Jump to ratings and reviews
Rate this book

আরণ্যক

Rate this book
'Aranyak' is a simple and uncomplicated story. The protagonist Satyacharan has gone to an estate in Bhagalpur after getting a job of a manager. Initially his urban lifestyle might have revolted against the lonely jungle life but gradually nature hypnotized Satyacharan. Gradually he can not even resist a moment's absence from the forest. Satyacharan and his partner Jugalprasad, a perfect match to the nature-loving soul of Satyacharan decorated the forest by planting many rare species of herbs and saplings. But Satyacharan is an estate manager. He has to destroy this creation of the forest-Goddess against his own will and distribute it amongst the local people. Age old gigantic trees as well as plants and herbs of rare species are getting destroyed with the sharp axes. This results in a deep feeling of guilt and sadness at the end of the novel.

168 pages, Paperback

First published December 1, 1939

559 people are currently reading
5227 people want to read

About the author

Bibhutibhushan Bandyopadhyay

203 books1,089 followers
This author has secondary bangla profile-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.

Bibhutibhushan Bandyopadhyay (Bangla: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়) was an Indian Bangali author and one of the leading writers of modern Bangla literature. His best known work is the autobiographical novel, Pather Panchali: Song of the Road which was later adapted (along with Aparajito, the sequel) into the Apu Trilogy films, directed by Satyajit Ray.

The 1951 Rabindra Puraskar, the most prestigious literary award in the West Bengal state of India, was posthumously awarded to Bibhutibhushan for his novel ইছামতী.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
3,582 (71%)
4 stars
1,106 (22%)
3 stars
244 (4%)
2 stars
42 (<1%)
1 star
31 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 573 reviews
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
May 1, 2021
এ বইটা পড়ারও একটা গল্প আছে।

আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ইংরেজি স্যারের বাসায় যেতাম প্রাইভেট পড়তে। একদিন শুনলাম স্যারের বাবা ইন্তেকাল করেছেন। স্যার কাউকে পড়াবেন না। সবাইকে স্যার ফেরত পাঠালেও আমাকে নিজের রুমের টেবিলে বসায় বললেন পড়তে থাক তুই। বলে স্যার পাশের বিছানায় চোখ বন্ধ করে শোকাতুর হয়ে শুয়ে রইলেন। আমি পড়তে থাকলাম আর মাঝেমধ্যে স্যারের বইয়ের বিশাল কালেকশনে চোখ বুলাতে থাকলাম। অসংখ্য বইয়ের মাঝে চোখ পড়ল আরন্যকে। পড়া শেষে বুকে সাহস এনে বইটা চেয়ে ফেললাম। স্যার শুনে প্রচন্ড বিরক্ত চোখে ক্লাস সেভেনে পড়া ইচড়ে পাকা আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে বললেন, 'এই বইটা কালকে তুই আমার বাসায় এসে বসে পড়বি। তারপরে আমাকে বলবি এখানে কি বলা হয়েছে'। আমি পরের দিন এসে বইটা পড়লাম এবং একটা মৌখিক রিভিউ দিলাম স্যারকে। হতবাক হয়ে উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন এরপরে যে বইটা উনার কালেকশনে পছন্দ হয় নিয়ে যেতে। আমার মনে হইল বিশ্বজয় হয়ে গিয়েছে।

বইটার রিভিউ দেয়ার আসল ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু পড়ার সময়ের আমার অভিজ্ঞতা কিছুটা তুলে ধরি৷ বই পড়ে ভিজুয়ালাইজ করা আমি সর্বপ্রথম এই বই পড়েই পেয়েছি। আমার এতকাল ধরে এতটুকু মনে আছে আমি নিজেকেই যেন সত্যচরণ। এই জনকোলাহলপূর্ণ ইটপাথরের কোলকাতা শহর থেকে জীবিকার তাগিদে চলে গেছি ভাগলপুরের জমিদারবাড়িতে। চারপাশে ঘন জংগল আর সেখানকার বাস করা নিন্মবিত্তের আর বর্ণের মানুষগুলাই এখন আমার সম্বল। এদের জীবন আর জীবিকার সাথে তাদের বিশ্বাস আর সরলতাও আমি দেখলাম সত্যচরণের চোখে। বইটার ইউনিকনেস হচ্ছে এর বর্ণনায়৷ লেখক হিসেবে বিভুতিভূষণের উচ্চতা আপনি বইটা পড়লেই টের পাবেন। জংগলের বর্ণনায় আমার গা যেন শিরশির করে উঠছিল। আমি যেন সবকিছু নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম।

বড় হবার পরে আমি বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু যখনই বান্দরবানের ঘন পাহাড়মিশ্রিত জংগলে হাইকিং করেছি তখনি বিভুতিভূষণ আর সত্যচরণের কথা মনের মধ্যে জ্বলজ্বল করে উঠেছে সবসময়ই। আবার গেলেও যে তাদেরই কথা মনে পড়বে সেটা বলাইবাহুল্য।
Profile Image for Akash.
446 reviews150 followers
June 13, 2023
কিছু বই আছে যা আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে, আত্মাকে প্রসারিত করে, জীবনরস-সাহিত্যরসের সুরা পান কর‍তে দেয়। 'আরণ্যক' হল সে-রকম একটা বই, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বই। 'আরণ্যক' আমাকে প্রকৃতির অন্তরঙ্গ বন্ধু বানিয়ে দিয়েছে আজীবনের জন্য।

জীবনে 'আরণ্যক' এর মতো ভয়ানক সুন্দর উপন্যাস আর পড়তে পারব না এই কষ্টে চোখের অশ্রু ফেলে শেষের পাতাটা পড়ে শেষ করেছিলাম

লবটুলিয়া-ফুলকিয়া-নাঢ়া বইহার, মোহনপুরা রিসার্ভ ফরেস্ট, মহালিখারূপ পাহাড়, সরস্‌বতী হ্রদ এর বন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গভীর অরণ্য বনাঞ্চল, এর সাথে কুন্তা, ভানুমতী, মঞ্চী, মটুকনাথ, গিরধারীলাল, যুগলপ্রসাদ এর গভীর জীবনবোধ, সাথে বন্যজন্তুর অভয়ারণ্য এবং জ্যোৎস্না রাত, বাতাসে ফুলের সুভাস, শৈলশ্রেণী, নক্ষত্র-চাঁদ-সূর্যের লাল আভা, গাঢ় নীল আকাশ। সবমিলিয়ে 'আরণ্যক' আমায় মদের নেশার চেয়ে তীব্রতম নেশায় মাতাল করেছে।

কী করে বনাঞ্চল থেকে পক্ষীকুল, জন্তু-জানোয়ার, সর্পকুল বিতাড়িত হয়ে, বনাঞ্চল, ঘন অরণ্য, পাহাড় বিনাশ হয়ে মানববসতি গড়ে ওঠে তার দৃশ্যলীলা যেন ৮৩ বছর আগের বই 'আরণ্যক' পড়ে একা নির্জন রুমে বসে জানালা দিয়ে দূর দিগন্তের সীমারেখা পর্যন্ত মনকে প্রসারিত করে দেখতে পেলাম। আর আমার চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে 'আরণ্যক' বইয়ের 'কাচারি' শব্দের উপর পড়ে পাতাটি ভিজে গেল।

কীভাবে বস্তুবাদ-ভোগবাদের প্রত্যাশায়, উন্নতির লোভে মানুষ সৌন্দর্য ও আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছে তা যেন বিশদ চোখে দেখলাম।

আমার কষ্ট হচ্ছে লবটুলিয়া-ফুলকিয়া-নাঢ়া বইহার, মোহনপুরা রিসার্ভ ফরেস্ট, মহালিখারূপ পাহাড়, সরস্‌বতী হ্রদ এর বন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গভীর অরণ্য বনাঞ্চল এর জন্য।

কুন্তা, ভানুমতী, মঞ্চী, মটুকনাথ, গিরধারীলাল, যুগলপ্রসাদ এর জন্য শ্রদ্ধা আর বেদনা অনুভূত হচ্ছে।

