অস্থির আর ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ সময়ে ঘটে যাওয়া একটি খুনের রহস্য উদঘাটনে মরিয়া ভিন্ন মত আর স্বভাবের দু-জন মানুষ । অভিনবভাবে এক সন্দেহভাজনের সন্ধান পেলো তারা, অনেক কষ্টে তাকে ধরাও হলো কিন্তু হত্যারহস্য আর মীমাংসা করা গেলো না । এ ঘটনাটা বদলে দিলো তদন্তকারি দু-জনসহ আরো কিছু মানুষের জীবন ।
দুই যুগ পর স্মৃতিভারাক্রান্ত এক লেখক ব্যস্ত হয়ে পড়লো সেই হত্যারহস্য নিয়ে । চমকে যাবার মতো একটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হলো তাকে । বিস্ময়কর সত্যটা জেনে যাবার পরও নতুন এক সঙ্কটে নিপতিত হলো সে- সত্যটা প্রকাশ করার জন্য নির্ভর করতে হবে প্রকৃতির উপরে!
‘কেউ কথা রাখেনি’ একটি কাব্যিক অভিব্যক্তি । ঢালাও অভিযোগও বলা চলে । কিন্তু সত্যটা হলো, কেউ কেউ কথা রাখে।
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নিরীক্ষাধর্মী একটি কাজ । তার আগের কাজগুলোর তুলনায় একেবারেই ভিন্ন ।
MOHAMMAD NAZIM UDDIN (Bengali: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন) is a writer and Translator of more than 26 novels..His original works are NEMESIS, CONTRACT, NEXUS, CONFESSION,JAAL, 1952: nichok kono number noy, KARACHI, RABINDRANATH EKHANE KOKHONO KHETE ASENNI and KEU KEU KATHA RAKHE. These six Thriller novels are highly acclaimed by the readers.
বইটার নামটা কেমন যেন একটু অন্যরকম না? সাধারণত থ্রিলার এর সাথে এরকম নাম যায় না। প্রেমের উপন্যাসের একটা ভাব আছে। আসলে তা নয়, থ্রিলার ই। তবে আসলেও অন্যরকম। বই এর মুখবন্ধেই লেখক বলে দিয়েছেন এটা উনার একটা নিরীক্ষাধরমী বই। তাই এক্সপেকটেশন ও কমিয়েই রেখেছিলাম। এটাও হয়ত ভাল লাগার আরেকটা কারণ হতে পারে। পিরিওডিকাল থ্রিলার, বাংলা তে এর আগে কখনও পড়েছি বলে মনে পড়ে না। তাই তুলোনা করার মত অন্য কোন বই ও নেই হাতে। বই এর কাহিনী সংক্ষেপ বলতে গেলে - বইটা লেখা হয়েছে একজন লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বই এর মূল ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭৫ সালে, যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশে। একজন তরুণী খুন হয়, তার এই কেস এসে পড়ে লেখক আর তার বসের উপর, দুইজনই পুলিশ ছিলেন তখন। পাওয়াও যায় খুনীকে। কিন্তু রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ এ বের হয়ে যায় সে। কিছু আলাদা আলাদা ঘটনাও ঘটে। যা বদলে দেয় লেখক সহ আরো অনেকের জীবন। এত্তদিনে সেটা নিয়ে একটা বই লিখতে বসে সেই ঘটনা সম্পর্ক এ নতুন কিছু খুজে পায় লেখক। আর আর সেই খুজে পাওয়া জিনিসটাই বই এর মূল টুইস্ট। বইটার একদম শেষ টুকু পড়ে আসলেও ভালো লেগেছে। আসলে বই এর কাহিনীর সাথে ততকালীন(মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী) রাজনীতি, এদশের সমাজব্যবস্থা এটাও ফুটে উঠেছে দৃঢ় ভাবে। আর প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে পুরো উপন্যাসের চালিকাশক্তি ই প্রেম। এটা বই পড়ার পর ই বুঝতে পারবেন। আর বই এর শুরুতে অন্যরকম একটা ধাক্কা খাবেন। এটা পড়তে বসলেই বুঝে যাবেন। নাজিম ভাইকে ধন্যবাদ আবার এরকম অন্যরকম একটা লেখা লেখার জন্য।
আমি জানিনা আর কেউ বইটা পড়তে গিয়ে আমার মত কেঁদেছে কিনা। কিন্তু আমি কেঁদেছি, বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে না কাঁদলেও অনেকটা সময় ধরে নিঃশব্দে কেঁদেছি।
এই হায়দার সাহেবকে যদি সামনে পেতাম মিলিটারি স্টাইলে একটা স্যালুট ঠুকে দিতাম। তারপর জানাতাম যে তার সব কথাগুলো একে একে সত্যি প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে। জানাতাম যে এই দেশটার এখন তার মতন একজন হায়দার সাহেবকে বড্ড দরকার। তার মত আরোও কিছু হায়দার সাহেব থাকলে হয়ত আজ দুদিন পরপর মোমবাতি হাতে রাস্তায় নামতে হত না। হয়ত বিচার পেত দুএকজন সত্যিকারের মিলি। তবুও সান্তনা আছে কেউ কেউ কথা রাখে। সত্যিই রাখে, আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রাইম জনরা থেকে বের হতে চেয়েছিলাম তাই নাম দেখেই এই বইটা নিয়ে বসে যাই। ভেবেছিলাম রোমান্টিক গোছের কিছু হবে। কিন্তু পড়তে গিয়ে যখন দেখলাম আবার সেই ক্রাইমের মধ্যেই ঢুকে পড়েছি তখন একটুও আফসোস হয়নি। এই বইটার আমি কোনো সাহিত্য বিচারে যাব না। শুধু ধন্যবাদ জানাবো নাজিম উদ্দিন সাহেবকে। প্রিয় হয়ে থাকবে এই বইটা আমার❤️
কোন জনরার বই? থ্রিলার কি ঐভাবে বলা যায়! লেখক চরিত্রের মতে ক্রাইম ফিকশন কিন্তু কোনো টুইস্ট নেই, নাটকীয় উপাদান নেই, আছে ট্র্যাজেডি।
আর এত ভাল লাগার কারণ!? বইয়ের নাম; নীল রঙের সুন্দর প্রচ্ছদ; পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া লেখক আর রামজিয়ার সবকিছু জানাশোনা সত্ত্বেও একটা নির্দিষ্ট সমান্তরাল গন্ডির মধ্যে আটকে থেকে তরুণ লেখক ও তরুণী রামজিয়ার আসা যাওয়া; একজন হায়দার ভাই; আর মিলি- ভিক্টিম মিলি নয়! স্বামী মিনহাজের ঘরে বিয়ের স্মৃতি নিয়ে মায়াভরা চোখে স্থির হয়ে থাকা মিলি! আবার 'কেউ কথা রাখেনি' থেকে 'কেউ কেউ কথা রাখে' হয়ে যাওয়াটাও প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে।
~২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আমার বিশ্বাস দেশের এই কঠিনতম সময়েও কোথাও না কোথাও দু'একজন করে হায়দার ভাই আছেন। হায়দার সাহেব!?ভালোবাসা জানবেন💙 কেউ কেউ সত্যিই কথা রাখে। যেমন- আমি, এইবার হার্ডকপিই পড়ছি😌
~৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
১ম বার পড়ার পর🐸 -
বইটি কেন যে আগে পড়িনি!!!! শুরু করলাম সন্ধ্যায় । বাসায় থাকলে বই টানা পড়া কষ্টের। হোস্টেলে ছুটির দিনে দিব্যি আরামসে বই পড়া যায়। যাই হোক শেষ হলো একটু আগে,রাত ১টা বেজে ২০ মিনিট। খুব ভালো লেগেছে, একটা কপি কালেক্ট করে রাখার চেষ্টা করবো।
তনুর কথা মনে আছে? ঐ যে কৈশারের পথে হাঁটি হাঁটি পা হেঁটে কিশোরী থেকে তরুনীতে রূপান্তরিত হওয়ার পথে যার কৌমার্য কে খুবলে খেয়েছিলো ক্যান্টনমেন্টের একদল পশু,হা পশুই তো তারা।যাদের ক্ষমতার প্রভাবে ময়নাতদন্তের পাতায় লেখা হয়েছিলো মৃত্যুর কারন ভাল্লুকের আক্রমণ!
