খুনে ডাকাত বহেরু একখানা গাঁ তৈরি করেছিল। নিজেই তার নাম রেখেছিল বহেরু গাঁ। সেখানে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে সে। যত কিম্ভূত মানুষ ধরে এনে আশ্রয় দিত সেই বহেরু গাঁয়ে। সংসারে বনিবনার অভাবে একদা এই গাঁয়ে চলে এলেন ব্রজগোপাল। এ-সংসারে কিছু চাওয়ার নেই তাঁর। ডায়েরির সাদা পাতায় তবু তিনি লিখে রেখেছিলেন— ভগবান, উহারা যেন সুখে থাকে। নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ ও দিশাহীনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্রজগোপাল কি এক অসংশয়িত উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন? সংসার-উদাসী বাবার খোঁজে বহেরু গাঁ-তে এসেছিল সোমেন। বাবার রোজনামচায় লেখা ওই পঙ্ক্তি-রহস্য বুকে নিয়ে সে কলকাতায় ফিরে গেল। বহেরু গাঁ থেকে ফিরে তাকে যেতে হলই, কেননা প্রত্যেক মানুষেরই একটা ফেরার জায়গা চাই। যদিও সেই কলকাতায়, যেখানে অন্যরকম জীবন, হাজার রকম মানুষ। সোমেনকে ঘিরে এক সৃষ্টিছাড়া সমাজ। তারপর? রিখিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষপর্যন্ত কোথায় পৌঁছেছে? গ্রাম ও কলকাতা— এই দুই বৃত্তের টানাপোড়েন এবং সংলগ্নতায় সৃষ্ট এই কাহিনি নিষ্ঠুর সময়ের অভিঘাতে পীড়িত ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ অ্যালবাম। এর বর্ণাঢ্য বিস্তারে, ঘাত-প্রতিঘাতে, বিরহ-মিলনে অসংখ্য ছবির মধ্যে জগৎ ও জীবন উৎকীর্ণ হয়ে আছে। এক মহৎ উপন্যাসের নাম ‘যাও পাখি’।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক।
তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ময়মনসিংহে (বর্তমানে বাংলাদেশের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন—যেখানে তাঁর জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। ভারত বিভাজনের সময় তাঁর পরিবার কলকাতা চলে আসে। এই সময় রেলওয়েতে চাকুরিরত পিতার সঙ্গে তিনি অসম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শীর্ষেন্দু একজন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত।
তাঁর প্রথম গল্প জলতরঙ্গ শিরোনামে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাত বছর পরে সেই একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তাঁর প্রথম উপন্যাস ঘুণ পোকা প্রকাশিত হয়। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসের নাম মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
শীর্ষেন্দুর লেখা বইগুলো যদি পছন্দের ক্রমানুসারে সাজাই, যাও পাখি বইটা আমি একদম এক নম্বরে রাখব। শুরুতে একটু বিরক্ত লাগলেও শেষটা পড়ে থমকে গিয়েছিলাম। এতো সুন্দর ❤
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বই পড়তে গেলে সবসময় ই একটা ভয় কাজ করে মনে, যে অনেক চরিত্র টরিত্রের মধ্যে হঠৎ গুলিয়ে যাবে না তো কিংবা পড়তে পড়তে একসময় নিজেকেও বিশাল গল্পের অংশ বলে মনে হবে নাতো....! আমি নিজে বিশ্বাস করি প্রতিটা লেখক ই খুব যত্ন করে লেখেন। ভালো লেখা, মন্দ লেখা এই ব্যাপার গুলো পাঠকরা তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির আদালতে বিচার করে রায় দেয়। লেখকদের এসব নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না। কতগুলো চরিত্র সৃষ্টি করার পর তাদেরকে কাল্পনিক জীবনের অনিশ্চিত স্রোতে ঠেলে দিয়ে একটা খেলা খেলতে তারা কখনো হিমশিম খান আবার কখনো বড় উপভোগ করেন । এ ব্যাপারটা তাদের কাছে অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ। শীর্ষেন্দু তার সব উপন্যাসের মতো এখানে সেই কাজটা করেছেন এবং কিছু সার্থক ও হয়েছেন বলা যেতে পারে । তা যাই হোক খাঁচার মধ্যে আসি , ব্রজগোপাল একজন খাঁচা (সংসার) পালানো মানুষ। তার স্ত্রী আছে, পুত্র আছে, কন্যা আছে কিন্তু তাও তিনি একা। শহুরে জীবন যাপন তার ভালো লাগে না। জীবনের এই -পয়সা উপার্জন করো আর সামাজিক দায়িত্ব পালন করো এই নিয়ম তার মনে ধরে নাই। সংসারের উপর যাদের আস্থা আছে তারা সংসারের আস্থা অর্জনের জন্য কি না করে ! হয়তো শুধুমাত্র সে জন্যই সংসার তাদের উপর কৃপা করে কিছুটা ছেলেভুলানো স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে কিন্তু যারা সংসারের নিজস্ব নিয়মকানুন পাল্টিয়ে নিজের মনমতো করতে চায় এবং ভাবে সবাই তার দৃষ্টিতেই জীবন দেখবে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে সংসারের কঠিন অভিশাপ । ফলাফল - সংসার তাদের ছাড়েও না আবার ধরেও না । তারা ভাসমান কচুরিপানা হয়ে সংসার নামক পুকুরে ভাসতে থাকে । ব্রজগোপাল এই অভিশাপ ভোগ করছে আজ অনেক বছর ধরে। স্ত্রী ননীবালা ও ছোট ছেলে সোমেন থাকে বড় ছেলে রণেনের সংসারে। মূল গল্পটা এগোতে থাকে একেকজনের নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশের মাধ্যমে। কখনো ব্রজগোপাল চায় শহরে না থেকে সবাই তার কাছে এসে গ্রামে বাস করুক , কখনো রণেন চায় জীবনটা যেন হঠাৎ ফুরিয়ে না যায় , কখনো সোমেন চায় সবকিছু ছেড়েছুড়ে বিদেশে চলে যেতে, কখনো ননীবালা চায় আর কিছু না হোক মাথা গুঁজবার জন্য একটা স্থায়ী ছাদ যেন হয়। শীর্ষেন্দু উপন্যাস শুরু করেন চারা গাছ রোপনের মধ্যে দিয়ে তারপর আস্তে আস্তে পানি এবং সার পেয়ে চারাগাছ একদিন মহিরুহ তে রূপান্তরিত হয়। সেই গাছের নানা রঙের ফল পাঠকদের নানা রকম স্বাদ দিয়ে কখনো হাসায় ,কখনো বিষণ্ণ করে আবার কখনো করে বিব্রত। যাও পাখি উপন্যাসের নামকরণ কতটুকু সার্থক হয়েছে জানি না। পাখি কোথায় যাবে? বনে? যে পাখি একবার বন্যসমাজ থেকে বের হয়ে এসেছে তাকে আবার বনে পাঠিয়ে দিলে বন্যসমাজ তাকে কি গ্রহণ করবে? যে পাখি এতদিন বন্দী ছিলো সে পাখির হতাশার কাছে স্বাধীনতা কিংবা পরাধীনতার সুখ দুঃখের পার্থক্য কতটুকু ? পাখি আসলে কি চায় ?
