সদ্য জুওলজিতে মাস্টার্স শেষ করা হাসান ঘটনাক্রমে পরিচিত হয় প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কিজিলের সাথে। কিজিল মানুষ হিসেবে অদ্ভূত ও খাপছাড়া, বিপজ্জনকও। কিজিলের রিসার্চ অ্যাসিটেন্ট হিসেবে যোগ দিয়ে হাসানের শুরু হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জীবন । সবার চোখের আড়ালে কি ভীষণ সব কাজ করে বেড়াচ্ছেন তিনি সেটা হাসান নিজ চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতো না।
মাশুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন থ্রিলার, সায়েন্সফিকশন ও শিশু-কিশোর সাহিত্য, প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে।
সাহিত্য-পুরস্কার : এইচএসবিসি-কালিওকলম তরুণ কথাসাহিত্যিক পুরস্কার ২০১৩।
Masudul Haque is a contemporary writer from Bangladesh known for his works on thrillers, Sci-Fi, and children's literature. His works have been published in Bangladesh and India regularly for the last 12 years. He was awarded the Kali O Kalam Young Writer Award in 2013.
বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন রাইটারের কথা বলতে গেলে শুরুতেই উঠে আসবে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম। পরবর্তীতে হুমায়ুন আহমেদও কিছু বই লিখেছেন৷ আর লিখেছেন জাকারিয়া স্বপন। এরপর অনেকদিন ধরে আর কাউকে এই শাখায় পদচারনা করতে দেখিনি। আজকে পেলাম মাশুদুল হকের লেখা। বইটার প্রথম প্রকাশ ২০১৫ সালে। আমি হাতে নিতে তিন বছর সময় লাগিয়ে দিয়েছি। যাই হোক, লেখক রীতিমতো দুর্দান্তভাবে বাংলা সাহিত্যের এই কম হাঁটা পথ মাড়িয়ে গেলেন। তাঁর মতো তরুণ লেখকের কাছে এমন চমৎকার একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বই উপহার পাওয়াটা অভাবনীয় একটি ব্যাপার৷
ডক্টর কিজিল শিরোনামের এই বইয়ে সর্বমোট গল্প আছে তিনটি। তিনটি গল্প তিন ধাঁচের। বেশ নাটকীয়ভাবেই হাসান নামের এক জুওলজিস্টের মোলাকাত ঘটে ডক্টর কিজিলের সাথে। সাই-ফাই গল্পের খাতিরেই ডক্টর কিজিলকে প্রায় অতিমানবের রূপ দেয়া হয়েছে। তিনি একাধারে জিন প্রকৌশলী, বায়োকেমিস্ট, পদার্থবিদ আর তুখোড় দাবাড়ু। তার নিজস্ব গবেষণাগারের সংখ্যাও অসংখ্য। একা মানু্ষ কিভাবে এতো কাজ একসাথে সামলাচ্ছেন সেটা একটু খটকার বিষয়। লোকটা প্রফেসর শঙ্কুর মতো কিছুটা পাগলাটে। তবে বইয়ের ফ্লাপে তাকে যেমন খাপছাড়া আর বিপজ্জনক একজন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমার মোটেও সেরকম মনে হয়নি। বরং দুষ্টের দমন করার জন্য এটুকু খেপাটে না হলে বিজ্ঞানীদের মানায় না। এই বই পড়তে গিয়ে মজা পেয়েছি কারণ প্রতিটা ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া আছে। বইটা লিখতে গিয়ে লেখকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে বোঝা যায়। কারণ গল্পের ছলে বইয়ে জানার মতো অনেক নতুন তথ্য দেয়া আছে।
আচ্ছা একটু অন্য ভাবেই শুরু করি । :p আমার দেখা টিভি সিরিজগুলোর মধ্যে অলটাইম ফেভারিট হচ্ছে ব্রেকিং ব্যাড । তো এই বই এর সাথে ব্রেকিং ব্যাড এর সম্পরক কি? না মানে কভারের দিকে একটু মনোযোগ দেই আমরা । কি বুঝলেন? :p যাই হোক কভারটা কিন্তু ভালোই লেগেছে আমার কাছে । মাশুদুল হক ভাইয়ার এটা আমার তিন নম্বর পড়া বই । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তিন বই ই তিন জনরা এর । একটা থ্রিলার , একটা রূপকথার বই আর এইটা পুরোপুরি সাইন্স ফিকশন । এবং গত দুইটা বই এর মত এটাও ভালো লেগেছে । বাংলা তে সাইন্স ফিকশন বলতে আমরা জাফর ইকবাল স্যার এর লেখাই বুঝি । কিন্তু তার বেশীর ভাগ বই এই এখন সাইন্স ফিকশন এর তুলনায় ফ্যান্টাসী বেশী থাকে । কিন্তু ডক্টর কিজিল বই এ সায়েন্টিফিক ঘটনা গুলোর পেছনের সায়েন্টিফিক ব্যাখা গুলোও বেশ যুক্তিসংগত । বোঝাই যায় যে লেখক লেখার আগে গবেষণা করে নিয়েছেন ভাল মত । আর একজন ডাক্তার হওয়াতে লাইফ সাইন্স এর প্রতি তার দখল ও বেশী হবে এটাই স্বাভাবিক । তিনটা ধারাবাহিক গল্প আছে ডক্টর কিজিল কে নিয়ে । শুরুটা বেশ মজার । আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে মাঝখানের গল্পটা । আর একটা ব্যাপার যেটা না বললেই না যে অনেকদিন পর একটা বই পেলাম যেটা কোন পিচ্চি কে গিফট দিতে পারব। আশা করি কিজিল কে নিয়ে আরো বই পাবো সামনে ।
দিগ্বিজয়ী বৈজ্ঞানিক কিবরিয়া জিল্লুর লশকরের সাথে পরিচয় হবো হবো করছিল, বেশ কদিন ধরে। শেষমেশ হয়েই গেলো। দেরি হলো, কারন কিজিল মশাইকে খুঁজে পাওয়া চাপ। একে কর্মঠ, তায় খামখেয়ালী। এহেন মানুষটির দেখা পেতে কম কসরত করতে হয় না! ( বিদ্রঃ - ওসব কিছু না। বক্তা আসলে অলস, বই কিনে ধুলো খাওয়ানোয় পারদর্শী, এখন ফালতু গুল মারছেন।)
