ে থেঁতলে দিয়ে চেহারা বিকৃত করে ব্রিজের উপর দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়ার সময়ও ছেলেটি বেঁচে ছিল! হা ঈশ্বর! কোথায় গেছে দুপেয়েদের মনুষ্যত্ব! যে দেশে বাইরে গেলে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা মেলেনা এমন দেশকে স্বাধীন বলি কিভাবে??
ক্লাস এইটে পড়া কজন ছেলেকে নিয়ে এই বইয়ের কাহিনী যারা পায়ে হেঁটে আফ্রিকার গহীন অরণ্য দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে 'ভয়াল ছয়' নামের একটা ছেলেমানুষী দল গঠন করে যার মাঝে খোকন ও সাজ্জাদ পরর্তীতে ১৯৭১ এর যুদ্ধে যোগদান করে। কাহিনীটা মূলত একাত্তর এর মার্চ মাস এবং তার পরবর্তী সময়ে দেশের অবস্থা নিয়ে খুব স্বল্প পরিসরে লেখা।
এই একই রকম কাহিনী ঘুরিয়ে পেচিয়ে অনেকবার অনেক বইয়ে পড়ার পর ও প্রতিবার পড়তে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। বারবার ওই সময়ে ওই সব দিনগুলোতে কি ঘটেছিলো এটা জানতে ইচ্ছে করে।
বইটা বেশ ছোট। শুরুর দিকের কাহিনী যতটা নাড়া দিয়ে যায় শেষে এসে কিরকম হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলো এরকম একটা অনুভূতি কাজ করে।
এক সাহসী কিশোর যার ছেলেমানুষি স্বপ্নগুলোর একটি ছিল হেঁটে বেড়ানো দক্ষিণ আফ্রিকার গহীন অরণ্যে। দেশের অস্থিতিশীল অবস্থার দমকা হাওয়ায় সে জড়িয়ে পড়ে যুদ্ধে।
সেই সময়ের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে বইয়ে।নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সকল শ্রেণীর মানুষের সেই সময়কার জীবনের টানাপোড়ন , সর্বদা এক আতঙ্কে থাকা, যুদ্ধে হারানো স্বজনদের হাহাকার অবশেষে বিজয়!
হুমায়ূন আহমেদের আর পাঁচটা বইয়ের মতোই এক রাশ অনুভূতি রেখে হঠাৎ শেষ হয়ে গেল:)
সারাংশ মানে কি ? কোনো বৃহত্তর রচনাকে যত অল্প কথায় সুন্দরভাবে বোঝানো যায় । এই গল্পটাও ঠিক তাই । মুক্তিযুদ্ধের এই বৃহৎ ইতিহাস মাত্র ৭০ পৃষ্ঠায় সুন্দরভাবে উত্থাপন করা । সে সময়ের চাপা ভয় থেকে শুরু করে যুদ্ধের প্রস্তুতি সবই ই চলে এসেছে । কি সুন্দরভাবেই না লেখক এই এক মলাটে নয় মাসের ইতিহাসকে বাধাই করে রেখেছে !
৩.৫ শুরুটা খুবই চমৎকার ভাবে হয়েছিলো। পরবর্তীতে সেই ভাবটা সম্পূর্ণভাবে বজায় না থাকলেও, স্টিল আমার পড়া মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক গল্পগুলোর মধ্যে একে অন্যতম Worth reading বই বলা চলে।
পর্যালোচনাঃ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনাবলি গুলো ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করা হয়েছে। তের হতো পনের বছর বয়সী ছয়জন বন্ধু মিলে 'ভয়াল ছয়' নামে একটা দল গঠন করে, যাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হল ভূ-পর্যটন করা, প্রথমে যাবে আফ্রিকাতে। এরইমাঝে শুরু হল ইয়াহিয়া খান, ভূট্টো সাহেব আর শেখ মুজিবের মধ্যে একধরনের বাকযুদ্ধ। এরপর হতে ঢাকা শহরের চারদিকে শুধুই মিছিল দেখা যায়, আর কয়েকদিন পর হুট কার্ফিও জারি করা হয়। এতে 'ভয়াল ছয়' সদস্যদের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। শেখ মুজিবের ৭'ই মার্চের ভাষণ, আর ২৫শে মার্চে গণহত্যা কিংবা এর পরবর্তী অবস্থাগুলো কয়েকটি ছোট্ট পরিবার হা-হুতাশ নিয়ে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।
লেখকের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আরেক বিখ্যাত বই 'জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প' পড়ে দেখতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সহস্র বই এখন বাজারে পাওয়া যায়, কিন্তু পড়ার পর এগুলো অনেকটাই অতিরঞ্জিত মনে হয়। তাই বিভিন্ন লেখকের বই পড়ে দেখুন সঠিক ইতিহাস কি ছিল, আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। "মানুষের সঙ্গে পশুদের একটা বড় পার্থক্য আছে। পশুরা কখনো মানুষের মত হৃদয়হীন হতে পারে না। পঁচিশে মার্চের রাতে হৃদয়হীন একদল পাকিস্তানী মিলিটারি এ শহর দখল করে নিল।"
"একটি সূর্যের দিনের জন্য এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দান করতে হল"
জোছনা আর জননীর গল্প পড়ার সময় মনে আছে আমার প্রতিটা পাতার পর চোখ কিভাবে ভিজে আসত,দমবন্ধ করা একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে থাকতো সবসময়ই, এরকম টা হয়েছিল মা আর একাত্তরের দিনগুলি পড়ার সময়,সর্বগ্ৰাসী বন্যায় যেমন নদীর দুকুল ভাসিয়ে নিয়ে যায় তেমনি চোখের পানি ও বাধ মানতো না,তখন ঠিক করেছিলাম আর একাত্তর নিয়ে কিছু পারতপক্ষে পড়বো না, বারবার এত কষ্ট নেওয়া কি সম্ভব?
