বারো বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক মাফিয়া সর্দারের নাম ঢাকার রাস্তায় আবারও শোনা যাচ্ছে। এক যুগ ধরে মৃত কাঠিন্য আর কোমলতার মিশ্রণে ভয়ঙ্কর সেই মানুষটি যেন পুণরুত্থিত হয়েছে! কাজেই, ঘটতে শুরু করলো ঘটনা। নিরেট নিখুঁত ভদ্রলোক, তুখোড় মেধাবি ছাত্র তাহের একটার পর একটা মিথ্যে বলতে শুরু করলো। উদ্ভিন্ন যৌবনা, প্রকৌশলী নিশির জীবনটা ওলট-পালট হতে সময় লাগলো মোটে এক সপ্তাহ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ঝামেলায় খুন হয়ে গেল পাড়ার মাস্তান। ঢাকার অন্ধকার গলিতে ঘুরে বেড়ানো আততায়ীকে বার বার বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হলো। আলোড়ন উঠলো মাঝারি ব্যবসায়িদের মহলে। সদ্য কৈশোর পেরুনো অপূর্ব সুন্দরি তরুণী নাভার ওপর কেউ একজন চোখ রাখতে শুরু করলো। আপাতদৃষ্টিতে ঘটনাচক্রগুলো কি আসলেই বিচ্ছিন্ন? এক সময় যাদের হাতে অস্ত্র ছিল তারা নিজেদেরকে ক্ষমতাবান ভাবতো, তবে আজকের পৃথিবীতে যার কাছে তথ্য তার হাতেই সর্বময় ক্ষমতা! গডফাদার আলমাস। স্ট্রাইকার। সিন্ডিকেট। এলাকার টপটেরর। রাজনৈতিক নেতা। তথ্যবিক্রেতা। মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব। ডিটেক্টিভ মুক্তার আর প্রকৌশলী ছাত্র তাহের। অনেকগুলো পক্ষ। কিন্তু এদেরই একজন বন্দুক নয় শুধুমাত্র মগজ আর তথ্য ব্যবহার করে শহরটার ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে চলেছে । কে, কেন এবং কিভাবে-তার উত্তর মিলবে উপন্যাসটিতে। তথ্যের মারপ্যাঁচে সৃষ্টি হতে চলেছে এক আনকোড়া-অন্ধকার মাফিয়া জগত। পাঠককে সে জগতে সুস্বাগতম।
Kishor Pasha Imon is a famous Bangladeshi crime writer.
Musa Ibne Mannan, known by the pen name KP Imon, is an accomplished writer who initially gained recognition through his short stories on social media. Over the course of his career, he has written over 220 short stories, captivating his online audience with his vivid imagination and storytelling skills. Building on his success in the digital realm, Imon went on to establish himself as a prominent novelist, with his works being published in both Bangladesh and India.
His regular publishers are Batighar publications, Abosar Prokashona Songstha, and Nalonda in Bangladesh. Abhijan Publishers solely publish his books in India. He is the author of 13 novels and translated 9 books to Bengali till date (5/10/23).
He graduated from the Department of Mechanical Engineering at Rajshahi University of Engineering & Technology. Presently, he resides in Dallas, TX, focusing on his PhD studies in Mechanical Engineering at UT Dallas after completing his MS at Texas State University.
His other addictions are PC gaming, watching cricket, and trekking.
প্রচন্ডরকমের গতিশীল একটা রিভেঞ্জ থ্রিলার। একটা খুন। আপাতদৃষ্টিতে একজন নিরীহ ব্যক্তিকে খুনের পরপর পালটে গেল ঢাকার দৃশ্যপট, মানে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের দৃশ্যপট। এক যুগ পর শোনা যেতে লাগলো কুখ্যাত এক মাফিয়া সর্দারের নাম। ঘটতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। বন্দুকযুদ্ধ, আততায়ী, মাফিয়া, দাবার ঘুঁটি, টোপ, বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ, প্রেম, নির্মমতা, ষড়যন্ত্র, সাইকোপ্যাথ কি নেই! আসলেই বাকি নেই কোন কিছুর। আচ্ছা! আমাদের মুভিমেকাররা কেন প্লট খুঁজে পান না? কেন প্রতি বছর বস্তাপচা মুভি রিলিজ করতে হবে? তারা কি এইসব বই দেখেন না? (অবশ্য ইদানিং একটু আধটু কাজ হচ্ছে বটে!) আশাবাদী। ভবিষ্যৎ নিয়ে।
দুইয়েকটা জায়গায় যদিও একটু খটকা লেগেছে। কিছু প্রশ্ন ছিলো। তাও ইটস ওকে! মেনে নিয়েছি। কাহিনি ধরতে পারছিলাম যদিও তারপরেও লাস্ট পেজের ক্লিফহ্যাঙ্গার পরে হেসে ফেলসি। অই অংশটা দুর্ধর্ষ 😁
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড-মাফিয়া-চান্দাবাজী-খুন নিয়া দুর্দান্ত থ্রিলার। বুয়েটে পড়া তাহেরের দোকানদার বাবা খুন হয়ে যায়। প্রতিশোধের রসগোল্লা নাকি স্বাদে একটু বেশিই মিঠা হয়। তাহের ভাই প্ল্যান বানাইলেন....প্রতিশোধের।
লা মিজারেবল বইতে ভলজা সাহেব বলেছিলেন অশিক্ষিত অপরাধীর চেয়ে শিক্ষিত অপরাধী বেশি ডেঞ্জারাস হয়। তাহের ভাই সেইটা আবার প্রমাণ দিলেন। ভাইরে ভাই তাহের ভাই এত বুদ্ধি নিয়া ঘুমাইতো কেমনে!