শীর্ষেন্দুর বই কতশত বছর পর পড়লাম, নিজেও নিশ্চিত না। ছোটবেলায় বড়রা বলত সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ (মজুমদার) কলেজ লাইফে পড়ার বই। যদিও আমার মত হলো সুনীল আরো বেশি সময় পড়া যায়। আর শীর্ষেন্দু সমরেশ একটা বয়সের পর গুড রিড বা স্বাদ বদলানোর জন্য পড়া উচিত। এতো কথা বলার কারণ, এই সময় শীর্ষেন্দু আমার ভালো লাগার কথা না। সেটা মাথায় রেখেই বইটা পড়া এবং আমার বিশ্বাস, এখনো মানবজমিন পড়লে ভালোই লাগত।
যাও পাখি শীর্ষেন্দুর লেখার বিচারেই খানিকটা পিছিয়ে থাকবে। কেননা উপন্যাসের আখ্যানে দ্বন্দ্ব বড় কম। ব্রজগোপাল, ননীবালা, অজিত, শীলা, রণেন, বহেরু সবার ভাবনা একমুখী। তাদের একজনের সঙ্গে অন্যের দ্বন্দ্ব থাকলেও নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব নেই৷ একমাত্র সোমেনের ভেতরেই সেটা আছে কিন্তু সোমেনকে শেষ অবধি ব্রজগোপালের ছায়া করে তোলেন লেখক (যা উপন্যাসের শুরুতেই আন্দাজ করা যায়)।
উপন্যাসটা ব্রজগোপালের হতে পারত। ননীবালার হতে পারত। সোমেনের হতে পারত। বহেরুরও হতে পারত। তবে শেষ অবধি উপন্যাসটা কারোরই হয়ে ওঠে না। শেষে ননীবালার সংলাপটা শীর্ষেন্দুর নিজস্ব আদর্শের একটা প্রতিফলন কিন্তু সেখানেও বৃহত্তরের ব্যঞ্জনা টের পাই না।
একজন আদর্শ সাহিত্যিকের সংজ্ঞা কী? কোনদিনই তা জানা ছিল না।
শৈশব থেকে কেবল ভেবেছি; পারিপার্শ্বিক নিয়ে, মানুষ নিয়ে, তাদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে। যে অচেনা লোকটার পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ে হেঁটে যাচ্ছি, সেও কি আমার মতো ভাবে? যাদের সঙ্গে বসে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় করছি, তারাও কি আমার মতোই খাতা খুলে মৃত্যুর চিন্তায় ভীত হয়? কিংবা একটি পশুর মনের চিন্তা থেকে শুরু করে পাখির ডেকে ওঠার কারণ, এসব নিয়ে জানার চেষ্টায় সময় ফুরাচ্ছে কারো? এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে বুড়ো হয়ে গেলাম টেরও পেলাম না। কিন্তু, আদর্শ সাহিত্যিকের সামগ্রিক সংজ্ঞাটা এখনো অজানা।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের "যাও পাখি" পড়ে জবাবটার খুব কাছাকাছি পৌঁছলাম বোধহয়। একটি সাধারণ পরিবারের চিত্র, ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় আবার গুছিয়ে নিয়ে এলেন তিনি। বললেন এভাবেই মানুষ বাঁচে, ভাবে, বদলায় বা আপন ও পর হয়ে যায়। সমাজ সূত্রের জটিলতার বাইরে গিয়েও কিছু মানুষ পুরো সমাজকে নিয়ে ভাবার দায় দেখাতে পারে। আবার চিন্তা-ভাবনা-আশঙ্কার ঊর্ধ্বে না গিয়েও মানুষ প্রেমে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়। এই ক্ষেত্রে লেখক সাফল্য ও ব্যর্থতার দিকগুলো বেশ গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। একই সঙ্গে শঙ্কিত এবং তৃপ্ত হয়েছি।
বইয়ের ভাল লাগার চরিত্র প্রচুর। কয়েকজনের কথা স্পষ্ট বলা যায়,
ব্রজগোপাল - সংসারের বাইরে থেকে সে পরম সংসারী। জগতের কল্যাণেই যার তৃপ্তি। সব না থেকে যার সব আছে। সম্ভবত এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে অতি বিরল। আমরা বৈষয়িক ভাবনায় ফেঁসে গিয়ে ক্রমাগত মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। নিজেদের চারপাশে এক প্রকার চাহিদার দুর্গ গড়ে তার ভেতর সংকুচিত হয়ে বসে থাকি। সেই নিয়মিত ছকটি ভেঙ্গে ব্রজগোপাল হয়ে উঠেছেন বিশেষ। তার সব কথায় সহমত না হলেও এই কারণেই তার চরিত্রটি বিশেষ ভাল লেগেছে।
বহেরু - পাষাণ হৃদয়, অথচ একই সঙ্গে যথেষ্ট তরলও। নিজ সন্তানদের থেকে ভীত, অথচ অচেনাদের বুকে টেনে নিচ্ছে অনায়সে। অদ্ভুত এক কম্বিনেশন লোকটা। খুন করতে যার হাত কাঁপে না, আবার শ্রদ্ধায় নিবেদিত হয়ে কারো পায়ের কাছে বসে থাকতেও সে নিঃসংকোচ। কি অপূর্ব কন্ট্রাস্ট!