'আরণ্যক' উপন্যাসে প্রকৃতিকে নিয়ে লেখকের বলা কিছু লাইনঃ

"প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন তা অতি অমূল্য দান। অনেকদিন প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্যার স্বভাব প্রকৃতিরানীর— প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোনো দিকে মন দিয়াছি যদি অভিমানিনী কিছুতেই তার অবগুন্ঠন খুলিবেন না।

কিন্তু অনন্যমনা হইয়া প্রকৃতিকে লইয়া ডুবিয়া থাক, তার সর্ববিধ আনন্দের বর, সৌন্দর্যের বর, অপূর্ব শান্তির বর তোমার উপর অজস্রধারে এত বর্ষিত হইবে, তুমি দেখিয়া পাগল হইয়া উঠিবে, দিনরাত মোহিনী প্রকৃতিরানী তোমাকে শতরূপে মুগ্ধ করিবেন, নূতন দৃষ্টি জাগ্রত করিয়া তুলিবেন, মনের আয়ু বাড়াইয়া দিবেন, অমরলোকের আভাসে অমরত্বের প্রান্তে উপনীত করাইবেন।"

আসলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সকল সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবে। আরণ্যক, আদর্শ হিন্দু হোটেল, পথের পাঁচালী, চাঁদের পাহাড়, ইছামতী, অপরাজিত ও অশনি সংকেত এই সাতটা বই আমার কাছে রংধনুর সাত রং। বাংলা সাহিত্যের সাত ধ্রুব তারা।।
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
April 20, 2020
"মানুষের বসতির পাশে কোথাও নিবিড় অরণ্য নাই। অরণ্য আছে দূর দেশে, যেখানে পতিত-পক্ব জম্বুফলের গন্ধে গোদাবরী-তীরের বাতাস ভারাক্রান্ত হইয়া ওঠে, ‘আরণ্যক’ সেই কল্পনালোকের বিবরণ। ইহা ভ্রমণবৃত্তান্ত বা ডায়েরি নহে-উপন্যাস। অভিধানে লেখে ‘উপন্যাস’ মানে বানানো গল্প। অভিধানকার পণ্ডিতদের কথা আমরা মানিয়া লইতে বাধ্য। তবে ‘আরণ্যক’-এর পটভূমি সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়। কুশী নদীর অপর পারে এরূপ দিগন্ত-বিস্তীর্ণ অরণ্যপ্রান্তর পূর্বে ছিল, এখনো আছে। দক্ষিণ ভাগলপুর ও গয়া জেলার বন পাহাড় তো বিখ্যাত।" - আবার পড়লাম, সামনে আবার পড়বো।
Profile Image for পটের দুধের কমরেড.
209 reviews25 followers
April 30, 2021
"জ্যোৎস্না আরো ফুটিয়াছে, নক্ষত্রদল জ্যোৎস্নালোকে প্রায় অদৃশ্য, চারিধারে চাহিয়া মনে হয় এ সে পৃথিবী নয় এতদিন যাহাকে জানিতাম, এ স্বপ্নভূমি, এই দিগন্তব্যাপী জ্যোৎস্নায় অপার্থিব জীবেরা এখানে নামে গভীর রাত্রে, তারা তপস্যার বস্তু, কল্পনা ও স্বপ্নের বস্তু, বনের ফুল যারা ভালোবাসে না, সুন্দরকে চেনে না, দিগ্বলয়রেখা যাদের কখনো হাতছানি দিয়ে ডাকে নাই, তাদের কাছে এই পৃথিবী ধরা দেয় না কোনো কালেই৷"

মুগ্ধ— বিস্মিত— অভিভূত— প্রাচুর্যময় শব্দ-ভাণ্ডারের সমুদয় বিশেষণ প্রয়োগ করেও অনুভূতি সব অব্যক্ত রয়ে যায়৷ প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রূপ-লাবণ্যে বিভূতিবাবু নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টিতে আস্বাদন করে যে মোহনীয় বর্ণনায় উপস্থাপন করেছেন সেটা সত্যিই বিশেষণের অতীত৷ এত মাধুর্যমণ্ডিত প্রকৃতি কাব্যর অপরূপ চিত্রায়ন মনকে সম্মোহনের প্রগাঢ় মায়ায় আচ্ছন্ন করে মানবমনের অন্তরঙ্গ অনূভুতির সাথে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের রেখাচিত্র নিরাভরণরূপে তুলে ধরে৷



সদ্য বি.এ পাশ বেকার যুবক সত্যচরণের বছর পনেরো আগের স্মৃতিচারণ হয়ে 'আরণ্যক' উওম পুরুষে বর্ণিত হয়েছে৷ সেই সময়ে অনেক সন্ধান করেও যখন চাকরির ব্যবস্থা হলো না, তখন সত্যচরণ পুরানো বন্ধুর কল্যাণে ভাগলপুরে তাদের জমিদার এস্টেটে ম্যানেজারের দায়িত্ব পায়৷ মূলত, প্রায় বিশ হাজার বিঘা জঙ্গলাবৃত জায়গায় প্রজাদের মাঝে বিলি করা এবং খাজনা আদায় করাই কাজ ছিল৷ কিন্তু কলকাতার ব্যস্ত সড়কের মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা, থিয়েটার, লাইব্রেরি, সিনেমা নিয়ে মশগুল সত্যচরণ জঙ্গলের নিবিড় নির্জনতায় নিজেকে অসহায় অনুভব করে৷ এখানকার মানুষদের নিম্নমানের জীবনযাত্রায় তাদেরকের মনে হয় বন্য—বর্বর—অশিক্ষিত—দরিদ্র৷ চীনা ঘাসের বাদাম আর আখের গুড়ের আহারের মধ্যই তাদের জীবিকার্জনের চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ৷ তাছাড়া তাদের বিশ্বাস এবং মতবাদে আদিম চিন্তাভাবনার রেখা প্রকটভাবেই দৃশ্যমান৷ কিন্তু ক্রমেই সত্যচরণ জঙ্গলের ভেতর প্রকৃতির উন্মুক্ত অথচ লুকায়িত অপরূপ রহস্যময়তার জগত অবলোকন করে এবং সৃষ্টির মোহে সম্মোহিত হয়ে পড়ে৷ বন্যপ্রান্তরের অসহায় মানুষদের বর্বর রূপের বিপরীতে সরল জীবনযাত্রার সাথে সত্যচরণ নিজেকে কোমল মায়ায় আবন্ধ করে ফেলে৷

