উত্তরবঙ্গের ছিমছাম আর শান্তিপূর্ণ এক মফস্বল রতনপুর। কিন্তু এক সময় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক উধাও হয়ে গেল কম বয়সি তিন তরুণী। বিপদে পড়ে গেল স্থানীয় প্রশাসন। তদন্তে পাঠানো হলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নাবিদ আল নিয়াজকে। রতনপুর পৌঁছে সে বুঝতে পারলো পরিস্থিতি যতটা মনে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। দুই তরুণীর লাশ উদ্ধার হলে নড়েচড়ে বসলো সবাই। তবে কি এরকম এক জায়গায় কোনো সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব ঘটেছে? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন গভীর ষড়যন্ত্র?
তদন্তে আরো কিছু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটলে ঘটনা জট পাকাতে শুরু করলো। একটা প্রশ্নই ঘুরতে লাগলো তখন- কিভাবে সমাপ্তি ঘটবে এই নিখোঁজকাব্যের?
- গেল আরেকটা! এই নিয়ে তিনটা হইলো! - কী গেল আরেকটা? উইকেট? - না। মেয়ে। - মেয়ে? তিনটা মেয়ে? কোথায় গেল? - সেটাই তো প্রশ্ন। কোথায় গেল? তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একই এলাকা থেকে তিনটা মেয়ে নিখোঁজ হইছে। - বলো কি? কোথায়? - রতনপুর। উত্তরবঙ্গের একটা মফস্বল শহর। তুমি চিনবা না। - বাড়ি থেকে পালায় নাই তো? বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আজকাল তো হরহামেশা হচ্ছে। - পরপর তিন সপ্তায় তিন জন? তাও একই এলাকা থেকে? - তাও তো কথা। - গোটা এলাকায় তোলপাড় পড়ে গেছে। তার উপর নিখোঁজ হওয়া মেয়েগুলোর বাবারা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। বিশেষ করে বিথীর বাবা উকিল মোজাম্মেল আলম। - বিথী টা কে? - যে মেয়েটা সর্বশেষ নিখোঁজ হইছে। তার আগের দুই সপ্তাহে নিখোঁজ হইছে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারের মেয়ে দিশা আর স্থানীয় রেস্টুরেন্ট মালিকের মেয়ে অদিতি। - কী অবস্থা দেশের! পুলিশ কী করে? - স্থানীয় পুলিশ কিছুই বুঝে উঠতে পারতেছে না। এই ধরনের কেস হ্যান্ডেল করার মত অভিজ্ঞতা তাদের নাই। এই ধরনের সিচুয়েশনেও আগে কখনও পড়ে নাই তারা। এদিকে নিখোঁজ মেয়েদের পরিবারের প্রেশারে তাদের অবস্থা হালুয়া টাইট। - হুম। হালুয়া টাইট হবারই কথা।... এই, গাজরের হালুয়াটা একটু খেয়ে দেখ তো কেমন হয়েছে? - তুমি জানো আমি গাজরের হালুয়া খাই না। শুধু গাজর কেন, কোন ধরনের হালুয়াই আমি খাই না। আর এই সিচুয়েশনে গাজরের হালুয়া খাওয়ার কথা তোমার মাথায় আসে কী করে। তিন তিনটা জলজ্যান্ত মেয়ে নিখোঁজ। কোন ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। ক্লুর খুঁজে নাবিদের অবস্থা হালুয়া টাইট। আর তুমি আমাকে গাজরের হালুয়া খাইতে বলতেছ! - ওহ সরি। এত যত্ন করে বানালাম তো, এই জন্য বললাম। নাবিদটা কে? - নাবিদ আল নিয়াজ। স্পেশাল ব্রাঞ্চ অফিসার। নিখোঁজ রহস্যের তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে তাকে রতনপুর পাঠানো হয়েছে। - সে কি খুব ভাল অফিসার? - হুম। এই বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা আছে। যদিও ব্যক্তিগত কিছু কারণে মানসিকভাবে অস্থিরতার মধ্যে আছে সে এখন। তারপরও ওকে যারা চেনে, তাদের ধারণা কেউ সমাধান করতে পারলে নাবিদই পারবে। - পারলেই ভাল। তিন তিনটা মেয়ে নিখোঁজ। না জানি ওদের মা-বাবার কি অবস্থা! - উঁহু। তিনটা না। একটা। একটা মেয়ে নিখোঁজ। - এই না বললা তিনটা! - হুম। তিনজন নিখোঁজ ছিল। দুজনকে পাওয়া গেছে। - এর মধ্যেই! বাহ! ইন্সপেক্টর নাবিদ নাওয়াজ তো খুবই কাজের লোক। - নাওয়াজ না, নিয়াজ। নাবিদ আল নিয়াজ। নাওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর মুভি দেখা একটু কমাও। যাই হোক, আসলে দুজনকে ঠিক পাওয়া যায় নাই। ওই দুজনের লাশ পাওয়া গেছে। - বল কি! - হুম, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে খুনী যেন ইন্সপেক্টর নাবিদের জন্যই ওয়েট করতেছিল। আসা মাত্রই দুইটা লাশ উপহার দিছে। - কী ভয়ংকর! কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ নিশ্চয়ই। - সেটাও আরেক রহস্য। খুনগুলোর নির্দিস্ট কোন প্যাটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না, যাতে করে নিশ্চিত হওয়া যায় কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ। মোর ইন্টারেস্টিংলি লাশ দুটোর পোস্টমর্টেম করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে খুন করার আগে মেয়ে দুজনকে রেপ বা নির্যাতনও করা হয় নাই! - অদ্ভুত! - হুম। একজনকে মাটিতে পুঁতে রাখা হইছিল। আরেক জনের লাশ পাওয়া যায় পুরাতন জমিদার বাড়ির উঠানে। একজনকে বেশকিছুদিন আগে হত্যা করা হইছিল, আরেকজনকে সম্প্রতি। -কিন্তু কে থাকতে পারে এসবের পেছনে? আর তার উদ্দেশ্যটাই বা কি? - হু হু। সেখানেই তো মজা। - তোমার কাছে মজার মনে হচ্ছে বিষয়টা? দুটো মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে, একটা মেয়ে এখনও নিখোঁজ। আর তোমার কাছে মজা লাগতেছে? - লাগবে না কেন? ভাল একটা মার্ডার মিস্ট্রি পড়ার মজাই আলাদা। বইটা পড়ে বেশ ভাল লাগছে। দেশীয় পটভূমিতে জমজমাট একটা মার্ডার মিস্ট্রি, লেখনীও চমৎকার। ঝরঝরে। - মানে কি তুমি এতক্ষন বইয়ের কাহিনি বলতেছিলা? এই গুলা সত্যি সত্যি ঘটে নাই? - ঘটছে তো। তবে বইয়ের মধ্যে। তুমি কী মনে করছিলা সত্যি সত্যি? - হুম। তবে সত্যি না হয়ে ভালই হইছে। - হুম। তার মানে বলা যায় লেখক বেশ ভালই লিখছে। - তা তো বলতেই হবে। কিন্তু শেষে কী হল? মেয়েগুলা নিখোঁজ হল কেন? কিভাবে নিখোঁজ হল? আর খুনগুলাই বা করল কে? কেন করল? - সেইটা তো এইখানে বলা যাবে না। কাছে আসো, কানে কানে বলতেছি। (ফুস-ফিস-ফুস-ফিস-ফুস) - ও মাই গড! আসলেই! - হুম। আসলেই। -লেখকরে একদিন বাসায় দাওয়াত দিও। গাজরের হালুয়া খাওয়াব। - হবে হবে। - কবে? - ঈদের পর :3