রিখিয়া - সরল, অভিমানী। সোমেন একাই নয়, আমিও মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছি। লেখকের উদ্দেশ্য শতভাগ সফল! সম্ভবত এই কারণেই গল্পের অন্য নারী চরিত্রগুলোকে কিছুমিছু বিতর্কিত করলেও এই চরিত্রটিকে লেখক রেখেছেন নিষ্কলুষ। এবং এমন মানুষ পৃথিবীতে আছে। সত্যিই আছে। আমি দেখেছি।
সোমেন - কিছু ���িছু ক্ষেত্রে একেবারে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলাম। বলা যায় ভাবনা চিন্তার ধারাটা বেশ ওই গোছের। আমার মনে হয়, কিশোর শীর্ষেন্দুও এ ধরনের ভাবনায় ডুব দিতেন। এই ধরনের শঙ্কা, উদ্বেগ, দিশেহিন ভাব তিনি অনুভব করতেন। নিজে না জানলে এভাবে লেখা যায় না। কিংবা হয়তো তিনি পারেন! একটি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে তিনি অগণিত যুবকের মনকে প্রতিফলিত করতে পারেন। এক একটি চিন্তার মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দিতে পারেন, এসব কথা তিনি বোঝেন, মানেন, জানেন। ঠিক এই কারণেই তিনি শীর্ষেন্দু। কারণ তিনি জানেন, তিনি পারেন।
আবার কিছু চরিত্র বড় বিরক্তও করেছে। যেমন - ননীবালা, অজিত, বীণা, শীলা, কুমারস্বামী, প্রমুখরা। তবে এই অনুভূতিটিও লেখকদ্বারা নিপুণ আঙ্গিকে পরিচালিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এরাও সমাজে থাকে এইটুকু লেখক জানিয়ে গেছেন স্পষ্টভাবে। সেই সঙ্গে দেখিয়েছেন অনেক ক্ষেত্রেই এরা ধূসর, পুরো সাদা কিংবা কালো হিসাবে এদের চিহ্নিত করা যায় না (এক কুমারস্বামী বাদে!)।
সব মিলেমিশে ভাবনার বড় খোরাক যুগিয়েছে "যাও পাখি"। আমার মতো ভাবতে পছন্দ করা মানুষের কাছে সেটাই অনেক। সেই সঙ্গে আমার ভাবনার জগতে আরও একটা খুঁটি গেঁড়ে লেখক জানিয়ে গেলেন- হয়তো এটাই আদর্শ সাহিত্যিকের রূপ; তিনি নিজের ইচ্ছে মতো একাত্ম করতে পারেন, ভাবাতে পারেন, জানাতে পারেন।
জীবনের অগণিত জিজ্ঞাসার সন্ধান করতে করতে ক্লান্তি লাগলে এই বইটি তুলে নেওয়া যেতে পারে আবার কোনওদিন। এতে অনেককিছুর জবাব আছে মানুষ আর সম্পর্কের আদলে। সেসব এক ঝলক দেখে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যায় বাস্তবটা, খুঁজে খুঁজে মরার প্রয়োজন পড়ে না আর।
গল্পটা জেনারেশন গ্যাপের।আমাদের বাবা-মারা যে জেনারেশনে বিলং করেন তার সাথে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের একটা গ্যাপ তৈরি হয়ে যায়।ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় যোগাযোগহীনতা।আমাদের মনের অবস্থাটাও বাবা-মা বুঝে না আর আমরাও আমাদের বাবা-মার অবস্থাটা বুঝতে চাই না।
গল্পটা একটা মধ্যবিত্ত পরিবারকে নিয়ে।যার কর্তা ব্রজগোপাল একজন 'সংসারে থেকেও বিবাগী' টাইপ মানুষ।তিনি তত্ত্বে বিশ্বাসী,বিশ্বাসী ধর্মে আর পছন্দ করেন মাটির সাথে থাকতে।বর্তমানে যেরকম সবার আগে আসে নিজের স্বার্থের কথা,তিনি ঠিক তার উল্টো।মানুষের উপকার করতে গিয়ে তার সাথে সংসারের তৈরি হয়েছে এক অমোঘ দূরত্ব।তিনি কলকাতা ছেড়ে এক অজপাড়াগাঁয়ে থাকেন।
বিপরীতে আছে তার স্ত্রী ননীবালা,তাদের দুই ছেলে রণেন আর সোমেন,আছে রণেনের স্ত্রী বীণা।যারা এই নিউ জেনারেশনের মানুষ।কলকাতার শহুরে ইট-পাথরের জঞ্জালই যাদের আপন।
এইযে জেনারেশন গ্যাপের দ্বন্দ্ব,তাতে জয়ী হবে কে?আমি ব্যক্তিগতভাবে চিরকালই মাটির কাছাকাছি থাকতে চাই।সহজ সরল জীবনযাত্রা আমার পছন্দের।'যাও পাখি' সেজন্যেই আমার মনের কথা বলে।
বইটি পড়ুন।সময় নিয়ে পড়ুন।ভালো লাগবে নিশ্চিত।
Momin Ahmed ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ অসাধারণ এই বইটি রেকমেন্ড করার জন্যে।ভালোবাসা নিয়েন ভাই!❤️
বইটা পড়তে নিয়ে মধ্যেখানে কিছুটা বিরক্তি ধরেছিল। ভেবেছিলাম ওনার অন্য বইগুলোর চেয়ে কম ভালো লাগবে এটা।বিষাদময় কিছুরই আশা রেখে পড়তে থাকি।ভাবতেই পারিনি শেষটা এত সুন্দর!!!🥺🖤
শীর্ষেন্দুর বড় উপন্যাসগুলো আমার খুব বেশি ভালো লাগে না। এর আগে দূরবীন, পার্থিব পড়েছিলাম। এটা পড়ে খুব বেশি ভালো না লাগলে আর তাঁর বড়-সড় উপন্যাসগুলো পড়বো না বলে ঠিক করেছিলাম।
এবং এটার ও একই অবস্থা। যাপিত জীবনের সাধারণ গল্পগুলো আমাকে খুব বেশি টানে না। চারপাশে যা ঘটে তা পড়ে তার সাহিত্যিক সমালোচনা করতে আমার মন সায় দেয় না ঠিক।
গুডরিডস এর এক একটা স্টারের এক একটা অর্থ আছে। এই যেমন দুই মানে হচ্ছে, 'হু, এটা ঠিক আছে'। আর তিন মানে হচ্ছে, 'পছন্দ হয়েছে'। বইটা কি আমার ঠিক পছন্দ হয়েছে? না বোধহয়! কিন্তু দুই দিলে অবিচার করা হয় যে। (আমি এভাবে বিচার করে কখনো রেইট করি না, কিন্তু এটা কিছুদিন আগে আবিষ্কার করার করণে একটু আমজনতাকে জানাতে ইচ্ছে হল :P )
৩০ অগাস্ট লেখক বাতিঘরে এসেছিলেন। কি চমৎকার সব কথা বলে গেলেন। একটা কথা বললেন, উনি সব গল্পের একটা হ্যাপি এন্ডিং দেয়ার চেষ্টা করেন। (ঠাকুরের নিষেধ আছে বলেই দুঃখের সমাপ্তি দেন না)। এই বইটা পড়ার শুরুর দিকে আমার মনে হচ্ছিল, খুব খারাপভাবেই বুঝি এর সমাপ্তি হবে। কিন্তু না, বেশ ভালোভাবেই শেষ হল।
গতকাল এইভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ল প্রজাপতিটা। ও কি পড়ার চেষ্টা করছে? :P
এই সেই অটোগ্রাফ!