এক জলজ্যান্ত জীবন প্রদীপ যারা জোর করে নিভিয়ে দিলো লালসার সাথে তাদের কে বলে মানুষ তারে পশু সেইজন এবাক্য ও কম পড়ে যাবে।
তনুর তরী ডুবে গেছে সেই কতদিন আগে,এখন তা বিস্মৃতির অতলে তলিয়েছে,প্রিয়জন ছাড়া তাকে মনে করার প্রয়োজন কারো নেই এই ব্যস্ত সময়ে।
তনুকে ভুলে গেছি,মনে পড়ে না তাকে,কারো কিছু হলে সরগম হওয়া ফেবুর টাইমলাইন ছাড়া বাস্তবায়নের সময় প্রশাসনের ক্ষমতাসীনের সামনে অন্তঃসারশূন্য অভিব্যক্তি দেখে চাপা নিঃশ্বাসে নিজেকে বোঝাই ও কিছু না,হুজুগে বাঙ্গালী কিছু পেলে বাকবিতণ্ডা করবেই,সবাই তো হায়দার আলী নয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ঘটনায় মিডিয়া পাড়া এক আশ্চর্য নীরবতার মোড়কে পেটিপ্যাক হয়ে রইলো ,আনভীর মুনিয়া কেসে পুরো প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া আর পদক্ষেপ দেখে অপরাধীর তালি আর সাধারনের গালি ছাড়া বিশেষ কিছু করার ছিল না কারোই।মেয়েটি হয়ে গেলো পেশাদার দেহপ্রসারিনী আর সবার ভাসুর ঠাকুর নিশ্চিন্তে উড়াল দিলেন বিদেশ বিভুঁইয়ে।কিছুদিন আগে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কলিজাওয়ালাকে জামাই আদরে বরন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দন্ডে দন্ডায়মান শক্তি করে নিলো ক্রীড়া সংগঠনের সভাপতি।
ক্ষমতার কি মহিমা না! এদেশের লোকের আইনের উপর ভরসা না থাকলেও অর্থ প্রতিপত্তির প্রভাব নিয়ে আস্থা আজো রয়েছে অটুট।
লেখক সেই একাত্তর পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া এক মিষ্টি দম্পতির তিনমাসের সংসার তাসের ঘরের মতো এক ধর্ষন ঘটিত মৃতু্যতে ভেঙে যাওয়ার গল্পে আমি দেখেছি আমার স্বাধীন বাংলার বর্তমান চিত্রকে।
যেখানে ইমতিয়াজরা হেসে খেলে বেড়ায়,যেখানে হায়দার আলীরা হেরে যায় দৃশ্যমান শক্তির অদৃশ্য অসম্ভব ক্ষমতার কাছে। অনাচারের কাছে দুর্বল হৃদয়ের সাব ইন্সপেক্টর চাকরি ছেড়ে হয়ে যায় লেখক।ঠোলা হয়ে চোখে ঠুলি পরে অধীনস্থ থাকার মতো অপমান নিয়ে অর্ধমৃত থাকার চেয়ে লেখার কাজটাই সহজ সত্য বলে বেছে নিয়েছে সে।
শুরুর দিকে যে গল্প পড়ে আমার মনে বেজেছিলো সুনীলের"কেউ কথা রাখেনি"সেই লাইনগুলো।রামজিয়ার সাথে সেই অব্যক্ত অসম্পূর্ণ প্রনয়ের সুরে মনে পড়েছিলো আর জন্মে আরণক বসুর "তোমার প্রথম পুরুষ হবো"এই লাইনের মতোই আকুলতা।
দৃশ্যপট বদলে গেলো,সুদূর অতীত থেকে বর্তমানের সমান্তরালের স্রোতে ভেসে যাওয়া আমার মন মিলির জন্য মনভাঙা কষ্ট,সরকারের প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা সবকিছু ছাপিয়ে;
এক অকুতোভয় একগুঁয়ে আর্দশ সৈনিকের অচিরেই নির্ম��ভাবে চলে যাওয়ার গল্প,এক পিতার অনাগত সন্তানের আশায় অসম্ভব প্রতিজ্ঞায় পড়েও তাকে না ছুঁতে পারার আজন্মের আক্ষেপ। হায়দার আলী আপনি যেখ���নেই থাকুন না কেন ভালোবাসা জ্ঞানে রইবেন এই ক্ষুদ্র পাঠকের মনে। বাকি রইলো এ থ্রিলার না রোলার কোস্টারে চেপে এক আনন্দবেদনার এক জার্নি,জীবন যেখানে শুরু হওয়ার আগেই নিভে গিয়েছিলো,কিংবা দুই যুগ পরে ছাইচাপা আগুনের মতো জ্বলে উঠেছিলো শাণিত কলমের অক্ষরে লেখার পাতায় বা সাধারনের মনে এ বিচার নিতান্তই ব্যক্তিগত।
দুই বসা এবং এক শোওয়ায় শেষ করে ফেললাম 'কেউ কেউ কথা রাখে '। কাহিনি এক কথায় মাইন্ডব্লোয়িং, আর লেখনী এখন পর্যন্ত নাজিম ভাইয়ের সবগুলো বইয়ের মধ্যে সেরা। তবে কাহিনি বা লেখনি না, যে কারনে নাজিম ভাইকে স্পেশাল থ্যাংকস দিতে চাই সেটা হচ্ছে, গল্পের প্রেক্ষাপট। কোন এক 'দুর্বোধ্য' কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ 'শীর্ষ স্থানীয়' কবি-সাহিত্যিকেরা স্বাধীনতা পরবর্তী এই অস্থির সময়টা নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা বলতে চান না, সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব এড়িয়ে যান এই সময়কালটাকে। কারনটা ঠিক স্পষ্ট না, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা বা মেরুদণ্ডে সমস্যা হতে পারে। নাজিম ভাই কে স্পেশাল থ্যাংকস, নির্মোহভাবে এই অস্থির সময়টাকে তুলে ধরার জন্য, সাহসীভাবে অপ্রিয় কিছু সত্য কথা বলার জন্য।
অতীত আর বর্তমানের মিশেলে এক অন্যরকম নেক্সাস। কোনো টুইস্ট নেই, থ্রিল নেই, অতি নাটকীয় নেই। আছে শুধু হালকা সাসপেন্স আর ট্র্যাজেডি। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনীতির মাঝে বেড়ে ওঠা এক চরিত্রের অপকর্ম কিভাবে কয়েকটা জীবন বদলে দেয়, তারই একটা আখ্যান এটা। লেখকের প্লট, লেখনী ছাড়িয়ে যেটা সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে সমাজ, রাজনীতি, মননের অসঙ্গতি তুলে ধরার বিষয়টা। এ বইটাও তার ব্যাতিক্রম না। এসএম হায়দার চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক খন্ডচিত্র। বড় নেতাদের রেফারেন্সে পাতিনেতারা কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে তা লেখক ফোকাস করেছে পুরো উপন্যাস জুড়েই। আবার গল্পকথক চরিত্র দিয়ে লেখক সাধারণ আমজনতার মনোভাব ব্যক্ত করেছে, যারা সব খারাপের ভেতরেও ভালো খুজে চলে। বইয়ে সরাসরি প্রেমের কোনো বালাই না থাকলেও পুরো কাহিনীর মোটিভই ছিলো প্রেম। একটা অধরা প্রেমের গল্পও বলতে পারেন। পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল ইন্সপেকশন তো ছিলোই।
লেখক নাজিম ভাইকে আরোও একবার হ্যাটস অফ। এদেশের লেখকরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময় নিয়ে কিছু লিখতে চান না, স্পর্শকাতর বিষয়ের অজুহাতে (অবশ্য মেরুদন্ডে সমস্যা)। কিন্তু এই বইয়ে তখনকার চিত্র একেবারে পাই টু পাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। রাজনীতির কাছে আমলাতন্ত্রের বন্দিত্ব, সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব, বিচারহীনতা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর লেখনীর কথা বললে, এটাতে লেখক তার সেরা লেখাটা দিয়েছে। একেবারে মেদহীন ঝরঝরে। যার কারণে ট্র্যাজেডি, গল্পকথকের উচ্ছাস গুলা অনুভব করা যাচ্ছিলো।
"There's no justice in the world, not unless we make it."
গেইম অফ থ্রোন্সের বিখ্যাত কূট চরিত্র পিটার বেইলিশ এর এই কথাটা প্রায়সময় মাথার ভেতর ঝেঁকে বসে। বইটা শেষ করার পরেও সবার আগে এই কোটেশনের কথা'ই মনে হলো। পাঠানুভূতি ব্যাখ্যা করতে গেলে এই এক লাইন দিয়েই শেষ করে দেয়া যায়!