আসলে যতই অ্যাডভেঞ্চার বলেন, আর যতই হরর বলেন, আমার কাছে মার্ডার মিস্ট্রি, তাও আবার হু ডান ইট (আকামটা কে করল) এর কোনও তুলনা হয় না। আগাথা ভক্ত এই আমাকে অ্যাডভেঞ্চার বা অ্যাকশন ধর্মী থ্রিলার টানে বটে, মুগ্ধও করে, কিন্তু তব্দা দিয়ে যায় না। নিখোঁজকাব্য বইটি হু ডান ইট। প্রথমে অবশ্য যাচ্ছিল অপহরণের দিকে, কিন্তু তারপর বাঁক ঘুরে মোড় নিল খুনের রহস্যের দিকে। মাঝখানে আবার মব মনস্তত্বের পরিচয়ও আছে। বইটির প্লট ইন্টারেস্টিং, বিভিন্ন ঘটনা আর ক্লু-এর উপস্থাপন নাটকীয়। চরিত্রগুলোর সাথে রিলেট করা যায় আর সবচেয়ে বড় কথা লেখনী সাবালীল। আরও একটা ব্যাপার অবশ্য আছে, নিজের স্কুলের নাম দেখতে ভালোই লাগে। He definately knows how to write! তবে খারাপ লাগা দিকও কিছু আছে। কিছু তথ্যগত উপস্থাপনার গড়বিল। জানা থাকলে হয়তো ভ্রু কুচকাবে। কিন্তু না থাকলে ওটাকে ভুল বলে মনে হবে না। একটা মাত্র খারাপলাগা দিক বলতে বললে বলব, স্ট্রিং অ্যালং করার প্রবণতা। একটা চরিত্রকে নিয়ে একাধিক বই লিখলে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সেটা যদি একটা পূর্ণাংগ সমাপ্তি না পায় তো একটু বিরক্তি লাগে বটে।
সালমান হক একজন ভালো অনুবাদক হিসাবে খ্যাত। আমি তার কোন অনুবাদ পড়িনি। তবে তার রিভিউ আমি নিয়মিত পড়ি। ওনার রিভিউ পড়েই বেশ কিছু বই পড়েছিলাম যেগুলা হয়ত পড়ার তেমন ইচ্ছা আগে ছিল না। বলাই বাহুল্য, প্রায় সবগুলো বইই আমার ভালো লেগেছে। সেই সালমান হক যখন বই লিখে ফেললেন তখন মনে হল, এত ভালো রিভিউ লিখেন, বই তো তাহলে পড়ে করে দেখতেই হয়।
যতখানি আশা করেছিলাম প্রথম বই হিসাবে তার চেয়ে অনেক ভালো কাজ করেছেন লেখক। ছোট ছোট অধ্যায়ে ভাগ করা বইটি একবসায় পড়ে ফেলেছি। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে এন্ডিং। আমি বই পড়তে পড়তে নিজের মনে অনেক ভাবে এন্ডিং কল্পনা করেছি। কিন্তু একটাও মেলেনি। আমার মনে হয়েছে, এখানেই এই বইটির সার্থকতা।
বইটি শেষ হয়েছে সম্ভাব্য সিকুয়ালের ইশারা দিয়ে। অপেক্ষায় থাকলাম নাবিদের অতীত জানার জন্য।
রতনপুর, উত্তরবঙ্গের একটা সাধারণ মফস্বল শহর। শান্তিপূর্ণ রতনপুর মোটামুটি অপরাধমুক্ত এলাকা, যেখানে সবাই সবাইকে চিনে, জানে। তাই তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সেখানকার তিনজন কম বয়সী তরুণী উধাও হয়ে গেলে সেটা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। সেইসাথে মেয়েগুলোর পরিবার এলাকার প্রভাবশালী মানুষ হওয়ায় রতনপুরের মানুষজন ক্রমেই অস্থির হয়ে ওঠে।
ইন্সপেক্টর জাহি���, রতনপুর থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসার। রতনপুরেই তার বেড়ে ওঠা, এলাকার সকলে তার কাছে নিজের পরিবারের মতো। তাই নিখোঁজ মেয়েদের কেসটা সমাধান করা তার কাছে পেশাগত বাদেও ব্যক্তিগত লক্ষ্যও হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তিন তিনটে মেয়ে উধাও হবার পরও কেসের কোনো অগ্রগতি হয় না, ফলে বিপাকে পরা প্রশাসন সাহায্য চাই রাজশাহীর স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাছে।
নাবিদ আল নিয়াজ, স্পেশাল ব্রাঞ্চের তরুণ তুর্কী। মেধাবী গোয়েন্দা অফিসার হলেও নিজের ব্যক্তিগত জীবনের এক বিপর্যয়ের পর থেকে পেশাগত জীবনেও বিপর্যস্ত হতে থাকে সে। বিশেষ করে লাস্ট কেসের ব্যর্থতায় তার ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে পরে, শেষ সুযোগ হিসেবে সে পাই রতনপুরের কেসটা সমাধানের দায়িত্ব।
রতনপুরে পৌছে পুরোদমে কাজ করে নাবিদ, সাথে থাকে ইন্সপেক্টর জাহিদ আর তার দল। কিন্তু কেসটা ক্রমেই জটিল হতে থাকে। পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে থাকে, যখন পাওয়া যেতে শুরু করে নিখোঁজ মেয়েদের লাশ। তবে কি এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ, নাকি অন্যকিছু? কিছু তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার দ্বারা যে অপরাধকাব্যের সূচনা হয়েছে তার সমাপ্তি ঘটবে কোথায় গিয়ে?
সালমান হক আমার বেশ পছন্দের অনুবাদক। প্রথম শ্রেণির এই অনুবাদক তার অসাধারণ সব অনুবাদগ্রন্থের পাশাপাশি বেশ কিছু মৌলিক থ্রিলারও লিখেছেন। সেগুলো পড়ার ইচ্ছে ছিল অনেক দিনের। তো কেমন লাগলো তার লেখা প্রথম মৌলিক বই? 'নিখোঁজকাব্য'এর গল্পটা একটা গতানুগতিক ক্রাইম মিস্ট্রি থ্রিলার হিসেবে মোটামুটি ভালোই বলা চলে।
সেই গতানুগতিক গল্পকে মোটামুটি গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন লেখক। কিছু স্টিরিওটাইপের আইডিয়া আর চরিত্র দিয়ে সবকিছু গড়ে তোলা হয়েছে ভালোভাবেই। সেটা ছোট ছোট অধ্যায়, ঘটনার ঘনঘটা, ভালো ইনভেস্টিগেশন দিয়ে বিন্যস্ত হওয়ায় গোটা কাহিনীটাই বেশ জমে উঠে। চরিত্রগুলোর গঠন মোটামুটি ভালো। দ্রুত কাহিনিবিন্যাসের মধ্যে পুলিশের তদন্তকার্য ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। আর লেখকের সাবলীল গল্পকথনের কারণে পুরো বইটাই খুব উপভোগ্য, একটানে পড়ে ফেলা যায়।