বইটা লেট করে পড়ায় আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নাই। ২০১৭ সালে এই বই পড়ার জন্য আমি মোটেও উপযুক্ত ছিলাম না। আমার মগজে তখনও লেখকের "মিথস্ক্রিয়া " আটকে আছে। ফাস্ট স্পিডের রিভেঞ্জ থ্রিলার! আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার, স্ট্রাইকার, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, খুন, ইনফর্মার কি নেই এতে! আমি এতোটা ডিটেইলসে আশা করিনি। মাইন্ডব্লোয়িং! ব্যক্তিগত র্যাটিং ৪.৫
আজ থেকে ১৩ বছর পরের ঢাকা। নিজের দোকানে হঠাৎ খুন হয়ে গেল এক দোকানি। দেখেছে অনেকেই। খুনের পেছনে কার হাত, তাও জানে এলাকার সবাই। কিন্তু, প্রশাসন প্রমাণের অভাবে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। এদিকে বাতাসে বাতাসে একটা গুঞ্জন ভাসছে। বারো বছর আগে ঢাকা কাঁপানো মাফিয়া আলমাস ফিরে এসেছে। সিগনেচার হিসেবে পাওয়া গেল একুশ টুকরো লাশ। নড়ে উঠল আন্ডারওয়ার্ল্ডের ভারসাম্য।
🔹পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে প্লটটা দারুণ লেগেছে। কিশোর পাশা ইমন একটা ডার্ক প্লট সাজাতে যা যা প্রয়োজন ছিল তার সবটাই ঢেলে সাজিয়েছেন। ক্লু গুলো যথাযথ জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ছিল। যে কারণে পড়তে পড়তে কিছুটা দ্বিধায় পড়েছিলাম। আসলে এখানে হচ্ছেটা কি? পেছনে কে? সবচে আরামের বিষয় হলো, কোথাও থামতে হয় নি। মেদহীন ঝরঝরে প্রাঞ্জল বাচনভঙ্গীতে পড়ে ফেলা যায়। তবে, হ্যাঁ খটকাও একটা লেগেছে বটে। মূল চরিত্রের প্রেম,ভালোবাসা, ম্যানিপুলেশন এই বিষয়গুলো কেমন যেন লেগেছে। মনে হয়েছে লেখকের মূল কাহিনীর সাথে এই বিষয়গুলোর জোর কোন সংযোগ করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু শেষ অবধি পড়েও আমি জোরালো কোন কারণ খুঁজে পাইনি। ভবিষ্যতের বাংলায় একজন মেয়ে এতকিছুর পরেও এতবড় ছাড় দেবে এটা যুক্তিতে ঠিক মানা যায় না (যারা মৃগতৃষা পড়েছেন তারা এই লাইনটা রিলেট করতে পারবেন)। বাকিসব ঠিকঠাক ছিল। টুইস্টগুলো ভালো। একশনের জায়গায় কোন কমতি ছিল না। সবমিলিয়ে সুখপাঠ্য ছিল কেপির মৃগতৃষা।
ভবিষ্যতের ঢাকায় একটা খুন হল। অর্গানাইজড ক্রাইম সেখানে সাধারণ ঘটনা। তবু এই খুনটা স্পেশাল হয়ে উঠল। এর পরেই শুরু হল রক্ত, মিথ্যা, কিছু অশ্রু দিয়ে তৈরি হওয়া এই উপন্যাস। তার শেষটা ভালো হল না মন্দ, বা আদৌ গল্পটা শেষ হল কি না - এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে শুরু থেকে শেষ অবধি এই যাত্রাপথটা বেশ উপভোগ করলাম। গতি, চরিত্রচিত্রণ, সংলাপ, ট্যুইস্ট - সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগল এই উপন্যাসটিকে। পড়ে ফেলুন।
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে একটা গুজব। প্রায় বারো বছর আগে দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাওয়া একজন ডন নাকি ফিরে এসেছে। আবারো ফিরেছে নিজের সাম্রাজ্যের ভাগ্যনিয়ন্তা রূপে। এদিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের বর্তমান কাণ্ডারি খালিদভাইয়ের গ্যাং-ও ছাড়িয়ে গেছে অনাচারের সীমারেখা। স্বাভাবিকভাবেই প্রবাদপ্রতিম 'সিন্ডিকেট'-এর সদস্যরা নড়েচড়ে বসলো। পুরনো রাজার নতুন করে ফেরাটা কি ওদের জন্য কোন শুভ ফল বয়ে আনবে? প্রশ্নটা মাথাচাড়া যেন দিয়ে উঠলো 'সিন্ডিকেট'-এর অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই।
দেশের স্বনামধন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সম্ভাবনাময় তরুণ তাহের যেন অদ্ভুত এক খেলার অন্যতম ঘুঁটি হিসেবে জড়িয়ে পড়লো অন্ধকার জগতের সাথে। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা তাকে অদম্য আর সর্বগামী এক ছায়ামূর্তিতে রূপান্তরিত করলো। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো রামরাইল এলাকার সর্বকাজের কাজি বাল্যবন্ধু গৌরব। ঠাণ্ডা মাথার তরুণ তাহের শুধুমাত্র বাতাসে ভেসে বেড়ানো তথ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে ঘটিয়ে ফেলতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। তথ্যের মারপ্যাঁচ রূপ নিলো ভয়াবহতম অস্ত্র হিসেবে।
