কাজী আনোয়ার হোসেন সম্পাদিত রহস্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। গল্পের কাঠামো এ. জে. কুইন্যালের ম্যান অন ফায়ার থেকে নেয়া। কাঠামোগত সামান্য মিল ছাড়া ম্যান অন ফায়ারের সাথে এ বইয়ের কোন সম্পর্ক নেই। - হুমায়ূন আহমেদ
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi author, dramatist, screenwriter, playwright and filmmaker. He was the most famous and popular author, dramatist and filmmaker ever to grace the cultural world of Bangladesh since its independence in 1971. Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. Humayun started his journey to reach fame with the publication of his novel Nondito Noroke (In Blissful Hell) in 1972, which remains one of his most famous works. He wrote over 250 fiction and non-fiction books, all of which were bestsellers in Bangladesh, most of them were number one bestsellers of their respective years by a wide margin. In recognition to the works of Humayun, Times of India wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." Ahmed's writing style was characterized as "Magic Realism." Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century and according to him, Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every years of the 1990s and 2000s.
Early life: Humayun Ahmed was born in Mohongonj, Netrokona, but his village home is Kutubpur, Mymensingh, Bangladesh (then East Pakistan). His father, Faizur Rahman Ahmed, a police officer and writer, was killed by Pakistani military during the liberation war of Bangladesh in 1971, and his mother is Ayesha Foyez. Humayun's younger brother, Muhammed Zafar Iqbal, a university professor, is also a very popular author of mostly science fiction genre and Children's Literature. Another brother, Ahsan Habib, the editor of Unmad, a cartoon magazine, and one of the most famous Cartoonist in the country.
Education and Early Career: Ahmed went to schools in Sylhet, Comilla, Chittagong, Dinajpur and Bogra as his father lived in different places upon official assignment. Ahmed passed SSC exam from Bogra Zilla School in 1965. He stood second in the merit list in Rajshahi Education Board. He passed HSC exam from Dhaka College in 1967. He studied Chemistry in Dhaka University and earned BSc (Honors) and MSc with First Class distinction.
Upon graduation Ahmed joined Bangladesh Agricultural University as a lecturer. After six months he joined Dhaka University as a faculty of the Department of Chemistry. Later he attended North Dakota State University for his PhD studies. He grew his interest in Polymer Chemistry and earned his PhD in that subject. He returned to Bangladesh and resumed his teaching career in Dhaka University. In mid 1990s he left the faculty job to devote all his time to writing, playwright and film production.
Marriages and Personal Life: In 1973, Humayun Ahmed married Gultekin. They had three daughters — Nova, Sheela, Bipasha and one son — Nuhash. In 2003 Humayun divorced Gultekin and married Meher Afroj Shaon in 2005. From the second marriage he had two sons — Nishad and Ninit.
Death: In 2011 Ahmed had been diagnosed with colorectal cancer. He died on 19 July 2012 at 11.20 PM BST at Bellevue Hospital in New York City. He was buried in Nuhash Palli, his farm house.
পৃথিবীতে অমানুষের থেকে মানুষের সংখ্যাই বেশি। তার কারণ সরলতা; আরও একটি কারণ কপটতা: মানুষের মুখোশের আড়ালে থাকা অমানুষ। তবে সমস্যা হচ্ছে এই মুখোশ ঠিকরে অমানুষ বেড়িয়েই পড়ে। অমানুষ হওয়ার প্রক্রিয়াটা দ্রুত গতির নয়। মানুষ ধীরে ধীরে অ-মানুষ হয়, শেষে হয় অমানুষ। অমানুষের সংখ্যাটা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। বড্ড চিন্তার বিষয়! Because there lies an inhuman in every human....