সে যাই হোক। কিজিলের আশ্চর্য ছয়টি গল্প, সুষ্ঠু পেপারব্যাকে এই বাংলায় পরিবেশনা করেছে বিভা পাবলিকেশন্স। তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এমন জম্পেশ বইটির প্রেজেন্টেশন হয়েছে চমৎকার। কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলের সুন্দর প্রচ্ছদটি বাদেও প্রতি গল্পে, গৌরব দে কর্তৃক হেডপিস ও দারুন কিছু সাদা-কালো অলংকরণ, পুঁচকে বইটির শ্রীবৃদ্ধি করেছে। সাথে লেখকের গদ্য। যা এমনিতেই চরম সাবলীল। পড়তে বসলে, ওঠা দায়। ভালো লেখনীর গুনে গড়পড়তা প্লটেও প্রাণের দেখা মেলে। বিশেষ উল্লেখ্য, বইয়ের প্রথম কাহিনী, 'কটকট'। গল্পটি মনে থাকবে অনেকদিন।
এছাড়াও, আমাদের মজারু নাম-চরিত্র। কোথাও, তিনি 'ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি'র শঙ্কু ন্যায় খ্যাপাটে। আবার কোথাও গিয়ে এলন মাস্কের মতন তুখোড় বাণিজ্য-স্বত্তার অধিকারী। ওদিকে, অলংকরণের চোটে, কোথাও তার চেহারায় প্রায় বৃদ্ধ টনি স্টার্কের আদল! এহেন, আশ্চর্য পার্সোনালিটির কীর্তিকলাপ নথিবদ্ধ করে তার আপাত-নিরীহ সহকারী হাসান।
হাসান সাহেব, সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। আমরা যাতে হালে পানি পাই, লেখক সেই ব্যবস্থা করেছেন, তার মাধ্যমে। গল্পগুলি তারই দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা। সেই নিরিখে, ডঃ কিজিল অনেকটাই আড়ালে আবডালে থাকেন। সময় নিয়ে রহস্য জমান। হাসানের সাথে আমরা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি। ভাবি, হচ্ছেটা কি? অ্যাপ্রোচটা ভালো। কিজিলের মতন চরিত্র অল্পস্বল্প ডোজেই ভালো। কড়া কোনো ওষুধের মতন, এতে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। আবার স্বাদে গন্ধে, মন বলে, আরেকটু পেলে মন্দ হতো না।
অবশ্য, গল্পগুলি হার্ডবয়েল্ড সায়েন্স ফিকশন নয়। তাই 'সিরিয়াস সাই-ফাই ভাল্লাগে না, পড়বো না!' এই অজুহাতটি ধোপে টিকবে না। এ জিনিস, বরং কল্প-ফ্যান্টাসির সাথে বিজ্ঞানের সজীব সংমিশ্রণ। সাথে অতীব সরস বাঁধনে, চোরা হিউমার ও অভিযানের রোমাঞ্চ। পড়তে ভালোই লাগে। বলাই বাহুল্য, সিক্যুয়েল চাই। বেড়ে উঠুক কিজিলভার্স। আরও কটা গপ্পো না পেলেই নয়।
ভেন্ট্রিলকুইস্ট এর পর থেকে আমি মাশুদুল হকের ফ্যান। তাই যতদ্রুত পারছি বই কিনেই পড়া শুরু করে দিয়েছে। ডক্টর কিজিল নামের এক খেপাটে বিজ্ঞানীকে আমাদের মাঝে প্রেজেন্ট করার কৃতিত্ব জুয়োলজিস্ট হাসানের। দাড়ান খুলেই বলি, ডক্টর কিজিল এক খেপাটে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার,কেমিস্ট, পদার্থবিদ দাবার গ্রান্ডমাস্টার (আরো অনেক কিছু) ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে ষোলআনা পাকা এই বিজ্ঞানীর কাছে ইন্টারভিউ দিতে আসেন হাসান । তারপর এক কথায় ইতিহাস। তা এই খেপা বিজ্ঞানী যিনি নিজের সাম্রাজ্যকে দাবার ছকের মত করে সাজিয়েছেন তার কাছে চাকরি করতে এসে কি হাসান ভুল করে ফেলল? মোট ৩টা ছোট গল্প নিয়ে সাজানো সায়েন্স ফিকশন ধাচের বই। যেখানে দেখা পাবেন কিজিলের আজব আজব আবিষ্কারের দেখা। ডক্টর কিজিল একই সাথে প্রফেসর চ্যাঞ্জলারের মত রাগী খেপাটে আবার বিজ্ঞানী সফদার আলীর মত তাক লাগানো আবিষ্কার দিয়ে আপনার মাথা ঘুরায় দিবে।
বই সম্পর্ক এ তো জানলেন এই বার আসি আমার নিজের মতামত নিয়ে। আমার ভাল লাগার কারন ৩টা। ১ -কি কিউট নাম কিজিল!!! । ২ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। ৩ দাবা। প্রথম গল্পটা খুবই ভাল লেগেছে। ভাল লেগেছে কটকট এর কারনে। আমার একটা কটকট লাগবে। আর ইউটোপিয়ার কথা কি বলব। কি বিপদটাই না হয়েছিল ডক্���র কিজিল আর হাসানের ভাগ্যে।
একই সাথে সায়েন্স ফিকশন, হিউমার ,প্রতিটা গল্পই চমৎকার। যারা বিজ্ঞানীদের মজার মজার কান্ড দেখতে ভালবাসেন তারা অবশ্যই পড়বেন। যারা বিজ্ঞানীদের ২ চোখে দেখতে পারেন না তারাও পড়বেন। আরে দুনিয়ার কোথায় খেপাটে বিজ্ঞানীর মত মজার আর বিপদজনক জিনিস আছে। অন্তত দেখেন হাসান কি কিজিলের কাছে চাকরি করতে গিয়ে ভুল করল নাকি।
ডঃ কিজিল, কারো কাছে কিংবদন্তি কারো কাছে কিম্ভূতকিমাকার এক পাগলাটে লোক যার জীবন কেটেছে হাফ ডজন ডিগ্ৰী নিতে গিয়ে।ঝুলিতে পুরেছেন পদার্থ অঙ্ক প্রাণরসায়ন আর জিন প্রকৌশলের জ্ঞান।তুখোড় বুদ্ধিদীপ্ত এই লোকের চালগুলো দাবার কোটের মতো; নিজের গ্ৰান্ডমাস্টার হওয়ার কথাটাই সরবে সবাইকে তা জানান দেয়।
আর এই লোকের বিশাল সাম্রাজ্যে সৈন্য হয়ে ঢুকে কিস্তি পদে পদান্নতি পেয়ে সহকর্মীদের ঈর্ষার উঞ্চ ধারায় সিক্ত হাসানের অভিজ্ঞতা কখনো হাসাবে ,কখনো বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ ,কখনো ক্ষ্যাপাটে বুড়োকে ভস্মীভূত করতে মন চাইবে।
এখন কেউ যদি কটকটের সাথে ম্যামথের মিল ঘটিয়ে অদ্ভুত এক জীবকে সৃষ্টি করে কিংবা এপিফ্লোকালচারের পাশাপাশি শব্দনিরোধক কক্ষের সাথে অপরকে কুপোকাত করার নিত্যনতুন কারিগরী করে তাকে কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় কি!