লবটুলিয়া বইহারের অরণ্য—ভূভাগ, ফুলকিয়া বইহারের শেফালীপুষ্পের জ্যোৎস্নামাখানো সুবাস, মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্ট, কুশী নদীর স্রোত, স্বরস্বতীকুন্ডীর বন, নাড়া বইহারের অরণ্য, ধু-ধু বন্যপ্রান্তর, ঝাউবন—কাশবনের চর, ধূসর শৈলশ্রেণি, ফুটন্ত রক্তপলাশের ঘন অরণ্যর অপার্থিব সৌন্দর্যের নিখুঁত বর্ণনার আভায় বইয়ের শব্দমালা হয়ে উঠে প্রাণবন্ত বৃক্ষলতাপাতা আর নিজেকে হারিয়ে ফেলি গভীরতম অরণ্যর শোভামণ্ডিত ঘন নিবিড় শ্যামলতার বিশুদ্ধ মায়ার জগতে৷ সেই জগতের রূপ আরিজোনার পাথুরে মরুদেশ বা রোডেশিয়ার বুশভেল্ডের অপেক্ষা কম নয়— বরং কিছুক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাবে নিঃসন্দেহে৷ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি' পঙক্তির যথার্থতা বিভূতিবাবুর রচনায় সিদ্ধি লাভ করেছে — নচেৎ ধরণীর এমন স্বর্গীয় বৈচিত্র্য তপস্যা ব্যতীত চিরকাল অধরা হয়ে থেকে যেত৷ সৃষ্টির অপরূপ রূপ-লাবণ্যের আরাধনা নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত অনবদ্য উপন্যাস 'আরণ্যক' সন্ধ্যাতারার ন্যায় বাংলা সাহিত্য উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে অসীম কাল মহিমান্বিত হয়ে বিরাজমান থাকবে৷
Profile Image for Nahar Trina.
Author 13 books60 followers
April 15, 2014
খুব কম লেখকের প্রতিটা সৃষ্টি পড়ে ফেলার পর 'অসাধারণ'শব্দটা লেখা যায় না কিন্তু! বিভূতিভূষণ আমার ভীষণ পছন্দের বলে তাঁর প্রতি পক্ষপাত করে বলছিনা কথাটা। ওঁর লেখা পড়তে গিয়ে দেখেছি এত আলগোছে তাঁর শব্দগুলো ভেতরমহলে ঢুকে পড়ে; যে ঢুকে পড়বার ভঙ্গিতে কোন ধরণের ভ্যাবাচ্যাকার ভাবটি নেই। এত আটপৌড়ে তাঁর শব্দগুলো, কিন্তু কেমন অবাক করা সুন্দর! আর তার কল্পনার তো জুড়ি মেলা ভার! বাড়িয়ে বলছি? একটুও না। 'চাঁদের পাহাড়' পড়ে দেখুন, সত্যের খোঁজ পাওয়া যাবে। আমি তাই শেষপাতে মিষ্টি খাওয়ার আনন্দ নিয়ে তাঁর লেখা পড়তে বসি। 'আরণ্যক' অনেকদিন সময় নিয়ে পড়েছি। হুট করে শেষ করতে ইচ্ছে করেনি কেন জানি! নাঢ়া লবটুলিয়ার আদিম রূপ
কথকের হাতে নষ্ট হওয়ার জন্য যে অপরাধবোধ,আজকের সময়ে তা নিতান্তই ছেলেখেলা! অরণ্য উজাড় করতে করতে আমরা যেভাবে ইট কাঠের খাঁচায় নিজেদের বন্দী করে ফেলেছি তা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে দূর দেশে গিয়েও তার দেখা পাওয়া কষ্টকর যেন। এর নাম যদি উন্নতি হয় তবে তাঁর কথা মতই,এতসব উন্নতিতে আনন্দ উধাও। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের হাঁপ ধরে যাওয়া নাগরিক জীবন আরণ্যক হবার জন্য যখন পা তুলবে, পা রাখবার মত এমন আদিম ভূমি রেখে যেতে পারবো কী আমরা??
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
January 17, 2021
আমরা একটা আধুনিক আর সুবিধাযুক্ত জগতে বাস করছি। এখানে সবুজের গাঢ়ত্ব কম কিন্তু জীবন কি সুন্দর আর যান্ত্রিক, তাই না? আর যেখানে সবুজের গাঢ়ত্ব বাড়তে থাকে সেখানে আছে সৌন্দর্য আর কষ্টে ভরা মায়াময় জীবন; চোখের পলকেই মায়ার জাল বিস্তৃত হয় মানুষের ভিড়ে।
"একটা কণ্টকময় গাছে বেগুনী রঙের ঝাড় ঝাড় ফুল ফুটিয়াছে, বিলাতী কর্ণফ্লাওয়ার ফুলের মত দেখিতে। একটা ফুলের বিশেষ কোনো শোভা নাই। অজস্র ফুল একত্র দলবদ্ধ হইয়া অনেকখানি জায়গা জুড়িয়া দেখাইতেছে ঠিক বেগুনী রঙের একখানি শাড়ীর মত। বাতাবী লেবুর ফুল নয়, ঘেঁটুফুল নয়, আম্রমুকুল নয়, কামিনীফুল নয়, রক্তপলাশ বা শিমুল নয়, কি একটা নামগোত্রহীন রূপহীন নগন্য জংলী কাঁটা গাছের ফুল। আমার কাছে তাহাই কাননভরা বনভরা বসন্তের কুসুমরাজির প্রতীক হইয়া দেখা দিল। "
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মতো ঘরে পড়ে থেকে অদ্ভুত মায়াময় দৃশ্যের জন্য হাহাকার করা মানুষদের জন্যই বিভূতিবাবু এসেছিলেন।

~ ১৩ নভেম্বর, ২০২০
Profile Image for Preetam Chatterjee.
6,737 reviews355 followers
November 1, 2025
অরণ্যই ভারতবর্ষের আসল রূপ—এই বাক্যটি যেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমগ্র সাহিত্যদর্শনের মূলে প্রোথিত। ‘আরণ্যক’ শুধু একটি উপন্যাস নয়; এটি মানুষ ও প্রকৃতির, সভ্যতা ও আদিমতার, অনুতাপ ও মুক্তির এক গভীর আত্মকথন। বিভূতিভূষণ এই উপন্যাসে এমন এক নীরব মানবিক সুর বুনেছেন যা প্রকৃতিকে কেবল পটভূমি থেকে সরিয়ে এনে মানুষের সহচর করে তোলে।

বন এখানে কোনও জড় বাস্তব নয়; এটি এক প্রাণসঞ্চারী চেতনা—মাটির গন্ধে, বৃষ্টির ধ্বনিতে, চাঁদের আলোয়, মানুষের অপরাধবোধে ও করুণায় যে নীরব ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভূত হয়, সেই ঈশ্বরেরই আরণ্য উপনিষদ এই উপন্যাস।

ঋগ্বেদের ঋষিরা বলেছিলেন—“वनं न जहाति यः स जीवति”—যে বনকে ত্যাগ করে না, সে-ই জীবিত। বিভূতিভূষণ সেই প্রাচীন বোধকেই আধুনিক ভাষায় পুনরুজ্জীবিত করেন। তাঁর বন শুধু গাছগাছালির স্থান নয়; এটি ব্রহ্মচেতনার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নিজের অন্তরসত্তাকে আবিষ্কার করে। যেন *Wordsworth*–এর সেই চিরস্মরণীয় পঙক্তি: “One impulse from a vernal wood / May teach you more of man, / Of moral evil and of good, / Than all the sages can.”

সত্যচরণ নামের এক শহুরে মানুষ অফিসের কাজে ভাগলপুর অঞ্চলের লবটুলিয়া, নাড়া-বইহার অঞ্চলে বন পরিমাপ করতে আসে। প্রথমে সে ভাবে এই বন তার কাজের বিষয়, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে—বনকে কখনও মাপা যায় না। যে মাপবার চেষ্টা করে, সে নিজেই মাপার যন্ত্রের মতো হয়ে যায়—নির্বিকার, আত্মশূন্য, কৃত্রিম। এই বনই ধীরে ধীরে তার অন্তরে প্রবেশ করে; সে নিজের মন, নৈতিকতা, প্রেম, ও অপরাধবোধ—সবকিছু নতুন করে চিনতে শেখে। তার এক মুহূর্তের স্বীকারোক্তি, “হে অরণ্যানীর আদিম দেবতারা, ক্ষমা করিও আমায়”—সভ্যতার সমস্ত ইতিহাসের পক্ষে প্রকৃতির কাছে উচ্চারিত এক ক্ষমাপ্রার্থনা। এই স্বীকারোক্তির ভিতরে যেন প্রতিধ্বনিত হয় *Shelley*–র আর্তি—

If I were a dead leaf thou mightest bear;
If I were a swift cloud to fly with thee;
A wave to pant beneath thy power, and share

The impulse of thy strength, only less free
Than thou, O uncontrollable! If even
I were as in my boyhood, and could be

The comrade of thy wanderings over Heaven,
As then, when to outstrip thy skiey speed
Scarce seem'd a vision; I would ne'er have striven

As thus with thee in prayer in my sore need.
Oh, lift me as a wave, a leaf, a cloud!
I fall upon the thorns of life! I bleed!

A heavy weight of hours has chain'd and bow'd
One too like thee: tameless, and swift, and proud......