কোন একজনের অঙ্গুলিহেলনে শহরজুড়ে আবারো উচ্চারিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর গুপ্তঘাতক সঙ্ঘ স্ট্রাইকারদের নাম। পুলিশ ও ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের কাছে 'ধোঁয়াশা' এই স্ট্রাইকাররা। পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ডে অব্যর্থ খুনী হিসেবে যাদের সুনাম আকাশচুম্বী। এমনই এক স্ট্রাইকার দিনে দুপুরে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার টার্গেটকে। সেই টার্গেটও তাকে একের পর এক গোলকধাঁধায় চরকিবাজি করাচ্ছে। আড়ালের মানুষটাও যেন আড়ালে থেকেও সবার সামনে।
তাহের, গৌরব, খালিদভাই, টিংকুভাই, নীরেনবাবু, জাহিদ, নাভা, নিশি সহ আরো অনেকেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডজুড়ে চলা ভয়ঙ্কর এই নাটকের একেকটা চরিত্রে পরিণত হলো। ক্ষমতা দখলের লড়াইকে যেখানে ছাপিয়ে গেলো প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসার মতো আদিমতম অনুভূতি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : কিশোর পাশা ইমনের 'মৃগতৃষা' বিস্তৃত কলেবরের একটা থ্রিলার উপন্যাস। সুবিশাল প্লট আর বেশ অনেকগুলো চরিত্রের সন্নিবেশে এই উপন্যাস স্বাভাবিকভাবেই লাভ করেছে দারুন এক ব্যাপ্তি। ভবিষ্যতের ঢাকাকে লেখক দেখিয়েছেন তাঁর নিজস্ব কল্পনা থেকে। যেখানে সাধারণ এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বদলাতে বদলাতে অসাধারণ এক কুশলী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। একইসাথে দেখা গেছে ভবিষ্যতের ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের রথীমহারথীদের রোমাঞ্চকর উত্থানপতন। অধ্যায়ের পর অধ্যায় কিশোর পাশা ইমন বারবার উন্মোচন করেছেন এমন এক অন্ধকার জগতের যেখানে তথ্যই সব। তথ্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেই যেখানে সংঘটিত হচ্ছে সব ঘটনার। এই ব্যাপারটা আমার কাছে ব্যতিক্রমধর্মী মনে হওয়ার সাথে সাথে যথেষ্ট আগ্রহ জাগানিয়া বলেও মনে হয়েছে।
'মৃগতৃষা'-এর প্রত্যেকটা চরিত্রকেই লেখকের চমৎকার বর্ণনাভঙ্গির কারণে একেবারে বাস্তবতার কাছাকাছি বলে মনে হয়েছে। রকেট গতির থ্রিলার বলে একটা টার্ম আছে। এই বইটাকে আমার মতে রকেট গতির থ্রিলার বলাই যায়। অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর বর্ণনা লেখক এমন ভাবে দিয়েছেন যে উত্তেজনার পারদ ধীরে ধীরে বেড়েছে। শিরদাঁড়া টানটান হওয়াটা আমি ভালোভাবেই টের পেয়েছি। বলতে বাধা নেই, বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কিশোর পাশা ইমনের প্রথম মৌলিক কাজ 'মিথস্ক্রিয়া'-এর চেয়েও তাঁর এই বইটা আমি তুলনামূলক বেশি উপভোগ করেছি।
এই বইয়ে বেশ কিছু বানান জনিত সমস্যা ছিলো। বাতিঘর প্রকাশনীর বইগুলোতে অবশ্য এই ব্যাপারটা নতুন না। 'মৃগতৃষা'-তে সবচেয়ে বেশি যেটা চোখে লেগেছে তা হলো 'শিকারি' শব্দটাকে বারবার 'শকারি' লেখা হয়েছে। যদিও শকারি অর্থ শকদের শত্রু (শক+অরি)।
প্রচ্ছদশিল্পী সিরাজুল ইসলাম নিউটন 'মৃগতৃষা'-এর প্রচ্ছদ করেছেন V.E. Schwab এর 'Vicious' বইয়ের প্রচ্ছদ অবলম্বনে।
২০১৮ সালের বইমেলায় কিশোর পাশা ইমনের বিশাল কলেবরের থ্রিলার উপন্যাস 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল' প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে যথারীতি বাতিঘর প্রকাশনী। এই বইটাও পড়ার ইচ্ছা পোষণ করি। 'মৃগতৃষা' দেরিতে পড়া হলো। যাক, দেরিতে হলেও পড়লাম এতেই আনন্দ।
ঠাস! ঠাস! ঠাস! পর পর তিনবার। চওড়া গলির এককোণে আটতলা ফ্লাটবাড়ির নিচের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের টাইলস বাধানো চকচকে মেঝেতে পড়ে থাকে জয়নাল ব্যাপারির শরীরটা।
নিরেট নিখুঁত ভদ্রলোক, তুখোড় মেধাবী ছাত্র তাহেরের জীবনটা ওলটপালট হয়ে যায়। বাবার মৃত্যু, মায়ের ক্যান্সারের সাথে লড়াই, ছোটবোনের বোবা কান্না, সব মিলিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে ওঠে জীবন। প্রতিশোধ নিতে চায় সে।
সহপাঠী নিশির জীবনটাও যেন ওলটপালট করে দেয় তাহের। নিশির কাজিন সহকারী সচিবের কাছে গোপন প্রস্তাব নিয়ে যায়।
প্রায় একযুগ ধরে প্রায় মৃত মাফিয়া ডন আলমাসের নাম আবার শোনা যায়। তাহের মাঠে নামে আলমাসের সাথে হাত মিলিয়ে। এদিকে তাহেরের পিছে লাগে স্ট্রাইকার (কন্ট্রাক্ট কিলার)।
অন্যদিকে আধিপত্য বিস্তারের খেলায় খুন হয়ে যায় এলাকার টপ টেরর খালিদভাইএর খাসলোক পলাশ। বিভৎস কায়দায় ছাব্বিশ টুকরো খন্ড খন্ড দেহের অংশ করে ফেলে খুনি। যা আবার মাফিয়া সর্দার আলমাসের ট্রেডমার্ক। তবে আলমাস সত্যি সত্যিই ফিরে এসেছে?