বা হাজার বছর আগের মহাভারতের অলম্বুসের আকৃতিতে না হোক প্রকৃতিগত দ্বীপে অকুলিমের মেলবন্ধনে ইকোসিস্টেমের আপাতদৃষ্টিতে অযৌক্তিক কিন্তু অভূতপূর্ব সাফল্যের সম্ভাবনা কয়জনে ভাবতে পারে?
সে দেশের মাটিতে দশের কথা চিন্তা করে বৈদেশে ফায়দায় না গিয়ে ফুসরতে হার্জকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ফিরে আসার মতো গল্পই বা কজনের আছে.
প্রকৃতিতে বৈজ্ঞানিক কিন্তু পেশায় ব্যবসায়ী টমাস আলভা এডিসনের অনুসারী কিজিলের কান্ডকীর্তি কারিশমা ও লাগতে পারে আবার কিছু টা শঙ্কুর সাথে স্বভাবে মিল দেখে "এ আর এমন কি'বলে ঠোঁট উল্টে পথের কোনো ধারে ফুরিয়ে যাওয়া গল্পের পাতা মনে করে ভুলে যাওয়ার দায়িত্বটা দিব্যজ্ঞানে পাঠকমনেই।
কটকট- এর এন্ডিং এর জন্য চার তারা। বাকি দুই গল্পের জন্য তিন। জনরা Whacky Science হলেও প্রতিটি চোখ কপালে তোলা আবিষ্কারের পেছনের পড়াশোনার কমতি ছিলো না- সেজন্য শ্রদ্ধা।
After reading the book for a while it becomes evident that the writer did his research well. That is really, really worth appreciating. The book is a good addition to the young Bengali kids' reading list. In my opinion, there is room for improvement in the writing style. The narration could be a little more interesting context-wise. Will be waiting for many more thrilling and exhilarating sci-fis from Mashud.
তেমন কোন প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করিনি, কারণ অতি প্রতিভাবান পাগলাটে বিজ্ঞানী নিয়ে অনেকেই লেখার চেষ্টা করেছে (বিশেষ করে প্রফেসর শঙ্কু'র পর), কিন্তু সবই এত কাঁচা কাজ হয়েছে যে, পড়ে শেষ করাই মুশকিল। ডক্টর কিজিল নামটাও আশা জাগানিয়া নয়, কিন্তু গল্পের গুণে পুরোটাই উৎরে গেছে। তিনটা গল্পেরই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে; লেখক যা খুশি তাই খাওয়ানোর চেষ্টা করেন নি। কিজিলের সাথে প্রফেসর চ্যালেঞ্জারের মিল আছে; ওটুকু ছেড়ে দেয়া যায়। সব মিলিয়ে সময়টা ভাল কাটে; রেটিং সাড়ে তিন।
ডক্টর কিজিল, বইটি এমনই যেটি স্বাভাবিক ভাবেই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার শিকার হবে। তার অন্যতম প্রধান কারন ধরা যায় বিজ্ঞানের টার্ম গুলোর সুবর্ণিত উপস্থাপনা। এই একটি কারনেই হয়তো অনেক হার্ডকোর সাইফাই পাঠকের কাছে গল্পগুলো ভালো লাগবে, আবার অনেক অপেক্ষাকৃত লঘু সাইফাই গল্পপ্রেমীরা গল্পগুলো পড়ে যার পরনায় ভুরু কুচকে মাথা চুলকে হতাশ হতেই পারেন। আসলে দোষ পুরোপুরি পাঠকেরও নয়। একটা সময় ছিল যখন মুহাম্মদ জাফর ইকবালের হাত ধরে অনেক তথ্য সম্বলিত সাইফাই গল্প আমরা মাতৃভাষায় পেতাম। সেসব সময় পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বিস্তৃত ছিল, সাই ফাই থেকে আকাঙ্ক্ষাও ছিল সীমাহীন, ঠিক যে কারনে একজন অতিমানবী, কিংবা ইরন গল্পগুলোতে বহুজটিল ধারনার প্রয়োগ থাকলেও সেগুলো পাঠকে আমোদিত করেছিল। কিন্তু বর্তমানের সাই ফাই লেখকরা অনেকাংশেই সুখী ধারায় পা দিয়েছেন, সুতরাং পাঠকের চিন্তা ভাবনাও বিকশিত হতে পারছে না যথাযথ।
তাই তাদের উদ্দেশ্যে সাবধানবানী, "ডক্টর কিজিল সাম্প্রতিক কালে আমার পড়া সবচেয়ে সিরিয়াস টাইপের সাই ফাই গল্প সংকলন।" তবে বইয়ে গল্প তিনিটি হলেও উপস্থাপিত বিষয় একটিই, আর তা হচ্ছে কিজিলের বুদ্ধিমত্তার ফসল সুগভীর আবিষ্কারগুলি।
গল্পগুলো পড়ার সময় অনেক তথ্য এবং ব্যাখায় ভ্রুকুটি তুললেও প্রতিটির পরিনতিই আমার দারুণ লেগেছে, এবং শেষমেষ গল্প কথকের ভাগ্য, উপস্থিত বুদ্ধি এবং কিজিলের গবেষণার ঘনত্ব বেশ আমোদিত করেছে।
সবথেকে ভালো লেগেছে যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে লেখকের ভিন্ন ভিন্ন ধারায় গল্প রচনার প্রচেষ্টা। তার প্রথম উপন্যাস ভেন্ট্রিলোকুইষ্ট একটি থ্রিলার, দ্বিতীয় বই কালু-বিলু আর গিলুর রোমাঞ্চকর অভিযান একটি রুপকথা, এবং বর্তমান বই ডক্টর কিজিল একটি সাই ফাই। এবং তিনটি ধারাতেই লেখকের যথোপযুক্ত অধ্যায়ন এবং তথ্যের উপস্থাপন লক্ষণীয়। হলপ করে বলা যায় দেশের আধুনিক প্রজন্মের লেখকদের মধ্যে মাশুদুল হক অন্যতম প্রতিভাবান এবং পরিশ্রমী।
