ছোট্ট মফস্বল শহর উইন্ডেনে ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। আবদ্ধ ঘরে নৃশংসভাবে খুন হল সাত জন। ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে ভয়ে শংকিত উইন্ডেনের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ভিক্টিমের মুখে একটি পিনবল ছেড়ে গেছে খুনী। ডিটেকটিভ হ্যামলেট আর উইল টুরক তদন্তে নেমে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। একটা পর্যায়ে তাদের মনে হতে থাকে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনো মানুষ জড়িত নয়; যেন সাক্ষাত শয়তান জড়িত৷ ইশ্বরের সাথে ষড়যন্ত্রের কঠিন খেলায় যেখানে শয়তান মত্ত সেখানে নেমে পড়ল দুই ডিটেকটিভ তাকে থামাতে। কী সেই ষড়যন্ত্র আর কেনই বা ঘটে গেলো এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড? তার সাথে শয়তানের-ই বা কী যোগসাজশ? সব রহস্যের উন্মোচন হতে চলেছে মিথ, ইতিহাস ও কঠিন বাস্তব জগতের মিশেল এবং পদে পদে রোমাঞ্চ আর রহস্যে ভরপুর উপন্যাস 'পিনবল' এর দুই মলাটের মাঝে।
M.J. Babu is an acclaimed author born and raised in Dhaka. M.J. made a remarkable entry into the literary world with his debut book, Dimentiya, published in 2020. This gripping novel quickly became a best-seller in the Bengali language, establishing him as a prominent figure in contemporary Bengali literature.
Following the success of his debut, M.J. continued to captivate readers with his unique storytelling and thought-provoking themes. His book Pinball, published in 2022 from Kolkata, India, received critical acclaim and further solidified his reputation as a versatile and talented writer.
M.J. has authored seven books in Bengali, including the renowned Anarchist Series with titles Dimentiya, Absentiya, and Insentiya. Other notable works include Nirjon Shakkhor, Vrom, and Jinn. His literary works span various genres, showcasing his ability to weave intricate narratives that resonate deeply with readers.
Currently, M.J.'s books are being published from both Dhaka and Kolkata, broadening his reach and influence in the literary world.
আমি যতো বই পড়ি তার সবগুলার রিভিউ দেই ফেসবুকে টিপিএ গ্রুপে। গুডরিডস এ কখনোই কিছু লিখিনি কোনো বই নিয়ে। তবে এই বইটা বাংলা মৌলিকের একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে। তাই এইটুকু লিখলাম। চোখ বন্ধ করে কিনে পড়ে ফেলেন। প্রথম সংস্করণে প্রচুর প্রচুর বানান ভুল আর নাম বিভ্রাট আছে। তাই পরবর্তী সংস্করনটা কেনার চেষ্টা করবেন সবাই। ইটস আ মাস্ট রিড বুক।
বিষাক্ত অতীতের দংশনে সৃষ্ট বেদনা মানবজীবনের পরম শত্রু। সবাই অতীত ভুলতে চায়, অতীতের বেদনাকে বিস্মৃতি বানিয়ে হারিয়ে যেতে চায় নতুন অধ্যায়ে। তবুও কিছু মানুষ সেই বেদনাকে আকঁড়ে ধরেই দিব্যি জীবন পার করে, বেদনাকে উপজীব্য করে নিজেকে দিনকে দিন কষ্ট দিতেই থাকে। ঠিক এমনই এক অতীতকে আঁকড়ে থাকা উইলের বিষণ্ণ জীবন পুরো নরক হয়ে গেল, যখন উইন্ডেনে সে আবিষ্কার করল বিকৃত কিছু মৃতদেহ। বিশাল কোনো দানব যেন দেহগুলো দ্বিখণ্ডিত করে মাটিতে আছড়ে ফেলেছে। সাথে দেয়ালে পিন দিয়ে গেঁথে দিয়েছে ছয়টি কোটরহীন মাথা! রুম নাম্বার ৬৬৬ এ ঘটা এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ড, চতুর্ভুজ এবং বৃত্তের মাঝে থাকা উলটা ক্রুশের চিত্র, ভিক্টিমদের কার্যকালাপ উইল আর তার সহকর্মী হ্যামলেটকে ধাঁধায় ফেলে দিল। একের পর এক উন্মুক্ত হলো অভিশপ্ত কাল্টের বিভিন্ন রহস্য। সেই অভিশাপ এবং অতিপ্রাকৃতের ঘনঘটায় জটিয়ে পড়ল উইল নিজেই। কী হতে চলেছে তাদের অন্তিম পরিণতি?
’পিনবল’ হরর থ্রিলারের মূল বিশেষত্ব যদি বলতে হয় তা হচ্ছে সবকিছুর পার্ফেক্ট মিশ্রণ। মারাত্মক প্লট, চরিত্রায়ন, হরর, তদন্ত প্রক্রিয়া, টুইস্ট, সাসপেন্স সবকিছুর পার্ফেক্ট ব্লেডিং ছিল গল্পে। শুরু থেকেই গল্পের প্রোটাগনিস্টকে আদর্শ চরিত্রায়নের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন লেখক। উত্তম পুরুষের বর্ণনা বেশ জীবন্ত ছিল। পরে ক্রাইম সিনের বর্ণনাও ছিল ভিন্নধর্মী। সাধারণত অকাল্টসংশ্লিষ্ট গল্পগুলোয় ক্রাইম সিন দেখেই অকাল্ট গ্যাংয়ের কার্যকালাপ স্পষ্টত ভেসে ওঠে। কিন্তু এক্ষেত্রে শুরুতেই এমন ক্রাইম সিন তুলে ধরা হয়েছে যা স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব! ফলে অকাল্টের পাশাপাশি অতিপ্রাকৃত সত্তা বা জন্তুর অস্তিত্ব গল্পটাকে আরেক ধাপ ডার্ক করেছে যেন। পরবর্তীতে প্রোটাগনিস্টের তদন্তপ্রক্রিয়াও মেদহীন ছিল, বিশেষ করে সে যখন অতিপ্রাকৃত অন্ধকার শক্তির সম্মুখীন হতো, সেই বর্ণনাগুলো বেশ লেগেছে। আর মাঝে ড্যান ব্রাউনের ক্যারেক্টার রবার্ট ল্যাংডনের দেখা পেয়ে আমার উত্তেজনা আর দেখে কে! গল্প গড়পড়তা এণ্ডিংয়ের দিকেই যাচ্ছিল, কিন্তু লাস্টে লেখক যে অচিন্তনীয় টুইস্টের অবতারণা ঘটালেন, তা দেখে চোয়াল ঝুলে গিয়েছিল আমার! গল্প এমনভাবে এগিয়েছিল যে এই টুইস্ট কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারবে না। এই টুইস্টই আসলে গল্পটাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়েছে। বইয়ে ত্রুটি বলতে কিছু চরিত্রের নামে অদলবদল দেখেছিলাম, হালকা বানান ভুলও ছিল। শেষদিকে কেন যেন তাড়াহুড়োর ছাপ ছিল, এমন প্লটটা আরেকটু বিস্তৃত পর্যায়ে লিখলে আরও সন্তুষ্ট হতাম। কিছু কিছু দৃশ্যায়ন আরেকটু আলংকারিক হতে পারত (ব্যক্তিগত মতামত)। পরিশেষে, বইটা নিয়ে অসন্তুষ্টি আমার নেই বললেই চলে। পিনবল নিঃসন্দেহে এক অসাধারণ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হরর থ্রিলার।
লেখনী দেখে মনে হয়নি জিন, দিমেন্তিয়া একই লেখকের ছিল। বাক্য গঠন বেশ বিরক্তিকর ছিল, ভায়োলেন্স এর বর্ননা করতে গিয়ে হাস্যকর ভাবে অতিরঞ্জিত করে ফেলেছেন। তবুও লজিক এর মা, বাপ, চাচা দের পকেটে পুরে রাখলে বেশ ইন্টারেস্টিং ছিল ক্লাইম্যাক্স এ।
সত্যি বলতে মেইনস্ট্রিম এর বাইরে এক্সপেরিমেন্টাল কাজ বলে মনে হয়েছে, আর লেখক বাংলার মৌলিকে সেই হিসাবে সফল। হয়তো লেখনী আরো শক্ত হলে, টুইস্ট দিতেই হবে, হরর ফিল রাখতেই হবে এমন মনোভাব কাটিয়ে উঠতে পারলে বইটা আরো ভালো হতে পারতো।
নৃশংসতার সংজ্ঞা যদি আপনাকে বর্ণনা করতে বলা হয়; তাহলে সেটাকে ঠিক কীভাবে বর্ণনা করবেন? কতটা বিদঘুটে বা বিচিত্র আকারে সাজাতে পারবেন? যদি চিন্তা করতে গিয়ে অস্বস্তি ঝেঁকে বসে অথবা মনে আতঙ্কের আবির্ভাব ঘটে তবে ❛পিনবল❜ উপন্যাসটি আপনার অস্বস্তি ও আতঙ্কে—উসকানি দিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে!