তবে খারাপ বলতে ওই গতানুগতিকতা। নিয়মিত থ্রিলার পড়ুয়া পাঠক হলে এই বইয়ের মূল টুইস্টটা কি হতে পারে তা আন্দাজ করা খুব একটা কঠিন হবে না (বিশেষ করে মাঝখানের একটা অধ্যায় এতে বেশ ভূমিকা রাখে, এই বইয়ে সেটা দেওয়া উচিত হয় নি)। গল্প শেষের দিকে একটু রাশড হয়ে গিয়েছে। রহস্যের সমাধান, সমাধানের প্রসেস, আরও ভালো করা যেত। শেষে অপহরণ আর হত্যার মোটিভটা বাস্তবসম্মত মনে হয় নাই। আর প্রধান চরিত্রের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রহস্য করা আর ওইটাকে ক্লিফ হ্যাঙ্গারে রেখে দেওয়াটাও ভালো লাগে নি। সবমিলিয়ে মনে হয়েছে বইটা বড় করে কাহিনীকে আরও জমানো যেত। সবশেষে বলব, 'নিখোঁজকাব্য' একটা থ্রিলার বই হিসেবে মোটামুটি ভালো। উপভোগ্য, কিন্তু আহামরি বিশেষ কিছু নয়।
📚 বইয়ের নাম : নিখোঁজকাব্য
📚 লেখক : সালমান হক
📚 বইয়ের ধরণ : ক্রাইম থ্রিলার, মিস্ট্রি থ্রিলার, ডিটেকটিভ
রতনপুর নামক এক ফিকশনাল মফস্বল অঞ্চলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে "হু ডান ইট" জনরার বইটির কাহিনী। অনুবাদক হিসেবে সালমান হক প্রশংসনীয় কাজ দেখিয়েছে, নিখোঁজকাব্যের মাধ্যমে লেখক হিসেবে তার অভিষেক হলো। সাহিত্যে একটা কথা আছে, 'একজন লেখককে আগে ভালো পাঠক হতে হয়।' যতদূর জানি, সালমানের প্রচুর বইপত্র পড়ার অভ্যাস আছে। স্বভাবতই তার কাছ থেকে সুপরিণত লেখনী প্রত্যাশিত ছিল। হ্যা, লেখক হতাশ করেনি। বইটা পড়তে গিয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্তির স্বাদ পেয়েছি, আর তার মূল কারণ হচ্ছে দক্ষ লেখনীভঙ্গি।
কীভাবে সাসপেন্স ক্রিয়েট করে পাঠকের হার্টবিট বাড়াতে হয়, কীভাবে মূল চরিত্রকে একটু একটু করে বিল্ড আপ করতে হয়, সাপোর্টিং ক্যারেক্টারকে ডেভেলপ করে+ সাবপ্লটের মাধ্যমে মাইন্ড ডিস্ট্রাকশন অথবা একঘেয়েমি ভাব কাটানো- থ্রিলারের কাঠামোগত এই মূল তিনটি বিষয়কে যথার্থভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে । পুরো ঘটনাপ্রবাহ জুড়ে কোথাও অতিরিক্ত বর্ণনা নেই, কাহিনী ঝুলে পড়েনি একবারও। টান টান উত্তেজনা ধরে রেখে এগিয়ে গিয়েছে সাবলীলভাবে। ১৭৬ পৃষ্ঠার মাঝে ১৬৫ পর্যন্ত বোঝার কোনো উপায় নেই যে পরিণতি কোনদিকে গড়াচ্ছে।
# এক নজরে ভালো লাগার বিষয়গুলো:
১) চরিত্রগুলোকে খুব পরিচিত বলে মনে হয়েছে। সহজ স্বাভাবিকভাবে আমাদের চারপাশের ছোট ছোট ঘটনাকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে গল্পের আকারে। ২) নাবিদ; শক্তপোক্ত, রাফ এন্ড টাফ প্রটাগনিস্ট। অতীতের কোনো এক দু:সহ স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখে সে বিষণ্ণতায় ভোগে। বিপরীতমুখী অন্তর্দন্দ্ব নাবিদের চরিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ৩) বইটা ছোট ছোট চ্যাপ্টারে ভাগ করা।
৪) গতি বজায় রেখে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে নেয়া। ৫) চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ছোটখাট ঘটনাকে কেন্দ্র করে কীভাবে বড় কিছু ঘটে যেতে পারে, সেদিকে ফোকাস করে প্লট নির্মাণ। বাটারফ্লাই এফেক্ট ইনডিড।
# যা ভালো লাগেনি:
- নির্দিষ্ট একটা খুনের মোটিভ অনুপস্থিত ছিল। (বললে স্পয়লার হবে) - কিছু কিছু জায়গায় আরেকটু ডিটেইলিং প্রয়োজন ছিল। - শেষের দিকে নাম এবং তারিখসংক্রান্ত বিভ্রাট আছে।
তবে সব মিলিয়ে নিখোঁজকাব্যকে মানসম্মত একটি থ্রিলারের কাতারে ফেলা যায়। প্রথম বইয়েই দারুণ কাজ দেখানোর জন্য সালমানকে অভিনন্দন। আশা করি ভবিষ্যতে একের পর এক সুস্বাদু পাঠকনন্দিত লেখনী উপহার দিয়ে যাবে এই তরুণ লেখক। শুভকামনা রইল :)
রাজশাহীর পাশে ছোটখাট ছিমছাম শহর রতনপুর। সবাই সুখে শান্তিতে থাকে। চুরি চামারীর বেশি কোনো অপরাধ নেই বললেই চলে। হটাৎ করেই উধাও হয়ে গেল শহরের একজন মেয়ে। নিয়মিত বিরতিতে উধাও হয়ে গেল আরও দুজন। স্থানীয় থানাকে রীতিমত সংগ্রাম করতে হল অপরাধী ধরতে। রাজশাহী থেকে নিয়োগ দেয়া হল স্পেশাল অফিসার নাবিদকে। উন্মাদ সিরিয়াল কিলার? নাকি অন্য কিছু? মাথাগরম নাবিদ পারবে রহস্য সমাধান করতে?
লেখক ও অনুবাদক সালমান হকের প্রথম মৌলিক উপন্যাস নিখোঁজকাব্য। প্ৰকাশীত হয়েছিল ২০১৭ বইমেলায়। প্রথম উপন্যাসেই দারুন রহস্যের জাল পেতেছেন লেখক। শুরুতে পুলিশ প্রসিডিউরাল জনরা নিয়ে একটু বলি। যেসব বইয়ে রহস্যের সাথে পুলিশি অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়া সরাসরি নিখুঁতভাবে দেখানো হয় সেটাই পুলিশ প্রসিডিওরাল। ক্রাইম/মিস্ট্রি থ্রিলারের সাবজনরা এটা। তো নিখোঁজকাব্য বইটা অনেকটা পুলিশ প্রসিডিউরাল ক্যাটাগরির। বাংলাদেশে পরিপূর্ণ পুলিশ প্রসিডিওরাল তুলনামূলক কম (নেক্সাস, শব্দযাত্রা, তিনডাহুক উল্লেখযোগ্য)। এই বইয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বেশ ভালোভাবে পুলিশি তদন্তের খুঁটিনাটি,টেকনলজি, অটোপসি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দেখানো হয়েছে। সেইসাথে সুন্দর একটা রহস্য। একেবারে শেষে, জাদুকরের মত হাতার তলা থেকে রহস্যের উন্মোচন ঘটিয়েছেন লেখক। পুরো বইয়ে গতির অভাব নেই, কাহিনী বেশ ডেভেলপড। মনে হয়নি লেখকের প্রথম কাজ। কয়েক পৃষ্টার মধ্যে আটকে ফেলবে পাঠককে। ছোট অধ্যায়ে বিভক্ত। দ্রুত এগিয়ে যাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের গন্ধও পাবেন। যাদের টুইস্ট পছন্দ তাদেরও ভ��লো লাগবে। ঘুণাক্ষরেও প্রেডিক্ট করতে পারিনি। চরিত্রের ব্যাপারে আসি, নাবিদ ও সহযোগী চরিত্র জাহিদ দুজনেই ভালো লেগেছে। তবে জাহিদকে ছাপিয়ে গেছে নাবিদ। নাবিদের অতীতের উল্লেখ থাকলেও, কি হয়েছিল খোলাসা করা হয়নি। ভবিষ্যতে আশা করি কখনো জানা যাবে। সবমিলিয়ে দারুন একটা প্যাকেজ নিখোঁজকাব্য। হাইলি রিকমেন্ডেড।
নিখোঁজকাব্য সালমান হক বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল: ২০১৭