আবারও বলছি, সাইফাই ধারার সিরিয়াস পাঠকদের জন্য ডক্টর কিজিল প্রায় অবশ্য পাঠ্য। তবে তথাকথিত লঘু সাইফাই গল্প আপনার টার্গেট হলে বইটি পড়বার আগে দুবার ভেবে নিন।
প্লট বা লেখনী কোনোটাই তেমন মনোগ্রাহী হয়নি। নতুনত্ব পাইনি। ডক্টর কিজিলকে মিনিয়েচার বানিয়ে রেখে দেয়ার গল্পের প্লট ও গঠন অনেকটাই প্রফেসর শঙ্কুর একটা গল্পের সাথে মিলে যায় (শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল)। ডক্টর কিজিলের গল্পটা শুধু থিমে নয়, গাঠনিক দিক থেকেও শঙ্কুর গল্পের সাথে অনেকটা একরকম। গল্প দুটা প্যারাল্যালি রেখে দেখা যায় - বিখ্যাত বিজ্ঞানী শঙ্কু সুইস একাডেমি অব সায়েন্সের আমন্ত্রণে বিদেশে গেলেন --- বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কিজিল বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আমন্ত্রণে বিদেশে গেলেন। আরেকজন বিজ্ঞানী শঙ্কুকে নিজ বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানালেন --- আরেকজন বিজ্ঞানী কিজিলকে নিজ বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানালেন। সেই বিজ্ঞানী বিভিন্ন ছুতোয় বাইরের সাথে শঙ্কুর যোগাযোগ বন্ধ করে দিল --- সেই বিজ্ঞানী বিভিন্ন ছুতোয় বাইরের সাথে কিজিলের যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। শঙ্কুকে মিনিয়েচার করে বাক্সে রেখে দেয়া হল -- কিজিলকে মিনিয়েচার করে বাক্সে রেখে দেয়া হল�� শঙ্কু ও তার বন্ধু মুক্ত হয়ে নিজেদের আসল আকৃতি ফিরে পেয়ে লিন্ডকুইস্টকে পুতুলে পরিণত করল। -- কিজিল ও তার বন্ধু মুক্ত হয়ে নিজেদের আসল আকৃতি ফিরে পেয়ে হার্জবার্গকে পুতুলে পরিণত করল।
শুধু ছোট সাইজের মানুষ আছে বলে নয়, গল্প একরকম বলেই মিলের কথা বলেছি। আমার ধারণা এটা একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। লেখক নবীন, দোয়া করছি যে তিনি প্রচুর পড়বেন, এবং এধরনের ভুল পরিহার করে আরো অনেক ভালো লিখবেন।
অদ্বিতীয় বিজ্ঞানী ডক্টর কিবরিয়া জিল্লুর লশকরের অবিশ্বাস্য কিছু আবিষ্কার, আর তাঁর অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে কথকের কিছু অ্যাডভেঞ্চার— এই নিয়ে গড়ে উঠেছে আলোচ্য বইটি। এতে আছে~ ১. কটকট; ২. অকুলোম্বুষ দ্বীপ; ৩. ইউটোপিয়া; ৪. সার্কাস; ৫. কিজিল ও গিলগামেশ; ৬. স্যালামান্ডার জিন। গল্পগুলোর মধ্যে বিজ্ঞানের কিছু কথা সূক্ষ্মভাবে বলা হলেও আদতে এরা প্রফেসর শঙ্কু-ঘরানার ফ্যান্টাসি। তবে লেখা অত্যন্ত টানটান, সাসপেন্স মাঝেমধ্যেই সাংঘাতিক মানের, আর রসবোধ অতি উচ্চমানের। মূলত কিশোর পাঠকদের জন্য লেখা হলেও সব বয়সের পাঠকেরাই এই গল্পগুলো ভরপুর উপভোগ করবেন বলে আমার ধারণা। আলোচ্য সংস্করণটির ছাপা শুদ্ধ ও সুন্দর। গৌরব দে'র চমৎকার অলংকরণ গল্পগুলোকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সুযোগ পেলেই পড়ে ফেলুন।
'রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, প্রাণীবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রীধারী প্রয়োজন, জরুরী।'
বিজ্ঞাপনটা পত্রিকায় দেখে সকাল সকাল ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলো হাসান। মানিক মিয়া এভিনিউ এ এসে দেখে এক আজব দৃশ্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল হাতি, শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে বাতাসে তুলে রেখেছে এক তরুনকে। পেছনে জগিং স্যুট পরা বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। লোকটা ইশারা করতেই হাতিটা তরুনকে ছুঁড়ে মারলো রাস্তার পাশের লেকে।
কোনমতে পাড়ে উঠে এলো হাসান, হাতি বা হাতির মালিক কারোরই আর হদিশ মিললো না। সময়ও নেই, বাড়ি ফিরে পোশাক বদলে দ্রুত গেল ইন্টারভিউ দিতে। ডাক পড়ায় যখন অফিসে ঢুকলো হাসান, এ কী! টেবিলের ওপাশে রিভলভিং চেয়ারটায় বসে আছে সকালের রাগী বুড়ো!