‘আরণ্যক’-এর চরিত্ররা সকলেই কোনও না কোনওভাবে সভ্যতার প্রান্তিক প্রতিনিধি। সত্যচরণ, শহরের মানুষ, যিনি অরণ্যে এসে নিজের ভেতরের মানুষটিকে দেখতে পান; ভানুমতী, যিনি প্রকৃতির নারীসত্তা, প্রেম ও করুণার প্রতিমূর্তি; যুগলপ্রসাদ, যে “গাছপাগল” মানুষ, প্রকৃতির সঙ্গে যিনি আত্মিকভাবে যুক্ত—এক ধরনের অচেতন ইকো-দার্শনিক; ধাওতাল সাহু, অর্থনিরাসক্ত, সংসার থেকে মুক্ত এক নৈতিক দর্শক; আর আছে সাঁওতাল ও আদিবাসী সমাজের মুখ, দোবরু পান্না, কুন্তা, গাঙ্গোতা—যাদের মধ্যে বিভূতিভূষণ খুঁজে পেয়েছেন ভারতীয় জীবনের আ���িম শান্তি ও মর্যাদা। এই সব চরিত্র সভ্যতার বাইরে, কিন্তু মানবতার কেন্দ্রে।

গীতায় কৃষ্ণ বলেন—“प्रकृतिं यान्ति भूतेयाः”—সব প্রাণ অবশেষে প্রকৃতির কোলে ফিরে যায়। এই সংক্ষিপ্ত বাক্যেই নিহিত ভারতীয় প্রকৃতি-দর্শনের মর্ম। গীতা-র অষ্টাদশ অধ্যায়ে কৃষ্ণ ঘোষণা করেন—“प्रकृतिं स्वामवष्टभ्य विसृजामि पुनः पुनः।”—অর্থাৎ, “আমি আমার প্রকৃতিকে ধারণ করে বারবার এই বিশ্ব সৃষ্টি করি।” এখানে “প্রকৃতি” কেবল ভৌত উপাদান নয়; এটি সৃষ্টির চেতনা, ঈশ্বরের গতিময় রূপ, ব্রহ্মের জীবন্ত প্রকাশ।

ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্তে যে প্রশ্ন উচ্চারিত—“किमासीद्गहनं गभीरम्?” (কি ছিল সেই গহীন অন্তরালে?)—তার উত্তর খোঁজে আরণ্যক। বিভূতিভূষণের বন যেন সেই আদিম অন্ধকারের অবশিষ্ট রূপ, যেখানে ঈশ্বর, মানুষ ও প্রকৃতি একই ধ্বনিতে মিশে থাকে। উপনিষদে বলা হয়েছে—“ईशावास्यमिदं सर्वं यत्किञ्च जगत्यां जगत्।”—সর্বত্র ঈশ্বর বিরাজমান, গাছের পাতায়, নদীর জলে, মানুষের নিশ্বাসে। সেই বোধই সত্যচরণের জাগরণে পরিণত হয়। সে বুঝতে শেখে—প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে নিজের আত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।

এই দর্শনের ভিতর দিয়ে ভারতীয় মননে প্রকৃতি কোনও বাহ্য জগৎ নয়, বরং অন্তর্জগৎ। প্রকৃতি এখানে মায়া নয়, শক্তি—যে সৃষ্টিকে ধারণ করে, লালন করে, এবং অবশেষে তাতে সকলকে বিলীন করে। কঠ উপনিষদ বলছে—“यथा दारुमयी नारी रूपं रूपं व्यवस्थिता। तथा सर्वाणि भूतानि ब्रह्मण्येवावतिष्ठन्ति।”—যেমন কাঠের ভিতরে নারীর প্রতিমা গোপনে থাকে, তেমনি সমস্ত জীব ব্রহ্মের মধ্যেই লীন।

সত্যচরণের জীবন সেই প্রত্যাবর্তনেরই কাব্যিক প্রতিফলন। শহরের কোলাহল থেকে সে অরণ্যে এসে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করে, প্রকৃতির প্রতিটি গন্ধ, প্রতিটি আলো, প্রতিটি শব্দ আসলে তার নিজের আত্মার প্রতিধ্বনি। সে বুঝতে শেখে—প্রকৃতি ধ্বংস করা মানে নিজের অন্তর্গত ঈশ্বরকে হত্যা করা। আর এই বোধেই গীতার সেই নৈতিক সত্য জীবন্ত হয়ে ওঠে—

“He who sees Me in all beings, and all beings in Me,
never turns away from Me.” (Gītā, VI.30)

এই উপলব্ধির মধ্যে বিভূতিভূষণ যেন ঋগ্বেদের আরেক বাণী পুনরুজ্জীবিত করেন—“माता भूमिः पुत्रोऽहं पृथिव्याः।”—“পৃথিবী আমার জননী, আমি তার সন্তান।”

সত্যচরণের আত্মদর্শন সেই মাতৃপ্রকৃতির সান্নিধ্যেই সম্পূর্ণ হয়; তার অনুতাপ আসলে সভ্যতার পক্ষে প্রকৃতির প্রতি এক অন্তর্নিহিত প্রার্থনা। এই বোধেই আরণ্যক হয়ে ওঠে এক আধুনিক উপনিষদ—যেখানে বন মানে ব্রহ্ম, আর প্রকৃতি মানে ঈশ্বরের দৃশ্যমান দেহ।

এই উপন্যাসে সভ্যতা ও প্রকৃতির সংঘাত অনিবার্য। সত্যচরণ সেই আধুনিক মানুষ, যে জানে সে বন ধ্বংস করছে, কিন্তু থামতে পারে না। তার দেহে শহরের অভ্যাস, কিন্তু আত্মায় বন। প্রতিটি গাছ কাটা, প্রতিটি জমি মাপা, প্রতিটি নথি লেখা—তার মধ্যে জন্ম দেয় এক গভীর অনুতাপ। এই অনুতাপের মধ্য দিয়েই বিভূতিভূষণ প্রকৃতিকে কেবল নান্দনিক বা আধ্যাত্মিক নয়, নৈতিক এক পরিসর হিসেবে দেখান। প্রকৃতি তাঁর কাছে দেবতা নয়, বরং আত্মীয়।

Coleridge–এর ভাষায়: ,

O Lady! we receive but what we give,
And in our life alone does Nature live:
Ours is her wedding garment, ours her shroud!
And would we aught behold, of higher worth,
Than that inanimate cold world allowed
To the poor loveless ever-anxious crowd,
Ah! from the soul itself must issue forth
A light, a glory, a fair luminous cloud
Enveloping the Earth—
And from the soul itself must there be sent
A sweet and potent voice, of its own birth,
Of all sweet sounds the life and element!

বিভূতিভূষণের মানুষও প্রকৃতিতে আপন প্রতিবিম্ব খুঁজে পায়—দোষ, প্রেম, পাপ, অনুতাপ সবই প্রকৃতির সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায়, কারণ প্রকৃতি তারই অংশ।

ইউরোপীয় সাহিত্যের অনেক গ্রন্থে এই বোধের প্রতিধ্বনি আছে। শেক্সপিয়রের *As You Like It*-এ সমাজের কৃত্রিমতা থেকে পালিয়ে মানুষ অরণ্যে আশ্রয় নেয়—যেন সভ্যতার কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে সে ফিরে আসে নিজের মৌল সত্তায়। আরডেনের বন সেখানে কেবল এক ভৌগোলিক আশ্রয় নয়, এক দার্শনিক পরিসর—যেখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে থেকে শেখে কীভাবে *“finds tongues in trees, books in the running brooks, sermons in stones, and good in everything.”* (Act II, Scene 1) — অর্থাৎ, গাছ, ঝরনা, পাথর—সবকিছুই তার কাছে হয়ে ওঠে জ্ঞানের ও প্রজ্ঞার উন্মুক্ত বিদ্যালয়।