আগেও বলেছি, লেখক নাজিম উদ্দিনের লেখার হাত বেশ ঝরঝরে। পড়ে আরাম পাওয়া যায়। এমনকি খুব সাদামাটা প্লটও টানা পড়ে যেতে হয়। কেউ কেউ কথা রাখে গল্পের প্লাস পয়েন্ট হলো কাহিনী আগে থেকে আন্দাজ করতে পারিনি। এই গল্পে রহস্যের সাথে খানিকটা রোমান্সও যোগ হয়েছে। সবচাইতে ভাল লেগেছে গল্পের পটভূমি। একাত্তরের যুদ্ধপরবর্তী সময়ের টানাপোড়ন গল্পের প্রয়োজনে উঠে এসেছে চমৎকারভাবে। আর গল্পের শেষের টুইস্ট একেবারে প্রাণ জুড়িয়ে দেয়!
প্রথমত, এই বই একটি সামাজিক ঘটনার উপস্থাপক। দ্বিতীয়ত, (যদি টেনেটুনে বলা হয়) এটি একটি পুলিশ-খুনি স্টোরি। তৃতীয়ত, এটা নেমেসিস সিরিজ হলে আমার এভালুয়েশন অন্য হত। যেহেতু এটা তা নয়, সেহেতু বইটা পড়ার সময় অন্য মানসিকতা কাজ করেছে।
এবারে আসি আসল কথায়। কেউ কেউ কথা রাখে। নামকরণ কি স্বার্থক হয়েছে? এক সেন্সে হয়েছে। একজন তো কথা রেখেছেই! কিন্তু কেউ কোনও কথা সেভাবে দেয়নি। গল্পে রোমান্স আছে, বেশ ভাল দেখানো হয়েছে রোমান্সের বিষয়টি। ভাসা ভাসা আকর্ষণ সেই ভালবাসার, আছে, অথচ নেই, আবার মনে হচ্ছে আছে। :P মন্দ কি!! ব্যাপারটা যে কারও জন্য বেশ রিলেটবল হবার কথা। :)
কিন্তু বইটা ভাল লাগার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, লেখক একটি সাহসী লেখা লিখেছেন। স্বাধীনতা উত্তর যুগের পলিটিক্স নিয়ে লেখার দুঃসাহস, তাও আবার সরাসরি, তাও আবার আমাদের দেশে! ভাবাই যায় না। এখানে একটি দ্বৈত কণ্ঠ আছে, সব কাজের অপকর্মের প্রতি চোখ বুজে, তার থেকে ভাল কিছু পাবার যুক্তি খোঁজে। এই সত্ত্বাতি যথেষ্ট বাস্তব। আমাদের আমজনতার সাথে অমূল মিলে যায়। আবার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটিও আমরা। নিজেদের মাঝে অনেক কিছুই বলছি, অথচ সমাজ বদলাতে পারছি না সামান্য কিছু মানুষের বাঁধার জন্য। এই অনুভূতি তখনও ছিল, এখনও আছে। বইটা পড়ে মনে হয়েছে, তাহলে সমাজে বদলালটা কী? ভালোটা কী হলো, এই এত বছরে? কে জানে! আমি যথেষ্ট বিভ্রান্ত।
গল্পে সবচে ভাল লেগেছে হায়দার ভাই চরিত্রটি। তারপর ভাল লেগেছে রামজিয়া শেহরিন চরিত্রটি। বিশেষ করে হায়দার ভাই এই গল্পের প্রাণ। লেখকের বিভিন্ন ফিলসফি, উঠে এসেছে এই লোকের মুখ হয়ে, কিংবা মূল বক্তার মুখ থেকে। উপন্যাসে এমন একটি বিশেষায়িত চরিত্র থাকলে পড়তে আসলেই চমৎকার লাগে।
যাই হোক, এক কথায়, বইটা এক টানেই পড়ে ফেলা গেছে। মাঝে একটু ব্রেক নিয়েছিলাম কিছু কাজের জন্য। পড়ে আবার বসে একটানে শেষ। এবছরে নাজিম উদ্দিনের প্রথম বই, একটি সামাজিক উপন্যাস হিসাবে চমৎকার লাগল।
বই: কেউ কেউ কথা রাখে লেখক: মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জনরা: মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার প্রচ্ছদ: ডিলান প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০১৫ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৯ মুদ্রিত মূল্য: ৩৮০/- (বইঘর ই-বুক ৬৫/-)
একটি পান্ডুলিপি... ❝কেউ কথা রাখেনি❞ থেকে ❝কেউ কেউ কথা রাখে❞ হয়ে ওঠার গল্প।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে সবকিছু গুছিয়ে নিতে হঠাৎই রেপ- মার্ডার কেসের কাজে নেমে পড়েন দুই পুলিশ অফিসার। তারপর?
গতবছরই পড়া শুরু করেছিলাম কিন্তু স্পয়লার পেয়ে যাওয়ার জন্য শেষ না করেই রেখে দিয়েছিলাম। স্পয়লার ভুলে না গেলে পড়বো না ঠিক করার পরও, অবশেষে পড়েই ফেললাম। বইয়ের কাহিনী দুটা টাইমলাইনের। পান্ডুলিপির প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়কার। অপরাধীকে খোঁজা, ধরা, পরিণতি পান্ডুলিপিতে আছে কিন্তু সমাপ্তি মিসিং। আচমকাই সমাপ্তিও পাওয়া যায় তবে সমস্যা শুরু হয় বইয়ের প্রকাশকাল নিয়ে। লেখক কেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন? একজন মুক্তিযোদ্ধা, অপরাধ সহ্য করে না; একজন লেখক, অতীতের ভয়াল স্মৃতি একগুচ্ছ কাগজে বন্দী করতে চায়; একজন বিধ্বস্ত স্বামী, প্রিয়তমার বিয়োগে নিভৃতে- নির্জনে বসবাস করছে; আরও কিছু চরিত্র ��য়েছে যাদের জীবন হঠাৎই বদলে যায় একটি খুনের ঘটনার জন্য।
মার্ডার, মিস্ট্রি, থ্রিল, এডভেঞ্চার, পলিটিক্স, রিভেঞ্জের মিশেলে দারুণ একটা বই সাথে ঝরঝরে লেখনশৈলী। বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় হলো চরিত্রায়ন আর এন্ডিং। এস এম হায়দারের চরিত্রটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। মিনহাজকেও সহজে ভোলা সম্ভব নয়।
মার্ডার মিস্ট্রি হিসবে প্রথমদিকে খুবই স্লো বলা চলে। কাহিনী কেমন যেন আগাতেই চাচ্ছিলো না, তবে শেষটায় এসে আক্ষেপ আর নেই। বইয়ের শুরুতে প্রকাশকের কথা অনুযায়ী এটি একটি সত্য ঘটনা। সত্য ঘটনা হয়ে থাকলে ঘটনাটা জানার জন্য বইটা পড়া যেতে পারে। কিন্তু লেখক ছোট ঘটনাকে টেনে বড় করে ফেলেছেন বলে আমার মনে হয়েছে। ২৭০ পৃষ্ঠার বইটা অনায়াসে ১১০ পৃষ্ঠায় শেষ করা যেতো। তাহলে হয়তো কাহিনীর প্রবাহ আরো দ্রুত হতো পাঠক সহজে কানেক্ট হতে পারতো।
ছায়া অবলম্বনে লিখা হলেও লেখকের মৌলিকতার ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যায় এই গ্রন্থে। বইটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী কালীন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এক অমীমাংসিত খুনের কেসকে উপজীব্য করে লিখা। বইটি পড়লে টের পাওয়া যায় তখনকার বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নাই। বিচার পাওয়া এই দেশে বিলাসিতা। কেউ কেউ কথা রাখে আমাদের কে আশা করতে শিখায়। সত্য জীবনে কি আসলেই কেউ কেউ কথা রাখে?