এই বুড়োর নাম কিজিল। ডক্টর কিবরিয়া জিল্লুর লস্কর। মানুষ হিসেবে বেশ অদ্ভুত, বিপজ্জনকও বটে। যে সাত সকালে পোষা হাতি নিয়ে হাঁটতে বেরোয় তাকে আজব বলাই শ্রেয়। এটুকুই শুধু ডক্টর কিজিলের পরিচয় নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল সম্পত্তির অংশীদার তিনি, সেই অর্থ কাজে লাগান বিচিত্র সব বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।
আপনভোলা পাগলা বৈজ্ঞানিক নন অবশ্য কিজিল। বিষয়জ্ঞান তার টনটনে, গাজীপুরের বিশাল গবেষণাগারে প্রস্তুত করেন বিশ্ববিখ্যাত মধু, ফারকোট থেকে শুরু করে আরো কত কি! সবকিছুতেই অবশ্য থাকে তার বৈচিত্র্যময় বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়া।
গাজীপুরের ফার্মে জুওলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ হলো হাসানের। দায়িত্ব পেলো মৌমাছিদের দেখাশোনার। যেই সেই মৌমাছি নয়, এরা নিজেদের মধু সংগ্রহের ফুলগাছ নিজেরাই চাষাবাদ করে। তাদের নেতৃত্ব দেয় আবার এক রবোট মৌমাছি!
এহেন অদ্ভুত ফার্মে ডক্টর কিজিলের সাথে কাজ করাটা হাসানের জন্য আশীর্বাদ হলো, নাকি অভিশাপ? বোটানি বিভাগের জাহিদ সাহেব একদিন নেশার ঘোরে কেন বলে উঠলেন 'হাসান সাহেব... পা-লা-ন....!'
লেখক মাশুদুল হকের সৃষ্ট দারুণ এক চরিত্র এই ডক্টর কিজিল। আধপাগল খ্যাপাটে বিজ্ঞানীর চরিত্র অনেক লেখকরাই তৈরি করেছেন, কিজিল তাদের থেকে স্বতন্ত্র। সফদর আলী বা প্রফেসর শঙ্কুর মতো বাস্তবতা বিবর্জিত খামখেয়ালী নন ডক্টর কিজিল। ব্যবসাটা যেমন ভালো জানেন, তেমনি ছিনতাইকারীকে পুলিশে দিয়ে কাজ হয় না থেকে শুরু করে, নিজের দেশের লোকের খাদ্যসমস্যা - সব বিষয়েই তিনি ওয়াকিবহাল। তবু বৈজ্ঞানিক গবেষণা মানেই অনিশ্চয়তা আর বিপদের হাতছানি। সাথে স্বার্থান্বেষীদের ছোবল তো আছেই।
তাই ডক্টর কিজিলের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হাসানের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর। কখনো পৌরাণিক রাক্ষস অলম্বুষের মতো ভয়াল কিছুর খাদ্য হওয়ার ভয়, কখনো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ম্যামথের সাক্ষাৎ পাওয়ার চমক, বা বিদেশের মাটিতে জটিল বিপদে জড়িয়ে পড়ে হাসান।
'ডক্টর কিজিল' বইটিতে তিনটি গল্প রয়েছে - কটকট, অকুলোম্বুষ দ্বীপ আর ইউটোপিয়া। দ্বিতীয় গল্পটিই সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এটির কন্সেপ্ট আর থ্রিল দুটোই চমৎকার।
মাশুদুল হকের আগের দুটি উপন্যাস পড়ে ধারণা ছিল তার লেখনী একই সাথে সহজ এবং তথ্যবহুল। 'ডক্টর কিজিল' এর ক্ষেত্রেও লেখক হতাশ করেননি। ব্যক্তিজীবনে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রতিফলন দেখিয়েছেন বইয়ে ষোলআনা। জটিল কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয়, বরং ঝরঝরে ভাষায় যুক্তিযুক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখা করেছেন সহজভাবে যা যেকোনো কারোরই বোধগম্য হবে।
একটু আধটু খটকার উদ্রেক যে ঘটেনি গল্পে তা নয়। ডক্টর কিজিলের দাড়ি টেনে ধরার দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিনতাইকারী কটকটের মতো বিশাল হাতিতে দেখলো না কি করে - তা কোনোভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য ছিল না। স্থানীয় বিজ্ঞানীর পক্ষে আবহাওয়ার কথা বলে ডক্টর কিজিলকে হোটেল থেকে সরিয়ে নেওয়ার অংশটাও দূর্বল।
বইটিতে সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল প্রচুর ছাপার ভুল। শব্দে, নামে আর বানানে ভুল তো আছেই, তাছাড়া পুরো বইয়ে 'ন্ড' যুক্তাক্ষরটি ছাপা-ই হয়নি।
যারা বিজ্ঞান-নির্ভর গল্প ভালোবাসেন শুধু তাদের জন্যই নয়, রোমাঞ্চে পূর্ন 'ডক্টর কিজিল' ছেলে-বুড়ো সকলের পড়ার উপযোগী একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। এই চরিত্র নিয়ে আরো লেখার চিন্তাভাবনা করার অনুরোধ রইলো লেখকের প্রতি।
আয়হায়! বলে কী! অবশ্য আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষেরই বা কী দোষ৷ খুব সাধারণ বেশে থাকা অসাধারণ কিংবা গুণী এমন ক'জনের খোঁজই বা আমরা রাখি বলেন? এখনও যারা চেনেন না, ড. কিজিল সম্পর্কে হালকা পাতলা একটা ধারণা দিয়ে রাখি। ড. কিজিলের প্রচারণা করছি এমনটা আবার ভেবে বসবেন না কিন্তু প্লিজ!