কিন্তু এই গল্পটা পড়ে বুঝতে পারলাম যত কষ্টই হোক না কেন, যতবারই কান্না আসুক না কেন, একাত্তর নিছকই এক সংখ্যা বা গালগল্পে ভরা ঘটনা নয়,এ যেন যুগ যুগ ধরে রক্তের সাথে মিশে যাওয়া এক অদ্ভুত আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার অনুভূতি,যাতে স্বাধীনতার সুখের সাথে পরাধীনতার শিকল ভাঙার এক বিষাদগাথা
১০০ পৃষ্ঠাও না.. অথচ কি অদ্ভুত ভালোবাসা আর মমতায় সিক্ত এই বই! একটি সূর্যের দিনের জন্য প্রতীক্ষা কোটি মানুষের, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে সেই দিনটির জন্য খোকন, সাজ্জাদের মতো দেশপ্রেমীদের ভালোবাসায় নিজের অজান্তেই গলা ধরে যায়!
A novella lightly based on the pre-independence days. It shows how general people thought about the possibility of the war and how it affected people from different background. With an unfinished and uncertain ending, the story becomes much more appealing and emotional to the readers.
A highly recommended book for the younger readers which will help them to get attached to our nation's heart breaking and blood stained history.
'সূর্যের দিন' আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল একটা বই। আমার বই পড়ার প্রথম দিককার পড়া বই এইটে। কী আশ্চর্য এক বশীকরণ কিসসা। আজও এই বই আমার কাছে সেই ছোটবেলা অনুভূতিই মনে করিয়ে দেয়।
খুবই অবাক হলাম নিজের উপর যে এতো সুন্দর একটা বই আমি এতদিন কেন পড়িনি। নিঃসন্দেহে এটা হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম সেরা লেখা। শুধু সমাপ্তিটা খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে দিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। এছাড়া সবকিছুই ঠিক ছিল।
ভালো লাগে গল্প শুনতে বা পড়তে, তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন কাহিনী টা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর ভিত্তি করে। ক্লাস ৭/৮ এ পড়ুয়া ৬ জন কিশোর গঠন করে ভয়াল ৬ নামের একটা গ্রুপ, যাদের উদ্দেশ্য পায়ে হেঁটে আফ্রিকার গহীন জঙ্গল পরিভ্রমণ করা। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধীরে ধীরে তাদের ই মধ্যে থাকা কিছু বীরপুরুষ মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলো। সাজ্জাদ তো পেয়ে গেলো বীরপ্রতীকের মত সম্মানীয় posthumous পদক। কী সুন্দর সুখপাঠ্য গল্প, কী আবেগ! হায়রে জীবন 🥺
'এক রাতে এ শহর মৃতের শহর হয়ে গেল। অসংখ্য বাবা তাদের ছেলেমেয়ের কাছে ফিরে গেল না। অসংখ্য শিশু জানল না বড় হয়ে ওঠা কাকে বলে। বেঁচে থাকার মানে কি?' শিশুদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের গাম্ভীর্যতা ও হুমায়ুন আহমেদ কে পরিচয় করানোর জন্য এই বই অনেক ভালো সিদ্ধান্ত হবে! পুরো বইটা যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। শেষ হয়েও যেন হলো না। একটা বই যখন আপনার মন খারাপ করায় তখন বইটিকে তো ভালই বলবেন তাইনা?