খুব ভালো লাগল বইটা। বেশ ভালো প্লট। চমৎকার চরিত্রচিত্রণ। চরিত্রদের বিবর্তন দেখানো হয়েছে ছিমছাম অথচ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। সর্বোপরি, বিশুদ্ধ দেশি আবহেও একটি ক্রিস্টি-ঘরানার রহস্য রীতিমতো দক্ষতার সঙ্গে নির্মাণ করতে পেরেছেন লেখক। সালমান হকের পরবর্তী মৌলিক থ্রিলারের অপেক্ষায় রইলাম।
অনেকদিন পর একটানা একটা থ্রিলার পড়লাম, এবং বেশ উপভোগ করলাম। অনেক দিন কোন থ্রিলার আমাকে এভাবে টানে নি। তাহলে সে ক্ষেত্রে বলতে হয় সালমান হক সফল লেখক। শেষ পর্যন্ত পাঠকে ধরে রাখতে পেরেছেন।
উত্তরবঙ্গের শান্তিপূর্ণ ছোট শহর রতনপুর। ঝামেলা সেখানে নেই বললেই চলে, কিন্তু সেখানেই ঘটে গেল ভয়ংকর এক ঘটনা। এক এক করে তিনজন মেয়ে নিঁখোজ হয়ে গেল। অনেক খুঁজেও পাওয়া গেল না কাউকে, যেন হাওয়াই মিলিয়ে গেছে। এই কেস সমধানের ভার পড়ল স্পেশাল ব্রাঞ্চের নাবিদের উপর। নাবিদ যার রয়েছে অন্ধকার এক অতীত। নাবিদ কি পারবে এই কেস সলভ করতে? সে কি পারবে তার সুনাম আবার ফিরিয়ে আনতে। মেয়েগুলোকে কি খুঁজে পাওয়া যাবে? এসব জানতে পড়তে হবে "নিখোঁজকাব্য"।
সালমান হকের প্রথম উপন্যাস "নিখোঁজকাব্য" বেশ হাই এক্সপেকটেশন নিয়েই পড়তে বসেছিলাম। লেখক সফল আকর্ষণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে। গল্পটা আমাকে চম্বুকের মত টেনেছে। সত্যই সাসপেন্স ধরে রেখেছে শেষ পর্যন্ত। আমি ধরতেও পারি নি আসলে কে অপরাধী। সালমান হকের, লেখার ধরন বেশ সহজ। ছোট ছোট অধ্যায় দ্রুত বইটা পড়তে সাহায্য করেছে। হ্যাঁ, স্বীকার করছি যে গল্পে ফাক আছে তবে প্রথম গল্প হিসেবে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায়! আরেকটা কথা না বললেই নয়, বইটির প্রচ্ছদ খুব সুন্দর। :)
কিন্তু, অনেক জায়গায় চরিত্রের নামের ভুল আসলেই বিরক্তিজনক লেগেছে। প্রুফ রিডারের দিকে আরো বেশি নজর দেওয়া উচিত লেখক এবং প্রকাশককে।
আমার পছন্দের অনুবাদকদের মধ্যে সালমান হক অন্যতম। ওঁর লেখার সাবলীলতা দ্রুত পড়তে সাহায্য করে বলে সবসময়ই প্রিয়। মৌলিক লেখার ক্ষেত্রেও এই ধারাটা বজায় ছিল।
'নিঁখোজকাব্য' লেখকের প্রথম মৌলিক হিসেবে বেশ ভালো ছিল। ত্রিভুজ-প্রেমকাহিনিকে অপহরণের প্রেক্ষিতে সাজানো এবং সহজ, ছোট ছোট সংলাপে দৃশ্যপট বর্ণনা– উভয়ই গতিময় ছিল; যার কারণে একটানা পড়ে ফেলতে বিরক্ত লাগেনি। তারিখ-মাস নিয়ে দুই জায়গায় গণ্ডগোল ছিল, বাদবাকি সব ভালোই।
বই - নিখোঁজকাব্য জনরা - মার্ডার মিষ্ট্রি লেখক - সালমান হক প্রকাশক - বাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকাল - একুশে বইমেলা, ২০১৭ প্রচ্ছদ – সিরাজুল ইসলাম নিউটন পৃষ্টা সংখ্যা - ১৭৬ মূল্য - ১৮০ টাকা
অনেক অনেক বছর আগে এক পাঠককে সে কিসের উপর ভিত্তি করে বই কেনে তা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তার উত্তরটা ছিলো বেশ অবাক হওয়ার মতো। সে বইয়ের প্রচ্ছদ দেখে তবে বই কেনে। প্রচ্ছদ পছন্দ না হলে নাকি কোন বই সে কেনে না। আমি কোনদিনই প্রচ্ছদ নিয়ে খুব চিন্তিত বই সংগ্রাহক না। প্রচ্ছদ যাই হোক, কাহিনী ভালো হলেই হলো। আমি সবসময় বই কিনি পেছনের কাহিনী সংক্ষেপ পড়ে। কিন্তু ফেইসবুকের মাধ্যমে সালমান হকের নিখোঁজকাব্য বইয়ের প্রচ্ছদ দেখেই বইটি সম্পর্কে আমার আগ্রহ জেগে উঠে। নামের কাব্যিকতাও অনেকাংশে আগ্রহ জাগিনিয়া। কিন্তু এমন সুররিয়ালিষ্টিক ছবি অনেকদিন কোন বইয়ের প্রচ্ছদে দেখা যায় না। প্রথমেই তাই প্রচ্ছদ শিল্পী সিরাজুল ইসলাম নিউটনকে অভিনন্দন।
এবার আসি বইয়ের কাহিনী প্রসন্গে। কাহিনী আমার খুব ভালো লেগেছে। বেশ রহস্যঘেরা জটিলতাপূর্ন মার্ডার মিষ্ট্রি। Whodunit টাইপ মার্ডার মিষ্ট্রির সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো খুনী ঘটনাচক্রের আশেপাশেই থাকে, পাঠকের সাথে তার ব্যাপক ইন্টারেকশনও হয়, কিন্তু কাহিনীর শেষ পর্যন্ত বোঝা যায়না যে সে খুনী। চুড়ান্ত যবনিকা উন্মোচনে খুনী ধরা পড়ে এবং তাকে অধিকাংশ সময়ই ব্যক্তি হিসেবে খুনী বলে বিশ্বাস করা বেশ কষ্টকর হয়। লেখক ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে তার গ্রন্হে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। কোথাও মনে হয়নি যে, কাহিনী বিন্দুমাত্র ঝুলে পড়েছে। সবসময়ই ছিলো টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। যদিও কাহিনীতে ট্যুইষ্টের সংখ্যা ছিলো বেশ অপ্রতুল, কিন্তু তবুও বলা যায় প্রথম মৌলিক গ্রন্হ হিসেবে সালমান হক বেশ সুন্দর একটি কাহিনীকে পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং কাহিনী বিন্যাস ও এর যবনিকাপাতেও বেশ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
হেনরী বিনস সিরিজের অনুবাদের মাধ্যমেই সালমান হকের লেখনীর সাথে আমার পরিচয়। সহজবোধ্যতা তার লেখনীর সবচেয়ে বড়ো গুন। কোন বইয়ের লেখনী যদি সাবলীল না হয়, তবে কাহিনী যতোই টান টান উত্তেজনাকর হোক না কেন, তা পড়ে শেষ করা পাঠকের জন্য খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে লেখক সালমান হক প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য দাবীদার। লেখকের শব্দচয়ন এবং বাক্য গঠন বেশ দ্যোতনা জাগানিয়া। পাতার পর পাতা এক নি:শ্বাসে ক্লান্তিহীন ভাবে পড়ে ফেলা যায়। ধন্যবাদ সালমান হক, এমন সহজবোধ্য পাঠ উপহার দেবার জন্য।