দুই হাজার বছরের পুরানো এক সাধনা যখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে; তখনই ঘটল অকল্পনীয় কিছু! সেই অকল্পনা যখন কল্পিত না হয়ে বাস্তবে ঘটে; তখন বিক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতা যে কতটুকু মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হবে তা ভাবতে গিয়েও ভাবা কষ্টকর হয়ে পড়ে। ❛পিনবল❜ উপন্যাসে মেনে না নেওয়ার মতো রয়েছে অনেক উপাদান। যা আপনার ভাবনায় অপার্থিব এক ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আপনি যদি নৃশংসতা অথবা ভয়ানক কোনো বর্ণনা হজম করতে না পারেন তবে এই বই পড়া থেকে দূরে থাকাটা শ্রেয়। বিশেষ করে দুর্বল চিত্তের পাঠকরা; এই সারির সবচেয়ে ওপরে দিকে থাকবে।
বিভৎস খুন, খুনের তাৎপর্য, আরওন, ৬৬৬, ডেমিট্রিয়াস, ফিফথ মোনার্কিস্ট, অর্ডার অব ব্ল্যাক অ্যাঞ্জেল, কেল্টিক মিথ-সহ আরও অনেক বিষয়বস্তু উঠে এসেছে ❛পিনবল❜ উপন্যাসের পাতায়। লেখক পুরো গল্পটি লিখেছেন বিংশ শতাব্দীর টাইমলাইনে। লেখনশৈলীও এইক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। এ-ছাড়া উঠে এসেছে অনেক অজানা ইতিহাস এবং ভয়ানক এক কাল্টের চর্চা। কিন্তু গল্প শুধু হরর আবহে আবদ্ধ থাকেনি। পুরো উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো রহস্য আর টুইস্ট তো আছেই। পাঠক স্তব্ধ হতে যেখানে বাধ্য। পুরো কাহিনি যে শেষে এসে এইভাবে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে যাবে, যা বইয়ের সমাপ্তি পর্যন্ত না এলে মনে হয় না কেউ উপলব্ধি করতে পারবে।
➲ আখ্যান—
ছোট্ট মফস্বল শহর উইন্ডেনে ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। আবদ্ধ ঘরে নৃশংসভাবে খুন হল সাত জন। ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে ভয়ে শঙ্কিত উইন্ডেনের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ভিক্টিমের মুখে একটি পিনবল ছেড়ে গেছে খুনি। ডিটেকটিভ আলফ্রেড হ্যামলেট আর উইল টুরক তদন্তে নেমে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। একটা পর্যায়ে তাদের মনে হতে থাকে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো মানুষ জড়িত নয়; যেন সাক্ষাৎ শয়তান জড়িত৷ ঈশ্বরের সাথে ষড়যন্ত্রের কঠিন খেলায় যেখানে শয়তান মত্ত সেখানে নেমে পড়ল দুই ডিটেকটিভ তাকে থামাতে।
কী সেই ষড়যন্ত্র আর কেন-ই বা ঘটে গেল এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড? তার সাথে শয়তানের-ই বা কী যোগসাজশ? সব রহস্যের উন্মোচন হতে চলেছে মিথ, ইতিহাস ও কঠিন বাস্তব জগতের মিশেল এবং পদে পদে রোমাঞ্চ আর রহস্যে ভরপুর উপন্যাস 'পিনবল' এর দুই মলাটের মাঝে।
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛পিনবল❜ উপন্যাসটি হরর-থ্রিলার হলেও গল্পের ডালপালা অনেক বিস্তৃত। পুরো উপন্যাসটি লেখা হয়েছে প্রথম পুরুষে। অতীতের কথোপকথন ও স্মৃতি বলার কারণে ‘ছিল’ ও ‘লাম’ বাক্যে বেশ ভালোই প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রথমদিকে কিছুটা আড়ষ্টভাব দেখা দিলেও, ধীরে ধীরে লেখক লেখনশৈলীতে বেশ উন্নতি করেছে। ইতোমধ্যে হয়তো জেনেছেন যে, গল্পটি যেহেতু ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে লেখা—সেই অনুযায়ী লেখনশৈলীতে অনুবাদের একটা ফ্লে���ার পাঠকরা পেয়েছে। আমিও সেই অনুভূতি পেয়েছি এবং বেশ উপভোগও করেছি। মৌলিকে এইরকম প্রেক্ষাপট নির্ভর করে লেখার কলাকৌশল কিছুটা হলেও নতুনত্বের স্বাদ এনে দেয়।
তবে আমি আশাবাদী পরবর্তী কোনো উপন্যাস যদি লেখক বিদেশি পটভূমিতে লিখে তবে ফ্লেভার পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্লাসিক একটা ভাইবও জোরদারভাবে পাওয়া যাবে৷ যেটা এই উপন্যাসে কিছুটা হলেও মিসিং ছিল। এ-ছাড়া বাদবাকি সব কিছু ভালোই লেগেছে। শেষটা একেবারে উত্তেজনায় ভর্তি।
● সূত্রপাত—
গল্পের শুরুটা একটি বারে। হাতে মদ নিয়ে বসে থাকা ডিটেকটিভ উইল টুরকের জীবনের সংক্ষিপ্ত কিছু স্মৃতি দিয়ে। মদের নেশায় ডুবে থাকা টুরকের কাজ। এই কাজের পেছনের কাহিনিও বেশ বেদনাদায়ক। কিন্তু বেশিক্ষণ শোকাহত হয়ে নেশায় ডুবে থাকত পারল না টুরক। কারণ শহরে ঘটে গিয়েছ এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আরেক ডিটেকটিভ হ্যামলেট ফোনকল দিয়ে জানায় এই সংবাদ৷ সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য মীমাংসা করতে গিয়ে উইলের জীবন যে এইভাবে বদলে যাবে; তা সে নিজেও কল্পনা করতে পারেনি। বিভৎস খুন, খুনের কারণ ও কারণের পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্য যা রূপ নেয় প্রতিশোধের এন ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডে! কী সেই কারণ, তা জানতে হলে ❛পিনবল❜ নিয়ে বসে পড়ুন। শুরুটা ভালোই আগ্রহোদ্দীপক।
● গল্প বুনট—
গল্প বুনতে লেখক ভালোই পারেন। বিশেষ করে সিকোয়েন্স সাজাতে। শুরু থেকে পাঠক আকৃষ্ট করার মতো একটা ঘটনা তিনি সাজিয়ে রেখেছেন। সেই ধারা বজায় রাখতে অযথা কোনো বাহ্যিক গল্প টেনে আনেননি৷ মূল ঘটনায় ঢুকে বেশ বিস্তারিতভাবে পুরো গল্প বলেছেন। কোথায় গল্পকে কোন রূপে সজ্জিত করা দরকার, কখন ইতিহাস ঢুকানো দরকার, সংলাপ কীভাবে দেওয়া দরকার; সব কিছুই সাবলীলভাবে নির্মাণ করেছেন। কয়েক জায়গায় জড়তা কাজ করলেও, দ্রুত সেটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।
● লেখনশৈলী—
যেহেতু ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে গল্পটি লেখা। তাই লেখনশৈলীতে সেই প্রেক্ষাপটের ছোঁয়া যথার্থ রয়েছে। তবে এই ফ্লেভারের মূল কারণ হচ্ছে চরিত্রের নাম ও কাম। আপনি যখন বইটি পড়বেন খেয়াল করবেন, চরিত্রের নাম ও চালচলন বেশ ভালোই ভূমিকা রেখেছে এই লেখনশৈলী বিল্ডাপ করার জন্য।