সূয্যের দিন,উপন্যাসটি হুমায়ূনের অন্যতম সেরা সৃষ্টি।এই বইটি এত দিন পরে কেন চোখে দেখলাম তাই ভাবছি!!অনেকেই বলেন তার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায় না,বইটি তাদের ভুল ভাঙাতে পারে। হয়তো এইখানে নয়মাস যুদ্ধের বিবরণ দেয় নি লেখক,কিন্তু যুদ্ধ কী ভাবে বাচ্চাদের হঠাৎ বড় করে তুলেছে,কীভাবে জনজীবন পাল্টাতে থাকে যুদ্ধ কে ঘিরে তার সুন্দর বর্ননা দিয়েছেন। কত সাজানো ঘর ধ্বংস হয়েছে,কত শিশু হারিয়েছে তার ছেলেবেলা,কত গ্রাম কত শহর যে মৃত্যুপুরী হয়েছে এই বইটি তে তার কিছু অংশ তুলে ধরেছেন লেখক।২৫ শে মার্চের হত্যাযজ্ঞের এক বিবরণ পেয়ে যাবেন এই খানে।ঢাকার অলিতে-গলিতে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছিল পাকিস্তানের মিলিটারীরা কোন কারণ ছাড়াই।তাদের এই হত্যার পিছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির মনে যে সুপ্ত বাসনা ছিল *স্বাধীনতার *তা অংকুরে বিনষ্ট করার।কিন্তু তারা সেটা পারে নি বরং সেই দিনের পর থেকে বাঙালিরা আরো উদ্যোমী হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। খোকন,সাজ্জাদ এবং আরও কয় বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিল ভয়াল ছয়,কত তাদের পরিকল্পনা, তারা বিশ্ব ভ্রমণ করবে! কিন্তু দেশে শুরু হল যুদ্ধ কিশোর গুলো হারালো তাদের স্বাভাবিক জীবন হঠাৎ যেন তারা বড় হয়ে গেল।সাজ্জাদ -খোকন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলো।খোকনের খবর কেউ জানে না,কিন্তু সাজ্জাদ দেশের জন্য প্রাণ ত্যাগ করে এবং তার ত্যাগের বিনিময়ে দেশ তাকে দিয়েছে বীরপ্রতীক সম্মাননা। # উপন্যাসের শেষে এসে চোখে পানি চলে এসেছিল,কী দোষ ছিল একাত্তরের মানুষ গুলোর !! কী দোষ ছিল ছোট্ট ছোট্ট শিশুর!! ইতিহাস সাক্ষি এই বর্বরতার!! পরিশেষে বলবো,ভুলে গেলে চলবে না একাত্তরের দিনগুলো আর সেসকল মানুষদের যাদের বুকের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ।#
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের যাত্রায় ছিলো বহু ত্যাগ,সংগ্ৰামের কাহিনী। পাকিস্তানী হানাদার ও এদেশীয় দোসরদের মিলিত নারকীয় হত্যাযজ্ঞ দেশব্যাপী বাঙালিদের মনে প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে তোলে। দলে দলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। পাড়া-মহল্লায় চলে মিছিল মিটিং। রাত হলেই কারফিউ। জনসাধারণের বাইরে বের হওয়া নিষেধ। যারা যুদ্ধে যেতে পারেনি তাঁদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করে কখন কি হয়ে যায়! এই বুঝি মিলিটারি এলো। বড়দের সাথে সাথে ছোটদের মনেও যুদ্ধ প্রভাব ফেলেছিলো তখন।
এভাবেই নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের দ্বারা বাঙালি জাতি অর্জন করেছে বিজয়। বিজয়ের উল্লাসে যখন প্রতিবছর আপামর বাঙালি বিজয় দিবস উদযাপন করে ১৬ই ডিসেম্বর তখন অনেক কিশোর-কিশোরীর মনে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন আসে। কেমন ছিলো মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই দিনগুলো? মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই দিনগুলোকেই কিশোরদের চোখে সুন্দর বর্ণনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, লেখক, নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের "সূর্যের দিন" কিশোর উপন্যাসটিতে।
যুদ্ধের দিনগুলোর ভয়াবহতা সহ আনুসাঙ্গিক ঘটনাগুলো কিশোরদের দৃষ্টিতে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। যা কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ধারণা দেবে। সারাংশ মানে কি ? কোনো বৃহত্তর রচনাকে যত অল্প কথায় সুন্দরভাবে বোঝানো যায়। এই বইটিও ঠিক তাই। মুক্তিযুদ্ধের এই বৃহৎ ইতিহাস মাত্র ৭১ পৃষ্ঠায় সুন্দরভাবে উত্থাপন করা। সে সময়ের চাপা ভয় থেকে শুরু করে যুদ্ধের প্রস্তুতি সবই ই চলে এসেছে। কি সুন্দরভাবেই না লেখক এই এক মলাটে নয় মাসের ইতিহাসকে বাঁধাই করে রেখেছেন! ২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাতের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে উনি এক জায়গায় লিখেছেন, “অসংখ্য শিশু জানলো না বড় হয়ে ওঠা কাকে বলে!”