অমানুষ আর অগ্নিপুরুষ দুইটা বই-ই একাধিকবার পড়া। ২টা বই-ই পাল্লা দেয় প্রিয় তালিকায় উপরে উঠে আসার জন্য। দুইটা বই-ই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তবে অমানুষের জামশেদ চরিত্রটা একটু বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। জামশেদকে একটু বেশি সাধারণ মানুষ, একটু বেশি রিয়েলিস্টিক মনে হয় বলেই হয়তো।
কুইন্যালের বইটা পড়িনি, তবে ড্যানজেল ওয়াশিংটন অভিনীত Man on fire মুভিটা দেখেছিলাম। "অমানুষ" এর প্লট ঔ মুভিটা থেকে কিছুটা ভিন্ন। গল্পটা আরও গভীর, অনেক বেশি শ্বাসরুদ্ধকর, এবং কিছুটা ট্র্যাজিকও। ভীষণ উপভোগ করেছি, বলতে গেলে "on the edge of my seat" টার্মটা ব্যবহার করা যায়। শেষ না করে ওঠার উপায় ছিল না।
জানতে পারলাম হুমায়ূন আহমেদ রহস্য পত্রিকায় এই উপন্যাসটা ধারাবাহিক লিখেছিলেন। বইটা প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন। এমন বইয়ের সেবা প্রকাশনী টাইপ প্রচ্ছদ হলে জমজমাট হতো, সাথে সেই বিখ্যাত পেপারব্যাক কাভার।
বই শেষ করার পর একটা কবিতার কথা মনে পড়লো, আবু ইব্রাহিমের মৃত্যু বইটা শুরু হয়েছিল এই কবিতা দিয়ে:
মানুষের মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু তার তাৎপর্য হবে থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী বা বেলে হাঁসের পালকের চেয়েও হাল্কা।
আমরা সকলে মারা যাই, কিন্তু মৃত্যুর জন্য যথেষ্ঠ তাৎপর্য রেখে আমরা কজন মরতে পারি? মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে কজনই বা মানুষ হয়ে মরতে পারি? এ নিষ্ঠুর পৃথিবী প্রতিটা মানব সন্তানকে জন্মের পর থেকেই অমানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুওতো কিছু মানুষ মানুষ হয়ে থেকে যায়। এ পৃথিবীর শত চেষ্টার পরও তারা অমানুষ হতে পারে না।
বইয়ের ভালো লাগা লাইন: যে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না তার পৃথিবীতে বাস করা কষ্টকর। পৃথিবীতে বাস করতে হলে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়।
পৃথিবীটা খুব ভালো জায়গা নয়। অনেক রকমের দুঃখ-কষ্ট আছে পৃথিবীতে। এখানে ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে কেঁদে বুক ভাসালে হয় না। তুমি যখন বড় হবে তখন জানবে অনেক কুৎসিত ও কদর্য ব্যাপার হয় এখানে
পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। খুব অল্প কিছু মানুষ উঠে দাঁড়াতে পারে।'
মৌলিক লেখার ঝামেলা যতদূর জানি যে, একবার মৌলিকে কলম অভ্যস্ত হয়ে গেলে সেই কলমে আর অনুবাদ গল্প ঠিকঠাক উঠে আসতে চায় না। সম্ভবত এ কারণেই হুমায়ূন আহমেদ অনুবাদ চালিয়ে যেতে পারেন নি। তাকে নিজের মতো করে গল্প বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন করতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গল্পটা এখন এমন দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে যে, যদি হুমায়ূন আহমেদের সেরা কিছু বইয়ের তালিকা কখনো তৈরি করা হয়- তবে সেখানে অমানুষ কে আমি জায়গা দেব তা বলাই বাহুল্য। লেখকের সংযম দেখেও অবাক হতে হয়। ভয়াবহ মুহূর্তকেও তিনি সহজ করে ফেলছেন!
তবে শেষের অংশে কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেল! সেই আক্ষেপ নিয়েই বিড়বিড় করে যাচ্ছি...