চরিত্র চিত্রায়নেও লেখককে বাহবা দিতে হয়। মূল চরিত্র নাবিদ আল নিয়াজের চরিত্র খুব সুন্দর ফুঁটে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে কোন মার্ডার মিষ্ট্রি থ্রিলারের মূল চরিত্রের মাঝে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শার্লক হোমস, পোয়ারো কিংবা ব্যোমকেশ বক্সীর প্রচ্ছন্ন ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি। পুলিশ অফিসার নাবিদ কিংবা ইন্সপেক্টর জাহিদকে সবসময়েই মনে হয়েছে রক্তমাংসের মানুষ। সাধারণ মানুষের মতোই তাদের মনে আবেগের আনাগোনা রয়েছে, সার্বিক এ্যানালাইসিসে দ্বিধা-দ্বন্ধ রয়েছে, সিদ্ধান্তে ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। নাবিদের অতীত ইতিহাস, প্রেমিকার সাথে তার বিচ্ছেদ, সহকর্মী হারানোর বেদনা, সর্বোপরি তার মানসিক জীবনের উপর এসবকিছুর প্রভাব যেন তাকে করে তুলেছে ট্র্যাজিক হিরো। গল্পের শেষে এসে লেখক তার অতীত ইতিহাসের কিছু ইন্গিত দিয়ে পাঠককে সে ব্যাপারে আরো আগ্রহী করে তুলেন।
এলাকার পরিচিত ছেলে হিসেবে ইন্সপেক্টর জাহিদকে প্রথমে কিছুটা অপ্রতিভ, ভীত-সন্ত্রস্ত মনে হলেও পরে তার মাঝে পুলিশি ভারিক্কি ভাব ফিরে এসেছে। পুলিশের কোন বড়ো কর্তা এই বই পড়লে এখন থেকে কোন পুলিশেরই আর নিজ এলাকায় নিয়োগ প্রাপ্তি ঘটবেনা বলেই মনে হয়। সিলেটের কারো পোষ্টিং হবে দিনাজপুর, কিংবা চট্টগ্রামের কারো পোষ্টিং হবে খুলনা। জাহিদের চরিত্র আমাদের সেদিকেই ইন্গিত প্রদান করে। নিজ এলাকায় পোষ্টিং বলে প্রথম দিকে জাহিদের অপ্রতিভ ভাব তাকে পুলিশ হিসেবে বেশ দূর্বল প্রমান করে। যদিও পঠনে তা খুব অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। আমরা অনেকেই আমাদের কর্মজীবনকে ব্যক্তিজীবন থেকে আলাদা করতে পারি না। রতনপুরের মতো ছোট মফস্বল শহরের সন্তান হিসেবে ইন্সপেক্টর জাহিদের জন্য তা ছিলো আরো কঠিন। তাইতো দেখা যায় তদন্তকালীন সময়েও তার সহকর্মীর সামনেই রাস্তায় তার স্কুল জীবনের বন্ধু রাজন এসে তাকে আন্তরিক ভাবে পিঠে থাবা দিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, কিংবা দেখা যায় এলাকার হোমড়া-চোমড়া কারো বাসায় গিয়ে বেয়াদবীর ভয়ে জাহিদের কাচুমাচু ভাব। কিন্তু খোলস ছেড়ে পুলিশি ভাব বেরিয়ে আসতে জাহিদের খুব বেশী সময়ক্ষেপন কতে হয়নি।
লেখক অবশ্য কিছু কিছু চরিত্রের ব্যাপ্তি ঘটাতে পারতেন। আরো কিছু দৃশ্যায়ন যোগ করা যেত। এতে হয়তো কাহিনীকে আরেকটু জটিল করা যেত। সেলফি ইসমাঈল নামক একটি চরিত্রকে আরো কিছুটা হাইলাইট করার প্রয়াস ছিলো। দুই-একটি দৃশ্য বর্ণনায় লেখককে কিছুটা খাপছাড়া লেগেছে। যেমন, খুনীর পার্সপেক্টিভে যে ২/১ টা বর্ণনা এসেছে। এগুলো না থাকলেও চলতো। আমার কাছে মনে হয়েছে সেগুলোর প্রয়োজন ছিলো না।
মুদ্রন প্রমাদ বা ছাপার ভুল খুব একটা ছিলো না। তবে ২/১ টা ছিলো খুব দৃষ্টিকটু। প্রথম পৃষ্টাতেই ২৫ অগাষ্ট হয়ে গিয়েছে ৩৫ অগাষ্ট। ৯৯ পৃষ্টায় একবার বীথি হয়ে গিয়েছে দিশা। যা পাঠকের জন্য বেশ বিভ্রান্তিকর। আমাকে আবার পেছনে গিয়ে দিশা, অদিতি আর বীথি সম্পর্কে পুনরায় পড়তে হয়েছে। পরে শেষের দিকেও আরেকটি ছাপার ভুল ছিলো বেশ বিভ্রান্তিমূলক।
এরকম অল্প কিছু ব্যাপার বাদ দিলে, বই হিসেবে ‘নিখোঁজকাব্য নি:সন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এক কথায় দুর্দান্ত পাঠ। থ্রিলার প্রেমী পাঠক-পাঠিকাদের জন্য এক নি:শ্বাসে পড়ে শেষ করে ফেলার মতো একটি বই। আমার সবচেয়ে বেশী ভাল লাগছে এই ভেবে যে, আমাদের দেশের মৌলিক লেখকদের ভেতর কারও দ্বারা এমন একটি বই লিখিত হয়েছে। এটি বেশ আশা জাগানিয়া ব্যাপার। আশা করি ভবিষ্যতে লেখক সালমান হকের কাছ থেকে এমন আরো প্রশংসার যোগ্য বই আমরা হাতে পাবো। আর নিখোঁজকাব্যের একেবারে শেষে এসে লেখকও আমাদের কাহিনীর প্রিকোয়েলের দিকেই কিছুটা ইন্গিত দিয়েছেন। কাজেই ধরে নিতে পারি, নিকট ভবিষ্যতে কোন একদিন আমরা নাবিদ আল নিয়াজের অতীত সম্পর্কে জানতে পারবো।
তিন কন্যাতে হইল নিখোঁজ খুঁজিয়া নাহি পায় পিতায় কান্দে, মাতা কান্দে পুলিশ নিরুপায় শহর হইতে এল বড়সাব করিবেই সমাধান কে রচিল নিখোঁজকাব্য কেন ঝড়িল তাজা প্রাণ? সংক্ষেপে এই হলো এই বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ, বাতিঘর থেকে প্রকাশিত সালমান হকের প্রথম মৌলিক উপন্যাসের কাহিনি সংক্ষেপ। বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকেঃ উত্তরবঙ্গের ছিমছাম আর শান্তিপূর্ণ এক মফস্বল রতনপুর। কিন্তু এক সময় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে একের পর এক উধাও হয়ে গেল কম বয়সি তিন তরুণী। বিপদে পড়ে গেল স্থানীয় প্রশাসন। তদন্তে পাঠানো হলো স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নাবিদ আল নিয়াজকে। রতনপুর পৌঁছে সে বুঝতে পারলো পরিস্থিতি যতটা মনে হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। দুই তরুণীর লাশ উদ্ধার হলে নড়েচড়ে বসলো সবাই। তবে কি এরকম এক জায়গায় কোনো সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব ঘটেছে? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোন গভীর ষড়যন্ত্র? তদন্তে আরো কিছু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটলে ঘটনা জট পাকাতে শুরু করলো। একটা প্রশ্নই ঘুরতে লাগলো তখন- কিভাবে সমাপ্তি ঘটবে এই নিখোঁজকাব্যের? অনুবাদক হিসেবে সালমান হকের মুন্সিয়ানার পরিচয় আমরা আগেই পেয়েছি। এবার মৌলিকের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিলেন স্বকীয়তাও কম যান না। আজকাল যখন থ্রিলার পড়তে বসি, কাহিনির চেয়ে আমি লেখনিকে প্রাধান্য দেই বেশি। নিখোঁজকাব্যে লেখক চমৎকার কাহিনি যেমন বুনেছেন, তেমনি পরিচয় দিয়েছেন তার অসাধারণ লৈখনশৈলির। উপন্যাসের প্লট আকর্ষণীয়। ধীরে ধীরে কাহিনি এগিয়েছে জটিল পরিস্থিতির দিকে। নিখোঁজ রহস্যের খুনের দিকে বাঁক নেয়াটা কাহিনিতে এনেছে নতুন মোড়। চরিত্রগুলোর ক্রমশ ডেভেলপমেন্ট লেখকের দক্ষতার পরিচায়ক। ভাল লেগেছে যে কাহিনি মেদহীন, ঝুলে পড়েনি কোথাও। রহস্যের অনুসন্ধানের পাশাপাশি প্রোটাগনিস্ট নাবিদের চরিত্রের ব্যক্তিগত জীবন তুলে আনার বিষয়টাও চমৎকার লেগেছে। প্রচ্ছদ নজরকাড়া। বিশেষ করে নামের ফন্ট ভাল লেগেছে। ভাল লাগেনি ইন্সপেক্টর জাহিদ চরিত্রটাকে। একটু বেশি আবেগী দেখানো হয়েছে। কয়েকটা বাক্য আছে যেগুলো সম্ভবত নাবিদ মনে মনে ভাবছিল। ওগুলো ইটালিকে লিখলে ভাল দেখাত। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ করেছি নিখোঁজকাব্য। একটা পারফেক্ট থ্রিলার। প্রথম বইয়েই বাজিমাত করেছেন লেখক সালমান হক। তার কাছে প্রত্যাশার পারদ আরও উচুতে উঠে গেল। আমি আশা করব তার এই অসাধারণ লেখনি ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে আর পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে।
প্রথম মৌলিক বই হিসেবে নিঃসন্দেহে ছক্কা পিটিয়েছেন সালমান হক.....এক মিনিটের জন্য ও বোর হই নাই তবে মনে হয় সিরিজ বের করার পরিকল্পনা আসে তাই হাল্কা একটা কিল্ফ হ্যাং গার দিয়েছেন....অভিনন্দন বাতিঘরকে এমন সম্ভাবনাময় নতুন লেখকদের বের করে আনার জন্য....অভিনন্দন সালমান হক কেও...আশা করি সামনে আরো ভালো ভালো মৌলিক বই পাব আপনার কাছ থেকে :)
" Whodunit " টাইপের থ্রিলার লেখাগুলো বরাবরই আমার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। রহস্যের রানী আগাথা ক্রিস্টির অসাধারণ লেখাগুলো পড়ার সময় সবসময় ভাবতাম " ইশ ,আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যদি এরকম কিছু লেখা পেতাম।" রতনপুর নামের এক মফস্বল শহরকে কেন্দ্র করে লেখক সালমান হকের প্রথম মৌলিক গ্রন্থ " নিখোঁজকাব্য " ঠিক এ ধরনেরই এক উপন্যাস । - একটি আদর্শ মফস্বল শহরের যে সকল গুণাবলী থাকার দরকার তার সবগুলোই রতনপুরে আছে। কিন্তু হঠাৎই এ ছিমছাম শহরে আলোড়ন বয়ে যায় কয়েকটি মেয়ের অপহরণের মাধ্যমে। স্থানীয় পুলিশ আর প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেও এর কুল - কিনারা করতে পারেনা। - নাবিদ , পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক অফিসার। তার উপর ভার পড়ে এই কেস তদন্তের। সে এখানে আসার পরেই কেসটি নতুন গতি পায়। বের হতে থেকে নানা ধরনের নতুন তথ্য। - এখন মেয়েগুলোর নিখোঁজ হবার ঘটনাগুলি কি স্রেফ কাকতালীয় ? নাকি কোন সিরিয়াল কিডন্যাপারের কাজ ? নাকি এর পেছনে আরো গূঢ় রহস্য রয়েছে ? তা জানতে হলে পড়তে হবে " নিখোঁজকাব্য " . - " নিখোঁজকাব্য " এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক এর লেখনী আর characterization . এতো সুন্দর ঘটনা প্রবাহ দিয়ে ঘেরা এই সাবলীল উপন্যাস পড়ার সময় মনেই হয়নি এটা লেখকের প্রথম মৌলিক লেখা। কাহিনী প্রথম থেকেই আকর্ষণীয়,যা পাঠককে গ্লু এর মতো বই এর সাথে আটকে রাখে। - নিখোঁজকাব্য পড়ার সময়ে মনে হয়েছে গল্পের চরিত্রগুলিকে একেবারে বাস্তব থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। কোথাও খুব বেশি অতিরঞ্জিত কিছু দেখতে পেলাম না। বইতে বিভিন্ন সাপোর্টিং character এমনকি কনস্টেবল গুলোর কাজ গুলো পর্যন্ত এতো নিখুঁত ডিটেলিং এ বলায় বেশ অবাকই হয়েছি। তবে প্রধান চরিত্র নাবিদের অতীত একটু ধোঁয়াশে লাগলো ,হয়তো লেখক সিক্যুয়ালের জন্য প্রশ্নের উত্তর গুলো রেখে দিয়েছেন। - আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মিশে যাচ্ছে তাতে অনেক অপরাধের ক্লু ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। লেখক অপরাধের ক্লু হিসেবে দারুণভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছেন দেখে ভালো লাগলো। প্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল আর ওয়ারফেজের দুইটি প্রিয় গান মাঝে দেখতে পাওয়া ছিল বাড়তি পাওনা আর প্রচ্ছদটিও চমৎকার। - প্রথম লেখাতেই এরকম মেদহীন সাবলীল মার্ডার মিস্ট্রি উপহার দেবার জন্য লেখককে অভিনন্দন।আশা করি সামনে লেখকের কাছে থেকে এ ধরণের আরো দুর্দান্ত লেখা পাবো।যাদের মার্ডার মিস্ট্রি বা ডিটেকটিভ থ্রিলার পছন্দ তারা নিশ্চিন্তে তাদের বইয়ের লিস্টে এটি যোগ করে নিতে পারেন।
A brilliant debut novel. Hard to believe it's his first. Smooth writing and small chapters held me till the end. Pure thrilling essence present in every page. What amazed me was how he blended the common atmosphere with a little bit of technology. Though Nabid was the main character, Zahid's character development with time was more fascinating. There's a hint of sequel regarding Nabid's past. Will be waiting for it. N:B-A few printing mistakes should be taken care of.
❝মানুষের তিনটি মুখোশ। একটা অপরিচিত লোকদের জন্যে, একটা পরিবারের জন্যে, আরেকটা কেবলমাত্র নিজের জন্যে।❞
রতনপুরের মতো শান্ত এক মফস্বলে পরপর তিনজন তরুণী নিখোঁজ হয়ে যায়। নিছক কোনো অপহরণ নাকি কোনো রহস্য আছে? রহস্যের কিনারা করতেই পাঠানো হয় চৌকস অফিসার নাবিদকে। কেসে কাজ শুরু করার কিছু দিনের মধ্যে মাটি ফুঁড়ে বেড়িয়ে আসে নিখোঁজ হওয়া তরুণীদের একজন! কিন্তু মৃত! শান্ত মফস্বল অশান্ত হয়ে ওঠে। তাহলে কি রতনপুরে কোনো সিরিয়াল কিলার হানা দিয়েছে?