● বর্ণনাশৈলী—
বর্ণনাভঙ্গি নিখুঁত বলব না তবে বেশ শক্তপোক্ত। বিশেষ করে বিশ্লেষণের দিকটা। চরিত্রের কার্যকলাপ, পারিপার্শ্বিক আবহ লেখনশৈলী অনুযায়ী বর্ণনার সাথে ভালোই খাপ খেয়েছে। স্পষ্টভাবে পুরো গল্পটা দৃশ্যায়ন করা সম্ভব হয়েছে। না হয় হররের স্বাদ আর ভয়ংকর সব দৃশ্যের সমারোহ মানসপটে ভীতির সঞ্চারণ ঘটাতে সক্ষম হতো না। আমার ভয়ভীতি কম, তাই আমি সেইসব বর্ণনা ভালোই উপভোগ করেছি।
● চরিত্রায়ন—
মরুভূমির বালুর ঝড় ও সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতোই ❛পিনবল❜ উপন্যাসে চরিত্রের আগমন ঘটেছে। যদি আপনি অল্পতে কনফিউজড হয়ে যান তবে হাতে একটা পেন্সিল অথবা মোবাইলের নোটপ্যাডে চরিত্রের নামগুলো আলাদা করে লিখে রাখতে পারেন। তবে বেশিভাগ চরিত্র হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। আদতে যাদের গুরুত্ব সহকারে নামধাম আর কামের বর্ণনা না দিলেও চলত। পারতপক্ষে অনেক চরিত্র একেবারে বেকার। তাই অতটা চিন্তার কিছু নেই।
ডিটেকটিভ উইল আর হ্যামলেট, ফরেনসিক হেড নিউট-সহ উইন্ডেনে বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এই উপন্যাসের মূল খুঁটি। ক্যামিও হিসেবে দেখা পাবেন, সিম্বোলজিস্ট রবার্ট ল্যাংডনকে! সেটা কেন আর কখন তা জানতে ❛পিনবল❜ উপন্যাস পড়ুন। ভালো ট্রিবিউট দিয়েছেন লেখক।
● অবসান—
খুঁটিনাটি যত রহস্যের সমাধান আর দারুণ দুটো টুইস্ট একেবারে চুপ করিয়ে দেওয়ার মতোই। তবে সব কিছু আলোচনা করলেও, বিশেষ এক জীব নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তীতে তার কী পরিণতি ঘটেছে সেই বিষয়ে কোনো আলোকপাত করেননি লেখক। তা-ছাড়া সব মিলিয়ে বইটি ভীষণ উপভোগ্য বটে৷
● খুচরা আলাপ—
ভালোবাসা ও প্রিয়জন হারানোর কষ্টে মনুষ্য মন কতটা ব্যথিত হয়ে ওঠে; উক্ত উপন্যাসে এই উদাহরণ বেশ স্পষ্ট। চিরাচরিত ক্ষমতার লোভ, কিছু জয়ের নেশা—কীভাবে কোনো মানুষকে মৃত্যুর দরজায় ঠেলে দেয়, এই দিকটিও উপন্যাসে মূল কারণের সাথে সংযুক্ত। সব শেষে ধর্মের পথে থেকে অধর্মের কাজ করা হলো মানুষের আদিম প্রবৃত্তির অংশ। যা কখনও বিলুপ্তি হওয়ার মতো না, উলটো এই চাহিদা ডেকে আনে ভয়ানক যত বিপর্যয়।
লেখক সে-সকল বিষয়বস্তু উপন্যাসে তুলে নিয়ে এসেছেন এবং যেইভাবে সেগুলো গুছিয়ে বলেছেন, তা গল্পে পরিপূর্ণতা পেতে সহায়তা করেছে। পাঠক পছন্দের অন্যতম কারণ হিসেবে বিষয়গুলো আর শেষ টুইস্ট বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।
➣ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
লেখকের ❛অ্যাবসেন্টিয়া❜ উপন্যাসের সাথে এই বইয়ের তুলনা আমি কখনোই দিতে যাব না। পুরোপুরি ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা ❛পিনবল❜ বই। দুটো বইয়ে দুইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগামীতে লেখক থেকে আরও বেশি আশা থাকবে। আশা করছি তিনি নিরাশ করবেন না। বিদেশি পটভূমিতে দেশিয় হরর-থ্রিলার হিসেবে ❛পিনবল❜ উপন্যাসের জন্য ধন্যবাদ লেখককে।
● সম্পাদনা ও বানান—
বইয়ে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে অনেক। বিশেষ করে নামের ওলটপালট, টাইপো আর কিছু অসংগতি। ইতোমধ্যে পরবর্তী সংস্করণের জন্য সমস্যাগুলো নিয়ে সমাধানের কাজ শুরু হয়েছে।
● প্রচ্ছদ, নামলিপি—
কমলা রঙে নামলিপি এবং প্রচ্ছদ বেশ ভালো লেগেছে। প্রাসঙ্গিক আর গল্পের আবহ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে।
● মলাট, বাঁধাই, পৃষ্ঠা—
ক্রাউন সাইজের দুইশ পেজের বই! অথচ শক্ত মলাট, পারফেক্ট বাঁধাই এবং ক্রিম কালারের পৃষ্ঠা মিলিয়ে প্রোডাকশন টপ নচ। এই নিয়ে কোনো কথা হবে না।
⊙ বই : পিনবল • এম. জে. বাবু ⊙ জনরা : হরর, মিস্ট্রি, থ্রিলার ⊙ প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২১ ⊙ প্রচ্ছদ : আদনান আহমেদ রিজন ⊙ প্রকাশনা : সতীর্থ প্রকাশনী ⊙ নির্ধারিত মূল্য : ১৯৫ টাকা মাত্র ⊙ পৃষ্ঠা : ২০০
গল্পের শুরুতে দেখা যায় এক দুখী পুলিশ অফিসার তার গার্লফ্রেন্ডের দুঃখে বারে বসে বসে মদ গিলছিল। এমন সময়ে খবর আসে শান্তশিষ্ট শহরটিতে ভয়াবহতম কিছু খুন হয়েছে। শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল বইটাকে জোর করে হরর বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল ডিটেকটিভ যা দেখে তাতেই ভয়ে শিউরে উঠে। আতংকে শিটিয়ে যায়। সাত ফুট লম্বা কালপ্রিট দেখে নিজের কিচেন থেকেই পালিয়ে যায়। আবার বলে বুদ্ধির জন্য নাকি অতীতে অনেক কেইস সলভ করসে।ভয় তো দূরের কথা, বিরক্তিকর লেগেছে।🥱 লেখকের জিন পড়েছিলাম। লেখনী অতটা আকর্ষণীয় লাগেনি। তবু অনেক রিভিউতে দেখেছি এটার শেষে নাকি মারাত্মক একটা টুইস্ট আছে। মাত্র ১৮৭ পৃষ্ঠা, তাই ভাবলাম পড়েই ফেলি। যারা বইটা পড়ে ফেলেছেন আর খুব পছন্দ করেছেন, তারা একটু ব্যখ্যা করবেন প্লিজ। (স্পয়লার) নিউট আর উইল নিজেদের বিশেষ আবিষ্কৃত কেমিকেল দিয়ে এতগুলা মানুষের এই অবস্থা করেছে প্রতিশোধ নিতে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তারা ভৌতিক ব্যাপারস্যাপার নিয়ে এসেছে আর এই জবানবন্দিই মূলত পুরো গল্পটা। এতটুকু পর্যন্ত বুঝলাম। কিন্তু এই হ্যামলেট নিজের ছেলের প্রতিশোধ ভিনসেন্টের উপর নেয়ার জন্য তাঁর ছেলে ফ্যাবিয়ান আর তার সঙ্গীদের মাতাল করতে পারে। এলসাকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দিতে পারে। উইল তো রেপের কথাও বলসিলো। অথচ এই লোকটা ভিনসেণ্টের কিছু করতে পারে না, কেননা তার ওয়াইফ লরার সে ছাড়া আর কেউ নেই৷ ভিনসেন্টের কিছু করতে গেলেই নাকি সে ধরা পড়ে যাবে। তাই ১০ বছর ধৈর্য্য ধরে বসে ছিল কবে উইল প্রতিশোধ নিবে।এমনিতে হ্যামলেট না���ি ভালোমানুষ। পুরো ব্যপারটা শুধু আমার কাছেই গাঁজাখুরি লাগলো নাকি এখানে কোনো লজিক আমি মিস করে গেলাম?