"এইখানে একজন "মানুষ" ঘুমিয়ে আছে, তাকে শান্তিতে ঘুমুতে দাও"
"যদি সম্ভব হয় এনির পাশে একটু জায়গা রাখবে। মেয়েটা বড্ড ভীতু। আমি পাহারায় থাকলে হয়তো শান্তিতে ঘুমাবে।"
মানুষ মাঝে মাঝে এমনসব জঘন্য কাজ করে যা দেখে হয়তো শয়তানও লজ্জ্বা পেয়ে যায়। এরাই অমানুষ।
যাইহোক, বইয়ে ফিরে আসি। জামশেদ নামক একজনকে এ্যানির বডিগার্ড হিসেবে রাখা হয়। জামশেদ একজন কড়া প্রকৃতির মানুষ। যার মায়া মমতা বলে কিছু নাই। অন্যদিকে, মিষ্টি মেয়ে এ্যানি যেমনই মিষ্টি তেমনই আদুরে। কাহিনীর মূল টুইস্ট আসে যখন এ্যানি কিডন্যাপ হয়ে যায়। জামশেদ কি পারবে এ্যানিকে বাঁচাতে? পারবে অমানুষদের সাথে লড়তে?
বইটা পড়ার সময় আমার একবারও মনে হয়নি যে, এইটা আমাদের হুমায়ূন সাহেবের লেখা বই। আমার বরাবরই মনে হচ্ছিলো বাইরের বই। অনেকদিন পরে একটা বই পড়ে খারাপ লেগেছে। বীভৎসরকম নাড়া দিয়েছে মনে। হাইরে মানুষ! এতো জঘন্য মানুষ হয় কিভাবে?! মনেই হচ্ছিলো না বই পড়ছি। সব যেনো চোখের সামনে ঘটছিলো।
সবমিলিয়ে, অবশ্যই পড়বেন। হুমায়ূন সাহেবকে নিয়ে নতুন করে বলার কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। একটা অসম্ভব ভয়ানক বই পড়লাম। মাথায় থাকবে বহুদিন।
আমার এখনো মনে আছে,আমি কলেজ থেকে বাসায় আসার সময় বাসে বইটা পড়তেছিলাম। সবাই তাকায় ছিল,আমার পাশের লোক বেজায় বিরক্ত! মানে যত পড়ছিলাম, বইটা আমাকে তত টেনে ধরছিল মতো অবস্থা, এত দারুন। পড়ার সময় আমার একবারের জন্য মনে হয়নি,এটা অনুবাদ কিংবা বিদেশি কাহীনির ছায়া অবলম্বনে লেখা। হুমায়ূনের লেখার জাদু এটাই যে পাঠক সব সময় বইয়ে আটকে থাকতে বাধ্য।
যদি তুম ফিরে না আসতে পারো তাহলে তোমার ডেডবডি কি দেশে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করব? নাহ! কাউকে কিছু বলতে হবে? নাহ! কোনো কিছু বলার নেই তোমার ? জামশেদ মৃদুস্বরে বলল, যদি সম্ভব হয় অ্যানির পাশে একটু জায়গা রাখবে। মেয়েটা বড্ড ভীতু। আমি পাহারায় থাকলে হয়ত শান্তিতে ঘুমুবে।
অনেকদিন পর এত ভালো মানের একটা উপন্যাস পড়লাম। 'Only evil can punish evil' এর প্রতিচ্ছবি যেন ফুটে উঠেছে বইটাতে। এর বেশি কিছু বললে আবার স্পয়লার হয়ে যেতে পারে! যারা এখনো পড়েন নি, অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন। হতাশ হবেন না, এই নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি।
গল্পের পটভূমিকা ইটালীতে। কাহিনী গড়ে উঠেছে বারো বছর বয়সী দেবশিশুর মতো সুন্দরী বালিকা অ্যানিকে ঘিরে।