* (তন্ময় হয়ে) ছানাপোনা, শব্দটা কি সুন্দর! আর বীণা, রণেন এর ছানাপোনাগুলোর নামগুলো যে কি কিউট! টুবাই, বুবাই, বেলকুঁড়ি
উপন্যাসটা শেষ করে অনেক্ষণ নির্বাক হয়েছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।পুরোপুরি ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।আমার পড়া এই লেখকের প্রথম উপন্যাস এটাই।
এটি আমার পড়া অদ্ভুত,অসাধারণ সুন্দর একটা উপন্যাস।সত্যিই অদ্ভুত। এরকম উপন্যাস আমি খুব কমই পড়েছি।খুব কম বলতে গেলে কি,আগে এরকম পড়েছি কিনা মনে নেই।হয়তোবা লেখকের লেখার ধরনটাই এরকম।
গল্পের গতিময়তা ছিল খুবই আকর্ষণীয়। একই সাথে শহুরে এবং গ্রামীণ জীবনের বর্ণনা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। সবচেয়ে দ্বিধায় ছিলাম একটা বিষয় নিয়ে। প্রথমে মনে হতো লেখক প্রতিটা চরিত্রকে আলাদা আলাদাভাবে প্রধান চরিত্র হিসেবে তৈরী করেছেন। সোমেন যে উপন্যাসের নায়ক সেটাতে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সোমেনের জোড়া কে হবে সেটা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় ছিলাম।(এইসব ক্ষেত্রে আমার চিন্তা একটু বেশীই বলা যায়)। নিজেকে সোমেনের জায়গায় দাঁড় করিয়ে উপন্যাসটি পড়েছি।সেই হিসেবে প্রথমথেকেই রিখিয়াকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম।অণিমার প্রতিও আমার কম আকর্ষণ ছিল না।এটা নিয়েও আমি বেশ দ্বিধায় ভুগছিলাম। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয়, সোমেনের বাবা ব্রজগোপালই হলেন উপন্যাসের প্রধান মূল চরিত্র। ম্যাক্স নামক একজন সাহেবের চরিত্রটাও আমাকে নাড়া দিয়েছে খুব। অজিত আর লক্ষণের বন্ধুত্বের মধ্যেও আমি আমাকে খুঁজে পেয়েছি। লেখক প্রথমদিকে সোমেনের প্রতি একটু অবহেলা,নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছিলেন।কিন্তু গল��পের শেষে বলা যায়, সোমেনই সবচেয়ে সফল একজন মানুষ।
আমার জ্ঞান এবং বোঝার ক্ষমতা খুবই কম। উপন্যাসটা পড়ে যতটুকু বুঝেছি, জীবনে সুখী হতে বেশীকিছুর দরকার নেই।খালি নিজের জায়গা থেকে ভাবতে হবে আমি সুখী,আমি আনন্দে আছি।জীবনটা সত্যিই সুন্দর,সহজ।
বিশাল এই কাহিনীর পরতে পরতে রয়েছে অনেক চরিত্র। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল এটি একটি গ্রাম্য পরিবেশের গল্প। ব্রজগোপালের চারপাশের মানুষজনের গল্প পড়তে পড়তে যখন কিছুটা খুন-জখমের কথা এসে পড়ে, তখন হঠাত আমি উৎসাহ হারিয়েছিলাম।
অনেকদিন পর আমি আবার বইটি হাতে নিই। দ্বিতীয় ভাগে মনে হল এটা একটা পারিবারিক গল্প। সেখানে সোমান, রণেন, ননীবালা, শীলাদের নিয়ে পারি��ারিক আমেজে মন্দ লাগে না। তৃতীয় পর্যায়ে মনে হল এ এক সুন্দর প্রেমের উপন্যাস।
ক্রমেই প্রত্যেকটি অংশে একে একে সব সমস্যা, ঝগড়া ঝামেলা মিটতে থাকে, একটি মধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গল্প হয়ে ওঠে গতিময়, খানিকটা রহস্যময়। তখনি একেবারে এক নাগাড়ে পড়ে ফেলার মত অবস্থা হয়।
খুব পরিচ্ছন্নভাবে প্রত্যেকটি চরিত্রের দৈনন্দিন জীবনের মাধ্যমেই গল্প এগিয়ে যায়- শীর্ষেন্দুবাবুর বৃহদাকার উপন্যাসে বরাবর এটা দেখেছি। 'পার্থিব', 'দূরবীন', 'মানবজমিন'-এর পর 'যাও পাখি' পড়ে মনে হল যে এই উপন্যাসটি অনেকাংশে অন্য তিনটির থেকে কিছু সহজসরল। আগের তিনটি উপন্যাসের চরিত্রগুলি ছিল আরও বেশি রহস্যময়, মাথা খাটিয়ে ভাবতে হত বারবার- তুলনায় এই ব্যাপারটা 'যাও পাখি'-তে একটু কম।
মনে রাখার মত একটি উপন্যাস। যারা শীর্ষেন্দুবাবুর উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন আর যারা বড় আকারের বই খোঁজেন, তাঁদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
শীর্ষেন্দুর বইয়ের পাতায় অসম্ভব রকমের বাস্তবতার মাঝে গল্পের ছোঁয়াটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের ব্যাপার। এছাড়া দর্শন,সত্যতা, ভালোবাসা, হতাশার অস্তিত্বকে বাকি বই জুড়ে কম ছিলনা।তাও বলবো, এর শুরুটা যতটা এমন ছিল, শেষের দিকে অনেকটা গল্পের কাহিনীর মত খানিকটা সহজলভ্য ভালো ভালো ব্যাপার বেড়ে গেল, হ্যাপি এন্ডিং আর কি। তাও শীর্ষেন্দুর লেখা তো,টানা পরে যেতে এক ঘেঁয়ে লাগেনা কখনো।
বলতে গেলে প্রতিটি লাইন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলাম। গীতবিতানের সেই লাইনটি বারবার মনে এলো, " স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ / কত সান্ত্বন করো বর্ষণ সন্তাপহরণে / আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর " এই বইটা শেষ করার পর আর ভেঙেচুরে দেখার ইচ্ছে হলো না। আশেপাশের দেখা জীবনের সাথে অনেকটা কানেক্ট করতে পেরেছি, উপন্যাসের ভাষাটা যেন কোন উপদ্রব ছাড়াই ভেতরে ইনহ্যারিটেড হয়ে গেল, তুমুল আনন্দময় সময় কাটলো - এর থেকে বেশি কি চাইবার আছে প্রিয় লেখকের কোন বই থেকে? মায়া, মায়া, পৃথিবী মায়াময়। শীর্ষেন্দুর অন্য কোন বই আবার কিছুদিন বাদে পড়তে হবে। ততদিন 'যাও পাখি'র ঘোরটা থাকুক। সিরিয়ালি পড়তে ইচ্ছে হলেও পড়বো না। খুব ডেসপারেট লাগলে তখন কোন একটা নিয়ে বসবো। শীর্ষেন্দুর ঢাউস উপন্যাস এখনো পড়া বাকি আছে কয়েকটা। ছোট ছোট বাক্য, বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন, একদম মাইনর ক্যারেক্টারও কি রকম থামের মতো দাঁড়িয়ে থাকে উপন্যাসে! শীর্ষেন্দুর তুলনা নেই।
চমৎকারভাবে শেষ হলো নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ। যদিও দীর্ঘ উপন্যাসেটির প্রতিটি পাতা জুড়ে ছিলো পরাজয়ে আখ্যান। বুকের উপর এক প্রকার পাথরচাপা দিয়ে'ই পড়া চালিয়ে যেতে হয়েছে । মনের অজান্তে কতবার যে দীর্ঘশ্বাস ফেলছি তার কোনো ইয়েত্তা নেই।
শীর্ষেন্দুর লেখা আমি তেমন পড়িনি, কয়েকটা অদ্ভুতূড়ের সিরিজের বই ছাড়া। তবে এই উপন্যাসের মাধ্যমেই উনাকে আমার প্রিয় লেখকের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করলাম। জলের মতন সরল অথচ ছুরির মতন ধারালো বর্ণনার সম্মোহনী জাদুতে বিভোর ছিলাম ঘন্টার পর ঘন্টা। কুমার যেমন কাঁদার দলা থেকে তৈরি করে তৈজসপত্র, লেখক ঠিক একই রকম দক্ষ হাতে একে, একে গড়েছেন প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ চরিত্রকে। গল্পের গাথুঁনি এতো সজীব আর প্রাণবন্ত যে, মনে হবে দু গাঁ এগুলেই বোধহয় দেখা মিলবে বহেরু গ্রাম। আপনার বাড়ি থেকে কয়েক গলি পেরিয়ে মোড়ের ধারের বাড়িটাই হয়তো সোমেনদের ভাড়া বাড়ি....