বন্ধু গৌরব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এদিকে কারা যেন ছোটবোনের মত আদরের নাভাকে কিডন্যাপ করে তাহেরের তথ্য জানার জন্য। আবার পেছনে লাগে খালিদভাই। পুলিশ ও যেন আচ করতে পারে কি হচ্ছে। পিছু নেয় তারাও।
তাহেরকে ধরার জন্য খালিদভাই তুলে নিয়ে যায় নিশিকে। ছয়টা পর্যন্ত সময় দেয়। এর মধ্যেই হাজির হতে হবে তাকে। নয়ত হারাতে হবে নিশিকে চিরদিনের জন্য।
তাহের কি পারবে নিশিকে বাচাতে? বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে? যে খেলা শুরু হয়েছে তাতে বেচেঁ ফিরে আসতে?
তথ্য। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে মূল্যবান অস্ত্র। তথ্য দিয়ে অসীম ক্ষমতা অর্জন করা যায়। আবার কাউকে একদম শেষ করে ফেলা যায়।
গডফাদার আলমাস, স্ট্রাইকার, সিন্ডিকেট, টপটেরর, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডিবির ডিটেক্টিভ, প্রকৌশলী ছাত্র তাহের। অনেকগুলো পক্ষ। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র একজন এই তথ্য আর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে পাল্টে দিতে চাইচে সব কিছু। কে, কেন এবং কিভাবে? সব জবাব মিলবে এখন।।।
আমার কথা :
আমার সবচেয়ে প্রিয় ধারা হলো থ্রিলার। আর মৃগতৃষা একটা পারফেক্ট থ্রিলার মনে হয়েছে আমার কাছে। কি নেই এতে। অন্ধকার জগতের রঙিন বর্ণনা, অস্ত্রের গর্জন, ভালোবাসা, ছলনা, গোপন পরিকল্পনা, বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ, সবকিছুর একটা কমপ্লিট প্যাকেজ।
কিছু কিছু বানান ভুল খুব বিরক্ত লেগেছে। এমন সময়ে এরকম ভুল আসলেই মানা যায় না।
মোটের ওপর পুরো বইটাতে ডুবে ছিলাম। ঘটনা এত তথ্যবহুল ছিল যে মনযোগ অন্য দিকে দেয়ার সুযোগ একদমই পাইনি। তবে একদম শেষে এসে টুইস্টটা ভালো লাগে নাই তেমন একটা। হয়ত অন্যরকম আশা করেছিলাম তাই।
ও আর একটা কথা।।। এত বছর পর আশেপাশের জীবনযাত্রা এত 2017 টাইপ ছিলো যে একটু হতাশ হয়েছি। এ সময়ে ভ্যাম্পায়ার ডায়রিস, ক্যাসল এর মত টিভি সিরিজ নরমালি সবাই দেখবে এটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেল না?
তারপরও ভালো খারাপ নিয়েই তো জীবন। সবার জন্য শুভকামনা রইল।
সুন্দর একটা থ্রিলার। অনেকগুলা আরবান মিথ টেনে এনেছেন লেখক, সেগুলা সুন্দর মতই প্রতিষ্ঠিত করেছেন গল্পের মধ্যে। টুইস্ট নাই অত। মোটামুটি প্রেডিকটেবল ছিল সবই। কিন্তু গল্প বলা ভালো দেখে পড়ে গেছি।বেশি সময় লাগবে না শেষ করতে। বোরিং ও লাগবে না ।
২০৩৪ সালের ঢাকা কে লেখক তার অসামান্য কল্পনাশক্তি দিয়ে যেভাবে বর্ণনা করেছেন- তা এক কথায় অসাধারণ। অস্ত্রের দিন শেষ, আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের সব চাইতে বড় হাতিয়ার হইলো তথ্য। যার কাছে যত তথ্য, সে তত শক্তিশালী- যা এ বইয়ের মূল উপজীব্য। মিশেল ফুকোর 'পাওয়ার এন্ড নলেজ' এবং এদের মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্ক বুঝতে এই বইয়ের বিকল্প খুব বেশি নাই এ দেশে। একটা খুন। এতদিনের চেনা ঢাকা অপরিচিত হয়ে যেতে শুরু করলো। এক যুগ আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক মাফিয়া সর্দার, আলমাসের নাম শোনা যেতে লাগলো ঢাকার রাস্তা-ঘাটে। বুয়েট পড়ুয়া হাসিখুশি, মেধাবি ছাত্র তাহেরের মধ্যে কি যেন একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা গেল। সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলের সাথেই অতি দক্ষতার সাথে মিথ্যা বলতে আরম্ভ করে দিল সে। তারপর জানা গেল তার সাথে এক তথ্য বিক্রেত���র