শুরুতে গল্পটা আপনার হয়ত সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু যতদূর আগাবেন, মত পাল্টাতে বাধ্য হবেন। অনবদ্য চরিত্র চিত্রণ ও পরিবেশ বর্ণনার ফলে লেখা খুবই সুখপাঠ্য ছিল। একটানা পড়ে শেষ করা গেছে। আবার সত্তর দশকের অস্থির আর ঝঞ্ছাবিক্ষুদ্ধ সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশী লেখকেরা তেমন লিখেন না। তাই এই পিরিয়ডটাকে নাকি সাহিত্যের দ্বিতীয় অন্ধকার যুগ বলেই বিবেচনা করা হয়! সেই জায়গায় নাজিম ভাই কী দারুণ নিপুণতা ও সাহসিকতার সাথে সত্তর দশকের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যপারগুলো আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। নিঃসন্দেহ প্রসংসার দাবি রাখে! এবং বলতেই হয়, আরেকটি চমৎকার থৃলারের দেখা পেলাম।
আমার পড়া মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের দ্বিতীয় বই এটি। প্রথম বই ছিল "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি"। তার বইয়ের নামগুলো বেশ চমকপ্রদ হয় বইগুলোর মতই। পড়ার আগে বইয়ের নাম নিয়ে অনেকখানি চিন্তা করে ফেলা যায়। "কেউ কেউ কথা রাখে" নামটার পেছনের যুক্তি গল্পের শেষ অংশে না আসা পর্যন্ত পরিস্কার হচ্ছিল না।
গল্পের প্রেক্ষাপট বেশ সাহসী। আসলেও বেশ সাহসী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এমএস হায়দার নামক চরিত্রের মুখ দিয়ে খুব বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ পেয়েছে এখানে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আবেগের টানাপোড়েন নিয়ে গড়া কাহিনীটা মনে হবে খুবই পরিচিত। এরকম কতই তো হচ্ছে আশেপাশে। কিন্তু এই একটা সাধারণ ঘটনা কীভাবে অনেকগুলো মানুষের জীবনকে পালটে দিল সেই অসাধারণ বর্ণনা মুগ্ধ করে দিবে।
আর্জেন্টিয়ান ঔপন্যাসিক সাচেরির লেখা পিওরিডিক্যাল মার্ডার মিস্ট্রি "লা প্রেহুন্তা দে সুস ওহোস" এর উপর করা একটি নিরীক্ষাধর্মী লেখা এটি। এত সুন্দর ঝরঝরে লেখা উনার! পরের বই শুরু করার সময় নাজিম উদ্দীনের লেখা মৌলিক কোনো একটা থ্রিলারই রাখব ভাবছি।
যুদ্ধ পরবর্তী অস্থির ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে ঘটে যাওয়া একটি খুনকে কেন্দ্র করেই পুরো উপন্যাসের বেড়ে ওটা। ১৯৭৪ সালে তিন মাসের নবো বিবাহিতা মিলির ধর্ষন ও খুনের কেসের তদন্ত পড়ে সাব ইন্সপেক্টর এস এম হায়দার ও তার অ্যাসিসটেন্টের উপর। সূত্র ধরে ধরে খুনিকে পেয়ে যায় তারা। অনেক চড়াই উতরাইয়ের পর খুনিকে ধরে ফেলতেও সক্ষম হয়। মিলির স্বামী মিনহাজের একটিই আবেদন, "ফাঁসি দেয়া যাবে না খুনিকে, তাকে যাবতজীবন দিতে হবে। যাতে মৃত্যুর যন্ত্রনা সে হারে হারে টের পায়।
কিন্তু ক্ষমতাসীন দের ক্ষমতার বলে জামিন পেয়ে যায় খুনি। ইন্সপেক্টর হায়দার অনেক চেস্টার পরও আটকে রাখতে পারে না খুনিকে। একটি খুনের রেশ ধরে ঘটে যায় আরোও একটি খুন। বদলে যায় ঘটনার সাথে জড়িয়ে থাকা অনেকের জীবন।
খুনের দুই যুগ পর এক লেখক এই ঘটনার শেষ খুজতে বেরিয়ে পড়ে। মূলত তার বর্তমান এবং স্মৃতিচারন থেকেই পুরো ঘটনা জানা যায়। শেষ খুজতে খুজতে লেখক মুখোমুখি হয় পড়ে এমন এক বিষ্ময়কর সত্যর। যে সত্য প্রকাশ করতে নির্ভর করতে হবে প্রকৃতির উপর। কিন্তু কি সেই বিষ্ময়কর সত্য ?
মোহম্মদ নাজিম উদ্দিন এর খুব বেশি লেখা পড়ার সুযোগ হয়নি আমার। এর আগে তার "রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি" পড়ে দারুন মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবারও মুগ্ধ হলাম। বইটিতে উঠে এসেছে যুদ্ধ পরবর্তীকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের সততা ও একনিষ্ঠতা, স্ত্রীর প্রতি প্রেম ও প্রতিজ্ঞা রক্ষা। সত্যিই অন্য রকম একটি বই।
নামটা অনেকর কাছেই বেক্ষাপ্পা লাগতে পারে। তার কারন হচ্ছে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর কবিতা "কেউ কথা রাখে নি"। কিন্তু বইটা শেষ করার পরে নামকরনের সার্থকতাটা আপনিই বুঝতে পারবেন।
বইয়ের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পড়ার পরই পাঠক জেনে যাবে খুনি কে ? তেমন কোনো টুইস্টও নেই কাহিনীতে। তবুও পাঠক কে পড়তে হবে। পড়তে হবে শেষ জানার জন্য।
নিরীক্ষাধর্মী বলেন আর এডাপ্টেশনই বলেন বইটি শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আপনাকে বলতেই হবে, কেউ কেউ কথা রাখে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ শেষ ভালো যার,সব ভালো তার। বইটা শেষ করার পর একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম৷ এক চমৎকার আখ্যান বলে গিয়েছেন লেখক। ১৯৭৪- ১৯৭৫ সালের প্লট নিয়ে লিখা চমৎকার একটা বই। বই জুড়ে আছে আনন্দ,দুঃখ,রোমান্স,রহস্য, চোর পুলিশের ইঁদুর দৌড় খেলা, বিষাদ, আর রাজনীতির কূটচাল। বইয়ে রাজনৈতিক আবহ অনেক চমৎকার ছিলো।
প্রতিটি চরিত্র আলাদা ভাবে মনে দাগ কেটে যায়। এস আই হায়দারের চরিত্রটা ছিলো অসাধারণ। লেখক চমৎকার ভাবে এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। কোনো ধরনের অতিরঞ্জিত জিনিসের ছাপ পড়েনি চরিত্রের মধ্যে। এক বিষাদময় আবহ ছড়িয়ে পড়েছিলো এই চরিত্রের পরিনতি দেখে।
বইটা বলতে গেলে দুইটা টাইমলাইনে চলে। একটা বর্তমান সময়ের আরেকটা ৭৪-৭৫ সালের প্রধান চরিত্রের স্মৃতিচারণ এর কিংবা পান্ডুলিপির গল্পের।
এই বইটার সবচেয়ে বড় পাওনা হলো এর সমাপ্তি। এর থেকে ভালো সমাপ্তি আর হতে পারে না বইয়ে। টুইস্ট গুলো ধরা গেলেও বইয়ের লেখনী আর সমাপ্তির জন্য বইটা আলাদা ভাবে ফুটে উঠেছে। এরকম সমাপ্তি একজন পাঠককে নিঃসন্দেহে সন্তুষ্ট করতে পারবে।
সম্পাদনা: বইয়ে খুব কম বানান ভুল ছিলো।প্রকাশনীর আগের বইয়ের তুলনায় এটার বানান ভুল অনেক কম ছিলো৷
বইয়ের জনরা : এই প্রথম আমি বইয়ের জনরা নিয়ে আলাদা করে লিখছি। আসলে বইটাকে অনেক জনরায় ফেলা যায়। রাজনৈতিক, রোমান্টিক, থ্রিলার, মার্ডার মিস্ট্রি,পুলিশ প্রসিডিয়াল আরো অনেক জনরায় ফেল��� যায়।
বইয়ের নাম সার্থকতা : বইয়ের নামটা একদম শেষদিকে এসে সার্থক হয়েছে৷ পুরো বই শেষ করার পর পাঠক নিজেই বলে বসবেন আসলেই কেউ কেউ কথা রাখে।
বইটা নিঃসন্দেহে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এর সেরা কাজ। এরকম বই সামনে আরো আশা করি পাবো।