ভয়ানক সত্যি কথা। আর হুমায়ূন আহমেদ মানেই গল্পের জাদুকর। তাঁর প্রতিটি বই পাঠকদের বেঁধে রাখবে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি উৎকৃষ্ট রচনা এটি। কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে অবশ্য পাঠ্য। যেমন সহজ সরল এর বর্ণনা, তেমনি প্রাঞ্জল এর ভাষা।
🕯️কাহিনীর প্রেক্ষাপট🕯️
খোকনদের বাড়ির নিয়ম হচ্ছে, যাদের বয়স বারোর নিচে তাঁদের বিকেল পাঁচটার আগেই ঘরে ফিরতে হবে। যাদের বয়স আঠারোর নিচে তাঁদের ফিরতে হবে ছয়টার মধ্যে। খোকনের বয়স তেরো বছর তিন মাস। কাজেই তাঁর বাইরে থাকার মেয়াদ ছয়টা। কিন্তু এখন ঘড়িতে সাড়ে সাতটা। তাই কড়া ধাতের বড় চাচার ভয়ে খোকনের বুক শুকিয়ে তৃষ্ণা পেয়ে গেল। বড় চাচার সামনে পড়লে ভূমিকম্প হয়ে যাবে। অবশ্য অজুহাত হিসেবে চমৎকার আর বিশ্বাসযোগ্য গল্পও তৈরি করে খোকন।
কিন্তু বড় চাচার সম্ভবত তিন নম্ব���ি বলে কোনো চোখ আছে। তাই সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও ধরা পড়ে যায় বড় চাচার কাছে। শাস্তি হিসেবে বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায় খোকনের জন্য।
কিন্তু তাই হলে কি চলে! স্কুলের ছয় বন্ধুকে নিয়ে খোকনরা একটি দল গঠন করেছে। নাম ভয়াল ছয়। দলের সদস্য বল্টু, সাজ্জাদ, টুনু, ফজলু, টগর আর খোকন। পায়ে হেঁটে আফ্রিকার গহিন অরণ্যে যাওয়া তাঁদের লক্ষ্য। বিকেলে সে বিষয়ে মিটিং হবে স্কুলমাঠে। কিন্তু বাসায় আটকে থাকলে সেটি কীভাবে সম্ভব ভেবে পায় না খোকন।
তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে টুনু, বল্টু আর দলের সবচেয়ে সাহসী ছেলে সাজ্জাদ। কিন্তু বড় চাচার ভয়ে টুনু পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে সাজ্জাদ আর বল্টু। তাঁদের কাছে ডেকে সন্দেশ খাইয়ে ঠান্ডা মাথায় কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেন বড় চাচা। কিন্তু খোকনের সঙ্গে দেখা করতে দেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত ভয়াল ছয়ের মিটিং পণ্ড হয়ে যায়। হতাশ হয়ে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এক মিছিলের সামনে পড়ে যায় সাজ্জাদ আর বল্টু। যখনকার কথা বলছি, তখন দেশের অবস্থা খুব খারাপ।
প্রায়ই মিছিল-মিটিং আর কারফিউয়ে দেশ প্রায় অচল। সেদিনেও সাজ্জাদ আর বল্টু মিছিলে ঢুকতেই শুরু হয় ভীষণ গোলাগুলি। বাধ্য হয়ে অপরিচিত বুড়ো এক দাদুর বাসায় ঢুকে পড়ে তাঁরা। কারফিউয়ের কারণে সেদিন রাতে ওই বাড়িতেই আটকে থাকতে হয়। বল্টু কাঁদতে শুরু করে। ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় সাজ্জাদেরও। তবে বুড়ো দাদু আর তাঁর একমাত্র নাতনি নীলু তাঁদের মন ভালো করার চেষ্টা করে। সকালে বাড়ি ফিরে সাজ্জাদ শোনে, ওর দুলাভাই রাতে ওকে খুঁজতে গিয়ে বাসায় ফেরেননি।
ওর বোন অঝোরে কাঁদছেন। কাঁদতে শুরু করে সাজ্জাদও। দিশেহারার মতো খুঁজতে থাকে দুলাভাইকে। এই সময়ে দেওয়া হলো স্বাধীনতার ঘোষণা। কয়েক দিন পরই শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিরা। সোনালি নতুন সূর্যের দিনের আশায় বুক বেঁধে বড়দের সঙ্গে সাজ্জাদের মতো অনেক কিশোরও ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে।
খোকনও বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দেয় যুদ্ধে। সবার স্বপ্ন একটিই, অন্ধকার রজনীর শেষে এরা আনবে একটি সূর্যের দিন। তারপর কি হলো? খোকনদের মতো কিশোরদের স্বপ্ন কি সত্যি হয়েছিল? তাঁরা কি পেরেছিল আনতে সেই নতুন সূর্যের দিন? পড়ার সময় থেকে যাবে এমন সব অসংখ্য প্রশ্ন।
🕯️পাঠ প্রতিক্রিয়া 🕯️