সংশ্লিষ্টতার গল্প। মঞ্চে প্রবেশ করলো তথ্য বিক্রেতা, গৌরব (এ বইয়ে আমার সব থেকে পছন্দের চরিত্র)। এক দিকে এ দুই জনের 'ফিসফাস', অন্যদিকে ছাব্বিশ টুকরো লাশের ইতিহাস। সমান্তরালে চললো মাঝারি ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে বেশ বড়সড় একটা আলোড়ন, এক সপ্তাহে নিশির জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়া, ক্ষমতাবান সেনাপতি টিংকু ভাইয়ের বুদ্ধিমত্তা, ডিবি অফিসার মুক্তারের অনুসন্ধান, আর এক অচেনা আততায়ীর হুটহাট বন্দুকযুদ্ধে জড়ানো। এক সাইকোর আবির্ভাব এখানে যোগ করেছে আলাদা এক মাত্রা। এইটা হইতে পারে ক্ষমতা আরোহণের গল্প, উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প, নিতান্ত সাধারণভ���বে বেঁচে থাকতে চাওয়ার গল্প, অকৃত্রিম বন্ধুত্তের গল্প, ভালবাসা কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, সহানুভূতি কিংবা মমত্ববোধের গল্প, কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উঠে এসেছে 'প্রতিশোধ' নামক বিষয়টা। বাংলা থ্রিলারে এরকম ভয়ংকর প্রতিশোধের উপাখ্যান তেমন একটা চোখে পড়ে নাই আগে। উপন্যাসটিতে অনেকগুলো পক্ষ, অনেক ঘটনা, আর আছে কয়েকটি মগজ যা নির্ধারণ করে চলেছে, কিংবা আরেকবার করতে চলেছে এ শহরের ভবিষ্যৎ। 'সিণ্ডিকেট', 'স্ট্রাইকার', 'প্রেমনাথের ক্যান্টিন' এবং 'ফাইটিং পিট', কিংবা গৌরবস গেইমের অন্তর্ভুক্তি উপন্যাসটিতে কেবল নতুনত্তের খোরাকই যোগায় নি, বরং টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছে কিছু সত্য যা সবার অন্তরালে, ঢাকা শহরের নাকের ডগার উপর দিয়ে চলে আসছে অনন্তকাল ধরে। বি দ্র- সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নাই !! বেশ কিছু ব্যাপারকে অতি অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে !! খারাপ বলছি না, তবে এইটা স্বীকার করতেই হবে যে প্রটাগনিস্ট সাহেবের মধ্যে ট্র্যাডিশনাল বাংলা (তামিল না) সিনেমার নায়কদের প্রভাব একটু বেশিই চোখে পড়ছে !! আরেকবার পড়বো, ভাবতেছি !! আরেকবার পড়লে হয়তো পুরো ব্যাপারটা আরও ভালমতো বোঝা যাবে, কিংবা কে জানে- হয়তো খটকাগুলাও দূর হয়ে যাইতে পারে !! _ চমকের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। কিছু ভালো ছিল, কিছু ছিল প্রেডিক্টেড !! _ শেষটা ভালো ছিল, যদিও আরেক দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে এইটা একটু বেশিই অদ্ভুত !!
"মৃগতৃষা" শব্দটির সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না, অভিধান ঘেটে জানতে পারলাম এর অর্থ "মরীচিকা," ইংরেজিতে "Mirage." সহজ কথায় দৃষ্টিভ্রম বোঝায় যাকে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এই বইয়ের জন্য এরচেয়ে পারফেক্ট আর কোনো নাম হয় না! লেখক একদম শুরু থেকে পাঠককে নিয়ে একপ্রকার খেলা করেছেন। যখনই মনে হচ্ছিলো ঘটনাটা হয়ত একদিকে মোড় নিচ্ছে ঠিক তখনই একদম ইউটার্ন নিয়ে গল্পটা নতুন একটা পথে এগিয়েছে। পারফেক্ট থ্রিলার যাকে বলা চলে।
গল্পটা লেখা হয়েছে ২০৩৪ সালের প্রেক্ষাপটে। গডফাদার, গ্যাং, মাফিয়া, প্রেম, প্রতিশোধ ইত্যাদির মিশেলে দারুণ এক উপভোগ্য থ্রিলার। তাহের চরিত্রটির চিত্রায়ন এতটা সুন্দর হয়েছে যে একদম মনের ভেতর গেথে গেছে। থ্রিলারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এন্ডিং, এবং এই জায়গায়ও লেখক বাজিমাত করেছেন। চমৎকার একটি এন্ডিং দিয়েছেন যার দ্বারা গল্পটি শেষ হয়েও চলমান রয়েছে। আমি পুরো গল্পে এতটা বিভোর ছিলাম যে খাওয়া-ঘুম এর হুশ ছিল না!