প্রথাগত থ্রিলার নয় এই বইটি। বরং সমাজ আর রাজনীতির নানা অন্ধকার ফাঁক দিয়ে বেড়ে ওঠা একটি চরিত্র ও তার অপরাধ কীভাবে অনেকগুলো মানুষের জীবন চিরতরে বদলে দিল, তার নন-লিনিয়ার অথচ দ্রুতগামী ন্যারেটিভ হল এই উপন্যাস। লেখক অকপটে বলেছেন যে এই কাহিনির মূল উৎস অন্য এক দেশের লেখায়। কিন্তু লেখার গুণে, কেন্দ্রীয় চরিত্রদের শক্তি ও দৌর্বল্যের প্রকাশে, সর্বোপরি অপরাধটির নিরিখে এই কাহিনি যেকোনো দেশের পটভূমিতেই রচিত হতে পারে। তাই এটিকে বিশুদ্ধ বাংলা রহস্যকাহিনি হিসেবে পড়তে একটুও কষ্ট হয় না। ভালো লাগল। শুধু তদন্তটা বড়ো একমাত্রিক ছিল বলে একটি তারা খসালাম।
সেই ২০১৫ সালে শেষ বই পড়েছিলাম । মাঝখানে রিডার্স ব্লকের কপে পড়ে আর কিছু পড়া হয়নি । আজকে একটা কাজে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগ্ননাথ হলে । সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জগ্ননাথ হলের পুকুর পাড়ে বসে বসে শেষ করে ফেললাম এই বছরের প্রথম বই । সেই সাথে রিডার্স ব্লক কাটালাম । grin emoticon
প্লট – স্বাধীনতার পর এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময় । দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল । ঠিক এমনই এক সময়ে খুন হল একটি মেয়ে । দ্বায়িত্ব পেল দুজন পুলিশ ইন্সপেক্টর । গন্ধ শুঁকে শুঁকে খুনিকেও বের করে ফেলল তারা । কিন্তু দেশের পরিস্থিতি বদলে দিল সব । সেই সাথে ঘটনাটা বদলে দিল সেও দুই পুলিশ ইন্সপেক্টরসহ আর কয়েকজনের জীবন । দীর্ঘ দুই যুগ পর সেই মামলার সুরতহাল করতে বসল একজন লেখক । খুঁজে বের করতে চাইল এর পিছনের রহস্য । যার উপর থাকতে হবে আবার প্রকৃতির হাত । শুধু সময়ই বলে দিবে এর উত্তর । কি সেই উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে "কেউ কেউ কথা রাখে "
মার্ডার মিস্ট্রি বইয়ের মূল কনসেপ্ট হচ্ছে “কে?” “কেন?” “কিভাবে?” । বেশিরভাগ সময় একটা বা দুটো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থাকে । পুরো বই পড়তে হয় বাকি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য । সেই সেক্ষত্রে বইটা একটু ব্যাতিক্রম । কারণ বইয়ের কিছুদূর যাওয়ার পরই আপনি জেনে যাবেন সব উত্তর। কিন্তু তবুও আপনি পড়ে যাবেন বইটি । সব উত্তর জানার পরও কেন আপনি বইটি পড়বেন সেই জন্যই বইটি পড়তে হবে ।
ঘটনা এগিয়েছে বর্তমান আর পূর্বের ঘটনা দুইটির পারস্পেক্টিভে । এই রকম প্লট আমারা হরহামেশাই দেখি বিভিন্ন মুভিতে আর বইতে । কিন্তু আমাদের দেশে এই রকম প্লটে বই প্রায় দেখা যায় না বললেও চলে । লেখক সমান তালে দুই সময়কে ফোকাস করেছেন । খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যুদ্ধ পরবর্তী দেশের সেই টালমাটাল অবস্থা । একজন মুক্তিযোদ্ধার আশা আকাঙ্খা । আর দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা, চাওয়া ,পাওয়া আর না পাওয়ার হতাশা । আর সেই সাথে দেশের মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা । ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা তার কতটুকু স্বদ ব্যাবহার করতে পেরেছি আমরা ? সেই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে এসেছে বইয়ে বারবার । একটা জিনিস ভালো লেগেছে সেটা হল লেখকের মেয়ে চরিত্রের উপস্থাপন ধরণ । এর আগে বেশ লেখেকের বেশ কয়েকটি বইতে কয়েকবার নারী চরিত্র টেনে এনেছেন কিন্তু যথাযতভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি বলে আমার কাছে মনে হয়েছে । কেমন যেন খাপছাড়া খাপছাড়া লেগেছিল । কিন্তু “রবীন্দ্রনাথ এখানে খেতে আসেননি” বই থেকে সে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছেন । এইখানেইও সেই ছাপ রেখেছেন । আপাতত বলতে পারি নাজিম ভাই এখন রোম্যান্টিক লেখা শুরু করতে পারেন tongue emoticon । আর নাজিম ভাইয়ের যে একটি নিজস্ব লেখার ধরন তৈরি হয়েছে সেটাও এখন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে । অন্য যে কার বইয়ের সাথে মিলিয়ে দিলে স্পষ্ট বুঝা যাবে উনার লেখা । এই জিনসটা অনেক ভাল লেগেছে ।
তবে বেশ কয়েকটি বিষয় আমার খারাপ লেগেছে বলা যাবে না তবে দৃষ্টি কটু লেগেছে । সে সমস্যাটা আমি আর আগে বেশ কয়েকটি চরিত্রে দেখেছি । সেটি হল মূল নায়ক নায়িকাদের উপস্থিত বুদ্ধিহীনতা । লেখকের প্রায় সব বইয়ের ক্যারেক্টারই হাই প্রোফাইল । একজন সাংবাদিক তো আরেকজন পুলিশ তো আরেকজন অমুক বড় অফিসার বা দেশের উপরের স্থানে আছে । কিন্তু তারা এমন এমন প্রশ্ন করে বা কান্ড করে যা ওই পদের থাকা কন ব্যাক্তির পক্ষে করা অসম্ভব । যেমন এই বইতে একটা জায়গায় একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর জানে না ৩১ ফাস্ট নাইট কি । এটা মানা অসম্ভব । যতই সে ক্ষেতের তলা বা বস্তি ভীতর বা গ্রাম থেকে উঠে আসুক । যতই সেটা যুদ্ধ পরবর্তী সময় হোক । দুই তিন বছর যাবত পুলিশের চাকরি আর টহল দিয়ে সে জানবে না ৩১ ফাস্ট নাইট কি ? তাহলে কি গত দুই বছর সে টহল দেয় নাই কিছু ? না দিয়ে থাকলে এই বছর কিভাবে দিচ্ছে ? এই বিষয়গুলো ছোট কিন্তু সহজে পাঠকের চোখ আকর্ষণ করে । শুধু এই বই নয় আগের বেশ কয়েকটি বইতেও এই প্রবলেম ছিল । তবে আশা করি এই সমস্যা খুব শ্রীঘ্রই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন যেমনটি নারী চরিত্র নিয়ে কাটিয়ে উঠেছেন । আরেকটি বিষয় হল গল্পের প্লট আমাদের দেশের জন্য বেশ ইউনিক । কিন্তু বেশ একটু দুর্বল । মার্ডার মিস্ট্রিতে আমরা একটু টুইস্ট বা এমন কিছু ক্লু পাই যা খুবই ভাইটাল । কিন্তু বইতে খুব ভালো কোন ক্লু নেই । ঠিক যেন : খুন হল ! আসলাম , দেখলাম , সহজে পেয়ে গেলাম খুনী । এই একটু অফসোস রয়েই গেল এই কারণে (শত হলেও আমরা পাঠক । আমাদের খায়েশ পূরণ করা বড়ই দুরহ tongue emoticon )। তবে এর আরেকটি কারণ হয়তো মুভিতে ফ্ল্যাশব্যাকে টুইস্ট গুলা দেখায় । কিন্তু বইতে তো সেই সুযোগ নেই । সাধারণভাবে বর্ণনা করে টুইস্ট গুলো বর্ণনা করতে হয় । তাই অতটা আকর্ষণীয় দেখায় না । কারণ প্রধান টুইস্টটা জানার পর আমি ভেবে দেখলাম মুভিতে এইটাকেই খুব ভাইটালভাবে দেখান যেত । যেটা বই বলে সম্ভব হচ্ছে না ।