যারা একটু খেলাধুলার খোঁজ খবর রাখেন তাদের হয়তো এতোক্ষণে মনে পড়ে যাবার কথা৷ উনি শখের দাবাড়ু হয়েও গ্র্যান্ডমাস্টার। আবার ব্যবসায়ী আর বিশাল সম্পত্তির অধিকারী-এই পরিচয় ছাড়াও যে তার আরেকটা পরিচয় আছ��, সেটা বলার জন্যই মোটামুটি এতো কথার অবতারণা৷ তিনি কিন্তু বিখ্যাত বিজ্ঞানী। একাধারে জিন প্রকৌশলী, ম্যাথমেটিশিয়ান, পদার্থবিদ, বায়োকেমিস্ট... সোজা বাংলায় (থুক্কু ইংরেজিতে) তাকে একজন প্রডিজি বলা চলে৷ এখন কথা হলো, তার সম্পর্কে এতো কথা কীভাবে জানলাম। জনৈক ভদ্রলোক, নাম হাসান, জুওলজি থেকে পাশ করে ড. কিজিলের সাথে কাজ করছেন। সে সূত্র ধরেই কিজিলের কীর্তিকলাপের সাথে পরিচয়। নানান উদ্ভট্টি কর্মকাণ্ডের কথা শুনে ভদ্রলোককে অনুরোধ করলাম লিখে রাখার জন্য৷ (এমন অদ্ভুত মানুষও সচরাচর দেখা যায় না, আর অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের কথা শোনাও যায় না, ঠিক যেন বইয়ে লেখা গল্পের মতো।)
থাক সেসব, এখন আগের কথায় ফেরত যাই... আমার পরিচিত সেই হাসান সাহেবের কথায়। ভদ্রলোক মাস্টার্স শেষ করে যখন চাকরি খুঁজছিলেন তখনই নজরে পড়ে একটা চাকরির বিজ্ঞাপন। রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হবে৷ যা আছে কপালে চিন্তা করে দিলেন রওনা। কিন্তু পথেই ঘটে বিপত্তি। এক অদ্ভুত টাইপের মানুষের নির্দেশে একটা হাতি এক লোককে ফেলে দিচ্ছে লেকের পানিতে৷ হাসান সাহেব প্রতিবাদ করায় দুষ্টু লোকটার নির্দেশে তাকে পর্যন্ত পানিতে ফেলে দিলো হাতিটা!! বহুকষ্টে সেদিন চাকরির ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন হাসান সাহেব। হাসান সাহেব ড. কিজিলের কারখানায় যেটার দায়িত্বে ছিলেন সেটা হলো এপিফ্লোরিকালচার৷ সেখানে মৌমাছিরা তো মধু সংগ্রহ করেই তার পাশাপাশি ফুলের চাষও করে৷ হাসান সাহেব ধীরে ধীরে জড়িয়ে যান কিজিলের বিভিন্ন প্রজেক্টের সাথে৷ ঘটতে থাকে আজব আজব সব ঘটনা। এমনও আছে, মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসতে হয়েছে কয়েকবার। ড. কিজিলের সাথে (কিংবা ছাড়া) কোন অভিযান মানেই প্রাণ হাতে নিয়ে ঘুরা। মোটামুটি সেসব কারণেই শুনেছি ড. কিজিলের সাথে খুব বেশিদিন কেউ থাকতে পারে না৷ কিন্তু হাসান সাহেব নিজেও কিজিলের সাথে কাজ করে মজা পেয়ে গেছেন। তার নাকি প্রমোশনও হয়েছে৷ এখন কিজিলের প্রায় ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেই কাজ করেন তিনি৷ আমার আর কি.. আমি মাঝে সাঝে রোমহষর্ক সব কাহিনি শুনতে পারলেই হলো৷ আর হাসান সাহেবের দেখা পেলে আবার বলে দিবনে, বই আকারে লিখে ঘটনাগুলো যেন আপনাদের সাথেও শেয়ার করে। 😌
বই- ডক্টর কিজিল লেখক- মাশুদুল হক আদী প্রকাশন
বি.দ্র. ড. কিজিলের রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হাসান সাহেব মোটেও আমার পরিচিত কেউ নন :v এটা জাস্ট লেখার খাতিরে লেখা।
সচরাচর কিছুটা ক্ষ্যাপাটে টাইপ বিজ্ঞানী নিয়ে বই খুব একটা লেখা হয় না। সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কুর তুলনা শঙ্কু নিজেই। জাফর ইকবাল স্যারের বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার কিংবা সায়েরা সায়েন্টিস্ট বা বিজ্ঞানী অনিক লুম্বার মতো ক্যারেক্টরগুলোর কথা মনে পড়লে বুকের গভীর থেকে বের হয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। আহারে! কী সব দিন ছিলো আমাদের.. আর কি আসবে এমন কেউ? শিশু-কিশোরদের উপযোগী বই কিনতে গেলে এখনও জাফর ইকবাল স্যার আর ক্লাসিক বইগুলো ছাড়া আর কি কি বই দেয়া যায় সে চিন্তা করতে করতেই মোটামুটি অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সে হিসেবে ডক্টর কিজিল সেই আক্ষেপ অনেকাংশেই পূরণ করতে পেরেছে। সবচেয়ে অবহেলিত আর কঠিন জনরা নিয়ে কাজ করার জন্য লেখক মাশুদুল হককে বেশ বড়সড় একটা ধন্যবাদ ❤