বাংলাদেশের সেরা অনুবাদকের লিস্ট করলে সালমান হকের নাম তো থাকবেই মাস্ট। কিন্তু মৌলিক বই "তিন ডাহুক" দিয়েই ওনার বইয়ের সাথে পরিচয়। "নিখোঁজকাব্য"-এর কাহিনী হলো রতনপুরের অপহরণ কেস দিয়ে শুরু হলেও মোড় ঘুরে...! বইয়ের শুরু থেকে শেষ কাহিনী খুবই ধীরে এগিয়েছে। অনেকগুলো চরিত্র আছে। প্রথমে এইজন্য কনফিউজড হয়ে গেছিলাম একটু। ওভারঅল মোটামুটি মনে হয়েছে। সাধারণ একটা মার্ডার মিস্ট্রির বই। তবে নাবিদের বন্ধুর সাথে অতীতে কি হয়েছে জানা গেলো না। এই বইয়ের পরবর্তী কোনো পার্ট আছে কি? সেলফি ইসমাইলের জন্য খারাপ লেগেছে। মব অনেক সময় ন্যায় দিলেও আবার অনেক সময় নিরীহ মানুষের জীবনেও কেড়ে নিতে পারে। কারো জন্য শুধুই একটা কেস কিন্তু কারো জন্য পুরা একটা জীবন।
বই: নিখোঁজকাব্য লেখক: সালমান হক জনরা: থ্রিলার প্রচ্ছদ: সিরাজুল ইসলাম নিউটন প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৭৬ মুদ্রিত মূল্য: ১৮০/-
জাপানিজ একটা প্রবাদ আছে জানেন তো, মানুষের তিনটি মুখোশ। একটা অপরিচিত লোকদের জন্যে, একটা পরিবারের জন্যে, আরেকটা কেবলমাত্র নিজের জন্যে। (নিখোঁজকাব্য—সালমান হক)
গল্পটা রতনপুরের...যেখান থেকে রাতারাতি একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নিখোঁজ হয়ে যায় তিনজন মেয়ে। উদ্দেশ্যহীন, কারণহীন এই তদন্তের সমাধান আপাতদৃষ্টিতে স্থানীয় পুলিশের দ্বারা সম্ভব না হওয়ায় ডাক পড়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার নাবিদ আল নিয়াজের। একরোখা স্বভাবের নাবিদ এবং স্থানীয় পুলিশ অফিসার কেতাদুরস্ত জাহিদ একত্রে অপহরণগুলোর তদন্তে নেমে পড়ে। রহস্যের ধরন কাল ডি স্যাক প্যাটার্নের...সুরাহা হয় না যার। এত সময় পর্যন্ত গল্পটা শুধুমাত্র অ্যাবডাকশনের ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রথম লাশটা আবিষ্কৃত হলো। প্রথমে মনে হচ্ছিলো নিখোঁজকাব্য শুধুমাত্র নিখোঁজেরই আখ্যান...কিন্তু ঘটনাটা শেষমেশ মার্ডার মিস্ট্রিতে গড়িয়েই গেল। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার মতো বা পাঠককে ভাবানোর মতো যথেষ্ট ম্যাটেরিয়াল আছে এবং লেখক প্লটটাকে ভালোভাবেই বিল্ড আপ করেছেন...তাড়াহুড়োর লক্ষণ পাইনি। মার্ডার মিস্ট্রিতে স্বাভাবিকভাবেই পাঠকমনে তিনটা প্রশ্ন আসেই, কে, কেন, কীভাবে? নিখোঁজকাব্যের একটা ব্যাপার ভীষণ ভালো লেগেছে, এখানে ‘কে এবং কেন’ উভয়ই সমান প্রাধান্য পেয়েছে। লেখক সালমান হক অনেকগুলো লুপ তৈরি করেছেন, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাঠকমনে প্রশ্ন আসবে অন্যান্য একশো পঞ্চাশটা থৃলারের মতো, ক এই অপরাধ করেছে না খ, কেনই বা করেছে এরকম! কিন্তু...লেখক সালমান হক জাপানিজ প্রবাদের উল্লেখস্বরূপ এখানেও হিগাশিনো ফাঁদ তৈরি করেছেন!! রিমেম্বার হিগাশিনো...তিনি পাঠক মনের সাথে খেলতে পছন্দ করেন... সালমান ভাইও শেষে হিগাশিনো ভাইকে স্মরণ করিয়েছেন...পার্সোনালি আই গেট দ্যাট টাচ...একটুও বাড়িয়ে বলছি না। প্লটিং, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ভালো লেগেছে এবং বলা বাহুল্য শেষ কয়েক পৃষ্ঠায় ফ্ল্যাশের মূল কার্ডগুলো অপেক্ষা করছিলো...চলতি ভাষাতে তিন পাত্তি যাকে বলে। প্রটাগনিস্ট নাবিদ আল নিয়াজের চরিত্র আস্তে আস্তে বিল্ড আপ হবে বলে আমার ধারণা এবং সিক্যুয়েল হবার প্রবল সম্ভাবনা। প্রথম বই হিসেবে কাঁচা হাতের ছাপ বলতে গেলে নেই...আর থাকলেও আমি তা দেখতে পাইনি। ভালো লেগেছে...বড় বেশিই ভালো লেগেছে। In his debut novel… Salman Haque shoot the moon :) :)
the ending was quite unexpected. I thought I knew who was the murderer and the book was like, "he he he, wait for it". gaah!!! I have a horrible headache but I couldn't stop reading. as the writers first book, it was admirable. liked it.
and why do I feel like I will read another book on নাবিদ??? this book has that, শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ feeling. *sigh* I hate feeling like this but since I am a reader, I often feel this. *sigh*
হঠাৎ করেই রতনপুর এলাকায় অপহৃত হয় তিন মেয়ে,বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও হদিস মেলেনি কারও ; না মুক্তিপণ চেয়ে কোনো ফোন কল এসেছে। এই নিয়েই শুরু নিখোঁজকাব্যের। শেষের টুইস্টটা ছিল ভাবনাতীত। অপরাধী যতই সাবধানী হোক, ভুলের ছাপ থেকেই যাবে। ছোট্ট ভুল শেষে টেনে নিয়ে যায় ভয়াবহতায়।
* অনুবাদক হিসেবে পরিচিত উনি। এবারের বইমেলায় প্রথম মৌলিক থ্রিলার বের হয়েছে, নিখোঁজকাব্য।
* প্রথম বই হিসেবে, অনেক পড়াশুনা করেই যে বইটা লিখেছেন, সেটার ছাপ পাওয়া গিয়েছে। এটা খুবই পজিটিভ দিক। এখনকার লেখকরা, লিখতেই চান, পড়তে না, এই সংকীর্ণতা থেকে উনি দূরে, ভাল লাগলো।
* প্রচ্ছদ সুন্দর, পৃষ্ঠার মান মোটামুটি। প্রুফ যথারীতি বাতিঘর তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, অর্থাৎ, ব্যাপক ভুল। বইয়ের প্রথম পাতাতেই একটা মাসের তারিখে '৩৫' তারিখ দেয়া, এখন এটা ১৫ না ২৫ হবে, সেটা নিয়ে কতক্ষণ ভাবতেছিলাম... ক্যামনে কী! নাকি এইটাও ফিকশন, ৩৫তারিখ দেয়াটা! কী জানি... পরে গল্পের ভিতরে গিয়ে জানলাম, আসলে উহা ২৫ হবে। তাছাড়া চরিত্রের নামেই ভুল হয়ে গেলে, বিশেষ করে, থ্রিলার বইয়ে, পাঠক তালগোল পাকিয়ে ফেলবে মাথা, তা বলাইবাহুল্য!
একজন লেখকের কাজ কী? শুধুই লেখা? বইয়ের পৃষ্টার মান কেমন হবে, প্রুফ ঠিক আছে কিনা, বইয়ের দাম কেমন হবে, এইসবও কী অন্তর্ভুক্ত নয়? সব মিলিয়েই তো একটা বই!