এ যেন এক জীবন-মৃত্যু, দেশ, রাজনীতি, দর্শন ও ভালোবাসার মহাকাব্য।
আরো অনেক কিছু যোগ করা যেতো, তবে আমার সাধ্য এ পর্যন্তই। রেকমেন্ডেড।
সময় যতই এগোচ্ছে মানুষের জীবন ততই যেন জটিল হয়ে উঠছে। নগরায়ন, নগর কেন্দ্রীক জীবনধারা, কৃত্রিম সুখ সবকিছুই যেন মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। এই নগরবাসীরা সবাই সুখের প্রত্যাশী। কিন্তু কিছতেই যেন সেই সুখপাখিটি ধরা দেয় না। উপন্যাসটিতে অনেকগুলো চরিত্রের মাধ্যামে সমাজের অনেক রকম মানুষের চিত্রায়ন করা হয়েছে। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাদের জীবন সংগ্রাম ও মতাদর্শ। এখানে পাওয়া যাবে আধুনিকমনা শহুরে কেন্দ্রীক রণেন,সোমেন,বীনা,শীলা,অজিত,লক্ষণ,অণিমা আরো অনেককেই। একই সাথে সাক্ষাৎ হবে চিরায়ত আদর্শমনা ব্রজেশ্বরকে যে কিনা অধুনা এই সংষ্কৃতি ও নিজ আদর্শকে একই ঘরে স্থান দিতে পারে নি। তাই সে সংসার ত্যাগ করে চলে যায় এবং উঠে বসে গ্রাম্য এক পরিবেশে যেখানে সে কিনা পায় এমনসব মানুষকে যাদেরকে এখনও কিনা সভ্যতার কাঠিন্য স্পর্শ করে নি। কিন্তু যতই সে দূরে চলে থাকুক সংসার থেকে সংসারের মায়া সে ছাড়তে পারে না। শহরের প্রতি তার অনীহা থাকলে সেখানকার মানুষের প্রতি ছিল তার করুনা। তাইতো ঠাকুরের কাছে তার প্রার্থনা সকলেই সুখে থাকুক। যাও পাখি। এই প্রার্থনাকে পৌঁছে দেও সেই দয়াময়ের কাছে।
গতি, শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত, ধীরস্থির হলেও শেষে বেশ বেগবান। কর্মব্যস্ত জীবন, সংসার ধর্ম পালন, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদি শত বাধা পেড়িয়েও একটি সুন্দর উপন্যাস ২~৩ মাস সময় নিয়ে শেষমেশ ভোর ৫টায় সমাপ্ত করতে ভালোই লাগে।
প্রধান চরিত্র আমি ব্রজগোপাল কেই দেবো। ব্রাহ্মণ। পিতা। পরোপকারে অত্যন্ত মনোযোগী, সংসারে অমনোযোগী। যে কারনে সন্তান, স্ত্রীর সাথে দূরত্ব তৈরী হয়। একসময় কলকাতার ব্যস্ত জীবন ছেড়ে, পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
ছোট ছেলে, সোমেন, কালক্রমে তাঁর মতোই হয়, স্ত্রীও তাঁর কাছে যেয়েই সুখপ্রাপ্ত হন ......
এক তারকা কাটলাম কারন,শীর্ষেন্দু বাবু অথবা তাঁর চরিত্রগুলো বেশ অর্থোডক্স। এরা ভাবে,মেয়েছেলে-মেয়েমানুষ কে হতে হবে নরম,কোমল,লজ্জাবতী।লিবার্টি পেলেই,বহির্মুখী হলেই মেয়েছেলে কেমন যেন বেটাছেলে হয়ে যায়। Nonetheless,লেখকের প্রাঞ্জল আর দুর্দান্ত লেখার ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। তা "যাও পাখি" এর বহেরু,গন্ধ বিশ্বাস,সোমেন,রণেন,বীনা,ননীবালা,রিখি এর মত জীবন্ত চরিত্র সৃষ্টি -ই হোক,বা যে কোনো দৃশ্য বর্ণনা বা কথোপকথন- তাঁর লেখনীতে তো রিখির আসাহি পেন্ট্যাক্স ক্যামেরাটা ও প্রাণ পায়। বইটি পড়ে কেমন বিষাদে,মরুভূমির শূণ্যতায় যেন হু হু করে উঠে মন,আবার একটু পরেই যেন এক পশলা বৃষ্টিতে সতেজ-সবুজ হয়ে যায়,এত-ই সুন্দর লেখা। শেষটাও যাকে বলে wholesome!
আচ্ছা একটি পরিবারে মা-বাবা, দাদা বৌদি, বোন জিজু, নাতি পুতি সবাই একত্রে থাকলে কেমন লাগে?? ভালো লাগে নিশ্চয়? বিষয়টা দেখতেও দারুণ তাই না। কিন্তু সোমেনদের পরিবারে বাবা তাদের সাথে থাকে না, তবে কি সোমেন এর বাবা তার পরিবারকে ভালোবাসে না?? কিন্তু বাবার ডায়েরিতে একদিন সোমেন আবিস্কার করেছিলো বাবার লেখা " ভগবান উহারা যেন সুখে থাকে "।
বলছি, আজ বলতে যাচ্ছি ওপার বাংলার আমার প্রিয় কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর "যাও পাখি" বইটির গল্প। তাহলে ধৈর্য ধরে বসুন সবে।।
ব্রজগোপাল লাহড়ী, কলকাতায় তার পরিবারকে ছেড়ে গ্রামে তার এক ভিতৃর কাছে থাকা শুরু করেছেন। কিন্তু কেন তার কি সংসার জীবন ভালো লাগেনা? সংসারের মায়া ত্যাগ করেনি তাইতো সে সুযোগ পেলেই ছেলে সন্তানদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। ব্রজগোপাল এর সহধর্মিনী ননীবালা থাকেন পুত্র সন্তানদের কাছে। বড় ছেলে রনেন এর আয়ে চলে তাদের সংসার, ছোট ছেলে বেকার, রনোর বৌ এর খোটা শুনতে হয় ননীবালাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে সব সহ্য হয়ে গেছে, তবে ননীবালা কেন থাকেনা স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি তবে বুড়ো বয়সে ভাঙ্গলো হয়তো বা নয়। বজ্রগোপাল আর ননীর বড় ছেলে রনো, বড় ছেলে হওয়ার দায় একটাই যে অল্পতেই নিতে হবে সংসার এর ভার। সংসার এর ভার মানে অর্থ আয়ে শেষ নয় আরো অনেক কিছু, রনো এই ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়ল তবে!? রনোর বউ বীনা, শাশুড়ি এর সাথে ঝগড়া আর সন্তান নিয়ে সংসার সামলানোই তার কাজ, কিন্তু সংসার এর সাথে তার যে একটা স্বামী আছে সে কতটুকু দেখেছে? সোমেন, এই গল্পে নায়ক চরিত্রে যদি আমরা সোমেন কে ধরি তবে কেমন হয়? ব্রজগোপাল এর দ্বিতীয় পুত্র সোমেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার, চাকরির জন্য ঘুরছে, কিন্তু চাকরী যে সোনার হরিন, মা পাঠালো পুরোনো বান্ধবির কাছে, কিন্তু সেখানে গিয়ে সোমেনের হলো আরেক দায়। সোমেন বিশ্বাস করে প্রেমের মূলেও আছে ভিটামিন, তাইতো তার মেয়ে ছেলে বন্ধুর অভাব নেই, কিন্তু তাতে কি সোমেন এর জন্য কে থাকবে দিন শেষ?? তার বন্ধু মহলের অপলা, পূর্বা, রাখিয়া, মধুমিতা কে কে থাকবে তবে?? শীলা ব্রজগোপাল এর মেয়ে। স্বামী অজিত এর সাথে দারুণ সংসার। স্বামী চাকুরীজীবী আর ছোট খাটো ম্যাজেশিয়ান অন্যদিকে শীলা স্কুল মাস্টার। খারাপ চলেনা তাদের সংসার। শেয়ারবাজার এর সূচক উঠানামার মতো তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক।
বহেরু, একসময়ে বজ্রগোপাল এর কর্মচারী থাকলেও আঙ্গুলফুলে কলা গাছ হয়ে গ্রামে এখন সর্বেসর্বা, তবে বজ্রগোপালকে যথেষ্ট সম্মান করে। বহেরুর এক আলাদা বিতিক, সে মানুষ সংগ্রহ করে, হরেক রকমের মানুষ এনে নিজের ডোরায় কাজ কর্মের ব্যাবস্থা করে দেয়। যেন সে খুলে বসেছেন মানুষের চিড়িয়াখানা।
প্রায় হাফ ডজন মুল চরিত্রের ভীরে আরো আছে হাফ ডজন অপ্রধান চরিত্র। গল্পটা শুরুই হয় বহেরুর নয়ানভিরাম গ্রাম এর মধ্য দিয়ে, যেখানে বজ্রগোপাল থাকেন। এই গল্পটা একটি পরিবার এর, পরিবার এর হাসি কান্না আনন্দ বেদনায় পাশে থাকা না থাকার গল্প। টুকরোটুকরো করা চরিত্র গুলোর মাধ্যমে দেখলাম যে প্রতিটা চরিত্রের ভিতর দিয়ে লেখক এগিয়ে নিয়েছেন গল্পকে। অর্থাৎ চরিত্র গল্পের গতিশীলতা দিয়েছেন। এটা শীর্ষেন্দুর স্টাইল। প্রতিটা চরিত্র তিনি এমন ভাবে তুলে এনেছেন যেন পাঠককে ভাবাবে যে এতো সুন্দর কিভাবে লিখা যায়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর প্রতিটা গল্পই এই রকম চরিত্র নির্ভর, সাধারন মানুষের জীবনের গল্প গুলো বলে আমার দৃষ্টিতে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রিয় থেকে প্রিয়তম লেখক। বুড়ো এই মানুষটির লেখা আমাকে কেন যেন এতো টানে? আমি তার লেখা নিছক কম পড়িনি। পার্থিব, মানবজমিন, চক্র,দূরবীন এর মতো বিশাল প্লট এ সামাজিক উপন্যাস কিংবা গুন্ডাদের গুন্ডা ইনেস্পেক্টর শবরদাশ গুপ্তের কোন রহস্যগল্প কোনটায় কম নয়। তারপর এবার যুক্ত হলো "যাও পাখি "। অন্যান্য বই এর মতো "যাও পাখি" কেও মাস্টারপিসই বলতে হয়। ৪২২ পেজের এই উপন্যাস টি আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিলো। অতপর বলতেই হয় জোস একটি বই।
অন্য দিকে খারাপ লাগার বিষয়টি হলো এন্ডিং ভালো লাগেনি। পুরো বই এতো আগ্রহ নিয়ে পরে যদি এন্ডিংটা ভালো না লাগে তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। কিন্তু তবুও বইটি ছিলো দারুণ। এতো সুন্দর করে লেখক গুছিয়ে এনেছেন, সত্যি কিভাবে লিখেন তিনি?
যাই হোক নানান কর্মব্যস্ততা লকডাউন ইত্যাদির মাঝে পড়া একদম স্লো হয়ে গিয়াছি, তাই বেশ কয়েকদিন লেগে গিয়াছে বইটি শেষ করতে। তাই দেরিতে হলেও শেষের তৃপ্তিটা নেয়াই ছিলো বড় লক্ষ্য।
আমার সংগ্রহের যাও পাখি বইটির প্রচ্ছদ ছেঁড়া এবং অধিকাংশ সময়ই হার্ডকপি রেখে পিডিএফ পড়ার কারনে এডিট করা আলোকচিত্রই আপলোড দিলাম। কেননা বই এর সামঞ্জস্য একটি আলোকচিত্র হয়ত পাঠক বাড়াতে সাহায্য করবে।
সর্বাপরী ভালো থাকবেন।।
ফিরে দেখা বইয়ের নাম : যাও পাখি লেখক : শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। জনরা : সামাজিক উপন্যাস। প্রকাশনী : আনন্দ পাবলিকেশন্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। প্রথম প্রকাশকাল : পৃষ্টা সংখ্যা : ৪২২ পেজ মূল্য : ৫০০ ভারতীয় রুপী।
Jao Pakhi (Fly away, Birdie) is one of the more tender stories with lesser shock value from its characters. It’s the story of a young man named Somen. He’s a rookie just out of college with his dreams still shaping up. His father, a man ruled by his ideals, lives in a village building his own hut and growing his own crops. His mother, however, didn’t leave the city as she raised her two sons and a daughter, married them off and still lives with her family. It’s a mystical story of love and human relationships, bonding that is strengthened by ties of blood and genes, and the therapeutic values of living amidst nature. The tussle between urban and rural lives is portrayed beautifully and rural wins in this case. The book was written years ago when global warming wasn’t such a menace and yet Shirshendu Mukhopadhyay has always been vocal in favour of conserving nature and living amidst the greens. His writing is easy and a little surreal in this book that is bound to transport you into a mystic land.