জালের মত এটা শুরু করেও অবাক হয়েছিলাম। লেখকের নাম দেখেই ভেবে নিয়েছিলাম থ্রিলার হবে বইটা। কিন্তু দুই পাতা পড়ে দেখলাম সায়েন্স ফিকশন। যাই হোক, বেশ রসিয়ে রসিয়ে লেখা, এই আলসে বন্ধে যেন এমন একটা বইই খুঁজছিলাম। পুরো বইয়ে তিনটা ছোটগল্প, ইন্টারকানেক্টেড। সায়েন্স ফিকশনের জন্য যা যা দরকার সবই আছে বলতে গেলে। ছোটবেলায় পড়া প্রোফেসর শঙ্কুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার। এইভাবে হুট করে নতুন জনরায় লেখা বেশ সহজ কাজ না। কিন্তু লেখক মাশুদুল হক কে বলতে হয়, ওয়েল ডান। উনার আরও সায়েন্স ফিকশনের অপেক্ষায় রইলাম, এই সময়ে, থ্রিলারের ভিড়ে ভালো সায়েন্স ফিকশনের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না যে।
কিছুদিন আগেই প্রফেসর শঙ্কু পড়ছিলাম। এই বইটা পড়ার সময় অনেকটা সেই ভাইব পাচ্ছিলাম। অনেকদিন পর এই লেখকের কোন বই পড়লাম। সহজ সাবলীল বর্ননাভঙ্গীর মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজের বেশকিছু ব্যাপার স্যাপার অন্তত্য হাস্যরসাত্নক ভাবে উঠে এসেছে। তিনটি গল্প আছে এই বই এ। উটোপিয়া টা সবচেয়ে পছন্দ। অ্যাডভেন্চার আর সাইন্সফিকশন হাত ধরাধরি করে সুন্দর তিনটা গল্প রচিত হয়েছে। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর পরে এমন ভীন্নধর্মী লেখা পড়ে আমি যারপরনাই খুশি। লেখক প্রচুর জানেন আর ব্যাপারটা তার লেখা পড়েই বোঝা যায়। মিনিমালিস্ট পড়ার সময় যেমন কিছু কিছু জায়গায় বিরক্ত বোধ করছিলাম সেই ব্যাপারটা এই বই এর ক্ষেত্রে ঘটেনি। সব মিলিয়ে সুখপাঠ্য একটা বই।
বইটির নামকরণ গল্পের প্রধান চরিত্রের নামে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন,বইয়ের মূল চরিত্র ডক্টর কিজিল। ডক্টর কিজিল মানুষ হিসেবে অদ্ভূত,খাপছাড়া, বিপজ্জনকও বটে। কিজিল অসাধারণ মেধাবী, বিচিত্র সব গবেষণার জন্য বিজ্ঞানী মহলে দারুণ জনপ্রিয়।
লোকে জানে কিজিল একজন বিজ্ঞানী। কিন্তু লোকে জানেনা কিজিল একাধারে একজন বড় মাপের জিন প্রকৌশলী, ম্যাথমেটিশিয়ান, পদার্থবিদ এবং বায়োকেমিস্ট। ডক্টর কিজিল একজন শখের দাবাড়ু। গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাব আছে তার। বাস্তব জীবনেও তার কর্মক্ষেত্রকে তিনি দাবার ছকের মতো মনে করেন। এমনকি তার কর্মচারীদের পদোন্নতি হয় দাবা বোর্ডের ঘুটি অনুসারে। উঁচু দেয়াল তুলে ব্যক্তিগত গবেষণাগারে কিজিল কী করেন,তার খবর কেও জানেনা।
হাসান, জুওলজিতে পড়াশোনার পাট শেষ করে ঘটনাক্রমে ডক্টর কিজিল এর সাথে কাজ করার সুযোগ পায়। আর এই সুযোগ তার জীবনে আশীর্বাদ না ভুল পথে পা বাড়ানো তা সে নিজেও বুঝতে পারেনা। নিত্য নতুন চমক আর নানা রকম ঝামেলাতে কাটে তার প্রতি দিন। সেখানে এমনকি জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
ডক্টর কিজিল উপন্যাসে জুওলজিস্ট হাসান কিজিলের সাথে তার কাজের রোমাঞ্চকর সব অভিজ্ঞতাময় দিন গুলি বর্ণনা করেছে। হাসান তার কর্মজীবনের মাঝে থেকে কিজিলের তিনটি প্রজেক্টে তার অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে এই উপন্যাসে। প্রজেক্ট তিনটির নাম যথাক্রমে ১)কটকট ২)অকুলোম্বুষ দ্বীপ ৩) ইউটোপিয়া।
মূলত বইটির নাম দেখেই আমি পড়ার জন্য আকর্ষিত হই। অদ্ভূত সব চরিত্র আমার খুব পছন্দ। আর সে��িক দিয়ে ডক্টর কিজিল চরিত্রটি নিঃসন্দেহে ভালো লাগার লিস্টে স্থান পাবে,এটাই স্বাভাবিক।
লেখক মাশুদুল হকের বইগুলির মাঝে এটি আমার পড়া তৃতীয় বই। আগের দু'টি বই মিনিমালিস্ট এবং ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়েই লেখক এর লেখনী শক্তিতে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তবে আগের পড়া বই দুটি থেকে বুঝেছিলাম লেখক এর লিখা প্রচুর তথ্য সমৃদ্ধ হয়। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মিনিমালিস্ট বা ভেন্ট্রিলোকুইস্টে অনেক তথ্য মাথার উপর দিয়ে গেলেও ডক্টর কিজিল এর সমস্ত বৈজ্ঞানিক বর্ণনা ও তথ্যগুলি মাথার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এটি হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার সুফল! প্রচ্ছদে যেন আসলে কিজিল এর ছবি। পড়ার সময়ে বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো,ইস! বাস্তবে যদি কিজিল থাকতো আর আমি যদি হাসান এর জায়গায় হতে পারতাম তবে কত মজাই না হতো!