ডিউক সিনিয়রের মুখে উচ্চারিত এই বাক্যগুলিতে শোনা যায় সেই চিরন্তন মানবিক উপলব্ধি—প্রকৃতি আমাদের শত্রু নয়, বরং গুরু। সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য আড়ম্বরের বিপরীতে প্রকৃতি মানুষকে শেখায় বিনয়, স্বচ্ছতা, ও মৈত্রীর শিক্ষা। সেই জন্যই অ্যামিয়েন গেয়ে ওঠে—

“Under the greenwood tree,
Who loves to lie with me.” (Act II, Scene 5)

এই গান যেন মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে প্রাচীন বন্ধনের পুনরাবিষ্কার—যেখানে ভালোবাসা, হাসি, ও স্বাধীনতা মিশে আছে বাতাসের মতোই মুক্তভাবে।

আর যখন অরল্যান্ডো প্রেমে অন্ধ হয়ে তার কবিতা গাছের ছালে খোদাই করে লেখে—

“O Rosalind, these trees shall be my books,
And in their barks my thoughts I'll character.” (Act III, Scene 2)

—তখন বনটি পরিণত হয় প্রেম ও কবিতার এক জীবন্ত পাঠশালায়। গাছগুলো যেন মানুষের মনের সঙ্গে একান্ত আলাপে জড়িয়ে পড়ে, প্রকৃতি হয়ে ওঠে আত্মার প্রতিফলন।

এইভাবেই *As You Like It*-এর বন সমাজ থেকে মুক্তির প্রতীক, যেখানে মানুষ নিজের হারানো প্রজ্ঞা ও হাসি ফিরে পায়। বন এখানে *escape* নয়, *awakening*—যেমন সত্যচরণের অরণ্যও কেবল পালানো নয়, বরং আত্মার প্রত্যাবর্তন। শেক্সপিয়রের আরডেন আর বিভূতিভূষণের লবটুলিয়া—দুই-ই মানব সভ্যতার নৈতিক ক্লান্তির পর প্রকৃতির কোলে ফিরে আসার সেই আদিম স্বপ্নের প্রতিধ্বনি।

*Wordsworth*–এর *Tintern Abbey*-এর নায়ক যেমন নদীর ধারে দাঁড়িয়ে বলে, “Nature never did betray the heart that loved her,”—সত্যচরণের অনুতাপেও সেই বোধের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। প্রকৃতি তার কাছে শুধু দৃশ্য নয়, আত্মার নিত্য আশ্রয়। সভ্যতার যান্ত্রিকতা আর মানবিক শূন্যতার মধ্যে সে টের পায় সেই শাশ্বত সম্পর্কের ছিন্নতা, যা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানায় প্রকৃতির দিকে।

অন্যদিকে *William Golding*-এর *Lord of the Flies* সভ্যতার মুখোশ খুলে মানুষের ভেতরের বন্য প্রাণকে উন্মুক্ত করে দেয়—এক ভয়ঙ্কর সত্যের সম্মুখীন করে আমাদের। আর *Jack London*-এর *The Call of the Wild* শেখায়, সভ্যতার আলোকচ্ছটায় মোড়া মানুষও অন্তরের গভীরে এক অমোচনীয় আহ্বান অনুভব করে—বন্যতার, প্রকৃত উৎসের।

বিভূতিভূষণ যেন এই সব রচনার সঙ্গে এক অব্যক্ত সংলাপে অংশ নেন, কিন্তু তাঁর উত্তর সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে ধ্বনিত হয়। তাঁর অরণ্য কোনো ভয় বা হিংস্রতার পরিসর নয়—তা এক গভীর মানবিক করুণার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নিজের হারানো সত্তাকে ফিরে পায়। তাঁর প্রকৃতি মানবজীবনের প্রতিপক্ষ নয়, বরং তার সহমর্মী। সেখানে পত্রপল্লবের মর্মরধ্বনি যেন আত্মার নিজস্ব সঙ্গীত, যা Wordsworth-এর ধারাকে বাংলার মাটিতে এক নতুন মানবতাবাদী আকার দেয়।

‘আরণ্যক’-এর ভাষা গদ্য হলেও তার ভেতর নিঃশব্দে বয়ে যায় কবিতার স্রোত। প্রতিটি গাছ, নদী, আলো, ছায়া—সব যেন কথা বলে। এই ভাষায় শব্দের চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় নীরবতা। সত্যচরণ যখন রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার নিঃসঙ্গতা কেবল তার নয়—এটি সমগ্র মানবজাতির নিঃসঙ্গতা, যা প্রকৃতির অনন্তের সামনে আত্মবিস্ময়ে থেমে যায়।

*Keats*–এর *Endymion*–এর মতোই বিভূতিভূষণের প্রকৃতি এক চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতিশ্রুতি— “A thing of beauty is a joy for ever.” কিন্তু এই সৌন্দর্য কোনো নিছক নান্দনিক অভিজ্ঞতা নয়; এটি এক আত্মজাগরণের প্রক্রিয়া।

‘আরণ্যক’-এর অরণ্য তাই শুধু ভৌগোলিক স্থান নয়, বরং এক অন্তর্মুখী ভূদৃশ্য—মানুষের আত্মার প্রতিচ্ছবি। সত্যচরণ বন দেখছে, কিন্তু সে আসলে নিজের মনস্তত্ত্বের স্তরগুলো উন্মোচন করছে। গাছ, নদী, আলো, ছায়া—সবই তার ভেতরের অনুভূতির রূপক। এই বনে ঘুরে বেড়ানো মানে নিজের অন্তরকে পাঠ করা।

এ এক *textual forest*—এক মেটাফোরিক টেক্সট, যেখানে মানুষ যেমন প্রকৃতিকে পড়ে, প্রকৃতিও মানুষকে পড়ে নেয়। পাঠক ও পাঠ্যের এই দ্বিমুখী বিনিময়েই *আরণ্যক* উত্তর-আধুনিক অর্থে এক *autopoetic* উপন্যাস হয়ে ওঠে—যেখানে ভাষা, প্রকৃতি, এবং আত্মা একে অপরের প্রতিফলন।

এখানে “প্রকৃতি” কেবল বাহ্যজগত নয়; এটি এক প্রতীকী ভাষা, এক সেমিওটিক স্রোত, যা মানুষকে তার হারানো শিকড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়—সেই মূল মানবিকতায়, যেখানে সৌন্দর্য মানেই অস্তিত্বের আনন্দ, এবং আত্মপরিচয় মানেই প্রকৃতির সঙ্গে পুনর্মিলন।

Keats-এর কাছে প্রকৃতি হল এক রোমান্টিক রূপক—সংবেদন, রূপ, ও সৌন্দর্যের অনন্ত উৎস, যেখানে মানুষ সৌন্দর্যের মধ্য দিয়েই অমরত্বের স্বাদ পায়। তাঁর *aesthetics of beauty* মূলত ইন্দ্রিয় ও কল্পনার মিলনস্থল। অন্যদিকে বিভূতিভূষণের প্রকৃতি এক *spiritual ecology*—যেখানে সৌন্দর্য কেবল দেখার বিষয় নয়, বেঁচে থাকার উপায়। তাঁর অরণ্য নান্দনিকতার চেয়ে অধিকতর নৈতিক ও আত্মিক বাস্তবতা; এটি মানুষকে তার মহাজাগতিক অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

Keats যেখানে সৌন্দর্যের অভিজ্ঞতাকে রূপান্তরিত করেন কবিতার পরমানন্দে, বিভূতিভূষণ সেখানে সেই সৌন্দর্যের মধ্যেই খুঁজে পান সহানুভূতি, সংযম, আর মানবিক ঐক্যের অনুশাসন। একদিকে রোমান্টিক স্বপ্ন, অন্যদিকে আধ্যাত্মিক জাগরণ—দুয়ের মিলনে প্রকৃতি হয়ে ওঠে পরমতত্ত্বের আয়না, যেখানে সৌন্দর্য আর নীতি, কবিতা আর ধর্ম, সবই এক হয়ে যায়।