ইটালীতে তখন চলছে আতঙ্কজনক সময়। বড় বড় পরিবারের ছেলেমেয়েদের অপহরণ করা হচ্ছে মুক্তিপণ লাভের আশায়। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে অ্যানির স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল পরিবার থেকে। কিন্তু অ্যানি খুব করে চায় আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করতে। তার ভীষণ ধরণের বিলাসিতাপ্রবণ মা রুনের ইচ্ছা তাকে পাঠাবে সুইজারল্যান্ডের স্কুলে, যেখানে অন্যান্য ধনী লোকজনের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। কিন্তু অ্যানির বাবা ভিকির ব্যবসায় চলছে মন্দা। প্রায় পড়ে-যাওয়া সিল্কের ব্যবসা নিয়ে সে এমনিতেই আছে বাজেরকমের আর্থিক টানাটানিতে।
নানান তর্কাতর্কি, মান-অভিমানের পর অবশেষে ঠিক হলো অ্যানি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারবে, কিন্তু তার প্রটেকশনের জন্য রাখা হবে একজন বডিগার্ড। মূলত রুন এর জোরাজুরিতেই বডিগার্ডটিকে রাখা হলেও ব্যাপার আস্তে আস্তে অন্যরকম হতে থাকলো। যেমন-তেমন একজন কাজের লোকের মতো কাউকে চাওয়া হয়েছিল ভিকির পক্ষ থেকে। জামশেদ নামে যে লোকটি নিযুক্ত হলো, সে যে যেমন-তেমন কেউ নয় তা বোঝা গেলো অচিরেই। আর নিজের কাজে সে ভালোই পাকা।
এদিকে ভিকির ব্যবসা পড়তে লাগলো আরো, খড়কুটো পেলেও আঁকড়ে ধরার মতো মানসিকতা হলো তার। কুমতলব দেওয়ার জন্য সবসময় আশেপাশেই রয়েছে রুনের গোপন প্রেমিক এতরা। নিজের অবস্থা ফেরাতে ভয়াবহ এক সিদ্ধান্ত নিলো ভিকি, মাতাল অবস্থায় নিজের কপাল পোড়ানোর পথে হাঁটলো নিজেই। তাতে মদদদাতা হিসেবে রইলো এতরা।
কিন্তু যে পরিকল্পনা নিয়ে সিদ্ধান্তটা নেওয়া হলো সমস্তটাই ভেস্তে গেলো, সাথে মারাত্মক পরিস্থিতি নেমে এলো ভিকি-রুনসহ আশেপাশের সকলের উপর।
কি এমন হয়েছিল যাতে সুন্দর একটা পরিবার খানখান হয়ে ভেঙে যেতে থাকলো অচিরে? আপাত-শান্ত একজন মানুষ মরিয়া হয়ে উঠলো প্রতিশোধের নেশায়? সংঘর্ষ লেগে গেলো সকলের?
পাঠ-প্রতিক্রিয়া : হুমায়ূন আহমেদের লেখা কোনো বই এই প্রথম ঠিকঠাক উপভোগ করতে পারি নি। কেবল আগ্রহের তাড়নায় আর হুমায়ূন আহমেদের লেখা বলেই পড়ে গেলাম শুরু থেকে শেষ।
আহামরি না লাগার কারণটাও বলে দেই। গল্পের কাঠামো এ জে কুইন্যালের লেখা "ম্যান অন ফায়ার" এর উপর ভিত্তি করে সাজানো। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ই মাসুদ রানার "অগ্নিপুরুষ" বইটা পড়েছিলাম। বইটা "ম্যান অন ফায়ার" এর ছায়া অবলম্বনে লেখা। "অমানুষ" বইটা পড়ার প্রত্যেকটা মোমেন্টে "অগ্নিপুরুষ" এর কথা মনে হয়েছে আর অনিচ্ছাকৃতভাবে মনে একটা তুলনা করার প্রবণতা চলে এসেছে। একটা সত্য কথা হলো - "অগ্নিপুরুষ" পড়ার পর "ম্যান অন ফায়ার" এর কাঠামোতে সাজানো আর কোনো গল্পই ভালো লাগার কথা না। "অগ্নিপুরুষ" প্রায় আট বছর যাবত আমার জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠতম বইগুলোর মধ্যে একটা।