১৯৭১-এর কঠিন আর অস্থির দিনগুলো সম্পর্কে সবাই জানে। সেই ইতিহাস বড়দের গম্ভীর চোখে নয়, কিশোরদের সরল চোখে তুলে ধরেছেন হুমায়ূন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা এই কাহিনি পড়তে গিয়ে তাই দুঃখ আর কান্নার সঙ্গে দম ফাটানো হাসিও স্পর্শ করবে সবাইকে।
গল্পের চরিত্রগুলোকে মনে হবে, এরা তো আমাদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা কিংবা স্কুলের সহপাঠী। তাই মজার বইটি একবার হাতে নিলে শেষ না করে উপায় নেই। অনেকের ধারণা, সূর্যের দিন বইটি হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাস। তবে কথাটা সত্যি কি না তা নিজেই একবার পরখ করে রায় দিতে হবে পাঠকদের। বিশেষ করে কিশোর পাঠকদের যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানতে চায়। নিশ্চিত থাকতে পারো তারা বইটি পড়ে তুমিও একই কথা বলবে।
আমার ব্যক্তিগতভাবে দারুন লেগেছে বইটা। কোনো বই আমার নিজের কাছে ভালো না লাগলে সেটা নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না। মূলত এটা কিশোর উপন্যাস হলেও এর সাবলীল বর্ণনা ও চরিত্রগুলো বেশ উপভোগ করেছি। এই বইটা নিয়ে লেখার একটাই উদ্দেশ্য যাতে সব কিশোর পাঠকেরা এই বইটি পড়ে। সাথে বড়দেরও ভালো লাগবে আশা করি। দিনে দিনে কিশোররা নিজের দেশকে আরো ভালো ভাবে জানবে বইয়ের পাতায় কিংবা বাস্তব কাহিনীতে এই প্রত্যাশা।
বইটির চরিত্রদের মতো এই প্রজন্মের কিশোররাও প্রয়োজনে দেশের কল্যানে সকল কাজ করতে যেন প্রস্তত থাকে। উপন্যাসের খোকনদের মতো তাঁদের ও যে ভবিষ্যতে আনতে হবে নতুন সূর্যের দিন। যে আলোয় আলোকিত হবে দেশ।
খুবই ছোট মাত্র ৭১ পৃষ্ঠার একটি বই অনেক দ্রুত শেষ হয়ে যায় পড়তে পড়তে। তখন পড়তে গিয়ে মনে হবে আহ এত দ্রুত শেষ গেলো! বইটি কিশোরদের উজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। মুক্তিযুদ্ধের নানান বিষয়ে কিশোরদেরও অবদান আছে। যদি জিজ্ঞেস করা হয় বইটি কেন পড়বো, একজন কিশোরের চোখে মুক্তিযুদ্ধকে জানতে পড়া উচিত বইটি।
❝আজ (২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭১) আমরা একটি গোপন দল করিয়াছি। দলটির নাম "ভয়াল-ছয়"। দলের সদস্য সংখ্যা ছয়। সদস্যরা কিছুদিনের মধ্যেই পায়ে হাঁটিয়া পৃথিবী ঘুরিতে বাহির হইবে। আমাদের প্রথম গন্তব্য আফ্রিকার গহীন অরণ্য। কঙ্গো নদীর পাশ্ববর্তী অঞ্চল।❞
সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কিশোর-কিশোরীরা পৃথিবীকে নতুন রূপে দেখতে শুরু করে। চারিপাশের প্রকৃতি আরও রঙিন মনে হয়। নতুন নতুন শখ ও ইচ্ছে মনে জেগে ওঠে। সম্ভব হবে না জেনেও স্বপ্ন দেখে। বিশ্বভ্রমণ, গুপ্তধনের সন্ধান, গোয়েন্দা দলসহ আরও কতো রকমের যে পরিকল্পনা হয় এইসময়। হোক আর না হোক কল্পনাতে মন্দ কি?
সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবার সন্তান খোকন। পরিবারের কর্তা বড় চাচা। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে ওনার কথামতো চলতে হয় এটাই নিয়ম। যৌথ পরিবারে বড় হওয়া খোকন কখনোই একাকিত্ব বুঝেনি। মা বহুদিন ধরে অসুস্থ তবুও তার মনে আশা আছে। এইদিকে সে বন্ধুদের সাথে ঠিক করে যে বিশ্বভ্রমণে বের হবে। কথা দেয় বিষয়টা গোপন রাখবে। কিন্তু বড় চাচার জেরার মুখে বলে দিতে বাধ্য হয়। ছয় কিশোরের অতিসাধারণ এই স্বপ্ন যে তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিবে কে জানতো! কিছুদিনের মধ্যে পাক-হানাদার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন হতে থাকে মুক্তির। শাসকশ্রেণিও বদ্ধপরিকর রক্তের বন্যা বহায় দিবে কিন্তু ক্ষমতা হাতছাড়া করবে না। অন্ধকার নেমে আসে বাংলায়...