এই অরণ্যসত্তা বিভূতিভূষণের ভাবনায় গভীরভাবে নৈতিক। তিনি বোঝান, প্রকৃতিকে হত্যা করা মানে নিজের বিবেককে হত্যা করা। সভ্যতা যদি প্রকৃতির বিনাশে আনন্দ পায়, তবে সেই আনন্দ আসলে এক অন্ধ উল্লাস, যা অবশেষে আত্মবিনাশে গিয়ে পৌঁছায়। সত্যচরণ যেমন বনের কাজ শেষ করে শহরে ফিরে যায়, কিন্তু তার ভিতরে বন থেকে যায়। এ এক অনন্ত শোক—বনহীন মানুষ মানে আত্মাহীন মানুষ।

রবীন্দ্রনাথ ‘সাধনা’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন—“প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক চিরন্তন আত্মীয়তা আছে, সে আত্মীয়তাই ধর্ম।” বিভূতিভূষণ যেন সেই আত্মীয়তার উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর ‘আরণ্যক’ গীতার সেই উপদেশের প্রতিধ্বনি—“ईश्वरः सर्वभूतानां हृद्देशे तिष्ठति”—ঈশ্বর সমস্ত জীবের হৃদয়ে বিরাজমান। প্রকৃতির প্রতিটি সত্তায় তাই তিনি ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করেন; বৃক্ষ, পশু, নদী, পাথর—সবই তাঁর কাছে জীবনের সহযাত্রী।

রবিবাবুর পরিবেশচেতনা ছিল দার্শনিক এবং নৈতিক। তাঁর *ecocriticism* মূলত *interconnectedness*-এর দর্শনে ভিত্তি করে—মানুষ, প্রকৃতি ও ঈশ্বর এক অবিচ্ছিন্ন সত্তার অংশ। তিনি প্রকৃতিকে কেবল “background” হিসেবে নয়, বরং জীবনের নৈতিক সহ-অভিনেতা হিসেবে দেখেছেন। তাঁর কাছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এক নৈতিক দায়বদ্ধতা, এক *moral ecology*, যেখানে মানুষ যদি প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়, তবে নিজের আত্মিক বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বিভূতিভূষণ এই ভাবনাকে আরও অভিজ্ঞতালব্ধ, প্রায় নৃবৈজ্ঞানিক গভীরতায় নিয়ে যান। তাঁর *ecological vision* কোনো তত্ত্ব নয়, বরং জীবনযাপনের স্বাভাবিক অংশ। রবি ঠাকুর যেখানে প্রকৃতিকে দার্শনিকভাবে উপলব্ধি করেন, বিভূতিভূষণ সেখানে প্রকৃতিকে আত্মীয়ের মতো *lived presence* হিসেবে অনুভব করেন। তাঁর অরণ্য শুধুই নান্দনিক বা ধর্মীয় প্রতীক নয়—এটি এক জৈব বাস্তবতা, যেখানে মানুষের অস্তিত্ব প্রকৃতির সঙ্গে পরস্পরনির্ভর সম্পর্কের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হয়।

রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় প্রকৃতি *spiritual unity*-র প্রতীক—মানুষ ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মিলনের ক্ষেত্র। কিন্তু বিভূতিভূষণের প্রকৃতি সেই ঐক্যেরই প্রতিদিনের অনুশীলন; তাঁর গাছেরা কথা বলে, পাখিরা মনে করিয়ে দেয় মানবতার মৃদু সুর, আর নদী বহন করে আত্মবোধের স্রোত।

রবীন্দ্রনাথ মানুষের আত্মাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেবার আহ্বান জানান; বিভূতিভূষণ দেখান, সে মিলন ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে—আমরা কেবল ভুলে গেছি তা শুনতে।

‘আরণ্যক’-এর শেষ পর্বে এক অচেনা নীরবতা নেমে আসে। সত্যচরণ চলে যায়, কিন্তু পাঠক থাকে সেই অরণ্যে—বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে, জ্যোৎস্নার ছায়ায়। মনে হয়, বন যেন বলছে, “মানুষ, তুমি ফিরে এসো, আমি এখনও তোমাকে অপেক্ষা করছি।” সেই আহ্বান আজও থেমে যায়নি। *Jack London*–এর মতোই যেন বিভূতিভূষণও ফিসফিস করে বলেন, *“The wild still calls.”*

এই আহ্বান বন্যতার নয়, পলায়নমুখর নয়; এটি এক নৈতিক প্রত্যাবর্তনের ডাক। মানুষকে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরতে হবে—করুণা, বিনয়, ও আত্মপরিচয়ের সন্ধানে। ‘আরণ্যক’ সেই প্রত্যাবর্তনের উপন্যাস, যেখানে বন ঈশ্বর নয়, বরং আমাদের হারানো আত্মার প্রতিচ্ছবি। বিভূতিভূষণ জানতেন, অরণ্যের নীরবতাই মানুষের সত্য ভাষা—যেখানে শব্দ থেমে যায়, আর *ব্রহ্ম* কথা বলে।

যেমন *ঋগ্বেদ* ঘোষণা করে— “सत्यं बृहद् ऋतमुग्रं दीक्षितं होतारं यज्ञं मनुष्यः।” (সত্যই মহান, ঋতই শক্তিশালী; মানুষের আত্মার মধ্যেই পূজার সেই হোতা নিহিত।)

বিভূতিভূষণের বন সেই ‘ঋত’-এরই আধুনিক রূপ, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিই ধর্মের সাধনা।

ঈশ উপনিষদ*-এর বাণী স্মরণ করিয়ে দেয়— “ईशावास्यमिदं सर्वं यत्किञ्च जगत्यां जगत्।” (এই জগতে যা কিছু আছে, সবই ঈশ্বর-আবিষ্ট।)

এই বোধই ‘আরণ্যক’-এর অন্তর্নিহিত দর্শন—ঈশ্বর কোনো দূরের পরম সত্তা নন, তিনি বৃক্ষের পাতায়, নদীর জলে, হরিণের চোখে, মানুষের অনুতাপে সমানভাবে বর্তমান।

এইভাবে বিভূতিভূষণের উপন্যাস হয়ে ওঠে এক *Indian eco-Upanishad*—যেখানে আত্মা ও অরণ্য পরস্পরকে আলোকিত করে। তাঁর প্রকৃতি আর কোনো নিছক পরিবেশ নয়; এটি এক *sacred cosmology*, যেখানে মানুষ নিজের ঈশ্বরস্বরূপকে প্রকৃতির মধ্যে আবিষ্কার করে।

যেমন *মাণ্ডুক্য উপনিষদ* বলে— “अयं आत्मा ब्रह्म।” (এই আত্মাই ব্রহ্ম।) ‘আরণ্যক’-এর প্রতিটি মুহূর্ত যেন সেই ঘোষণার কাব্যিক রূপ—অরণ্যের দিকে তাকালে মানুষ নিজের দিকেই তাকায়।

*Coleridge*-এর বাণী যেন তারই পাশ্চাত্য প্রতিধ্বনি—

“He prayeth best, who loveth best
All things both great and small;
For the dear God who loveth us,
He made and loveth all.”