বলতে বলতে প্রায় "অগ্নিপুরুষ" এরই হালকা রিভিউ দেওয়া শুরু করে দিলাম দেখা যাচ্ছে! "অমানুষ" এর কথায় আসি। একটা কমতি হলো ছোট কলেবর। সাধারণত হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের দৈর্ঘ্য এতোটাই হয়ে থাকে, কিন্তু এই গল্পের ক্ষেত্রে সম্ভবত আরেকটু বড় করে লিখলে ভালো হতো। কিছু জায়গা একটু তাড়াহুড়ো হয়ে গিয়েছে। এই প্রথম কোনো বই পড়ার সময়ে হুমায়ূন আহমেদ হুমায়ূন আহমেদ ধাঁচটাও প্রায় কিছুই পাই নি। স্যার সম্ভবত ভিন্ন ধরণের কিছু লেখার ইচ্ছা থেকে বইটা লিখেছিলেন, যেইজন্য পড়তে এমন লেগেছে।
"অগ্নিপুরুষ" যারা পড়েন নি তাদের কাছে বইটা কেমন লেগেছে বা লাগবে আমার কোনো আইডিয়া নাই। তাদের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণেরও হতে পারে। পড়ে থাকলে জানাবেন, হয়তো ভালো লেগে থাকতে পারে। অন্যেরাও পড়তে পারেন। "ম্যান অন ফায়ার" এর কাহিনী আমার খুব পছন্দের একটি কাহিনী, এখন কেবল মুভিটা দেখা বাকি।
বইটা যথেষ্ট ভালো লাগলো। হুমায়ূন আহমেদ যে ভালো অনুবাদকও ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। গল্পের উঠা নামা চলা বলা বেশ সুন্দর, কিন্তু মর্মান্তিক। গল্পের শেষটাও বেশ হয়েছে। কিন্তু খারাপ লেগেছে সবগুলো চরিত্রের জন্য। কেবল ইতর এতরা বাদে।
কথিত আছে পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। অবশ্য বর্তমানে আমাদের সমাজে যা পাপ, অন্য সমাজে তা পুন্য হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও মানতে হয় পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।
বাবা-মায়ের করা পাপের শাস্তি সন্তান ভোগ করে এমন কথাও কথিত আছে। বইটা পড়লে এই সত্যতা মন থেকে মানতে ইচ্ছা করে। অ্যানির মা রুন যদি শুরুতেই এতরাকে বাঁধা দিত, নিজের কাছে ঘেঁষতে না দিত, বাসায় আসতে মানা করে দিত, নিজের স্বামী ভিকির সাথে কথা বলত তাহলে হয়ত এতরা অ্যানিকে দেখতই না,তার মনে সুপ্ত বাসনাও জাগত না। মায়ের করা ভুল অ্যানিকে নিয়ে যায় বাস্তবতার এক রূঢ় জগতে। সত্যি বলতে উপন্যাসটা বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে এতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে বার বার চমকে উঠেছি। যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ১৬ ঘন্টায় ৯ জন নারী ধর্ষিত হচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে এমন বই পড়লে চমকে উঠতে বাধ্য হতে হবে যে কাউকে।এত নির্মম বাস্বতবাদী বই বহুদিন পরে পড়লাম। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে এই রকম অভিশপ্ত মা'র দেখা মিলে। উপন্যাসটা পড়ে সবচেয়ে বেশি রাগ হয়েছে রুনের উপর। রুন চাইলে শুরুতেই একটা নিষ্পত্তিতে আসতে পারত। অ্যানির ও কিছু ভুল ছিল বাবা-মা যত রাগীই হোক আমাদের উচিত সব তাদের জানানো।