তবে কিছু জায়গায় একটু ইমপ্রুভ করা যেত। তাহেরের চাচা চরিত্রটিকে আরেকটু হাইলাইট করে তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা দিলে ভালো হত। বইটিতে অনেক বেশি চরিত্র আসায় কয়েকটা চরিত্রের ডেভেলপ করা সম্ভব হয়নি, এদিকটা ঠিক করলে আরো পারফেক্ট হত।
সর্বোপরি, আমার কাছে উপন্যাসটি দারুণ লেগেছে। প্রচুর এনজয় করেছি। অনেকদিন পর এত দারুণ একটি থ্রিলার পড়লাম।
বাবার খুন এর পর ঢুকে পরা অন্ধকার জগৎ। প্রতিশোধের নেশায় এগিয়ে চলা এক তরুণ। তার প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে যাচ্ছে চারপাশ। বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। শুধু সময়ের অপেক্ষা। . ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ভাবে আগমন একজন। বিগত এক যুগ যার কোন খোজ কেউ পায়নি। হঠাৎ করেই আবার তার আগমণ। বিষয়টি যেমন আশ্চর্যজনক তেমনি ভয়ংকর। যদিও তাকে কেউ এখনও দেখেনি। শুধু নামটাই শুনেছে। সে এসেছে রাজত্ব করতে। কিন্তু তাকে কেউ দেখেনি। . খুন, বিশ্বাসঘাতকতা, সন্ত্রাস, পুলিশ, আন্ডাওয়ার্ল্ড, গডফাদার, মাফিয়া পুরো একটা চক্র। বিশদ একটা প্লট। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে সেভাবে গল্পের গাথুনি তেমন জোরাল নয়। অনেকটাই দুর্বল। তাছাড়া অনেক জায়গাতেই খাপ ছাড়া মনে হয়েছে। বিল্ড আপ ভাল ছিল, তবে শেষের দিকে বেশ দ্রুত সব শেষ হয়েছে। এ ধরনের থ্রিলারের জন্য বেশ খারাপ লেগেছে। শেষটা আরও ভাল হতে পারত।
বাংলাদেশেও এরকম থ্রিলার লেখা হচ্ছে, ভাবতেই ভালো লাগছে। আগাগোড়া টর্নেডোর গতিতে এগিয়ে যাওয়া দুর্দান্ত এক রিভেঞ্জ থ্রিলার। সেই সাথে মগজের ব্যায়ামও আছে ভালোই। লেখার ঢং পাকা থ্রিলার লেখিয়ের মত। লেখক ভালোই রপ্ত করেছেন, থ্রিলার গল্পের বিশেষ টোন।
বুয়েটে পড়ুয়া তাহেরের বাবা হঠাৎ করেই খুন হয়ে গেলেন। প্রতিশোধের অনল, ক্ষুরদার মস্তিষ্ক আর কৈশোরের উত্তাল সময়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের স্বর্গ রাজ্যে বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতা নিয়ে নেমে পড়ল তাহের এক অসাধারণ মিশনে। আর কি ভীষণ সেই প্রতিশোধ! কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে তাহেরকে মূল্য দিতে হয়েছে কতটা? শেষটা বেশ ডার্ক এবং বিষাদময় হয়ে উঠেছিল, বই শেষ করার পর তাহেরের অবসাদগ্রস্থ ক্লান্তি যেন নিজের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে কিছুটা। শেষ পৃষ্ঠার ক্লিফ হ্যাঙ্গার যেন এর সিকুয়েলের আশা দেখাচ্ছে :)
'মিথস্ক্রিয়া', 'আগুনের দিন শেষ হয়নি' এর পরে লেখক কিশোর পাশা ইমনের লেখা তৃতীয় বই 'মৃগতৃষা'। আগের দুইটি বই এর মত এই বইটিও পড়তেও যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি।
পুরো বই এর প্রায় সবকিছুই ভালোর খাতায় যাবে। কাহিনীর ঝরঝরে বর্ননা, চরিত্রসমূহের গঠন, রহস্য উদঘাটন সবই সুচারু ভাবে করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পেছনের কারণগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচন করা হয়েছে। খারাপ দিক বলতে গেলে, ২০৩৪ সালের তুলনায় অনেক বিষয়ের রেফারেন্স বর্তমান সময় থেকে দেওয়া হয়েছে, আজিজ ম্যানশনের একশনের প্লটটা বাকি অংশের মত আকর্ষণীয় করা যায় নি। আরো ঘষা মাজা দরকার ছিল। বাতিঘরের অন্যান্য বই এর মত বানান ভুল তো আছেই।
থ্রিলার পাঠকদের এই বইটি কোন ভাবেই মিস করা ঠিক হবে না।
মেলাদিন পর যুতসই একটা থ্রিলার পড়লাম। মনে হইতেসিল মাসুদ রানা! সেই অ্যাকশন, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করা, সেই রোমান্স, আবার যায়গায় যায়গায় সেই খটকা। বাতিঘর প্রকাশনীর বেশিরভাগ লেখকেরই প্রথমদিকের বইগুলা ভাল হয়, এইটা হয়ত তারও একটা প্রমাণ। চাইলে বহুত ভুলভাল বের করা যাবে কিন্তু থ্রিলারের এই এক মজা, ভাল না লাগলে প্লটহোলগুলি খুব গায়ে লাগে। আর ভাল লেগে গেলে, "থ্রিলারে অমন দুচারটে তো থাকবেই"!!
I'm just blown away. থ্রিল, টানটান উত্তেজনা, সাসপেন্স, সবকিছুতে একদম ভরপুর!! শুধুমাত্র শেষে এসে চাচার কাজকর্মগুলা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে বোধগম্য হলো না। তাই ৫ তারা দিতে চেয়েও দিতে পারলাম না। overall, দারুণ একটা বই!