এই প্রার্থনাই ‘আরণ্যক’-এর চূড়ান্ত বাণী—প্রকৃতির সঙ্গে প্রেমই মানবতার একমাত্র মুক্তি। কারণ, যে প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সে ঈশ্বরকে চিনে; আর যে ঈশ্বরকে চিনে, সে সব জীবকে আপন বলে অনুভব করে।

পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মা মুক্তি দিলে তো মিটেই গেল; কিন্তু আবার ফিরে আসলে বাঙালি হয়েই জন্মাতে চাইবো, স্রেফ এই উপন্যাস আরেকবার নতুন করে পাঠ করার জন্য।

অলমতি বিস্তরেণ।
Profile Image for Injamamul  Haque  Joy.
100 reviews115 followers
October 8, 2021
এ এক প্রকৃতির গল্প। প্রকৃতির আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যের গল্প। সভ্য সমাজের বাইরে থাকা প্রান্তিক, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর গল্প। কিংবা একজন প্রকৃতিপ্রেমীর চোখে সৃষ্টিবিনাশ, আর প্রকৃতি ধ্বংসের এক ট্র‍্যাজিক স্টোরি। বিভূতি মশাই যে অতি উচ্চ মানসিকতার মার্জিত মানুষ ছিলেন, সেটার তার বইয়ের চরিত্র দেখলেই বোঝা যায়। সত্যচরণের মত এত মানবিক, নস্টালজিক, প্রকৃতিপ্রেমী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, ভাবা যায়! আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো যে, যেই লোক হাজারীর মত চরিত্র সৃষ্টি করতে পারে, তার দ্বারা সত্যচরণ সৃষ্টি করা কঠিন কিছু না। আর এটা কোনো উপন্যাসের কাতারেই পড়ে না। কোনো ভারী আখ্যান নেই, নেই কোনো শক্তপোক্ত চরিত্র, মানসিক-সাংসারিক টানাপোড়েন নেই। ও হ্যা, লেখকই তো প্রারম্ভে বলে দিয়ে গেছেন এটা। তবে এটায় লেখক তার যেই মোক্ষম অস্ত্রখানা প্রয়োগ করেছে, সেটা হলো 'হিপোটানাইজম'। সত্যচরণ যেমন হিপোটানাইজ হচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ঝর্ণার কলকল ধ্বনি, লব��ুবিয়ার জনমানুষের বিচিত্রতায়, জোৎস্নার ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যে, ঠিক তেমনি আমিও হিপোটানাইজ হয়েছি প্রকৃতি আর সত্যচরণের গুন-রুপে। কাহিনির আগাগোড়া শুধুই প্রকৃতি। সাথে আছে জন বিচিত্রতা। বইটাকে এর ধরন অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমাংশে সত্যচরণ ধাতস্থ হয়েছেন ফুলবাড়ি বইহারে, আর মুগ্ধ হয়েছেন বন্য সৌন্দর্যে। দ্বিতীয়াংশে লেখক বুদ হয়েছেন মনুষ্য বিচিত্রতায়। আর তৃতীয় অংশ তো শুধুই ট্র‍্যাজেডি, ডিপ্রেসিভ। এতে আছে ভানুমতীর মত প্রকৃতির কন্যা—আর্য বংশধর, যুগলপ্রসাদের মত বৃক্ষানুরাগী, বৈঙ্কলের মত কাব্যানুরাগী, নৃত্যশিল্প অনুরাগী ধাতুরিয়া কিংবা কুন্তা-মঞ্চীর মত এস্থেটিক চরিত্র।কখনো গাঙ্গোতো'দের তিন মাস পর ভাত খাওয়ার উচ্ছাস দেখিয়া ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ হাসি উঁকি দিচ্ছে, কখনো অরণ্যভূমি বিরাণ হয়ে যাওয়া দেখে মুখ গোমড়া হয়ে আসছে — এটাই বিভূতিভূষণের জাদুকরী লেখার সার্থকতা। লেখক বইয়ের ভেতর যে বার্তা দিয়েছে, তাতে যে কেউ আমার মত বুদ হয়ে যাবে প্রকৃতির প্রেমে।

আমার মত বিভূতি ভুবনে হারিয়ে যেতে চাইলে এই ন্যাচার ফিকশনটা আপনার জন্যই।।
Profile Image for Muna.
35 reviews21 followers
September 24, 2016
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছি শুরু থেকে,পাতায় পাতায় হারিয়েছি ঘন অরণ্যে, আর কেন জানি মনে হয়েছে আমি নিজেই সবটুকু অবলোকন করছি।

এমনিতেই ঘনসবুজের সমারোহ প্রচন্ড ভালোবাসি।শৈশবের কিছু সময় ঘন সবুজে ঘেরা গ্রামে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো।রয়ে গেছে স্মৃতিটুকু,আর তাতে ভেসে বেড়াচ্ছে গ্রাম আর গ্রামের মানুষগুলো।ব্যস্ত,কোলাহলে ভরা এই যান্ত্রিকতার মাঝে কখনো হাহাকার করে ওঠে বুকটা।তখনই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই সমারোহে।

পড়তে পড়তে মনে হয়েছে গোটা অরণ্য হাতে নিয়েছি।ঘন অরণ্য,প্রশান্তি আর নিঃসঙ্গতা আমার চারপাশে।জীবনের কোন এক সময় আসলেই হারিয়ে যেতে চাই এর মাঝে, একেবারেই...।
Profile Image for Syeda Ahad.
Author 1 book131 followers
February 22, 2018
বেশ কয়েকবছর আগে একবার পড়েছিলাম বইটা। কোনো কারণে খুব তাড়াহুড়োয় শেষ করেছি, খুব একটা ভালো লাগেনি!
এখন মনে হচ্ছে আমি কাহিনীর খোঁজ করছিলাম তখন লেখনীর চেয়ে। এবার বেশ কিছুদিন ধরে আস্তে আস্তে পড়লাম। শুরু করেছিলাম রোম থেকে ইন্সব্রুকে আসার ট্রেনে। পাহাড়ে ঘেরা নিবিড় বনানীর বর্ণনা পড়তে পড়তে জানালার বাইরে তাকাতেই যেন সেই লবটুলিয়া বইহারকে চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি। একেবারে ঘোরের মধ্যে পড়েছি এবার বলা যায় :) হাস্যকর ব্যাপার হলো, পড়ার সময় শুধু দুই জায়গায় একটু আটকে গিয়েছিলাম - যখন গ্রীষ্মের সময় মাঝ আকাশে জ্বলজ্বলে কালপুরুষের কথা বলেন, আর যখন সূর্যে ক্যালসিয়াম পুড়ছে - লোহা পুড়ছে - এই কথা পড়লাম। কালপুরুষ একেবারেই শীতের তারামণ্ডল, আর সূর্যে আরও বিলিয়ন বছরের বেশি সময় শুধু হাইড্রোজেন-ই পুড়বে। যে উদ্দেশ্যে এই বই লেখা, তার সাথে আমার এই মন্তব্য একেবারেই বেমানান জানি, কিন্তু না লিখলে শান্তি পেতাম না! :D
বিভূতির চাঁদের পাহাড় আমার সবসময়ের সবচেয়ে প্রিয় বইগুলির একটি। আরণ্যক ও তেমনি হয়ে থাকবে। যতবারই পড়বো এর পরে, বা যতবার এর কথা মনে পরবে, স্বরস্বতী কুন্ডী আর লবটুলিয়ার বইহারের সাথে পাহাড়ে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট শহর ইন্সব্রুকের ছবিও আমার চোখে ভেসে উঠবে।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
December 20, 2021
বিভূতিভূষণের বই পড়ার এই এক জ্বালা। শেষ করে অনেককিছু বলতে মন চায়,কিন্তু বলা আর হয়ে উঠেনা। 'আরণ্যক' সেই কিছু না বলতে পারা এক বই।
Profile Image for Daina Chakma.
440 reviews772 followers
August 25, 2023
শুরুর দিকে আমার অবস্থাটা হয়েছিল লেখকের মতো। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ, লাইব্রেরি, থিয়েটার, সিনেমা, গানের আড্ডা ফেলে লেখক কিছুতেই অরণ্যভুমির নির্জনতায় খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। আমিও বিভূতিভূষণ মশাইয়ের খটোমটো বাংলা পড়তে গিয়ে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারছিলাম না। কিন্তু একবার নেশা ধরে যাওয়ার পর গোগ্রাসে গিলেছি তাঁর অপূর্ব লেখনী!

লবটুলিয়া ও আমজাবাদ অরণ্যের যে অপূর্ব সৌন্দর্য তিনি রচনা করেছেন কোনো DSLR ক্যামেরারও সাধ্য নেই সেই সৌন্দর্য ধারণ করে!