গল্পের সবচেয়ে সুন্দর চরিত্র মনে হয় জামশেদ। সত্যি বলতে আমাদের সমাজে এমন একটা জামশেদের ভীষণ দরকার। অন্তত বর্তমানে বাংলাদেশে জামশেদকে দরকার ভাত মাছের থেকেও বেশি। যে হবে প্রতিশোধ পরায়ণ, নিজের হাতে যেসব অপরাধীদের শাস্তি হয় না তাদের শাস্তি দিতে পারবে।
ভিকির জন্য অনেক খারাপ লেগে���ে। আমাদের বাবা মায়ের মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করতে হয় যা তারা করতে চায় না, বা কল্পনায়ও ভাবে না এমন কাজের কথা। কিন্তু তবুও প্রকৃতি মাঝে মাঝে রহস্যময় খেলা খেলে আমাদের সাথে। যখন আমরা আমাদের করা কৃতকাজের ভুল বুঝতে পারি তখন আমাদের আর করার কিছুই থাকে না। শুধু নিয়তিকে মেনে নিতে হয়। ভিকির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি শুধু মৃত্যু। অন্য কিছু না, কিচ্ছু না। ভিকির উচিত ছিল এতরাকে নিজ হাতে খুন করা। কিন্তু সে পারে নি। এই অপরাধবোধও তাকে এমন নির্বাক করে দিতে পারে।
এতরার মতো অভিশপ্ত মানুষ এই পৃথিবীতে আর না আসুক। এমন ধূর্ত, ��রিত্রহীন মানুষ এই পৃথিবীর শুদ্ধতা শুধু নষ্ট করতে পারে আর কিচ্ছু পারে না।
তুমি আজকে কাউকে যদি নিঃস্বার্থভাবে ভালেবাসো প্রকৃতি একদিন সেই মানুষকে দিয়েই তোমার নিঃস্বার্থ ভালেবাসাকে নিঃস্বার্থভাবেই ফিরিয়ে দিবে!!!!!
অমানুষ গল্পের কাঠামো এ,কে,কুইন্যালের 'ম্যান অন ফায়ার' থেকে নেয়া।কাঠামোগত সামান্য মিল ছাড়া ম্যান অন ফায়ারের সঙ্গে এ বইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।।
আমি আনাড়ি রিভিউ রাইটার।তারপরও লিখতে বসেছি থ্রিলার উপন্যাসের রিভিউ।মাথায় শুধু একটাই চিন্তা কোনো ভাবেই যেন টুইস্ট প্রকাশ না পায়।
অনেক জটিল কথাও খুব সাবলীল ভাবে প্রকাশ করতে পারে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ।এই সত্য কারও অজানা নয়। তবে পাঠকরা যারা তাকে সাদামাটা প্রেমের ঔপন্যাসিক হিসেবে চেনেন,তারা এই বইটি পড়লে হয়তো,ঐ ধারণা থেকে কিছুটা দুরে সরে আসবেন।অন্যসব উপন্যাসে তিনি যেমন নায়িকার প্রতি গভীর ভালোবাসা ঢেলে দেন।এখানে তার বদলে এক কিশোরীর প্রতি তার দেহরক্ষীর অগাধ মমতা দেখিয়েছেন। যা বড়ই বিস্ময়কর। কিছুদূর পর পর একটা বাক দিয়ে থ্রিলার উপন্যাসটি এত সুন্দর রূপ দিয়েছে।যা না পড়লে বুঝতে পড়তাম না।
গল্পের প্রধান চরিত্র জামশেদ হোসেন।একসময় মানুষ মারায় তার পারদর্শিতা ছিল অতুলনীয়। বয়সের ভারে তা কিছুটা ক্ষয়ে গেছে।গল্পে তার গাম্ভীর্যতা পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই পাঠকরাও গম্ভীর হয়ে যাওয়ার কথা।এখন সে অ্যানি নামের এক মেয়ের বডিগার্ডের দ্বায়িত্ব পালন করছে।
অ্যানি বারো বছরের কিশোরী। সে তার মায়ের মতোই রূপসী। এতরা চাচা তার চোখে ঘৃণিত ব্যাক্তি। গল্পে এতরাকে চৌকশ খলনায়ক হিসেবে পাবে পাঠকরা।