* অনেক অনেক শুভ কামনা, সামনের বছরগুলোতে আরো ভাল মৌলিক উপন্যাস আর আপনার সাবলীল অনুবাদের বইয়ের আশায় রইলাম।
শেষটা আনপ্রেডিক্টেবল ছিল এবং মূল অপরাধ সংঘটনের পার্সপেক্টিভ কিংবা মোটিভ বেশ ইউনিক। সালমান হকের কাছ থেকে আরও অনেক ভাল লেখা পাবার অপেক্ষায় আছি। তা��ে নিয়ে, তার লেখা নিয়ে আমি আশাবাদী ভীষণ। মেয়ে ৩টির নাম খুব মফস্বলীয়। নাম পড়েই, ওদেরকে ভিজ্যুয়াল করা গ্যাছে। মফস্বলের সাথে খুব রিলেট করেছে- অদিতি, দিশা, বীথি।
গত এক দেড় বছর ধরেই দারুণ দারুণ সব বই অনুবাদ করে আমাদের চমকে দিচ্ছিল সালমান । পাঁচ পাঁচটি অনুবাদের পর এল তার প্রথম মৌলিক বই নিখোঁজকাব্য । আজকেও (১৪ ফেব্রুয়ারী) আরেকটি অনুবাদ মেলায় আসার কথা । নিখোঁজকাব্য বইটা কিরকম হয়েছে তার একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয় । বই যেদিন বাসায় আনি সেদিন আমার এক ফ্রেন্ড বাসায় আসে। আমার হাতে বইটা দেখে পড়ার জন্য নিয়ে যায় ।বলা বাহুল্য যে বই পড়ুয়া নয়। এমনকি বইয়ের নামও কোনদিন শুনেনি । হাতের কাছে ছিল তাই টাইম পাসের জন্য নিয়ে গিয়েছিল । আজকে(১৩ তারিখ রাতে) বইটা আনার সময় সে বলে (ইন্ডিরেক্টিলি গতকাল হবে ।এখন যেহেতু রাত দুটো বাজে মানে ১৪ তারিখ হয়ে গিয়েছে ।) এখনো বইটা শেষ করতে পারেনি কিন্তু বইটা তার দারুণ লাগছে । অবশেষে আজকেই পড়ে তাঁকে দিবো এই শর্তে নিয়া আসলাম । একজন নন পাঠক যার কিনা বই পড়ে অভ্যাস নেই তাকেও যে বইটা চুম্বকের মত আকর্ষণ করেছে তাতেই বোঝা যায় বইটা দুর্দান্ত হয়েছে ।
বইয়ের কাহিনী নাম দেখেই মোটামোটি আন্দাজ করা যায় । নিখোঁজকাব্য। কয়েকটি নিখোঁজ নিয়েই এই বই। খুব সাধারণ একটা প্লট । আপনি প্রায়ই যত থ্রিলার মুভি আর বই পড়েন এই কাহিনী এর চেয়ে ব্যাতিক্রম নয় । একই ফর্মুলা ।একই পদ্ধতি । তাহলে বলতেই পারেন কেন এই বই পড়বেন ? কারণ বইটি আপনার চেনা ফর্মুলা অনুসরণ করে লেখা হলেও খুবই সাবলীল আর প্রাঞ্জল বইয়ের ভাষা ।অতিরিক্ত কচকচলানী নেই বইতে । একেবারে মেদহীন । ফাস্ট রিডিং ।তরতর করে পড়া হয়ে গিয়েছে ।কোথায়ও একটুর জন্য বাধেনি। আমার কাছে এই জিনিসটাই ভালো লেগেছে । একটা ভালো বই হতে হলে যে মারাত্নক কোন টুইস্ট থাকতে হবে এমন কথা নেই । খুব সাধারণ ঘটনাও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে লেখনীর গুণে ।
আরেকটা মজার কথা হল কোন একশন সিন নেই বইতে ।ক্রাইম থ্রিলার বই এর নাম শুনলে আমাদের মাথায় প্রথম যেটা আসে সেটা হল ।নায়ক হবে অলমাইটি কেউ । ঝোপ কোপ দিয়ে সব গুণ্ডা শায়েস্তা করবে ।কিন্তু বাস্তবতা যে এর চেয়ে ভিন্ন সেটা আমরা সবাই জানি । এটাও ভালো লাগার আরেকটি কারণ । একেবারে আপনার আমার পাড়ায় কিডন্যাপিং বা খুন হলে পুলিশের যা করণীয় বা তাঁরা যা করে এখানে ঠিক তাই দেখানো হয়েছে । কোন অতিরঞ্জিত কিছু নেই ।এই ব্যাপারটি বইকে আরো রিয়েলস্টিক করে তুলেছে ।
ব্যাক্তিগতভাবে আমার বইটি দারুন এঞ্জয়েবল লেগছে । না পড়লে ঠকবেন না তবে পড়লেও ঠকবেন না । অন্তত পড়ে আর যাই হোক মোটেও খারাপ লাগবে না । ভালো লাগার সম্ভাবনা ষোল আনা
আমার সবচেয়ে ভয় লাগে যখন আমি কোন পরিচিত মানুষের লেখা বইয়ের ব্যাপারে নিজের মতপ্রকাশ করি। খুব স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। লেখক সম্পর্কে অনুজ, একসাথে বই নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে মাঝে মাঝে আমরা বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরতাম। তাই তার লেখা বই পড়ার আগ্রহ এবং ভয়, একই সাথে প্রত্যাশা সবই বেশি ছিল। তবে লেখকের পড়ার পরিধি জানি বলে একটা ভরসাও ছিল।
আমি বলবোনা খুবই ভাল কিন্তু সালমানের লেখায় একটা সাবলীল ব্যাপার আছে যা পাঠককে একটুপর গল্পের ভিতরে টেনে রাখতে পারে। যেমন প্রথম দিকে দুই একটা টাইপো, কাহিনীর খুঁটিনাটি নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও একটু পর খেয়াল করলাম বেশ মজা পাচ্ছি পড়ে। সম্ভবত থ্রিলার বা যেকোন বইয়ের খানিকটা সার্থকতা এখানেই। আর একটা জিনিস ভাল লেগেছে যে কাহিনীর পরিবেশ গঠন, তার বর্ণনা অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। এটা হয়েছে কারণ লেখক এর সবকিছুই একদম নিজের চারপাশ থেকে নিয়েছে। এটা অবশ্য লেখকের নিজের বাসা, দেশের বাড়ি কোথায় জানি বলে জোর গলায় বলতে পারছি। (আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকার নামও এসেছে বইয়ে দুই এক বার :p)। সবকিছু মিলিয়ে প্রথম মৌলিক বই হিসাবে বেশ ভাল। আমি নিজে হলে কখনো এভাবে লিখতে পারতাম না।
আর প্রচ্ছদটাই সম্ভবত কেল্লাফতে করে দিয়েছে। এরকম প্রচ্ছদ ডিজাইন আমাদের দেশে হচ্ছে এটা একটা আনন্দের বিষয়। সামনে আরও জমজমাট লেখা চাই।
লেখকের প্রথম মৌলিক বই 'নিখোঁজকাব্য'। অবশ্য এই বই প্রকাশের আগেই সালমান হকের বেশ কিছু অনুবাদগ্রন্থ বের হয়ে গিয়েছিল। তবে, তার ফেসবুক স্ট্যাটাস ব্যতীত কোন লেখাই এর আগে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। সৌভাগ্য বলছি, কারণ- 'নিখোঁজকাব্য' এক কথায় চমৎকার লেগেছে। এক বসায় বইটি পড়লাম। যদিও বইটির কলেবর খুব বেশি বড় নয়, ইদানিং খুব একটা কোন বই এক বসায় বই পড়া হয় না আমার। এই বইটি তার ব্যতিক্রম হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমেই রয়েছে লেখনী। লেখা সাবলীল হবার ফলে বাধাহীনভাবে একটানা পড়ে গিয়েছি। তাছাড়া লেখক বেশ দক্ষতার সাথে রহস্যের জাল বিস্তার করেছেন। ফলে পড়তে বসে পাতার পর পাতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে উল্টে গিয়েছিলাম। অনেক লেখক অবশ্য রহস্যের জাল দুর্দান্তভাবে বিস্তার করার পর, সে জাল গুটিয়ে আনার সময় হযবরল করে ফেলেন। কিন্তু এ বইয়ের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। লেখক সুষ্ঠুভাবে রহস্যের সমাধান দেখিয়েছেন। দুই-এক জায়গায় যদিও কিছু খটকা আছে, কিছু প্রশ্নও জাগে। তবে তা সত্ত্বেও সমাধান বিশ্বাসযোগ্য এবং বাস্তবিক। বইয়ের শেষে লেখক সিক্যুয়েলের আভাস দিয়েছেন। সেই সিক্যুয়েলসহ সালমান হকের আগামী মৌলিক বইগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
আশাতীত ভালো লেগেছে। বেশ গতিময় ও মসৃণ। মনেই হয়নি লেখকের প্রথম মৌলিক বই এটি। ছাপার কিছু দৃষ্টিকটু ভুল বাদে সমালোচনা করার মত কিছুই পাইনি। এক বসায় পড়ে ফেলার মত বই, বোর হওয়ার মত সুযোগ পাওয়াই যাবে না।
-কেমন লেগেছে লেখকের প্রথম বই? -লেখক তার প্রথম বই দিয়ে দ্বিতীয় বইয়ের ক্রেতা/পাঠককেও পকেটে পুরে রেখে দিলেন.....
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালই লেগেছে। কিন্তু মনে হয়েছে পুরো গল্পের কাহিনী যদি আর ১৫-২০ পৃষ্ঠা কমিয়ে শেষ করা যেত তবে খুব টান্টান উত্তেজনা থাকত পুরো বই জুড়ে।