দুশ্চিন্তা থেকে ছুটি নিতে আমি শীর্ষেন্দুর বই নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। প্রচণ্ড তৃষ্ণা পেলে মানুষ যেমন এক চুমুকে গ্লাসের শেষ বিন্দুটা শেষ করে ঠিক তেমনি যাও পাখি আমার তৃষ্ণা মেটালো।
লম্বা সময় ধরে পরিবারের সাথে ইট পাথরের শহর কলকাতায় বাস করেও ভর ভরান্ত সংসার জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিবার ছেড়ে মাটির টানে বহেরুর গাঁয়ে বাস করতে শুরু করেন ব্রাহ্মণ কর্তা ব্রজগোপাল।
প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলিয়ে বহেরু, গন্ধ বিশ্বাসদের সাথে বাস করতে শুরু করেন তিনি।এতে করে তৈরি হয় দূরত্ব পরিবার সন্���ান ও স্ত্রীর সাথে। সেকেলে বাবার মন পড়ে থাকে মাটির ঘ্রাণে, গাছের পাতায়,লোকের উপকারে দিন যায় - আসে।
শহরের সংকীর্ণ জীবনে স্বার্থপরের মতো শুধুমাত্র নিজের টা আগলে বেচেঁ থাকার মধ্যে কোনো স্বার্থকতা খুঁজে পান না ব্রজগোপাল। লোককে দুহাত ভরে দেওয়া থওয়া , প্রকৃতির মাঝে নিজেকে নিমজ্জিত করে সবকিছু সকলকে দিলেও যে কখনো ফুরিয়ে যায় না বরং উপচে পড়ে তার প্রমাণ করে দেন তিনি।
সবটাই যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ থেকে উত্তরণের পথ বলে দিলেন ব্রজগোপাল।অন্যদিকে ব্রজগোপালের স্ত্রী ননীবালা, দুই ছেলে রণেন সোমেন আর দুই মেয়ে শীলা ইলা শুদ্ধু গোটা পরিবারটি যেন সময়ের স্রোতে শুধু শান্তি আর পরম নির্ভরতার খোঁজে তৎপর।
শীর্ষেন্দুর লেখার বিশেষত্ব কাহিনীতে প্রত্যেকটি চরিত্র সুনিপুণ হাতে গড়ে তোলেন তিনি। একজন ছাপোষা ব্যক্তির ঘটনাবহুল জীবনকে মনস্তাত্বিক দিকসহ অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলার অসীম ক্ষমতা নিয়েই তিনি উপন্যাস উপহার দিয়ে গেছেন জীবনভর।
প্রত্যেকটি চরিত্রের আলাদা মনমানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করবে যে সবার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হওয়া খুব স্বাভাবিক।অনেক গভীর অর্থবহুল বার্তা পুরো বই জুড়ে যে কাউকে মোহাচ্ছন্ন করবে।রক্তের সম্পর্কের দুটি প্রজন্মের মধ্যকার চড়াই উৎরাই, দূরত্ব আর মনের টান স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে উপন্যাসে।
যাও পাখি গল্পের মূল বক্তব্য কে একনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একজন সৎ পরিশুদ্ধ বাবা তার পরিবার ও সন্তানদের দূর থেকে আগাগোড়া মঙ্গল কামনা করে গেছেন,সম্পর্কের সীমারেখা ও বাস্তবতার ইতিবৃত্ত মিলিয়ে বস্তুত সুখ নামক পাখির সংজ্ঞা কি তা ই বুঝিয়ে গেছেন লেখক।
রেখার দুই প্রান্ত গ্রাম ও কলকাতা কে একযোগে মিলিয়ে মানবজীবনের ইতিবৃত্ত নিয়ে সামাজিক উপন্যাস যাও পাখির বিশেষ করে সমাপ্তিটা এক কথায় কতটা পরিপূর্ণ তা লিখে বোঝানো কঠিন।
✨📖 উপন্যাসের নাম - যাও পাখি 📖✨ ✍️লেখক - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় 🖨প্রকাশক - আনন্দ পাবলিশার্স 📖পৃষ্ঠা সংখ্যা - 436
💫📚খুনে ডাকাত বহেরু একখানা গাঁ তৈরি করেছিল । নিজেই তার নাম রেখেছিল বহেরু গাঁ । সেখানে মানুষের চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে সে । যত কিস্তৃত মানুষ ধরে এনে আশ্রয় দিত সেই বহেরু গাঁয়ে । সংসারে বনিবনার অভাবে একদা এই গাঁয়ে চলে এলেন ব্রজগোপাল । এ - সংসারে কিছু চাওয়ার নেই তাঁর । ডায়েরির সাদা পাতায় তবু তিনি লিখে রেখেছিলেন — ভগবান , উহারা যেন সুখে থাকে । নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধ ও দিশাহীনতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ব্রজগোপাল কি এক অসংশয়িত উত্তরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন ? সংসার - উদাসী বাবার খোঁজে বহেরুতে এসেছিল সোমেন । বাবার রোজনামচায় লেখা ওই পঙ্ক্তি - রহস্য বুকে নিয়ে সে কলকাতায় ফিরে গেল । বহেরু গাঁ থেকে ফিরে তাকে যেতে হলই , কেননা প্রত্যেক মানুষেরই একটা ফেরার জায়গা চাই । যদিও সেই কলকাতায় , যেখানে অন্যরকম জীবন , হাজার রকম মানুষ । সোমেনকে ঘিরে এক সৃষ্টিছাড়া সমাজ । তারপর ? রিখিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছেছে ? গ্রাম ও কলকাতা — এই দুই বৃত্তের টানাপোড়েন এবং সংলগ্নতায় সৃষ্ট এই কাহিনী নিষ্ঠুর সময়ের অভিঘাতে পীড়িত ব্যক্তিসত্তার সম্পূর্ণ অ্যালবাম । এর বর্ণাঢ্য বিস্তারে , ঘাত - প্রতিঘাতে , বিরহ - মিলনে অসংখ্য ছবির মধ্যে জগৎ ও জীবন উৎকীর্ণ হয়ে আছে । এক মহৎ উপন্যাসের নাম ‘ যাও পাখি ' ।📚💫
প্রথম দিকে ভালোই লাগছিল বইটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই আকর্ষণটা ধরে রাখতে পারেন নি লেখক। অন্য আর দশটা রোমান্টিক উপন্যাসের মত হয়ে গিয়েছে। আমার পড়া শীর্ষেন্দুর প্রথম বই ছিল 'মানবজমিন'। সেই বইটা পড়ে লেখকের যে প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা দেখেছিলাম,আর কোনও বইয়ে সেটা পেলাম না। এই বইটাতেও লেখক অনেক জায়গাতেই রক্ষণশীল চিন্তাভাবনাকে সমর্থন দিয়েছেন,যেটা ভালো লাগে নি। ব্রজগোপালকে খুব ভালো মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন,কিন্তু অনেক বিষয়েই উনার চিন্তাভাবনা আমার ঠিক পছন্দ হল না। অন্যদের মতের প্রতি ঠিক শ্রদ্ধাশীল নন উনি, কেমন একটা অহংকারী লোক। কিন্তু লেখক মোটামুটি তাকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন। গল্পটা অসম্পূর্ণ মনে হল। অনেক চরিত্রেরই রহস্যগুলো পরিষ্কার হল না। সোমেন চরিত্রটা ভালো,তবে অনেক অসংগতিপূর্ণ। একেক জায়গাতে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন সোমেন নারীসঙ্গ পছন্দ করে না, একা থাকতে পছন্দ করে,কিন্তু অনেক জায়গাতেই তার স্বভাবে উল্টোটাই মনে হয়েছে। ব্রজগোপালের প্রতিচ্ছবি বলা হলেও,তার সাথে সোমেনের চিন্তাভাবনায় আকাশ পাতাল তফাৎ। সব মিলিয়ে খুব একটা ভাল লাগল না। চার তারাই দিতাম হয়ত,কিন্তু এন্ডিং এর জন্য তিন দিলাম।
Sometimes I wonder what or how much street experience one needs to write so fluently about humans like Shirshendu and some other writers do. He is truly magnificent, although I am giving this a 4 star, I truly think I neither have the audacity nor the knowledge to rate his books. I read Shirshendu only to enjoy the essence of his reading. However, this book could use some editing to cut short some materials that don't progress the story. Multiple POVs are used throughout the book, but obviously, the main protagonist is Somen whom I don't like. He is an average dormant Bengali male with no interesting traits. He is used to female company however he falls in love with the first woman he sees every day. I couldn't help laughing when he fell hard for Rikhia, went to Rikhia's home, saw a friend of Rikhia's, and suddenly fell for her too. Nonetheless Shirshendu's writing style kept me reading. The characters are melancholic. If the book were written today and were 50 more pages long, many characters would have needed to consult a psychologist.