অ্যানির বাবা ভিকি। বর্তমানে তার তিন পুরুষের সিল্কের ব্যবসা খারাপের দিকে যাওয়ায় সে খুব চিন্তিত। কিন্তু এতবড় সমস্যাতেও স্ত্রী রুনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনা।সে ইচ্ছা মতই খরচ করে যাচ্ছে। রুনের সাথে এতরার মেলামেশা ভিকি সহ্য করতে পারেনা।তবুও মুখে কিছু বলেনা।কারণ সাহায্যের জন্য তাকে এতরার কাছেই যেতে হয়। এবারেও ভিকি পরামর্শ নিতে এতরার কাছে যায়।সেই সুযোগে এতরা দারুণ চাল চালে।যা ভিকির মতো সাধারণ মানুষের বোঝার ক্ষমতা থাকবেনা, এটাই স্বাভাবিক।
অ্যানিকে কিডন্যাপ এর জন্য সবুজ রঙের একটি ওপেল গাড়ি অপেক্ষা করছে।কিন্তু তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।কেননা অ্যানির সাথে অসাধারণ লিজিওনারি হিসেবে পরপর দুবার অর্ডার অব ভেলর পাওয়া বডিগার্ড, জামশেদ।।।
শেষপ্রান্তে পাঠক জামশেদকে দেখতে পারবে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া একক যোদ্ধা হিসেবে।বুদ্ধির জোরে সফল হতে হতে সেও ধরা পরে ক্যানটারেলার হাতে। ক্যানটারেলার এখন একমাত্র কাজ তাকে মেরে ফেলা।আবার অন্যদিকে ক্যানটারেলার কাছে পারিবারিক ব্যাপারে ঘৃণিত লোক বস ভিকানডিয়া কে মারতে একমাত্র এই ছেলেই পারবে।তাহলে ক্যানটারেলা এখন কি করবে।।
জামশেদের প্রতিশোধের নেশা, লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা,পুলিশের সহযোগীতা,চরিত্রগুলোর এক রূপ থেকে অন্যরূপে চলে আসা, সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি উপন্যাস।।
ওয়েস্টার্ন পাঠে অনভ্যস্ত পাঠকরা উপন্যাসের প্রথমের দিকে একটু অস্বস্তিতে পরতে পারেন।কিন্তু শেষ করতে পারলে সব উপন্যাস থেকে আলাদা একধরনের স্বাদ পাবে বলে আশাকরি।।
পছন্দের উক্তিঃসব মানুষই হোচট খেয়ে পরে যায়।কিন্তু খুব কম মানুষই আবার উঠে দৌড়াতে পারে।।
যদি তুম ফিরে না আসতে পারো তাহলে তোমার ডেডবডি কি দেশে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করব? নাহ! কাউকে কিছু বলতে হবে? নাহ! কোনো কিছু বলার নেই তোমার ? জামশেদ মৃদুস্বরে বলল, যদি সম্ভব হয় অ্যানির পাশে একটু জায়গা রাখবে। মেয়েটা বড্ড ভীতু। আমি পাহারায় থাকলে হয়ত শান্তিতে ঘুমুবে।
এতটুকুই যথেষ্ট।....................দারুন একটা বই..................
হুমায়ূন আহমেদের এইরকম জনরার বই প্রথমবার পড়লাম। লেখক হয়তো নতুন কিছু চেষ্টা করতে চেয়েছেন। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এই টাইপের জনরা খুব বেশি পছন্দ হয় না কেনো জানি।
গল্পটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। বুড়ো ভাল্লুক জামশেদ শেষে এনির জন্য যা যা করেছে তার জন্যে খুব মায়া লেগেছে আমার। সাথে গল্পটিতে সমাজের অনেক অনেক খারাপ দিক এমন ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা সত্যিই জঘন্য!