প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর কিজিল। ঘটনা চক্রে তার সাথে দেখা হয় পরবর্তীতে তার অ্যাসিস্ট্যান্ট সদ্য জুওলজিতে মাস্টার্স শেষ করা হাসানের। অদ্ভুত আর বিপজ্জনক মানুষ হলেন ডক্টর কিজিল। মানুষের চোখের আড়ালে একের পর এক বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু দেশের কিংবা পৃথিবীর মানুষ জানতেও পারছে না সেই সবের কথা। কারন কিজিল ঝামেলা চান না। তার চিন্তা ভাবনা সব কমার্শিয়াল। কিভাবে তার আবিষ্কারকে ব্যবসায়ী কাজে লাগানো যায়! নিজেকে সে এই হিসেবে টমাস আলভা এডিসনের সাথে তুলনা করেন। তার সব কাজযে বৈধভাবে হয় এমন কিন্তু নয়। তার অনেক কাজই বিপদজনক। তাতে জড়িয়ে পড়ে হাসান। হাসানের জবানীতেই উঠে আসে ডক্টর কিজিলের সেই অদ্ভুত সব গল্প। এই বই এ ক্ষুদ্র পরিসরে ৩টি গল্প ঠাই পেয়েছে। ১। কটকট ২। অকুলোম্বুষ দ্বীপ ৩। ইউটোপিয়া
এপার বাংলায় এমন চরিত্রের বড়ই অভাব। তাই মাশুদুল হক যদি এটিকে একটি সিরিজ হিসেবে দাড় করাতে চান খুব একটা খারাপ হয় না কিন্তু।
বন্ধুর লেখা বই দেখে একটু পক্ষপাতদুষ্ট মতামত দিতেই পারি। কিন্তু খুব কম লেখককেই দেখেছি মাশুদুল হক এর মত এত গবেষণা করে লিখতে! ছেলেটা যাই নিয়ে লিখুক, সেটার উপর সে বিস্তর পড়াশোনা করেই ছাড়বে! স্কুলে থাকতে সে মোটামুটি ধাঁচের ছাত্র ছিলো, কিন্তু তার ভেতরে এমন একটা গবেষণাধর্মী মন ছিলো সেই ব্যাপারটা কখনও বুঝে উঠতে পারিনি। ডক্টর কিজিল বেশ ভালো একটা বই, যথারীতি মাশুদ বেশ পড়াশোনা করেই বইটা লিখেছে বোঝাই যায়। লেখনীর মাঝে উত্তেজনা ধরে রাখার ব্যাপারটা ওর একটা সহজাত প্রতিভা, সেটা এই বইয়েও বহাল ছিলো। সত্যিকারের মতামত দিলে বলবো, ৩টা আলাদা গল্প না পড়ে একটা আস্ত উপন্যাস পড়তেই আমি বেশি খুশি হতাম! কিজিলকে নিয়ে আস্ত একটা টানটান উপন্যাসের আশায় রইলাম!
ডক্টর কিজিল যিনি অত্যান্ত মেধাবী এবং সাইনটিস্ট ও বটে। তার অদ্ভুত অদ্ভুত আবিষ্কার সবার বিষ্ময়ের ব্যপার। গল্পের ন্যারেটর হাসান যিনি ডক্টর কিজিলের এসিস্টেন্ট এবং সব অভিযানের সাথী। যে নিজেও অনেক বার বিপদে পরেছে ডক্টর কিজিলের আবিষ্কারের জন্য। বইয়ে তিনটা গল্প আছে, আমার কাছে ২ নম্বর গল্প "অকুলোম্বুষ দ্বীপ" টা খুব ইউনিক আর মজার লেগেছে। বাকি গুলাও যথেষ্ট ভালো।
মাশুদুল হকের যে ব্যপারটা ভালো লাগে তা হল, তিনি খুব কঠিন ব্যপার গুলা খুব সহজে লেখে যা বুঝতে ও পড়তে সুবিধা হয়। উনার লেখার মধ্যে ফ্লো আছে, খুব দ্রুত তাই পড়াও যায়। আমার মতে "ডক্টর কিজিল" টিনএজ সাইন্স- ফিকশন হিসেবে বেশ ভালো। এবং বড়দেও ভালো লাগবে।
i just hope this is not the end of DOCTOR KIZIL ...... really awesome stories ... but i was heartbroken when i saw there's only three stories .... :( :(
'ডক্টর কিজিল' নামটা এতো ইউনিক আর সুন্দর। বারবার মনে হচ্ছে আমি এতো বড় হয়ে গেলাম কেনো??স্কুল পড়ুয়া আমির কাছে না জানি কি প্রচন্ড ভালো লাগতো এই বইটা।যদিও এখনো যে খুব খারাপ লেগেছে তা না, বরং বেশ ভালো লেগেছে।
ডক্টর কিজিল কে নিয়ে কটকট, অকুলোম্বুষ দ্বীপ এবং ইউটোপিয়া এই তিনটা শিরোনামে তিনটা গল্প আছে এই বইয়ে।
অকুলোম্বষ দ্বীপের গল্পটা আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।অকুলিম নামক অদ্ভুত জীবটাকে ভেবেই আমার বারবার প্রফেসর হিজিবিজবিজের কথা মনে পড়ছিলো।লিলিপুটের পৃথিবীর আইডিয়া এবং তার ব্যাখ্যা টা দারুণ ছিলো।
অনলাইন ক্লাসের চাপে পড়ার সুযোগ খুব কম পাওয়া যায় ইদানীং,তাই ঈদের ছুটির সদ্ব্যবহার শুরু ডক্টর কিজিলের সাথে।
সাই-ফাই জনরার হিসেবে বেশ ভালো লেগেছে বইটা । বরাবরের মত মাশুদুল হক তার পূর্বের বইগুলোর মত এই বইতেও লেখক হিসেবে বেশ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। বেশ পড়াশুনা-ঘাটাঘাটি করে যে বই লেখেন তার প্রমান পাওয়া যায় ।
ডঃ কিজিল দারুন প্রতিভাবান এবং পাগলাটে স্বভাবের এক বিজ্ঞানী। যিনি তাঁর নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যেমে বৈজ্ঞানিক মহলে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন । অপরদিকে জুওলজি থেকে পাশ করে চাকরীর সন্ধানরত এক যুবকের সাথে বেশ অদ্ভুত ভাবেই পরিচয় হয় ডঃ কিজিলের। দিন কয়েক পরে যখন সেই যুবক চাকরীর ভাইভা দিতে হাজির হলেন সেই কিজিলের কাছেই । রিসার্চ এসিটেন্ট হিসেবে কিজিলের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীন হয়েছেন, তা'ই মূলত তাঁর জবানীতে উঠে এসেছে এই বইতে ।