: কি, নিবি আমাকে দলে? : ভাল ছাত্রদের আমরা দলে নিই না। : কেন, ভাল ছাত্ররা কি দোষ করলো! : ভাল ছাত্ররা পড়াশোনা করবে। আমরা পড়াশোনা করবো না। : কি করবি তাহলে? : দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াবো। : আমিও ঘুরব তোদের সাথে।
খোকনের পরিবারের রীতিনীতি, সদস্য ও বন্ধুদের নিয়ে কাহিনীর শুরু। মফস্বলের ছয় কিশোর দেশের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হলেও বিচলিত নয় কারণ তারা শীঘ্রই বিশ্বভ্রমণে বের হবে। এরই মধ্যে দেশের অবস্থা মারাত্মক হয়ে ওঠে। পাক-হানাদার নির্বিচারে বাঙালি হত্যায় মেতে ওঠে। ছয় বন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। কেউ কেউ তো এলাকা ছেড়ে দেয়, কারো আবার খোঁজ পাওয়া যায় না। ছয় বন্ধুর জীবন পাঠককে নিয়ে যাবে নিজের কৈশোরে সাথে অতীতের সেসব ভয়াল দিনগুলোতেও যখন বাংলার মাটি রক্তে ভিজে ছিল।
খোকন, সাজ্জাদ, বল্টু, টুনু, টগর ও মুনীর ছয় বন্ধু। খোকন লেখাপড়া-খেলাধুলা সব বিষয়েই পটু তবে তার প্রায়ই মনে হয় গরীব ঘরে জন্ম নিলে ভালো হতো। বন্ধুদের মতো সেও স্বাধীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে পারবো, বাঁধা দিতো না কেউ। সাজ্জাদ বোন ও দুলাভাইয়ের সাথে থাকে। পরিবার বলতে শুধু তারাই। সে প্রচন্ড ডানপিটে। নিষেধাজ্ঞার পরও বারবার মিছিলে যায়। বল্টুকে অধিকাংশ সময় দেখা যায় সাজ্জাদের সাথেই। মাঝেমধ্যে সেও যায় মিশিলে। টুনু ও টগর তো ভিতুর ডিম। মুনীর পড়ুয়া ভালো ছাত্র কিন্তু তারও মাঝেমধ্যে সাজ্জাদদের মতো অবাধ্য হতে মন চায়। বাবার ভয়ে অবশ্য তেমন একটা হতেও পারে না। এখন কথা হলো তাদের বিশ্বভ্রমণের স্বপ্ন কি আদোও বাস্তবায়িত হবে?
হুমায়ূন আহমেদের পারিবারিক বন্ধন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখার ধরণটা আমার বিশেষ পছন্দ। অদ্ভুত সব নিয়মকানুনও মজায় লাগে পড়তে। এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে দাদু চরিত্রটা। কিছু মানুষ সম্ভবত এমন অপরিচিত থেকে অতি-আপনজন হয়ে যায়। সাজ্জাদ ও তার বোনের জন্য কষ্ট লেগেছে। সমাপ্তিটা কেমন হবে আগেই আন্দাজ করেছিলাম তবুও মনটা বিষাদে ভরে উঠেছে। বইয়ের প্রতিটা চরিত্রই আমাদের আশেপাশের মানুষের আদলে তৈরি। রাহেলার মতো অনেকেই নিজের জন্য ও আপনজনের জন্য দেশ ছাড়তে চায় তো আবার কেউ ছোট চাচার মতো দেশকে গড়তে দেখতে চায় আবার কেউ খোকনের বাবার মতো মুক্তির জন্য মৃত্যুর পরোয়াও করে না, বড় চাচার মতো মানুষ আছে যারা নিজের কথার বাইরে যেতে চান না হোক ঠিক বা বেঠিক। মানসিক টানাপোড়েন, দুরন্তপনা, জীবনের গল্প ও যুদ্ধ নিয়ে শেষ হলো বইয়ের কাহিনী।
❝এদের যুদ্ধ মুক্তির জন্যে, তাই এদের আমরা ভালবেসে ডাকলাম মুক্তিবাহিনী। এদ���র স্বপ্ন একটিই- অন্ধকার রজনীর শেষে এরা আনবে একটি সূর্যের দিন।❞
আজও পৃথিবীর আনাচকানাচে বহু মানুষ একটি সূর্যের দিনের অপেক্ষায় আছে।
বই: সূর্যের দিন লেখক: হুমায়ূন আহমেদ জনরা: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস প্রকাশনী: প্রগতি পাবলিশার্স পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৭৮ মুদ্রিত মূল্য: ২৫০/-
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভালোবাসা আমার মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে আসেনি,দলিল পড়েও আসেনি। এসেছে হুমায়ূন আহমেদ থেকে। যদিও বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো ভালো লেখা আছে আনিসুল হক,শাহাদুজ্জামান,সেলিনা হোসেন,জাহানারা ইমাম ইত্যাদি বিখ্যাত মানুষদের কিন্তু আমার সেসব দিয়ে শুরু হয়নি। শুরুতে যুদ্ধ,রক্তারক্তির গল্প পড়তে ভালো লাগতো না। সেটার প্রতি আমার ভালোবাসা জাগিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। তারপর ধীরে ধীরে অনেকের বই পড়েছি,পড়ছি। এখন এই বিষয়টা নিয়ে পড়তে রীতিমতো ভালোবাসি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই বলতেই সবাই চেনে জোছনা ও জননীর গল্প ও দেয়ালকে। কিন্তু এই বিষয়ে ওনার আরো অনেক অনেক উপন্যাস আছে। তারমধ্যে ওয়ান অব দ্য বেস্ট আন্ডাররেটেট উপন্যাসের নাম সৌরভ, দ্বিতীয় বইয়ের নাম সূর্যের দিন।