সেরা একটা থ্রিলার:' কি ভেবেছিলাম আর কি হলো! এতো বড়ো টুইস্ট:' মাস্টারমাইন্ড! এখনো ঘোরের মধ্যে আছি।কি পড়লাম এটা! ভয়,থ্রিল, টুইস্ট, শ্বাসরুদ্ধকর গতি সবমিলিয়ে সেরা একটা বই। এই বছরের ১ম বই। সেরাআআআআআআ ছিলো!
দুর্বল লেখনী। ঘটনাপ্রবাহ এলেমেলো লেগেছে। হরর, পুলিশ প্রসিডিওরাল, থ্রিলার, প্রেম, কাল্ট সবকিছু একসাথে আনতে গিয়ে কোনোটাই ঠিকঠাক ভাবে আসেনি; আমার বোঝার ভুলও হতে পারে কিংবা এক্সপেকটেশন বেশি থাকা হয়তো কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেষের দিকে এসে টুইস্টটাও সাধারণ মনে হয়েছে, অনেক কিছুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। শুধু দুইজন মানুষ মিলে এতোজন মানুষের বিপক্ষে সবকিছু করে ফেললো, আর বাকিরা তার বিপরীতে কিছুই করতে পারলো না? সাথে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ভুল বানান আর বিরামচিহ্নের উল্টোপাল্টা প্রয়োগ তো আছেই। বিদেশি প্রেক্ষাপটে হলেও লেখক যে বাংলায় নতুন ধাঁচের মৌলিক হরর লেখার চেষ্টা করেছেন, তার জন্য দুই তারা। পরেরবারে গুডরিডস রেটিং দেখে বই নিতে হলে হয়তো দু'বার ভাবতে হবে।
প্রচণ্ড খাপ ছাড়া লেখা। অ্যাবসেন্টিয়া, দিমেন্তিয়া 'র সেই বাবুর ছিটেফোটাও এই বইতে নেই। বিরক্তি চাপা দিয়ে তিনদিন ধরে এই ছাতা শেষ করেছি। এখন বেশ আরাম লাগছে। আবার কষ্ট লাগছে , শুধুমাত্র কিছু টুইস্টের জন্য এই বইয়ের ১৭৫ পৃষ্ঠার অত্যাচার সহ্য করা লাগলো। প্লটহোলের ছড়াছড়ি। দায়সারাভাবে এন্ডিং করা।একটাই সংলাপ এখন যথেষ্ট , ধুরো! সময়ডাই মাটি হলো।
ইংল্যান্ডের একটি ছোট্ট শহর উইন্ডেন।সেই শহরেই ঘটেছে এক বীভৎস হত্যাকান্ড।ঘটনাপ্রবাহের সারথি হয় দু'জন ডিটেক্টিভ, উইল টুরক এবং হ্যামলেট।তাদের ফরেন্সিক সহযোগী ছিল নিউক।তদন্তে নেমে পরে তারা।সেই তদন্তে তাদের কাছে একটি রহস্যময়ী নম্বর ছাড়া আর কিছুই ধরা দিল না। একটি ফ্ল্যাট এর মাঝে একটি নয়, দু'টি নয় বরং সাতটি লাশ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।নেই কোনো কাটাছেঁড়া কিংবা বেঁধের রাখার ছাপ।এমনকি আলামত সরিয়ে ফেলারও কোনো প্রমাণ খুনি পিছনে রেখে যায় নি।তবে রেখে গেছে দেয়ালে ছয়টি মাথা পেরেকঠোকা করে!৭ জনের মাঝে ৫ জনের পরিচয় উদ্ধারে সক্ষম হলেও তাদের কাছে থেকে যায় দু'জন অচেনা ভিক্টিম আর একটি রহস্যময়ী নম্বর ৬৬৬!
খুব সুন্দর ভাবেই পাঠকও ডিটেক্টিভদের মনঃস্তাত্ত্বিক চিন্তার সাথে জড়িয়ে যাবে।এবং এগোতে থাকবে অতিপ্রাকৃত জগতের নিকট।হাতছানি দিবে আপনাদের সকলের সামনে অশরীরী শক্তি,স্যাটানিজম এর মতো অশুভ শক্তির প্রভাব!ঠিক তখনি পাঠকের চিন্তার জগতে হুট করেই ব্রেক কষবে একটি চিরকুট! সেই চিরকুটে লেখা-সৈকতে ঝিনুক কুড়াতে যেও না,তাহলে চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে।চিরকুট হাতে নিয়ে লড়াইয়ের মোর ঘুরে যায় দুই ডিটেকটিভের, তবে খুব একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস যদি ফেলতে না চান,যেমন ধরুন এই বুঝি কেস সলভ হলো তাহলে আবারো পাঠক হিসেবে একটি মস্তিষ্কের লড়াই ঘটিয়ে দিতে প্রস্তুত হবে এই ক্লাসিক হরর-থ্রিলারটি!
জ্বী! টুইস্টে ভরা এই বইটিতে আপনি শেষ অধ্যায়টি অবধি পৌঁছাতে না পারলে ধরে নিবেন আপনি এখনো অনেক বড় ধোঁয়াশার মাঝে রয়েছেন। কেননা লেখক অনেকটা বিচক্ষণতার সাথেই আপনার মস্তিষ্কের প্রতিটি অনুমানকে ভুল প্রমাণিত করতেই হাজির করেছে পিনবলকে।কথায় আছে,দুনিয়া জানুক,ভালোবাসা কখনও হেরে যায় না।সে আঘাত পেলে দ্বিগুন হয়ে প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসে।কিন্তু,সেই প্রতিশোধের আগুনের দহন থেকে, অপরাধবোধের আগুন হয় বেশী।তাহলে পাঠককেই বিবেচনা করতে হবে লেখক এম.জে.বাবুর রচিত পিনবল আমাদের কোন সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে!
বইটিতে হরর ও থ্রিলের কমতি নেই,সেইসাথে প্রচ্ছদকার ও দারুণ ভাবে তাঁর কাজটি করেছেন।বইটিতে বিদেশী চরিত্র ও সংস্কৃতির বিস্তার দেখে মনে হতে পারে এটি কোনো অনুবাদ বই, তবে মোটেও বইটি অনুবাদ বই নয়।তাই পাঠককে স্বাগত জানাচ্ছি পিনবলের রহস্য উন্মোচন করার জন্য। আপনাদের সময় বৃথা যাবে না।কেননা একটি রহস্যময় প্লটে প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্রের বিস্তার যতটুকু হলে সাধারণ মানুষের কাছে বাস্তব মনে হবে, লেখক সেই কাজটিই করার সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছেন।আর শেষ অধ্যায় পাঠের পর আপনারা মানতে বাধ্য হবেন,বইটির প্লট কি দারুণ এক খেলা খেলেছে আপনাদের সাথে!