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এসে 'যাও পাখি' পড়লাম যেখানে আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথমার্ধে আমার প্রথম সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা। অকৃতকার্য হব নিশ্চিত কিন্তু তারপরও সেই পরীক্ষার পড়া না পড়েও পড়ছি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
শীর্ষেন্দুর লেখা আমায় পুল করে খুবই জোড়ালো ভাবে। আমি পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে বিগত বছরগুলোতে যাতায়াত করেছি এবং লেখক যে অনুকূল চন্দ্রের ভক্ত ছিলেন জানতে পেরেছি।
যাইহোক, পেডিয়াট্রিকসের ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে পড়েছি তাই হয়তো ট্রু এসেন্স ধরতে পারিনি। তবে পার্থিব বা মানবজমিন যেমন লেগেছিল তার থেকে এটাকে একটু ইনফিরিয়র মনে হল। এটা আমার নিজস্ব মতামত। আমি সোমেন রণেন নয় বরং তাদের বাবা ব্রজগোপালের চরিত্রে অভিভূত হয়েছি এবং অন্যদিকে তার স্ত্রী ননীবালার উপর যারপরনাই বিরক্ত হয়েছি যদিও এটাই চিরাচরিত প্রথা। বহেরু আর ব্রজগোপালের কম্বিনেশন এক অপূর্ব কম্পানি তৈরি করেছে। আহ্! বাস্তবে যদি এরূপ হত!
এই বইটির বিষয়ে বলতে গেলে প্রথমেই যেটা হৃদয়ে আসে তা হলো একপ্রকার সন্তুষ্টির আনন্দানুভূতি।।বইটির অন্তিম লাইন যখন শেষ করছি তার ঠিক পরেই অদ্ভুত শান্তি খুঁজে পেয়েছি।।
"শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়" সাহিত্য জগতের অন্যতম এক নক্ষত্র,যাঁকে সাহিত্যের রাজপুত্রও বলা হয়ে থাকে।। "যা ও পা খি"তাঁর লেখা এই প্রথম কোনো উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।।বইটি আমি সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়ে পড়েছি।। জীবন নিয়ে তাঁর ভাবনা,নিখাদ বিশ্লেষণের দক্ষতা আমাকে যারপরনাই বিস্মিত করেছে।।জীবনের অনেক নিগুঢ় রহস্য তিনি খুব সাবলীল ভাবে পাঠকের কাছে অঞ্জলির পাত্রে সাজিয়ে দিয়েছেন।।
উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই নিজের নিজের গাম্ভীর্য আর বিশেষত্ব নিয়ে প্রদীপ্যমান,মনে হয় যেন এইতো খুব চেনা কেউ।। ব্রজগোপাল এর প্রতিটি উক্তিই যেন জীবনের এক একটা পদক্ষেপের সারাংশ,যার দ্বারা বুঝতে শিখেছি জীবনটাকে কিভাবে ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারাও ব্যাখ্যা করা যায়।। পরিশেষে বলতে পারি,নতুন কিছু জানতে পেরে আজ খুব খুব আনন্দিত।।
সবকটি চরিত্রই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের দাবীদার! উপন্যাসের দুই তৃতী়াংশ পড়েও বোঝা মুশকিল কেন্দ্রীয় চরিত্রটি আসলে কোনটি, কারন প্রত্যেকটা পুরুষ চরিত্রই আসলে একই সুতোয় গাঁথা। সে ব্রজগোপাল হোক, কিনবা তার দুই ছেলে রনেন আর সোমেন, কিনবা তার জামাই অজিত, এমনকি অজিতের বন্ধু লক্ষণও। সবারই চিন্তাভাবনা, পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, শেষ জীবনের পরিণতি একট সরলরেখা বরাবর। অন্যদিকে মূল নারিচরিত্রগুলির মধ্যেও অদ্ভুত রকমের মিল। ননীবালা, তার মেয়ে শীলা, তার দুই বৌমা বীণা ও রিখিয়া, এই চরিত্রগুলোও আরেকটা সরলরেখা বরাবর চলছে। গল্পের শেষে সোমেন কিভাবে এই দুই সরলরেখাকে এক বিন্দুতে এনে মেলাল, কিভাবে সে হয়ে উঠল এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, সেটাই এই উপন্যাসের মূল আকর্ষণ!
ক্লাসিক শীর্ষেন্দু। হাসি, কান্না, বিস্ময়, হতাশা- কী নেই এতে? বিশেষ করে চরিত্রগুলোকে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলেন শীর্ষেন্দু, এমনটা আর কোথাও পাইনি। সংলাপ-ঘটনার মধ্য দিয়ে, দক্ষ শিল্পীর একেকটা তুলির আঁচড়ের মত ফুটিয়ে তুলেন তার চরিত্রদের। চরিত্রগুলো কত আপন হয়ে যায়! বই শেষে "কেন শেষ হলো?" ধরনের হাহাকার কাজ করে বুকের ভেতর, যদিও শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কিন্তু ঠিকই চাচ্ছিলাম এসবকিছুর একটা সুরাহা হোক।
খারাপ দিক বলতে তেমন কিছু নেই। প্রথম দিকে কিছু জায়গায় অশ্লীলতা ছিল--একটু বিরক্ত লাগছিল-- এটুকুই।
বিরহের মাঝে মাঝে স্বল্প-তীব্র কিছু রোম্যান্সও আছে। সুন্দর!
সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটছে অামাদের জীবনযাত্রার, বয়সের সাথে সাথেও পরিবর্তন ঘটে অামাদের চিন্তা ভাবনা, ভালো লাগার। যাও পাখি, তুমি উড়ে যাও সুদূর সে গহিনে, মনের চোরাবালিতে অাটকে থেকো না, সমাজ, সংসার, ভালোবাসা সব নিয়ে উড়ে চল মহা অানন্দে।
জানালায় গল্পেরা কথা মেঘ যাও মেঘ চোখে রেখো এ অাবেগ যাও পাখি বলো হাওয়া ছলো ছলো অাবছায়া জানালার কাঁচ
শহর জীবনে ট্র্যাজেডি, গ্রামের সুন্দর সরল জীবনে শান্তি এরকম একটি চিন্তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুন্দরভাবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে দুর্নীতি, লোভ ইত্যাদির বাজে প্রভাব দেখানো হয়েছে। শেষটাও বেশ সুন্দর।
"তুমি ঠিক ঠিক জেনো যে তুমি তোমার, তোমার নিজ পরিবারের, দশের এবং দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দায়ী।"