ভালো লেগেছে যেভাবে আলমাসকে আড়ালে রেখেই গল্পটা এগিয়ে গেছে। কিছু কিছু প্লটহোল একদমই ছিল না এমন না। তবে খুবই সূক্ষ্ম কিছু বিষয় ছাড়া এক কথায় ভালো লেগেছে।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কি? পারমানবিক বোমা? কোনো বিশেষ ধরনের মিসাইল? জি না! বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো তথ্য। সেটা রাজনীতি হোক বা সমরনীতি।
প্রায় একযুগ পরে ঢাকা শহরে ফিরে এসেছে কুখ্যাত গডফাদার আলমাস। তেমনই খবর ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। বিজনেস কোম্পানির কমিটির কাছে প্রোপোজাল যাচ্ছে খালিদভাইয়ের গ্রুপকে চাঁদা না দিয়ে আলমাসের সাথে ঐক্য গঠন করার। আন্ডারওয়ার্ল্ডে কেউ কাওকে বিশেষ ঘাটায় না সবাই যার যার সহবস্থানে চলে। কিন্তু আলমাস যদি সত্যিই ফিরে আসে তাহলে তার প্রোপোজাল না মানলে তার পরিনাম কি হতে পারে তা সবার জানা আছে। আলমাসের ট্রেডমার্ক 'ছাব্বিশ টুকরা'। আলমাস যে সত্যিই ফিরে এসেছে তার প্রমানেই যেন কিছুদিন পরে পাওয়া গেলো ছাব্বিশ টুকরা। এবার কি বিশ্বাস করবেন আলমাসের কথা? কিন্তু কে এই আলমাস! তাকে কেউ কখনো দেখেনি। আলমাস কি রক্তে-মাংসে গড়া একজন মানুষ? নাকি শুধুই মিথ? হঠাৎ করেই খুন হলো কারো সাথে ঝামেলায় না জড়ানো নিপাট ভদ্রলোক এক দোকানদার। বুয়েটের মেকানিকালের মেধাবী ছাত্র তাহেরের মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আসলো। সেটা কেউ লক্ষ না করলেও ক্লাসমেট নিশি লক্ষ করেছিলো। কিন্তু সেও কি জানতো যে সে নিজেও একজন দাবার গুটি! আড়ালে বসে কেউ একজন ছকে দান চালছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উদ্ভিন্ন যৌবনা ইঞ্জিনিয়ার নিশির জীবনটা তছনছ হয়ে গেলো। সময় লাগলো মাত্র এক সপ্তাহ। সদ্য কৈশোর পেরোনো তরুনী নাভার উপরেও কেউ একজন নজরদারি করছে। পাড়ায় অাধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে খুন হলো এক মাস্তান। ঢাকার অন্ধকার গলিলে ঘুরে বেড়ানো দুর্ধর্ষ এক খুনিকে বারবার বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এগুলো কি সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি আড়ালে বসে কেউ একজন সুতা টানছে! গডফাদার আলমাস, স্ট্রাইকার, সিন্ডিকেট, এলাকার টপটেরর, রাজনৈতিক নেতা, তথ্যবিক্রেতা, মন্ত্রনালয়ের সহকারী সচিব, ডিটেক্টিভ মুক্তার, প্রকৌশলী ছাত্র তাহের। অনেকগুলো পক্ষ। অনেক প্যাচ। এদেরই একজন তথ্য ও মগজ ব্যাবহার করে ঢাকা শহরের ভবিষ্যত নির্ধারন করতে যাচ্ছে। কে? কেন? কিভাবে? টানটান উত্তেজনা নিয়ে পড়ে যান। নিশ্চিন্ত থাকুন হতাশ হবেন না।
নামকরনঃ "মৃগতৃষা" শব্দের অর্থ মরিচিকা, বিভ্রম, ইল্যুশন। বইয়ের নামটা এক্ষেত্রে পারফেক্ট। কাহিনীর সাথে মিলে যায়। পুরো বইতে আপনি একধরনের ধোয়াশার মধ্যে থাকবেন। কে কি করছে সেটা বুঝে উঠতে সময় লাগবে। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন মনে হয়। কোনটার সাথে কি সম্পর্ক! সেই সম্পর্কগুলো নিয়ে গল্পের চরিত্রগুলো যেমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে, ঠিক তেমনি পাঠকও দোলাচলে দুলতে থাকবেন। এক্ষেত্রে "মৃগতৃষা" একটা সার্থক নাম। চরিত্রগুলো নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করবে। এখানে কোনো নির্দিষ্ট নায়ক নেই। নেই নির্দিষ্ট কোনো ভিলেন। কিছুকিছু চরিত্র একই সাথে নায়ক ও ভিলেন হয়ে উঠবে আপনার চোখে।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ এবছর বইমেলায় আমার দেখা বেশি বিক্রিত বই এটা। সবার আগ্রহ দেখে আমিও কিনলাম। কিনে যে ঠকি নাই সেটা রিভিউ পড়েই বুঝতে পারছেন। অনেকের মত আমারও ধারনা ছিলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানের থ্রিলার লেখা সম্ভব না। কিন্তু লেখক সেই ভুল ভেঙে দিলেন। গল্প বলার ধরনটা চমৎকার ছিলো। আমার কাছে কোথাও বাড়াবাড়ি মনে হয় নি। দুই জায়গায় শিকারি বানান ভুল ছিলো এছাড়া কোনো অসংগতি চোখে পড়ে নি। প্রচুর টুইস্ট ছিলো। সেই সাথে উৎকণ্ঠা। সবসময় টানটান উত্তেজনা নিয়ে থাকা। পুরোটা সময়ে একবারও আগ্রহ হারাইনি। সবশেষে বলবো, থ্রিলার প্রেমিদের জন্য বইটা সংগ্রহে রাখার মত একটা বই। বইয়ের শুরুতে ফঁরাসি চিত্রশিল্পী এদগার দ্যগা এর একটি উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। "যা দেখছো, তা শিল্প নয়। সেটাই শিল্প, যা তুমি অন্যকে দেখাচ্ছো!"। লেখক এই শিল্পের কাজটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে করেছেন। নিজে যেমন পাঠকদের রহস্যের জালে ঘোরপ্যাঁচ লাগিয়ে নিজের শিল্পকে দেখিয়েছেন। তেমনি গল্পের চরিত্রের মাধ্যমেও দেখিয়েছেন কিভাবে শিল্পকে দেখাতে হয়।