Excellent work! গল্পের প্লট, ভাষার ব্যবহার আর twist সবকিছু চমৎকার। আমার প্রিয় একটা মুভি আছে, "Law abiding citizen", এই গল্পে সেরকম একটা স্বাদ পেলাম। কিন্তু তারপরও যে আলাদা আরেকটা মোর ছিলো গল্পে সেটা আরো বেশি চাঞ্চল্যকর।
"Only a few can survive and face the reality without a vice." -Jacob Wild
ফ্লাপের লেখা: ছোট্ট মফস্বল শহর উইন্ডেনে ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। আবদ্ধ ঘরে নৃশংসভাবে খুন হল সাত জন। ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে ভয়ে শংকিত উইন্ডেনের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ভিক্টিমের মুখে একটি পিনবল ছেড়ে গেছে খুনী। ডিটেকটিভ আলফ্রেড আর উইল টুরক তদন্তে নেমে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। একটা পর্যায়ে তাদের মনে হতে থাকে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনো মানুষ জড়িত নয়; যেন সাক্ষাত শয়তান জড়িত৷ ইশ্বরের সাথে ষড়যন্ত্রের কঠিন খেলায় যেখানে শয়তান মত্ত সেখানে নেমে পড়ল দুই ডিটেকটিভ তাকে থামাতে। কী সেই ষড়যন্ত্র আর কেনই বা ঘটে গেলো এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড? তার সাথে শয়তানের-ই বা কী যোগসাজশ? সব রহস্যের উন্মোচন হতে চলেছে মিথ, ইতিহাস ও কঠিন বাস্তব জগতের মিশেল এবং পদে পদে রোমাঞ্চ আর রহস্যে ভরপুর উপন্যাস 'পিনবল' এর দুই মলাটের মাঝে।
কাহিনী সংক্ষেপ: উইল টুরক এবং তার সহকারী হ্যামলেট এর উপর দ্বায়িত্ব পরে উইন্ডেনে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের। ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায় নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে ছয়জনকে। সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে শরীরের বিভিন্ন অংশ আর রক্তের দাগ। সেই ছয়জনের মাথা পিন দিয়ে দেয়ালের সাথে গেঁথে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের চোখের পাপড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। খুঁজতেই বেরিয়ে আসে আরো একজনের লাশ। তার মুখে কেউ কিছু দিয়ে আঘাত করে পিনবল ঢুকিয়ে দিয়েছে। দেয়ালে ঝুলানো ছয়জনের মধ্যে একজন মেয়ে বাকি ছয়জন ছেলে। ফরেনযিক টিম প্রধান নিউট কোনো প্র��াণ খুঁজে পায়না। পোস্টমর্টেম করে জানা যায় প্রতিটা লাশের মুখে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে পিনবল আর তাদের উপড়ে ফেলা চোখ। আর খুন করার সময় কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বরং টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে শরীরের প্রতিটি অংশ। এবং তারচেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আলাদা করার সময় সকলেই ছিল জীবিত। তদন্ত চালিয়ে যেতে তারা পায় শয়তানের নাম্বার ৬৬৬। যেই রুমে খুন করা হয়েছে ছয়জনকে সেই রুম নাম্বার ৬৬৬। সেই সূত্র ধরে এগোতে তারা জড়িয়ে যায় ভয়ংকর এক শয়তানি যজ্ঞে। ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে এন্টি ক্রিশ্চিয়ান রিচুয়াল। কেউ রিচুয়াল অনুযায়ী ছয়জনকে শয়তানের কাছে উৎসর্গ করে ডেকে আনতে চায় বিস্ট ডেমেট্রিয়াস কে। কে সেই ব্যক্তি যে ডেকে আনতে চায় ডেমেট্রিয়াসকে? উইল আর হ্যামলেট কী পারবে তাকে থামাতে??
পাঠ প্রতিক্রিয়া: পিনবল উপন্যাসটি ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে লেখা তাই মনে হবে অনুবাদ সাহিত্য; যদিও উপন্যাসটি সম্পূর্ণ মৌলিক। যা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ নতুন। উপন্যাসের প্রথম শুরু হয় গল্প বলা দিয়ে। যদিও তা বুঝতে হলে পাঠককে গল্পের শেষে টুইস্টের মধ্যে হাবুডুবু খেতে হবে। একটা টুইস্ট শেষ করার আগেই আরেকটা টুইস্ট নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। গল্পের শেষের টুইস্ট গুলো পাঠককে পুরোপুরি অবাক করে দিবে। পাঠক অবাক হয়েই শেষ কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে পাল্টে দেখবে। পাঠক খুব দ্রুতই গল্প ঢুকে যেতে পারবে। গল্পের প্রধান চরিত্র 'উইল' সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে লেখক গল্পের সূত্রপাত করেন। যদিও মনে হতে পারে যে এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবে গল্পের শেষভাগে এসে পাঠক বুঝতে পারবে এখানে লেখক গল্পের বীজ বুনে রেখেছেন। লেখক গল্পে খুন আর হিংস্রতার বর্ণনা নিশংসভাবে দিয়েছে যা পুরো গা গুলিয়ে দেওয়ার মতো। ধীরে ধীরে কাহিনী এমন ভাবে মোড় নেয় যে পাঠক যুক্তি বাদ দিয়ে শয়তানি কাল্ট নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিবে। অবশ্য লেখক এখানে কাল্ট নিয়ে ধারণা যথেষ্ট পোক্তভাবে স্থাপন করেছে। অ্যান্টিক্রিস্ট এর ধারণা আরো মজবুত করতে লেখক গল্পে ৬৬৬, অ্যান্টি ক্রিশ্চিয়ান সিম্বল, উল্টো ক্রস, কু ক্লুক্স ক্ল্যান, লুসিফার, ভুডু, ডেমিট্রিয়াস, বিস্ট ইত্যাদি বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও ক্যালডীয় ধর্মমতে বিস্টকে পৃথিবীতে ডেকে আনা এবং ছয় জন মানুষকে স্যাক্রিফাইস করার ঘটনা গল্পের ভিত্তি আরো পোক্ত করেছে। অনেক তথ্যবহুল এই বইটি পড়ার সময় কোনো তথ্য অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়নি। পুরো বইটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইটি পাঠক কে ধরে রাখবে। বইটির শেষ হওয়ার পরও এর রেশ রয়ে যাবে। নিঃসন্দেহে অবশ্যপাঠ্য চমৎকার একটি বই।
চরিত্রায়ন: গল্পের প্রধান চরিত্র উইল, হ্যামলেট এবং নিউট। এছাড়াও রয়েছে লিসা, আশার একারম্যান, ভিনসেন্ট, ফাবিয়ান, ভেল, ফ্রেডির, উইন্সটন, ভিক্টর এবং অ্যান মেরি। প্রতিটা চরিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