সূর্যের দিন এমন একটা উপন্যাস যে কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত পড়তে পারে। আমার কাছে হুমায়ূনের যে একটা উপন্যাস পাঠ্যবইয়ে লিপিবদ্ধ করার মতোন মনে হয় তার নাম 'সূর্যের দিন।' জাফর ইকবালের 'আমার বন্ধু রাশেদ' এর মতো এই বইয়েও চমৎকার একটা ছেলে আছে। দারুন একটা সাহসী বন্ধু আছে খোকনের,সাজ্জাদ। যে কোন আলোচনায় কখনো থাকেনি।
গল্পটা ছয়জন বন্ধুকে নিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় 'ভয়াল ছয়' নামে ছেলেমানুষী একটা দল গঠন করে। নাহ! এই ভয়াল ছয় যুদ্ধ করবে এমন দল না,এরা পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ করবে। প্রথমে দেখবে বাইরের দেশ তারপর দেখবে নিজের দেশ।
এদের প্রধান খোকন,যে বড়লোক বাড়ির ছেলে। তাদের বাড়িতে ছয়টার আগে সকলের ঘরে ফেরার কঠিন নিয়ম আছে। কবীর আর খোকন তা প্রায়ই ভঙ্গ করে মিছিলে যায়। খোকনের বাবার এই বিষয়টাতে প্রশ্রয়ের ভাব আছে, বাচ্চাদেরও যে এই ভয়ংকর সময়ে অস্ত্র হাতে ধরতে হবে এই সত্যটা তিনি জানেন। কিন্তু বাড়ির প্রধান তার বড়চাচা যিনি এক সময় পাকিস্তান তৈরির জন্য লড়াই করেছেন। এখন পাকিস্তানকে দুই খন্ড হতে দেখতে চান না। দেশ ভাগে তার কোন মত নেই। তিনি ছেলেদেরকে ঘরে আটকে রাখতে চান।
চরম দুঃসময়ে কখনো কখনো আপনও পর হয়ে ওঠে। আবার পর হয়ে ওঠে পরম আপনজন। যেমন নীলুর দাদাভাই। মিছিলের মারামারি,গোলাগুলি মাথায় করে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা দুইটা বাচ্চাকে প্রাণে বাঁচিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। আবার খোকনের বড়চাচা নিজের বাসায় এত রাগী,খোকনের বন্ধু কোথাকার কে সাজ্জাদ তার দুলাভাইকে খুঁজতে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন। সাজ্জাদের দুলাভাইয়ের অফিসের মানুষগুলো,মিথ্যা ধারের গল্প বানিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দেয় একগাদা টাকা।
মানুষের সাথে পশুর একটাই তফাৎ। মানুষ কখনো কখনো হয়ে ওঠে পরম মমতাময় আবার কখনো কখনো হয়ে ওঠে চরম নিকৃষ্ট,যতটা পশুও হতে পারে না। তাই পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ নির্বিচারে গোলাগুলি চড়,কিল,লাথি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষগুলোকে শেষ করে দিতে চায়,বুট দিয়ে পিষে মিশিয়ে দিতে চায় মাটির সাথে।
কিন্তু মানুষ কেন মানবে? কেন ছিনিয়ে নিতে দেবে স্বাধীনতা? বুড়ো থেকে শুরু করে বাচ্চা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এবং নিজে মরবে জেনেও ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এনে দিতে চায় একটি সূর্যের দিন। যেদিনে আজকের পরাধীনতার অন্ধকারের কোন ছায়াই থাকবে না।
সূর্যের দিন,নিজে পড়তে পারেন। আপনার অল্পবয়সী ভাইবোন বা যে কোন কিশোর কিশোরীদেরকে উপহার দিতে চাইলে এই বইটি হতে পারে বেস্ট চয়েজ।
মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য চৌদ্দ বছরের একটি বালককে 'বীর প্রতীক' উপাধি দেয়া হয়। মেথিকান্দা অপারেশনে এই বালকটি শত্রুর গুলিতে নিহত হয়। তার নাম সাজ্জাদ।
ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাসিন্দাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। স্কুল বন্ধ,মিছিল-মিটিং। এ সময় বাসা থেকে ছোট ছেলেদের বের হতেও দিচ্ছে না। কখন কি হয়!! খোকনের বাসার সামনে বল্টু ও সাজ্জাদ দাড়িয়ে আছে। খোকনের আসার কথা । কিন্তু আসছে না। গতকাল পাঁচটার পরে বাড়িতে এসেছে বলে আজ পুরো দিন বের হওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ। তারা এসেছিল 'ভয়াল ছয়' নিয়ে কথা বলতে। তারা ছয় জনের একটা দল বানিয়েছে যারা হেঁটে হেঁটে আফ্রিকা যাবে। বল্টু আর সাজ্জাদ একদিন মিছিলে যায়। এটাই তাদের প্রথম মিছিলে যাওয়া নয়। কিন্তু এই মিছিলে মিলিটারিরা গুলি শুরু করলে তারা একটা বাড়িতে লুকোয়। সেই বাড়িতে একজন বুড়ো রিটায়ার্ড হেডমাস্টার তার নাতনি নীলুকে নিয়ে থাকে। রাতটা সেখানে কাটিয়ে সাজ্জাদ যায় তার বাসায়। সেখানে তার বোন এবং দুলাভাইয়ের সাথে থাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারে তার দুলাভাই বাসায় ফিরে নি। সেদিন ছিল ৭ই মার্চ। রেসকোর্স ময়দান থেকে শুরু করে সব জায়গায় সে খুঁজে তার দুলাভাইকে। বেশকিছুদিন যাবার পরও যখন পাওয়া গেলো না তখন সাজ্জাদের বোন তার কিছু গহনা বিক্রি করে আনতে বলে। এভাবেও যখন চলে না তখন সে তার বোনের কথায় দুলাভাইয়ের অফিসে যায়। সেখানে বারিন বাবুর কাছে ৫০ টা টাকা তার দুলাভাই পেত বলে সাজ্জাদের কাছে দিয়ে দেয়। এভাবে অনেকেই যখন দিল সাজ্জাদ বিষয়টা বুঝতে পারলো। তার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। বাড়িতে গিয়ে দেখে সেই বুড়ো আর নীলু তাদেরকে নিতে এসেছে। ২৫শে মার্চ ধ্বংসযজ্ঞ হওয়ার পর তারা নীলুদের সাথে নীলগঞ্জ গ্রামের বাড়ি রওনা হলো। ট্রাক,নৌকা,পায়ে হেঁটে তারা নীলগঞ্জ পৌঁছায়। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছাতে একটা নদী পার হতে হবে। তখন একটা নৌকায় অনেকজন মিলে রওনা হলো। নৌকায় কেও একজন ট্রানজিস্টরে স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান দিল। ঘোষকের কথা শেষ হতেই সবাই জয় বাংলা বলে আকাশ ফাটানো ধ্বনি দিল। নীলু আচ্ছন্নের মত ছিল। উঠে বলল,'কি হয়েছে?' সাজ্জাদ হাসতে হাসতে বলল, 'নীলু যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।' : কে যুদ্ধ করছে? : বাঙালি মিলিটারিরা : শুধু ওরা? : না আমরা করব। আমিও যাব। : তোমাকে কি ওরা নিবে? : নিতেই হবে।
সেদিকে খোকনও মে মাসের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনীতে দেওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় । তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
রিভিউ দেখে বোঝাই যাচ্ছে এটি একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কিশোর উপন্যাস। সে সময়কার অবস্থা,আন্দোলনের জোয়ার, দৈনন্দিন কর্মকান্ড, ২৫শে মার্চের পর ঘর বাড়ি ছেড়ে পালানো, মুক্তিযুদ্ধে যোগদান সবই উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদ খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। চাইলে এক বসাতেই পড়ে ফেলা সম্ভব।
সূর্যের দিন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত ৭০ পৃষ্ঠার ক্ষুদ্র উপন্যাস ।এই উপন্যাস সহজ-সরল-স্বাভাবিক জীবন সহসা সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবার গল্প বলে। নিতান্ত সহজ শৈশব-কৈশোর কাটানো ছয় কিশোরের চোখের রেখায় একরাশ দুরন্ত স্বপ্ন আর অনেকখানি পাগলামি নিয়ে 'ভয়াল ছয়' নামক একটি দল গঠনের মাধ্যমে আফ্রিকার গহীন অরণ্য দেখতে যাবার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় উপন্যাসের আবর্তন।তারপর,এইসব সহজ-সাবলীল-সাদামাটা জীবন জুড়ে থাকা সবটা আলো হুট করে বড্ড কালো হয়ে যায়;চেনা দিনগুলো ভীষণরকম অচেনা হয়ে ওঠে।দেশের শান্তি-সুখ-শৃঙ্খলা এক রাত্রির মাঝেই যেন কর্পূরের মতো উবে যায়;সর্বত্র যুদ্ধের দামামা বাজতে থাকে,গুলিবর্ষণের বিকট শব্দে তটস্থ হয়ে উঠে সকল জনমানব; বড় হয়ে ওঠা কেমন তা জানবার আগেই গুলিতে খুলি উড়ে যায় অগণিত নিষ্পাপ-ঘুমন্ত শিশুর ।চারদিকে শুরু হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ; দেশেএ বুকে জড়ো হওয়া সব কালো দূর করে চিরচেনা আলো ফিরিয়ে দেবার প্রাণপন লড়াই।উপন্যাসটির শুরু থেকে শেষ অব্দি সবটা জুড়ে ছিলো যুদ্ধকালীন সময়ের শুরু থেকে শেষ অব্দি সময়ের সুনিপুণ বিবরণ।সেই বিবরণ এতই চমৎকার এবং সুখপাঠ্য যে তা পড়ে মুগ্ধ না হবার কোনো উপায় থাকে না! লেখক যে তাঁর অসামান্য দক্ষতার কারণেই এতখানি স্বল্প পরিসরে সবটা তুলে ধরতে পেরেছেন তা বলাই বাহুল্য।উপন্যাসটির শেষাংশে দেখতে পাওয়া যাবে,ভয়াল ছয়ের দুজন সদস্য -দুরন্ত-দুঃসাহসী কিশোর সাজ্জাদ এবং খোকন একটি সূর্যের দিনের প্রতীক্ষায় শিশুসুলভ রোমহষর্ক এডভেঞ্চারের স্বপ্ন দু'চোখ থেকে সরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সত্যিকারের যুদ্ধে-ভয়াল মুক্তিযুদ্ধে! যে যুদ্ধের কারণে কিংবা বহুল প্রতীক্ষিত একটি সূর্যের দিনের জন্যে এদেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আগে আত্মত্যাগ করতে হয়েছিলো।