লেখকের "মিথস্ক্রিয়া" পড়েছিলাম গত বছর। লেখনী ততটা শক্ত মনে না হইলেও, বইটা আমার বেশ লেগেছিল। উনি যেন আমার মনের কথা পড়তে পেরেছিলেন। তার ফলশ্রুতিতেই আসলো "মৃগতৃষা"- যার সব থেকে শক্তিশালী দিকটাই হল অতি শক্তিশালী লেখনী, সেই সাথে দুর্নিবার গতি।
২০৩৪ সালের ঢাকা কে লেখক তার অসামান্য কল্পনাশক্তি দিয়ে যেভাবে বর্ণনা করেছেন- তা এক কথায় অসাধারণ। অস্ত্রের দিন শেষ, আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণের সব চাইতে বড় হাতিয়ার হইলো তথ্য। যার কাছে যত তথ্য, সে তত শক্তিশালী- যা এ বইয়ের মূল উপজীব্য। মিশেল ফুকোর 'পাওয়ার এন্ড নলেজ' এবং এদের মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্ক বুঝতে এই বইয়ের বিকল্প খুব বেশি নাই এ দেশে।
একটা খুন। এতদিনের চেনা ঢাকা অপরিচিত হয়ে যেতে শুরু করলো। এক যুগ আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক মাফিয়া সর্দার, আলমাসের নাম শোনা যেতে লাগলো ঢাকার রাস্তা-ঘাটে। বুয়েট পড়ুয়া হাসিখুশি, মেধাবি ছাত্র তাহেরের মধ্যে কি যেন একটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা গেল। সংশ্লিষ্ট প্রায় সকলের সাথেই অতি দক্ষতার সাথে মিথ্যা বলতে আরম্ভ করে দিল সে। তারপর জানা গেল তার সাথে এক তথ্য বিক্রেতার সংশ্লিষ্টতার গল্প। মঞ্চে প্রবেশ করলো তথ্য বিক্রেতা, গৌরব (এ বইয়ে আমার সব থেকে পছন্দের চরিত্র)। এক দিকে এ দুই জনের 'ফিসফাস', অন্যদিকে ছাব্বিশ টুকরো লাশের ইতিহাস। সমান্তরালে চললো মাঝারি ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে বেশ বড়সড় একটা আলোড়ন, এক সপ্তাহে নিশির জীবন ওলট-পালট হয়ে যাওয়া, ক্ষমতাবান সেনাপতি টিংকু ভাইয়ের বুদ্ধিমত্তা, ডিবি অফিসার মুক্তারের অনুসন্ধান, আর এক অচেনা আততায়ীর হুটহাট বন্দুকযুদ্ধে জড়ানো। এক সাইকোর আবির্ভাব এখানে যোগ করেছে আলাদা এক মাত্রা। এইটা হইতে পারে ক্ষমতা আরোহণের গল্প, উচ্চাকাঙ্ক্ষার গল্প, নিতান্ত সাধারণভাবে বেঁচে থাকতে চাওয়ার গল্প, অকৃত্রিম বন্ধুত্তের গল্প, ভালবাসা কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, সহানুভূতি কিংবা মমত্ববোধের গল্প, কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উঠে এসেছে 'প্রতিশোধ' নামক বিষয়টা। বাংলা থ্রিলারে এরকম ভয়ংকর প্রতিশোধের উপাখ্যান তেমন একটা চোখে পড়ে নাই আগে।
উপন্যাসটিতে অনেকগুলো পক্ষ, অনেক ঘটনা, আর আছে কয়েকটি মগজ যা নির্ধারণ করে চলেছে, কিংবা আরেকবার করতে চলেছে এ শহরের ভবিষ্যৎ। 'সিণ্ডিকেট', 'স্ট্রাইকার', 'প্রেমনাথের ক্যান্টিন' এবং 'ফাইটিং পিট', কিংবা গৌরবস গেইমে�� অন্তর্ভুক্তি উপন্যাসটিতে কেবল নতুনত্তের খোরাকই যোগায় নি, বরং টেনে হিঁচড়ে বের করে এনেছে কিছু সত্য যা সবার অন্তরালে, ঢাকা শহরের নাকের ডগার উপর দিয়ে চলে আসছে অনন্তকাল ধরে।
বি দ্র- সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নাই !! বেশ কিছু ব্যাপারকে অতি অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে !! খারাপ বলছি না, তবে এইটা স্বীকার করতেই হবে যে প্রটাগনিস্ট সাহেবের মধ্যে ট্র্যাডিশনাল বাংলা (তামিল না) সিনেমার নায়কদের প্রভাব একটু বেশিই চোখে পড়ছে !! আরেকবার পড়বো, ভাবতেছি !! আরেকবার পড়লে হয়তো পুরো ব্যাপারটা আরও ভালমতো বোঝা যাবে, কিংবা কে জানে- হয়তো খটকাগুলাও দূর হয়ে যাইতে পারে !! _ চমকের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। কিছু ভালো ছিল, কিছু ছিল প্রেডিক্টেড !! _ শেষটা ভালো ছিল, যদিও আরেক দিক থেকে চিন্তা করতে গেলে এইটা একটু বেশিই অদ্ভুত !!
স্রেফ স্ট্রিট ফাইটিংকে কেন্দ্র করে এমন একটা অসাধারণ থ্রিলিং উপন্যাস লিখে ফেলা যায়, এটা আমার ভাবনার বাইরে ছিলো। কেপি, ইউ হ্যাভ ডান এ প্রিটি গুড জব ম্যান।
বইটা খুবই চমৎকার । কোন সন্দেহ নেই তাতে । কিন্তু আমি আগে "যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" পড়ে ফেলায় একটু হতাশ হয়েছি বটে । Cause i have read his better works.