প্রচ্ছদ: প্রথমে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী- সে কথার সত্যতা প্রমাণ করেই বইয়ের প্রচ্ছদ প্রথম দেখায় সবার নজর কেড়ে নেয়। আর দারুন এই প্রচ্ছদটি করেছেন আপনার আহমেদ রিজন। বইয়ের প্রচ্ছদে প্রথমেই চোখে পড়বে একটা মুখের মধ্যে পিনবল এবং মাথাটা বড় একটা পিন দিয়ে গেঁথে রাখা; যা গল্পের মূল আলোচ্য বিষয়। এছাড়া বইয়ের নামলিপিও বইয়ের প্রচ্ছদের আবহেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া বইয়ের একদম উপরে অ্যান্টি ক্রিশ্চিয়ান সিম্বল রাখা হয়েছে গল্পের সাথে মিল রেখে। কভার এর পেছনের অংশের ৬৬৬ নম্বর একটা দরজার ছবি দেওয়া যে রুমে মূল ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই বলতেই হয় গল্পের সাথে সম্পূর্ণ মিল রেখে প্রচ্ছদে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং প্রচ্ছদের রঙটিও দারুণ।
প্রিয় উক্তি: ১/ পৃথিবীতে যত প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মানবসৃষ্ট বিপর্যয় আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো ভালোবাসা। ২/ কমেডি এখন জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি তে রূপান্তরিত হলো। ৩/ প্রকৃতির খেলা মানুষের বোঝার বাইরে। যদি কেউ সেখানে বুঝতে পারতো তাহলে সে মানুষ থাকত না, ঈশ্বর হয়ে যেত। ৪/ ঈশ্বরের উপর যদি অগাধ বিশ্বাস থাকে তোমার আর কিছু দরকার হবে না। ৫/ খারাপ জায়গা দখলের জন্য কেউ না কেউ সব সময় থাকে।
লেখক: "পিনবল" লেখকের পড়া আমার প্রথম বই। বিদেশি পটভূমিতে লেখা বইটিতে লেখকের লেখনশৈলী খুবই ভালো। বইয়ের ভাষা খুব সুন্দর ও সাবলীল। গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে লিখে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন লেখক।
উৎসর্গ: সকল পাঠককে বইটি উৎসর্গ করায় লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রোডাকশন ও সম্পাদনা: বইয়ের প্রোডাকশন সতীর্থের অন্যান্য প্রোডাকশনের মতো ভালো। তবে এ বইয়ের ক্ষেত্রে নেগেটিভ যে বিষয়টা লেগেছে তা হলো অনেক বানান ভুল তা সাধারণত অন্য বইয়ে দেখা যায় না। তাই পড়তে গিয়ে কয়েক যায়গায় একটু খটকা লেগেছে। এছাড়াও ছাপা, কাগজের মান, বইয়ের সাইজ বরাবরের মতোই ভালো।
খুব ভালো লেগেছে বইটি। দেশীয় প্রেক্ষাপটে এরকম গল্প আগে কখনো পড়া হয়নি। একটানা পড়েছি , হাত থেকে রাখার ইচ্ছে করছিলো না। বইটিতে যেমন সাসপেন্স আছে তেমন আছে গা ছমছমে ভৌতিক পরিবেশ এবং প্রচ্ছদ এর কথা যত বলবো ততো কম হবে, সেরা প্রচ্ছদ হয়েছে। যারা হরর এবং থ্রিলার সংমিশ্রিত গল্প পড়তে চান, তারা অবশ্যই বইটি পড়বেন।
মিডিওকোর লিখনশৈলী, আগ্রহ জাগানিয়া প্লট এবং সেই সাথে বেশ কিছু টুইস্টে এম জে বাবুর 'পিনবল' মোটামুটি ভালোই লাগার কথা সবার। ওদিকে সতীর্থ প্রকাশনীর সুন্দর প্রোডাকশন বইটিকে ভালো ভাবেই পাঠকের কাছে প্রেজেন্ট করেছে।
এম.জে. বাবুর নতুন প্রকাশিত হরর থ্রিলার নভেলা। সোজা কথায় যদি বলি, লেখক এই বইতে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। বইয়ের প্রতি অধ্যায়তে নতুন চমক ছিল, একেকটা দিনের ঘটনা পড়ছিলাম সাসপেন্স বেড়ে যাচ্ছিল এটা ভেবে যে, পরেরবার কি ঘটতে যাচ্ছে! উইল-হ্যামলেট ডিটেকটিভ জুটির কাজ দুর্দান্ত ছিল। লেখক লুসিফার আর বিস্টের মিথটাকে কাজে লাগিয়েছেন দুর্দান্তভাবে। প্রত্যেকটা খুনের বর্ণনা আর নৃশংসতা দেখে শিউরে উঠছিলাম বারবার, খুবই ডিস্টার্বড ফিল করছিলাম, কিন্তু এরপরেও বই হাত থেকে রেখে উঠা সম্ভব হয়নি। এইরকম চমৎকার একটা কাহিনীর এক্সিকিউশন, তাও ভিনদেশি পটভূমিতে, হিস্টোরি আর মিথের সাথে দুর্দান্ত কম্বিনেশন- সব মিলিয়ে পিনবল ছিল একটা রোলার কোস্টার রাইড। পুরো কাহিনীর কোথাও অতিরঞ্জন করা হয়নি। পুরো গল্পটা পড়তে পড়তেই হারিয়ে যাচ্ছিলাম উইন্ডেনের ছিমছাম সুন্দর শহরটাতে। শেষ অধ্যায়ে এসে বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খাই যখন দেখি যে আমি এতক্ষণ যা ভাবছিলাম, ঘটনা তার ঠিক বিপরীতে ঘটে চলছে। আর শেষ দুটো পেজ পুরোপুরি স্তম্ভিত করে দেয় আমাকে। দুর্দান্ত! থ্রিলার পাঠকদের জন্য এটা অবশ্যই রেকমেন্ডেড (দুর্বলচিত্ত পাঠকদের জন্য নয় তবে)।
ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর উইন্ডেনে ঘটে যায় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। একটা আবদ্ধ ঘরে নৃশংসভাবে খুন হয় সাতজন মানুষ। ছয়টা মাথা পিন দিয়ে দেয়ালে টাঙানো, আর প্রত্যেকের মুখে একটা করে পিনবল ছেড়ে যায় খুনী। ডিটেক্টিভ হেমলেট আর উইল তদন্তে নেমে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনো মানুষ আছে বলে মনে হয় নি।
প্রথমে মনে হবে, হরর কিন্তু শেষে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাবে। শেষে যে একটা টুইস্ট অপেক্ষা করছিলো, ভাবতেই পারি নি। 'গন ফর গুড' পড়ে এমন লেগেছিলো।
[সব কিছুই ভালো ছিলো, কিন্তু বইয়ে প্রচুর পরিমাণে ভুল বানান ছিলো। এক নামের জায়গায় আরেক নাম। যা খুবই বিরক্তিকর ছিলো। নাহয়, বাকী সব ঠিকঠাক।]
প্রথমেই নেগেটিভ দিকগুলো নিয়ে কথা বলে মাথা ঠাণ্ডা করে নিই। সতীর্থ প্রকাশিত আমার পড়া ৫ম বই এটা। এবং হতাশাজনকভাবে এটার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ সম্পাদনার দিক দিয়ে। প্রচুর বানান ভুল। 'হাই' হয়ে গেছে 'হায়', 'যায়' হয়ে গেছে 'যাই'। বিরাম চিহ্নেও ঝামেলা, '?' এসেছে বেজায়গায়। এছাড়া ঝামেলা আছে পাণ্ডুলিপিতেও; তাল কেটে গেছে অনেক জায়গায়, কারণ অনেকগুলো সিন স্কিপড হয়ে গেছে। অল্প কয়েকটা উদাহরণ দেইঃ অধ্যায় সাতে একটা ফোনবুথের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এর কোনো প্রিমাইজ নাই, হঠাৎ করে উল্লেখ এসেছে। অনেকগুলো বর্ণনা স্কিপড, যেমন হ্যামলেটের সাথে কথা বলার পরের মুহূর্তেই উইল কথা বলছে জনসনের সাথে। এছাড়া ক্যাল্ডীয়-সেল্টিক মিলেমিশে ঘোঁট পেকে গেছে, অর্থাৎ মিথগুলো ঘেঁটে গেছে। সালের হিসাবেও ঝামেলা আছে বেশ কিছু। যেমন তৃতীয় শতক কিভাবে আসে যদি সাইকেল ৬৬৬ বছরের হয়? চরিত্রেরও বিভ্রাট আছে। এক চরিত্রের বদলে নাম এসেছে আরেক চরিত্রের। এ গেল অর্ধেক ভুল মাত্র, মোদ্দা কথা এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে আরেকটা বইই লেখা সম্ভব। এবার আসি পজিটিভ দিকে। যথারীতি রিজন ভাই একদম খাপেখাপ প্রচ্ছদ করেছেন। বাইন্ডিংও দারুণ লেগেছে। ক্রাউন সাইজের হার্ডকভারের জন্য ভালোই। সবশেষে, এত এত ভুল থাকার পরেও পড়া থামাতে পারিনাই, কারণ বইটা আনপুটডাউনেবল। রহস্য জমাট বেঁধেছে পাতায় পাতায়। লেখনীও সাবলীল, যত এগিয়েছে গল্প