বইয়ের কয়েকটি দুর্বল দিকে বলতে গিয়ে দেখি প্রশংসার চেয়ে সমালোচনাই বেশি করছি । আদতে বইটি খারাপ তো নয়ই বরং ভালো । বলা ভাল বেশ ভালো । দুই একটা বিষয় যা একটু কনফিউশন তাও ছাড় দেওয়া যায় । কারণ মানুষ তো ১০০% না ।আর এতো মানুষেরই লেখা একটা বই ।
স্পয়লার এলার্ট –
লেখক মুখবদ্ধতেই বলে দিয়েছেন বইটি এদুয়ার্দো সারেচির “লা পেহুন্তা দে সুস ওহোস” এর থেকে ছায়া অবলম্বে লিখেছেন । নিজে মৌলিক ও দাবি করেনি আবার অনুবাদ করেনি । তাই এই বিষয়ে ত্যানাত্যানী না করাই ভালো ।
বইয়ের শুরুতেই লেখক লিখে দিয়েছিলেন যে এটা তাঁর নিরীক্ষাধর্মী বই। তাই খুব একটা আগ্রহ নিয়ে বইটা শুরু করিনি, কিন্তু যখন ধীরে ধীরে সামনে এগোচ্ছিলাম, ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম।
বইয়ের প্লট খুবই ছিমছাম, কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় এখানে তুলে আনা হয়েছে। পুরো বইজুড়ে দুটো সময় বর্ণনা করা হয়েছে: বর্তমান সময় ও যুদ্ধপরবর্তী সময়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অনেক সমস্যাগুলোর একটা হচ্ছে তেলাপোকার মতন সন্ত্রাসী কাজকর্ম ও অরাজকতা বেড়ে যাওয়া। বিভিন্ন বড় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে যত অনৈতিক কাজ করা যায়, সবই এই বইয়ে বলা হয়েছে৷ বইটা পড়তে পড়তে খুব রাগ হচ্ছিল, কারণ ৭৫ এর সময় যেমন বাংলাদেশ ছিল, এখনো তেমনই আছে, এতটুকু পরিবর্তন হয়নি৷ এখনো রাজনৈতিক নেতাদের আড়ালে থেকে কত মানুষ ধর্ষণের মতন রাহাজানি করে, সেসব মামলা ফাইলের নিচে চাপা পড়ে যায়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দাগী আসামীরা এখনো মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়। একটা সময় সবাই ধীরে ধীরে সেসব কথা ভুলে যায়, শুধু ভুলতে পারেনা ধর্ষিতার আত্মীয়রা।
যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মিলি নামের এক সদ্য বিবাহিতা তরুণীকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়৷ আর সেই ঘটনার তদন্তের ভার পড়ে দুজন সৎ পুলিশ অফিসারের উপর। ভিকটিমের স্বামীর থেকে পাওয়া একটি ছবিই হয়ে ওঠে খুনীকে ধরার মূল সূত্র। কিন্তু পুলিশ দু'জন কি খুনীকে ধরতে পেরেছিল? প্রশ্নটা আপনাদের জন্যই তোলা থাক। তবে একজন পুলিশ অফিসার চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর লেখক বনে যান, আর লিখতে বসেন এই কেসের কাহিনী৷ কিন্তু না, গল্প শেষ না বরং গল্পের মোড় ঘুরে এখান থেকেই৷
সাধারণত থ্রিলার বই বলতে আমরা যা ভাবি, এখানে সেরকম টুইস্ট নেই, কিন্তু বইটা পড়ার সময় আপনার মনে মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হবে। লেখক খুবই চমৎকারভাবে কাহিনী বর্ণনা করেছেন, এতটুকু খারাপ লাগেনি। কারো জন্য কষ্ট হবে, কারো জন্য ভালো লাগবে, আর রাগ তো হবেই। কারণ প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া, ইভটিজিং করার মতো ঘটনা তো এখনো ঘটছে, এদেশের উন্নতি ঠিক কোনদিক দিয়ে হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছি না। এরপরেও আমরা স্বপ্ন দেখি সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশে থাকার। কারণ নেতারা আমাদের বছরের পর বছর কথা দিয়ে যান, আর আমরাও "কেউ কেউ কথা রাখে" বুলি আওড়াতে থাকি।
প্রথম বিশ পৃষ্ঠা পড়ে বুঝতে পারি যে, আরে এই কাহিনী তো আমি জানি; মুভিটা দেখেছিলাম। কিন্তু ঐ বিশ পৃষ্ঠায় কিছু একটা ছিলো যার কারণে কৌতূহলী হয়ে পড়া চালিয়ে যেতে থাকি।
প্লট নিয়ে কিছু বলবো না। বরং বলবো প্লটটিকে দেশীয় প্রেক্ষাপটে এতো সুন্দরভাবে রূপ দেওয়ার সার্থকতা। ভিন্টেজ সেবার একটা এসেন্স পাওয়া যায় তাতে। ভালো লেগেছে দুই সময়ের প্যারালালি এগিয়ে যাওয়া। ভালো লেগেছে যুদ্ধ পরবর্তী উত্তাল সময়ের কিছুটা উত্তাপ নিয়ে আসার ব্যাপারটা। তবে সব ভালো লাগার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে 'এস এম হায়দার' চরিত্রটি। এই খ্যাপাটে চরিত্রটি পুরো উপন্যাসের ইমোশনাল ভ্যালু অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। অবিস্মরণীয় জীবন্ত একটা চরিত্র যেন! পরিশেষে আফসোস, মুভিটা না দেখলে হয়তো পুরো উপন্যাসটার উপভোগ মাত্রা বেড়ে যেতো হাজারগুণ।
"সেটাও কোনো সমস্যা হতো না যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যেত।এই একটা জিনিস করতে কিন্ত টাকা লাগে না।এটা করতে শুধু দরকার হয় ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা,আত্মত্যাগ আর দুরদর্শিতা।"
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন, একাধারে লেখক, অনুবাদক আর প্রকাশক।আমার মতে,উনি হলেন বইজগতের মেহেদী হাসান মিরাজ।যেক্ষেত্রে যাবেন সেটাতেই সফল।দিন দিন উনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি।
গল্পে আসা যাক: 'তিন গোয়েন্দা' ছাড়া খুব কম বই-ই পাইছি, সেটা শুরু থেকে আকর্ষণ তৈরি করতে পারে,এই বইটা সেগুলোর একটা।রহস্যা,থ্রিল,রোমান্টিকতার সমন্বয়ে লেখা গল্প।শুরু থেকে আকর্ষণ ধরে রাখা,২টা ভিন্ন সময়কে ভালো মতো উপস্থাপন, সমাজের প্রচলিত ক্ষমতাসীনদের অন্যায় - দুর্নীতি, পা চাটা ব্যাক্তিবর্গের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া'র বিষয়গুলো তুলে ধরার দক্ষতা, পরিশেষে দারুণ টুইস্টের মাধ্যমে সমাপ্তি। সেরা
বইটা শুরু করার পর মনে হচ্ছিলো যে লেখক আসলে কি গল্প বলতে চাচ্ছে!? ১৮০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত রীতিমতো বিরক্ত ছিলাম! তারপরেই ঘটনাটা ঘটে গেলো! কি যে সুন্দর একটা সমাপ্তি! মেয়ে হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবে বলছি, রেপিস্টের শাস্তি এমনি হওয়া উচিত। গল্পের মূল ঘটনার সময়কাল দেশ স্বাধীন হবার পর পর। সেই অস্থির সময় আর নোংরা রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যে অদ্ভুত সুন্দর একটা গল্প লেখক লিখেছেন তা প্রশংসার দাবীদার তো বটেই, সেইসঙ্গে একটা শান্তিরও বার্তা বটে! একটা খুনের ঘটনা কতোগুলো মানুষের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিলো সব সুখ ও শান্তি! আর বই এর শেষ অংশে সেই শান্তিটাই ফিরে এসেছিলো। গল্পের হ্যাপি এন্ডিং আমার বরাবরই পছন্দ, এই বইটিও তাই!