ভিকি ইতালির একজন সম্ভ্রান্ত সিল্ক ব্যাবসায়ী। আর এই সিল্কের ব্যাবসা তার পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া। তবে ভিকি তার ব্যাবসায় লসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো। কোনো ব্যাংকের থেকে ঋণ না নিতে পেরে টাকার জন্য খুবই জঘন্য একটা রাস্তা বেছে নেয় অন্য একজনের বুদ্ধিতে।
ভিকির পরিবারে তার সুন্দরী স্ত্রী রুন ও একমাত্র ১২ বছরের মেয়ে অ্যানি। সেও তার মায়ের মতোই অত্যন্ত সুন্দরী ও আকর্ষণীয়।
ভিকির লসের ব্যাপারটি বুঝতে পেরেও তার ধনাঢ্য স্ত্রী রুন খুব একটা সাহায্য করতে চেয়েছে বলে মনে হয়নি। সেই সময় ইতালিতে বেশ কয়েকটি শিশু অপহরণ হয়েছিলো। তাই সবাই তাদের সন্তানদের জন্য বডিগার্ড নিয়োগ দিচ্ছিলো। অ্যানির জন্য বডিগার্ড নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে ভিকির অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রুনের পিড়াপীড়িতে একজন বাংলাদেশীকে নিয়োগ দেওয়া হয় যার নাম জামশেদ।
অ্যানি কিডন্যাপ হওয়ার সময় জামশেদ দুইজন অপহরণকারীকে তাৎক্ষণিক গুলি করে হত্যা করতে পারলেও নিজেও গুরুতর আহত হয়। বেশ কিছুদিন সুস্থ হওয়ার পর একে একে অপহরণকারীদের হত্যা করতে থাকে। একপর্যায়ে উচ্চপদস্থ এক মাফিয়াকে হত্যা করে নিজেও মারা যান। শেষে জামশেদকে অ্যানির কবরের পাশে দাফন করা হয়।
পছন্দের লাইনঃ যদি সম্ভব হয় অ্যানির পাশে একটু জায়গা রাখবে। মেয়েটা বড্ড ভীতু। আমি পাহারায় থাকলে হয়ত শান্তিতে ঘুমুবে।
মতামতঃ গল্পটি খুবই দ্রুত আগাতে থাকে, যার কারণে বোরিং ফিল করার কোনো সুযোগ নেই। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের এই বইটি ভিন্ন ধাচের মনে হয়েছে। তবে শেষের দিকে গল্প অনেক দ্রুত সমাপ্ত হওয়ায় কেমন যেনো একটা খারাপলাগা কাজ করে।
This entire review has been hidden because of spoilers.
আগেও একবার পড়েছিলাম, দ্বিতীয়বার পড়ার সময়ে আরও বেশি ভালো লাগলো। অমানুষে ভরা পৃথিবীতে অ্যানির ভালোবাসার মূল্য দিয়ে তার কবরের পাশে শুয়ে থাকা বুড়ো ভালুক জামশেদের জন্য পাঁচ তারা। মেয়েটা শান্তিতে ঘুমাক। আর, ভীতু অ্যানির পাহারায় থাকা জামশেদও।
বইটি পড়তে পড়তে মনের মধ্যে অদ্ভুত একট বিষাদ কাজ করেছে। পৃথিবীর কিছু কিছু জিনিস (হয়তো বেশিরভাগ জিনিস) খুবই কুৎসিত। এর মধ্যেও মায়া, মমতা, ভালোবাসা আছে। আছে বলেই একেবারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়নি। অ্যানা আর জামশেদের জন্য ভালোবাসা। কিছু অমানুষদের জন্য মনের সবটুকু ঘৃণাও যথেষ্ট মনে হচ্ছে না।