লেখনী আরো উন্নতি করেছে। উইলের চরিত্রায়ণ খুবই ভালো ছিল, উত্তম পুরুষে তার জবানিতে ধীরে ধীরে ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। উইল এবং হ্যামলেটের রসায়ন বেশ ভালো ছিল। অনুবাদ অনুবাদ গন্ধ থাকলেও সেটা মূল বইয়ের গতিকে আটকাতে পারেনি। হরর সিনগুলো খুব ভালোভাবে চিত্রিত হয়েছে। একজন বিশেষ ব্যক্তির ক্যামিও দেখে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেছিলাম। আর বইয়ের শেষে থাকা টুইস্ট পড়ে তো পুরাই মাথানষ্ট। এ রকম টুইস্টিং এন্ডিং কমই দেখেছি। মজার বিষয় বইয়ে টুইস্ট দুইটা, এরকমটা সবসময় দেখা যায়না আর দেখা গেলেও সঠিকভাবে পুল অফ করা কঠিন ব্যাপার। সব মিলিয়ে ভুলজনিত বিরক্তি এড়িয়ে গিয়ে বইটা মাস্ট রিড। ভুলগুলো না থাকলে নিঃসন্দেহে বইটা ৫/৫ পেত আমার তরফ হতে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ যে বই দিয়ে বাবু ভাইয়ের সাথে পরিচয়, সেই বইয়ের দ্বিতীয় এডিশন আজকে আবার পড়লাম।আগেরটার রিভিউ লিখি নাই কখনো। ৬৬৬ এই শব্দের সাথে কম বেশি অনেকেই পরিচিত। ৬৬৬ কে শয়তানের সংখ্যা বলা হয়। ৬৬৬ এর উপর ভিত্তি করে সেবা প্রকাশনীর 'অশুভ সংকেত ট্রিলজি' পড়েছিলাম। তো এই সংখ্যা কে পুজি করে লেখক চমৎকার একটা বই পাঠক সমাজে উপহার দিয়েছেন। বিদেশি প্রেক্ষাপটে লিখা বইটিতে সবকিছুর পার্ফেক্ট মিশ্রণ রয়েছে। # ভালো প্লট, তদন্ত, বীভৎসতা,হরর এলিমেন্ট, থ্রীপল টুইস্ট, সাসপেন্স সব কিছু খাপে খাপে ছিলো। # বইটি উত্তম পুরুষে লিখা। ফলে বেশ জীবন্ত মনে হয়েছিলো। # ক্রাইম সিনের বর্ণনা পড়তে গিয়ে একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো। এতো বীভৎস ক্রাইম সিন বর্ণনা দুর্বলচিত্তের পাঠক দের আরো বেশি অস্বস্তিতে ফেলবে। # শেষের টুইস্ট গুলো ছিলো দেখার মতো। পর পর তিনটা টুইস্ট দিয়ে পাঠক কে চমকে দিতে সক্ষম বইটি। # কিছু ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রের হুটহাট করে স্মৃতিচারণ পড়ে বিরক্ত লাগতে পারে,কিন্তু সেটা যুক্তিসংগত ছিলো। তারপরেও একটু কম রাখলে ভালো হতো।
# নতুন এডিশনে সম্পাদনা অনেক ভালো হয়েছে। আগের অসংখ্য ভুল ঠিক করা হয়েছে। তারপরেও কিছু বানান ভুল ছিলো যা পড়ার সময় কোনো সমস্যা করবে না আশা করি। যেমনঃ ৫৩ পৃষ্টায় 'তামাটের' জায়গায় 'তামাতে ' এরকম আরো ৯-১০টা ছিলো।
প্রচ্ছদঃ প্রচ্ছদটাও নজরকাড়া। রুদ্র কায়সার ভাইয়ের আঁকায় ভালোই ভয়ের আবহ তৈরী হয়েছে। এইটা প্রথম আমার রুদ্র ভাইয়ের করা প্রচ্ছদ সংগ্রহ।
বইটি একটি হরর থ্রিলার।আমি শেষবার কবে ভূতের গল্প পড়ে বা দেখে ভয় পেয়েছিলাম ,তা মনে করতে পারি না।তবু ভূতের গল্প পড়ি,শুনি,দেখি।ভয়ের যে আবহটা লেখক বা ডিরেক্টর বা গল্প কথক তৈরি করেন,সেটা আমাকে ফ্যাসিনেট করে।এজন্যেই হয়তো পড়ি।পিনবল-এ লেখক ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সয়তানের পূজারীদের নিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে যে ভয়ের চিত্র তৈরি করেছেন,এমন কিছু পড়েছিলাম জগৎবিখ্যাত পিশাচ কাহিনী David Seltzer এর The Omen সিরিজে।সে পিশাচকাহিনী আমার মনে যে অনুভূতি তৈরি করতে পেরেছিল,পিনবল ও কতকটা সে স্বাদ আমায় দিয়েছে।এখন বলি,আমরা হুমায়ুন আহমেদ কেন পড়ি বলুন তো?উনার প্রতিটি বইয়ে কি আলাদা ইউনিক কাহিনি থাকে?আপনি যদি একট নির্দিষ্ট এমাউন্ট হুয়া পড়ে থাকেন,আপনার উত্তরটি হবে 'না'।হুয়া একই কাহিনির পুনরাবৃত্তি একাধিক বইয়ে করেছেন।তবু আমরা হুয়া পড়ি উনার লেখনীর টানে।উনার লেখার স্টাইল আমাদেরকে মুগ্ধ করে।তাই পড়ি।দেখেন,পিনবল ছিল ঘটনাবহুল।এখানে সিটি মেয়র,পুরাতন প্রেমিকার গল্প,সয়তানের পুজারী,সিম্বোলজি,মিথ,রেলিজিয়ন,রবার্ট ল্যাংডনের মতো চরিত্রের আবির্ভাব,কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে দানব প্রকৃতির কোনো এক মূর্তি,অতর্কিত হামলা,ভালোবাসা,প্রতিশোধ আরো অনেক কিছুই ছিল।কিন্তু এত কিছুর পরেও লেখকের গল্প বলার স্টাইলটা কেনো যেনো কাঠখোট্টা লাগছিল।রসকস হীন লাগছিল।
*এই পর্যায়ে আইসে মাইল্ড স্পয়লার পাবেন।নিজ দায়িত্বে পইড়েন*
আর শেষের দশ পৃষ্ঠার টুইস্টের রোলারকোস্টার রাইড নিয়ে কথা বলি।উইল কিন্তু একাধিক বার এলসা,অর্থাৎ তার পুরানো প্রেমিকার কথা গল্পে উঠিয়ে এনেছে।বুঝতে পারছিলাম এলসাকে নিয়ে লেখক কিছু কাজ করবেন।এক্ষেত্রে লেখকের কৃতিত্ব।এবং যথারীতি এলসাকে নিয়ে টুইস্ট ডেলিভার ও করেছেন।এখন,সেই টুইস্টের খেলার জন্য পুরো গল্পটাই একসময় অর্থহীন মনে হয়।তাহলে এতক্ষণ কী পড়লাম?কেন পড়লাম?এমন সব প্রশ্ন উঠে।এই প্রশ্ন গুলো আমিও নিজেকে করেছি।আর শেষ দশ পৃষ্ঠায় যে রোলারকোস্টার রাইড হবে,তা আগেই রিভিউ পড়ে জেনেছিলাম।তাই কোথাও কোথাও মনে হয়েছে,বইয়ে ইচ্ছে করেই,ওই শেষ দশ পৃষ্ঠার জন্য টুইস্ট জমিয়ে রাখা হয়েছে।সেজন্য কিছু জায়গায় মনে হচ্ছিলো,'এই অধ্যায়টা না থাকলেও চলতো।এখানে ফিলার না দিয়ে,ক্যানন কোনো টুইস্ট হয়তো দেওয়া যেতো'।
প্রকাশকের কথায় প্রকাশক বলেন,উনাকে বইয়ের প্রচ্ছদকার আর বানান সংশোধনকারী লোক দুজনেই জিজ্ঞেস করে,বইটি আসলেই মৌলিক,নাকি অনুবাদ।প্রকাশক মনে করেন,এখানেই বইয়ের স্বার্থকতা।ওয়েল,একই চিন্তা আমার মনেও এসেছে।তা জেনে হয়তো প্রকাশক খুশি ই হবেন।বাংলা সাহি��্যে হরর জনরা কতটা সমৃদ্ধ তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল,সেই বহু আগে থেকেই।আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প তে হুয়া বাংলা সাহিত্যের সেরা ভৌতিক ছোটো গল্পের এক সংকলন করেছেন।সে বইয়ের ভূমিকায় তিনি আফসোস করে বলেন,হরর নিয়ে বাংলায় অনেক সাহিত্যিকই কাজ করেছেন,তার অধিকাংশই পড়া যায় না।(লাইন টু লাইন কোট করিনি।আসলে অনেকদিন আগে পড়েছিলাম তো,কেবল মনে আছে,বাংলায় ভৌতিক গল্পের সমৃদ্ধি নিয়ে হুয়া সন্তুষ্ট ছিলেন না)তেমন এক সময় পিনবলের আবির্ভাব বাংলা হরর সাহিত্য কে আরো কিছুটা সমৃদ্ধ করবে,সে বিষয়ে সন্দেহ নেই(যদিও এটা বিদেশি পটভূমিতে লেখা)।