এই উপন্যাস এক উত্তুঙ্গ সময়ের। মাত্র তিন মাস সংসার করা মিলির বিষাদময় হ*ত্যাকান্ড পুলিশের দুজন তদন্ত কর্মকর্তার মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলে। এই ঘৃণ্য অপরাধ বদলে দেয় অনেকের জীবন। যেন ঘটনাটি উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলোর বৃহৎ পরিবর্তনের ক্যাটালিস্ট।
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, "কেউ কথা রাখেনি।" সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশ তখনও আঁতুড় ঘরের শিশুর মতো কাঁতড়াচ্ছে। নানামুখি রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে ঘটে চলেছে নিষ্ঠুর এবং অমানবিক সব অপরাধ এবং সেসবের হচ্ছে না কোন ন্যায়বিচার।
মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ কর্মকর্তা হায়দার উঠেপড়ে লেগেছেন যেকোন মূল্যে রহস্যোন্মোচন এবং অপরাধীকে তাঁর প্রাপ্য শাস্তি বুঝিয়ে দিতে। সাথে আছেন আমাদের প্রোটাগনিস্ট, পুলিশ হিসেবে বেমানান এই বইপড়ুয়া ভিরুতার কারণে না পেরেছেন স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারছেন অনেক কিছুই করতে।
রহস্যের শুলুক সন্ধানে বেরিয়ে পড়া দুই ইনভেস্টিগেটর তেমন কোন টুইস্ট ছাড়াই দ্রুত অপরাধী ধরে ফেলেন। তবে তৎকালের রাজনৈতিক বাস্তবতা তাদের হাত বেঁধে দেয়।
রামজিয়া শেহরিন। হতভাগ্য মিলির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তদন্তের গোলকধাঁধায় তিনিও জড়িয়ে পড়েন। উপন্যাসে আবার তাঁর প্রত্যাবর্তন হয় প্রায় দুই যুগ পর। আমাদের প্রোটাগনিস্টের সাথেও এক ধরণের 'ইটস কমপ্লিকেটেড' সম্পর্কে জড়িয়ে যান। এখন যিনি একজন বিখ্যাত ক্রাইম ফিকশন লেখক। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঐ পুরো ঘটনাকে উপজীব্য করে লিখা একটি নভেলের পান্ডুলিপি নিয়ে প্রাক্তন পুলিশ, বর্তমান লেখক বিষাদময় ঘটনার সব চরিত্রের কাছে যান, অনুমতি নেয়ার উদ্দেশ্যে।
তবে লেখকের অভিপ্রায় শুধুমাত্র একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে উপন্যাস রচনা করা নয়। পুনর্তদন্ত চান তিনি। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এরকম দুঃসাধ্য কাজে সাহায্য করতে কেউ কি কথা রাখবেন লেখকের?
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এদুয়ার্দো সাচেরির "লা প্রেহুন্তা দে সুস ওহোস" এর অনুবাদ করতে গিয়ে অ্যাডাপ্টেশনের পথে চলে যান। কারণ উক্ত বিদেশি উপন্যাসের সময়রেখা এবং রাজনৈতিক দোলাচলের স���থে একাত্তর পরবর্তি স্বাধীন বাংলাদেশের বেশ খানিকটা বিস্ময়কর সমিল লেখক নাজিম উদ্দিন খুঁজে পেয়েছিলেন। নিজস্বতা বজায় রেখে কোন উপন্যাসের অ্যাডাপ্টেশন করা সহজ কাজ নয়। লেখক এই কঠিন কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
থ্রিলার উপন্যাস "কেউ কেউ কথা রাখে" টুইস্ট-ক্লিফহ্যাঙ্গার নির্ভর নয়। বরং উত্তম পুরুষ বয়ানে লিখা নিরীক্ষা-ধর্মী এক কাজ লেখকের। নভেলে তৎকালিন রাজনৈতিক ঝঞ্জাটপূর্ণ সময়ের বিভিন্ন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা পরম্পরা নিয়েও আলোচনা আছে। তবে ঐসব বিষয়াবলী উপন্যাসের মূল নয়। সাদামাটা, ঝরঝরে, প্রাঞ্জল ভাষায় সেই সময়কে যথাযথ এবং সুন্দরভাবে পাঠকের দৃষ্টিসীমায় নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। যারা লেখকের বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহী নন এমনকি তাদেরও ভালো লাগতে পারে এ উপন্যাস।
শেষ পর্যন্ত কেউ কেউ কি আদৌ কথা রাখে?
বই রিভিউ
নাম : কেউ কেউ কথা রাখে লেখক : মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০১৫ চতুর্দশ মুদ্রণ : মার্চ ২০২৩ প্রকাশক : বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদ : ডিলান ফ্যানআর্ট : তানিয়া সুলতানা জনরা : থ্রিলার রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের একটি ঘটনা উঠে এসেছে বইটিতে। অস্থির এক সময়ের গল্প এটি। এক খুনের রহস্য উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে ভিন্ন মত আর স্বভাবের দুজন মানুষ। বিয়ের মাত্র কিছুদিন পরেই রাজধানীতে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের পর খুন হয় এক তরুণী। তদন্তে অভিনব ভাবে বেরিয়ে আসে এক সন্দেহভাজনের নাম। শেষপর্যন্ত কি অপরাধী ধরা পড়ে? নাকি খুনের রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। রাজনৈতিক চাপের কাছে কি ধর্ষিতার বিচারও তুচ্ছ হয়ে যায়? মৃত্যুর চাইতেও ভয়ানক শাস্তি কি হতে পারে? একটি খুনের ঘটনা কি আসলেই বদলে দিতে পারে কয়েকজন মানুষের জীবন?
প্লট - বিয়ের মাত্র কয়েকদিন পরেই রাজধানীতে নির্মমভাবে ধর্ষণের পর খুন হন মিলি নামের এক তরুণী। ব্যাংকার স্বামীকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সুখের সংসার ভালোই চলছিল। তদন্তের ভার এসে পড়ে আজিমপুর থানার সিনিয়র এএসআই হায়দার এবং তার এক সহকারী অফিসারের ওপর।এদিকে মিলির স্বামী মিনহাজও সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যায় না। ঘটনার দিন সে কেন অফিস থেকে আগেই বের হয়েছিল?
তদন্তের সূত্রে সহকারী অফিসারটির পরিচয় হয় মিলির বান্ধবী রামজিয়া শেহরিনের সঙ্গে।বিভিন্নকাজে আসা যাওয়া করতে করতে রামজিয়া এবং সহকারী অফিসারের মধ্যে এমন এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে যাকে প্রেম না বললেও প্রেমের চাইতে কোনোঅংশে কম ছিল না। তাদের সম্পর্কটি কি শেষপর্যন্ত পরিণতি পেয়েছিল?
এক বান্ধবীর বিয়েতে তোলা ছবির সূত্র ধরে তদন্তে আরেক সন্দেহভাজনের নাম বেরিয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন ইমতিয়াজকে ধরার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে পুলিশ। শেষপর্যন্ত ইমতিয়াজকে ধরা গেলেও রাজনৈতিক চাপে তাকে ছেড়ে দিতে হয়। তদন্তের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হায়দারও খুন হয়। এদিকে ঘটনার কিছুদিন পরেই মিনহাজ উধাও হয়ে যায়। ইমতিয়াজকেও অনেক খোঁজাখুঁজি করে খুঁজে পাওয়া যায় না। এভাবে খুনের রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়।
প্রায় দুই যুগ পরে এক লেখক ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেই হত্যারহস্য নিয়ে। তাকে সম্মুখীন হতে হয় এক বিস্ময়কর সত্যের। সেই সত্যটি প্রকাশ করার ভার তাকে ছেড়ে দিতে হয় প্রকৃতির ওপর। কী ছিল সেই সত্যটি?
বইয়ের শেষ অংশে এসে পাঠকদের সম্মুখীন হতে হয় এক ভয়ংকর বাস্তবের। ভালোবাসার জন্য মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আসলেই কথা রাখে।
প্রিয় চরিত্র - সিনিয়র এএসআই এসএম হায়দার, উপন্যাসের অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র।মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার যেকোনো অন্যায়ের প্রতি মাথা নত না করার আদর্শ সত্যিকার অর্থেই অনুকরণীয়। এমনকি সন্দেহভাজন ইমতিয়াজকে রাজনৈতিক চাপে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলে থানার ওসির কলার চেপে ধরতেও তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি।
"যারা বিয়ে করে সুখী হয়, তারা স্ত্রী বিয়োগ হবার পর বেশিদিন একা থাকতে পারে না। আবার বিয়ে করে বসে।কারণ দ্বৈতজীবনে যে সুখী হওয়া যায় সে অভিজ্ঞতা তার আছে।"
বইটি আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক এদুয়ার্দো সাচেরির 'লা প্রেহুন্তা দে সুস ওহোস' (La pregunta de sus ojos) এর ছায়া অবলম্বনে লেখা। এই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে ২০০৯ সালে 'The Secrets in Their Eyes' নামে একটি ছবিও বানানো হয়।
একটা ধর্ষণের পর হত্যা। তিনমাসের একটা সংসারের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। দুইজন পুলিশের একমাত্র অপরাধীকে ধরতে সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই। এবং সিস্টেমের জয়….। কিন্তু সেই সাবেক তদন্তকারী পুলিশ দুই যুগ পরে লেখক হিসেবে পুনরায় দৃশ্যপটে আসার পর নতুন মোড় নিল কেসটা। কে কথা রাখে?