লেখা পড়ে মনে হয়েছে কোনো অনুবাদ পড়ছি।নিঃসন্দেহে লেখকের প্রথম কাজ জিন থেকে লেখনশৈলী বেশ সমৃদ্ধ। এবার আসি কাহিনীতে। শুরুটা দারুণ।চরিত্রগুলোকে একবার প্রথম নাম,আরেকবার শেষ নামে ডাকার জন্য একটু ঝামেলা হচ্ছিলো।মাঝের ইতিহাস ঘাটাঘাটি,অতিপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপার এ ফাঁকফোকর লাগছিলো।সেটা কেন লাগছিলো তা সর্বশেষ টুইস্টের আগের টুইস্ট এ খোলাশা হলো।তবুও বাধ সাধলো সর্বশেষ টুইস্ট,সেখানে দেখলাম ফাঁকফোকর নয়,বেশ বড়সড় গর্তই যা কোনোভাবেই ডিংগাতে পারলাম না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সেই সর্বশেষ টুইস্টির প্রয়োজন ছিলো না।সবমিলিয়ে মোটামোটি।
শেষ করলাম এম.জে.বাবু'র লিখা বই 'পিনবল'। বইটা সংগ্রহে ছিলো অনেকদিন ধরে। তবে, হাতে বেশ কয়েকবার নিলেও শুরু করা হয়নি। কেনো? এর পিছে ছিলো কিছু মানুষের ব্যাড রিভিউ। ব্যাড বললে একটু কমই বলা হবে। আমার এক বন্ধু বলেছিলো, নিরেট অখাদ্য। সেই ভয়ে বইটা ছুঁয়ে দেখিনি। অনেকদিন পরে বইটা পড়তে ইচ্ছা করলো। ব্যাস! হাতে নিলাম। পড়লাম। ভাইরেভাই! কি ছিলো এটা! বিশ্বাস করেন, এক মুহূর্তের জন্যেও খারাপ তো লাগেই নি। বরং বেশ ভালো লেগেছে।
এম.জে.বাবু'র সাথে আমার পরিচয় 'জিন' এর মাধ্যমে। বইটা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। এরপরে দিমেন্তিয়াও চমৎকার লেগেছিলো। লেখকের ওপরে আরামসে ভরসা করা যায়। এরকম একটা বিশ্বাস চলে এসেছিলো ভেতরে। কিন্তু ঐ যে বললাম, ব্যাড রিভিউ। সেজন্যেই এত্তো দেরি।
যাইহোক, এবার বইয়ে ফিরি। ছোট্ট মফস্বল শহর উইন্ডেনে ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকান্ড। আবদ্ধ ঘরের মধ্যে নৃশংসভাবে খুন হয় সাতজন মানুষ। ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে ভয়ে শঙ্কিত উইন্ডেনের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। প্রত্যেক ভিক্টিমের মুখে একটি করে পিনবল ছেড়ে গেছে খুনী। ডিটেকটিভ আলফ্রেড আর উইল টুরক তদন্তে নেমে পড়ে যায় গোলকধাঁধায়৷ এক পর্যায়ে তাদের মনে হতে থাকে এই হত্যাকান্ডের পিছনে কোনো মানুষ জড়িত নয়। সাক্ষাত শয়তান জড়িত। আসলেই কি শয়তান জড়িত নাকি রয়েছে কারো ষড়যন্ত্র? কেনোই বা ঘটে গেলো এই নৃশংস হত্যাকান্ড? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে পড়ে ফেলতে হবে মিথ, ইতিহাস ও রহস্য রোমাঞ্চ ভরপুর উপন্যাস 'পিনবল'।
সবমিলিয়ে, আমার ভালো লেগেছে। পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো কোনো ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ পড়ছিলাম। তাই বলে কাঠখোট্টা টাইপ লিখা না। সাবলীল ছিলো। পড়লেই বুঝবেন। বইটার সাথে বেশ ভালো একটা সময় গেলো। শুরু থেকে শেষ অব্দি সুন্দর গতিতে এগিয়েছে। আর,উপন্যাসের শেষের টুইস্টটার কথা কিভাবে যে বলবো! এই পার্টটা আপনার সবচাইতে ভালো লাগবে। এটার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি। ব্যাড রিভিউ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। বইটা নিয়ে বসে পড়ুন। আশা করি ভালো লাগবে। বেশ ভালো লাগবে। ঠিক আছে। থাকুন এবার। অনেক রাত হলো। শুভরাত্রি।
বইটা নিয়ে একটা কথা-ই বারবার মাথাতে আসছে। Expect the unexpected! লেখক শুরুতেই বলেছেন প্রত্যাশা ছেড়ে বইটা পড়তে। ঠিক এটা আমি করে পারিনি। প্রথম কারণ আমি লেখককে নিয়ে থ্রিলার গ্রুপগুলোতে অনেক আলোচনা পেয়েছি,ওনার বইগুলো নিয়ে আলোচনা পেয়েছি। তো আমার প্রত্যাশা ছিলো তুঙ্গে৷ আশানুরূপ হয়নি,বিশেষ করে প্রথম থেকে মাঝের অংশগুলো। এর কারণ ছিলো মনে হয়েছে বেশ তাড়াহুড়ো মরে লেখা হয়েছে৷ এমন প্লট আরো বিশদ বর্ণনা দিয়ে লেখা দরকার। তবে শেষ অংশটা প্লটকে নতুন রূপ দিয়েছে। পুরো রেটিংটাই এই অংশের জন্য।
কাল্ট বা হরর এই বিষয়ে লেখা হলে আমি আরো বিশদ বর্ণনা চাই৷ আবার নৃশংসতার যে বর্ণনাগুলো আছে সেগুলোও দায়সারা ধরনের। লেখক কীভাবে লেখেন,এ ধারণা আমার নেই। আমার ওনার বাকি বইগুলো পড়া বাকি। তবে পরের বার এক্সপেক্টেশনের পারদ নিচে রাখবো।
বইয়ের কাহিনী বেশ ভাল, তবে খুবই কাঁচা লেখা (প্রচুর বানান/ চরিত্রের নাম ভূল, একঘেয়ে বাক্য গঠন, বিন্দুমাত্র সম্পাদনা বা প্রুফ রিডিংএর বালাই নেই)। পরের সংস্করনে এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে মোটামুটি জমজমাট পিশাচ কাহিনী হবে আশা করা যায়। ইউরোপের পটভূ���িতে লেখার জন্য তথ্যগত অসংগতি আছে কিছু ওগুলোও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে অতিবুদ্ধিমান পাঠকদের রিভিউয়ের শুরুতেই "অকল্পনীয় টুইস্ট, হরর মনে হলেও আসলে কিন্তু হরর বই না"- এ ধরনের কথা বার্তা এ বইটা পড়ার অর্ধেক মজা নষ্ট করে দিয়েছে। আপনি যদি জানেনই বইয়ের শেষে বিশাল চমক অপেক্ষা করছে, তাহলে অনবরত চিন্তা করতে থাকবেন কি হতে পারে সেটা, তখন আর মজা থাকলো কোথায়? তবে যত যাই হোক, শেষ পাতাটা একেবারেই অনর্থক লেখেছে, যেন জোর করে গল্পের মধ্যে ঢুকানো হয়েছে টুইস্ট। লেখকের জন্য শুভকামনা থাকলো যাতে পরবর্তী সংস্করনে এগুলো কাটিয়ে উঠে আরও ভালো একটা বই উপহার দিতে পারেন।
পিনবলের ঘটনা প্রবাহ চমৎকার হলেও সত্যি বলতে লেখকের গল্প বলার ধরন হতাশ করেছে। প্রায় চার ভাগের তিন ভাগেরও বেশি অংশ জুড়ে লেখনশৈলী খাপছাড়া লেগেছে এবং পড়তে গিয়ে বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। বইটাতে সম্পাদনা ও যত্নের অভাব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল। হরর উপাদানগুলো ভালোই লেগেছে।বইয়ের একদম শেষ দিকে লেখক টুইস্ট নিয়ে খেলতে চেয়েছেন। কিন্তু সত্যি বলতে তা খুব বেশি উপভোগ করিনি।
ব্যক্তিগতভাবে লেখকদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাড থাকলে তাদের বই রিভিউ দিতে ভীষণ সঙ্কোচ হয়। নাইস পারসন হওয়ায় আমার অনেস্ট রিভিউ খানিকটা সুগারকোট করে দিই। তবে এইবার এই বইটি আসলেই অনেক বেশিই ভালো লেগেছে। অসাধারণ চমৎকার একটি বই। যেই লেখকের লেখনি এতটা চমৎকার সে ধর্মকে পুজি করে বইয়ের কাটতি বাড়াচ্ছে বিষয়টি হতাশাজনক।
এই বইটা থ্রিলার হিসেবে একেবারে বেমানানসই। পুরোটা সময় মনে হচ্ছিল আমি কোন ক্লাসিক পড়ছিলাম।খুনের নৃশংসতা নিয়ে আর বলার কিছু নেই।একেবারে খাপছাড়া অবস্থা।জিন পড়ার পর যেভাবে হতাশ হয়েছি, পিনবল পড়ার পর মনে হচ্ছে এম.জে বাবুর আর কোনো বই পড়া মানেই সময়ের অপচয় হবে।