জাস্ট লাভ ইট! একবাক্যে এটাই প্রতিক্রিয়া। প্রচলিত থ্রিলারের মতো প্রচুর থ্রিল না থাকলেও এই ধীরে-চলা বইটাও যে শেষ পর্যন্ত এতটা ভালো লাগবে ভাবতেই পারি নি। একদম প্রথম পৃষ্ঠায় মাথা কিছুটা ঘুরিয়ে বইটা শুরু, তারপর আস্তে আস্তে কাহিনী বিন্যাসের পর শেষে গিয়ে আরেকবার বিস্ময়াভিভূত করেছে বইটা।
তো কি ভালো লাগলো? প্রথমেই বলবো বিদেশী একটা কাহিনীকে এত সুন্দরভাবে দেশের সময় ও সমাজের সাথে মিলিয়ে উপস্থাপন করার বিষয়টা। লেখক এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যে মনেই হয়নি বইটা অন্য একটা বইয়ের ছায়া অবলম্বনে রচিত। দ্বিতীয় বিষয় হলো বইটার বিষয়বস্তু। প্লটটা খুবই কমন, ক্ষমতার কাছে আইনের অসহায় আত্মসমর্পণ। পচাত্তর থেকে এই একুশ সালে এসেও যে দেশের আইনের শাসনের অবস্থা একই রকম রয়ে গিয়েছে সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বইটা। তাইতো মিলির ঘটনা পড়তে গিয়ে তনু বা মুনিয়ার কথা মনে আসতে বাধ্য।
তৃতীয়ত বলা যায় বঙ্গবন্ধুর শাসনের চিত্র তুলে ধরার ব্যাপারটা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেখকরা যেখানে ঐ সময়ের বিষয়ে চুপ থাকেন বা এড়িয়ে যান বা পরিস্থিতি লঘু করে দেখাতে চেষ্টা করেন সেখানে লেখক তার চরিত্রের মাধ্যমে সরাসরি সমালোচনা করেছেন ঐ সময়টার। একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায ঐ সময়টা থেকে সেটা ফিকশন তো বটে নন-ফিকশনেও বিরল। চতুর্থত বলা যায় এসএম হায়দার নামের অসমসাহসী পুলিশ অফিসারটির কথা। ইমতিয়াজদের দাপট দেখে হায়দারের মতোই ক্রুদ্ধ হয়েও যখন দেখি হায়দার নিরুপায় তখন হায়দার জন্য মায়া আর সিস্টেমের প্রতি ঘৃণা ক্রমেই বাড়তে থাকে। হায়দারদের মতো মানুষ আছে বলেই হয়তো এখনও মানুষ স্বপ্ন দেখে। হায়দার চরিত্রটা মনে রাখতে বাধ্য হতে হয়। হায়দারের সাথে কথকের সম্পর্কটাও বইটার একটা বিশেষ দিক।
পঞ্চমত বলক যায় কথক আর রামজিয়ার প্নেমের (?) কথা। ওদের প্রেমটা এত সুন্দর যে ভাবতেই হয় এমন যদি হতো! বইয়ের মাধ্যমে ওদের ডেটের বিষয়টা খুবই চমৎকার লেগেছে। কোনোদিন সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে হবে! আর সর্বশেষে বলবো বইয়ের শেষ অংশ এবং নামকরণের কথা। শেষটা যদিও কিছৃটা অনুমিত কিন্তু সেটা বইয়ের নামের সাথে এত দারুণভাবে খাপ খেয়েছে যে মুগ্ধ হতেই হয়। সার্থক নামকরণের একটা বিজ্ঞাপন হতে পারে বইটা!
শেষকথা যদি বলি, থ্রিলার ভেবে শুরু করে থ্রিলের তেমন দেখা না পেলেও মুগ্ধ করা একটা বই ছিল ‘ কেউ কেউ কথা রাখে'।
মোহাম্মাদ নাজিম উদ্দিনের লেখার সঙ্গে এই বইটির মাধ্যমে আমার পরিচয়। নাম আর প্রচ্ছদের কারণে আকৃষ্ট হয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। অসধারণ এক সৃষ্টি। সত্যি, কেউ কেউ কথা রাখে...
সাধারণত যেসব মৌলিক থ্রিলার পড়েছি লেখকের সেগুলো থেকে এই বইটা অনেকটা আলাদা। সময়, চরিত্র সবকিছু নিয়ে লেখক খুব ভাল কাজ করেছেন। শেষে মুহূর্তে যেয়ে আপনি বুঝবেন বইটার নামের স্বার্থকতা। এছাড়া পুরো গল্পইটাই বেশ ইন্টারেস্টিং। প্রেম, থ্রিল, রাজনীতি, আবেগ অনেককিছুর সংমিশ্রণ এই বই।
প্রায় ২২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বইয়ে কোনো থ্রিল ছিলো না। থাকার কথাও না। বইটা আর দশটা থ্রিলারের মতো না। পুরোটাই স্মৃতিকথন। বইয়ের পাতায় পাতায় টার্ন এন্ড টুইস্ট চাইলে এই বই আপনার জন্য নয়। অস্থির ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ১৯৭৫ সালের সময়কার একটা খুন আর তার খুনির রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার প্রভাবে পার পেয়ে যাওয়া, একটা অপ্রকাশিত ভালোবাসা, নাগরিক আশাভঙ্গের দিনানিপাত, রাজনৈতিক হতাশা এবং গল্পের মূল দুই চরিত্র- তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই হায়দার এবং গল্পের কথক সহকারী এস আইয়ের কিছু বিষাদগাথা সময় নিয়ে পড়তে চাইলে এ বই হাতে নিতে পারে। নতুবা হতাশ হবেন।
এটা নাজিম ভায়ের অন্য লেখাগুলো থেকে ভিন্ন একেবারেই। বইজুড়ে একটা স্মৃতিকাতর ভাব বজায় রাখতে পেরেছেন লেখক- বইয়ের আসল সফলতা এখানেই। গল্পের হুট করে কোনো চমকপ্রদ কিছু ঘটে নি।ফলে মাঝখানে একটু একঘেয়েমি লাগতেও পারে। তবে সে সম্ভাবনা কমই। কারন লেখা খুবই সাবলীল ছিলো। তবে কয়েকজায়গায় একই কথা বা ভাবনা দু বার বর্ননায় এনেছেন লেখক। এটা বিরক্তিকর।
প্রথম ২২০ পৃষ্ঠার রেটিং করতে বললে আমি ৩/৫ বলবো। আর বাকি ৫০ পৃষ্ঠার রেটিং ৫/৫। কারন কাহিনী যতই সমাপ্তির দিকে এগিয়েছে, গল্পের ক্লাইম্যক্স, বিষাদগ্রস্ততা ও স্মৃতিকাতর আবহ বেড়ে যাওয়া,টুইস্ট ইত্যাদির কারনে মারাত্মক অসাধারন পর্যায়ে চলে গেছে। শেষটা অসাধারন ছিলো। সবদিক গুছিয়ে কাহিনী শেষ হয়েছে। আর লাস্ট পেজে উৎসর্গ পত্রটা একেবারে পারফেক্ট লেগেছে।
বইটা মৌলিক নয়, লেখকের ভাষায় নীরিক্ষাধর্মী কাজ। আমার মতে,সোজা ভাষায় অসাধারন একটি এডাপ্টেশন এটি। বইটা শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারবেন। আর খুব বেশি পরিমান আবেগী হলে মন খারাপ অনুভূতিও তৈরী হতে পারে।
আমার কাছে বইটা দারুণ দারুণ হতে হতেও ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি। ভাষার গাঁথুনিটা আরও একটু ভালো করার সুযোগ ছিল বোধ হয়। আর ফিনিশিংটা একটু দুর্বল লেগেছে, দারুণ একটা টুইস্ট দিতে গিয়েও ঠিক মনমত হয়ে ওঠেনি। ফিনিশিংটা নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে কাজ করার অবকাশ ছিল বোধ হয়। বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না স্পয়লারের ভয়ে। শেষমেশ বইটা আমার কাছে মনে হয়েছে ৭০% সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক, আর ৩০% থ্রিলার; অবশ্য সেটা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই, বরং বইটার আবেদন বাড়িয়েছে।