সেই অরণ্যে বুনো হাতি আছে। আছে বুনো মহিষ, চিতাবাঘ, শঙ্খচূড় আর ডামাবাণু। এসবের ভয়ে ঘরে বসে থাকার মানুষ বিভূতিভূষণ মশাই নন। গৃহত্যাগী সৌন্দর্যের নেশায় বারবার তিনি জ্যোৎস্না ফোঁটা রাতে ঘোড়ায় চড়ে চষে বেড়িয়েছেন গহীন অরণ্যভূমি। আমি কল্পনায় সেই অপার্থিব দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পাই!

"সে-রূপ তাহার না-দেখাই ভালো যাহাকে ঘরদুয়ার বাঁধিয়া সংসার করিতে হইবে। প্রকৃতির সে মোহিনীররূপের মায়া মানুষকে ঘরছাড়া করে, উদাসীন ছন্নছাড়া ভবঘুরে হ্যারি জনস্টন, মার্কো পোলো, হাডসন, শ্যাকলটন, করিয়া তোলে- গৃহস্থ সাজিয়া ঘরকন্না করিতে দেয় না- অসম্ভব তাহার পক্ষে ঘরকন্না করা একবার সে ডাক যে শুনিয়েছি, সে অনবগুণ্ঠিতা মোহিনীকে একবার যে প্রত্যক্ষ করিয়াছে।"

আহা.. এমন সৌন্দর্য আর নির্জনতার নেশায় আমিও কতবার ঘর ছাড়তে চেয়েছিলাম!
Profile Image for Zarif Hassan.
121 reviews42 followers
June 9, 2023
আহা বই! আহা বিভূতি! আহা প্রকৃতির বরপুত্র!

কদিন আগে স্টিফেন কিং এর ' On Writing' পড়ছিলাম। সেখানে মহারাজ বলেছেন - কাহিনী, চরিত্রায়ন এগুলোর ওপর জোর দেয়ার দরকার নেই। জোর দিবেন ন্যারেটিভে।
এটা পড়ে আমার কাছে কেমন অদ্ভুত লেগেছিল। মানুষ তো বই পড়েই কাহিনীর জন্য। তবে?

স্টিফেন কিং আসলেই কী বোঝাতে চেয়েছেন তার প্রামাণ্য 'আরণ্যক'। এই বইয়ের কাহিনী কী বলার মতো কিছু? তবুও এই বই অবিস্মরণীয় কেন? উত্তরটা এখন জানা।

জঙ্গলের, জঙ্গলের মানুষের কী জীবন্ত, প্রাণবন্ত বিবরণ! স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, শহুরে- আটপৌরে এই আমি বইটির অনেককিছুই ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি। মকাই, চীনা ঘাসের দানা, বাথুয়া শাক আরো কত কী - এসব কী দেখেছি নাকি কখনো! কিন্তু তবুও আমি তো এই কটা দিন লবটুলিয়া জঙ্গলেই ছিলাম।

বিভূতিভূষণ, আপনাকে সেলাম!
Profile Image for Amanna Nawshin.
191 reviews57 followers
April 3, 2018
এই উপান্যাসটাকে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাসগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বললে কি একটু বাড়াবাড়ি হবে!? হলেও যে না বলে পারছিনা! অরণ্যের প্রেমে পরে অরণ্যের যে সুন্দর একটা ছবি লেখক এঁকে দিয়েছেন তা মনের ভিতর গেঁথে থাকবে অনেকদিন! আর বন-জঙ্গলের মানুষগুলো!? কি সহজ-সরল তাদের জীবন, কত অল্পতে তারা সুখী! প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতেও তাদের আতিথেয়তা আর কৃতজ্ঞতাবোধের কোন কমতি নেই। তারা যেনো অরণ্যের ভেতর অরণ্যের উদারতাকে পুঁজি করেই বেঁচে আছে! শেষ অংশে এসে লেখকের বিদায়বেলাটা ছিলো সত্যি কষ্টের, মনে হচ্ছিলো সুদীর্ঘ সময় আমিই ওদের সাথে থেকে এখন বিদায় নিচ্ছি!
Profile Image for ফারহানা জাহান.
Author 5 books57 followers
August 2, 2021

কদিন আগে বিভূতিবাবুর সুন্দরবনে সাত বৎসর পড়ে হ্যাংরি অবস্থায় রিভিউ দেওয়ার মতো ভুল এবার আর করছি না! :')
তবে একখানা জীবনশিক্ষা এই ঘটনা থেকে আমি পেয়েছি। লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে বিভূতিবাবুর লেখা পড়ার সুদিক-মূলধনদিক দুইটাই আছে! পড়তে নিলে আত্মা যেভাবে বন-জঙ্গলে ঘুরে-বেড়িয়ে আসে, ঠিক তেমনি ভাবে অপারগ শরীরটার মাঝে বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায়। শেষতক দুয়ে মিলেমিশে হতাশা-আক্ষেপ আর বিরক্তি মিলে তৎক্ষণাৎ অনুভূতির যে প্রলয়ঙ্কারী স্রোত তৈরী হয়, সে স্রোতে গা ভাসিয়ে রিভিউ লিখতে যাওয়াটা মোটেও উচিৎ নয়। আমার জন্য অন্তত! ��াই হোক।


দ্যা অফিস দেখেছেন? দেখে থাকলে টোবি ফ্ল্যান্ডারসনের কথা মনে আছে? ঐযে এইচআরের দায়িত্বে থাকা লোকটা, দেখলেই ঘুম-ঘুম লাগে, জীবনে যার একটামাত্রই উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল—দ্যা স্ট্র্যাঙলার-এর বিচারের ট্রায়ালে থাকা! না দেখে থাকলেও এইযে এই দফায় জেনে গেলেন। আমার জীবনও আসলে এমনই। জীবনে ‚ট্যুর’ দিয়েছিলাম একটাই, আর সেই একখান ট্যুরের গল্প ভেঙেই যে বাকি জীবন পার করে দিতে হবে এই ব্যাপারেও আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তো সেই ট্যুরের সুবাদেই গিয়েছিলাম কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে। নৌকা ছাড়ামাত্র সামনের দিকের একটা পাটাতনে গিয়ে আস্তানা গেঁড়ে ফেলি। পাদুটো পানিতে নামিয়ে দিয়ে সকাল বেলার উঠতি রোদের নিচে বসে, হ্রদের বাতাস খেতে খেতে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর পানির গভীরতা বাড়তে থাকে, ফ্যানাওঠা পানি পরিষ্কার হয়ে আসে, নৌকাটা আরেকটুখানি বেশি ডুবে যায়, সাথে আমারও পাদুটোও আরেকটু ভালোমতো ভেজার সুযোগ পায়। জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা সকাল উপভোগ করছিলাম। চারদিকে পানি, থেকে থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে দূরে। আশেপাশে থেকে ভেসে আসছে পানি-কেটে নৌকা চলার শব্দ, বাতাসের শব্দ, পাখি ওড়ার শব্দ! সকাল ক্ষয়ে যাচ্ছে আসন্ন দুপুর-রোদের তেজে। সেসব নিয়ে আমাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মনের আনন্দে বাতাসের সাথে নিজেদের বেসুরো কণ্ঠস্বরে গাওয়া গান ভাসিয়ে দিচ্ছি! আহা! কী সুন্দর একটা দিন! কিন্তু সুখ বরাবরের মতোই খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কোথা থেকে আরেকটা নৌকা আমাদের সাথ ধরে ফেললো। সেখানে থেকে ভেসে আসা ভারতীয় সিনেমার উদ্ভট-উদ্ভট আইটেম গানের জোরে মনে হলো বাতাসও জায়গাটা থেকে পালিয়ে গেল। কোথায় আমার বাতাসের সুর, কোথায় আমার জলতরঙ্গের ছন্দ আর কোথায় আমার অরণ্যানীর নির্মলতা! তারপর যেয়ে শুভলং ঝর্ণায় নামার পরের বর্ণনা আশা করি ও জায়গায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যাওয়া কোনো মানুষকে বলতে হবে না! যেজন্যে এত কথা—সেই সময়ে বিভূতিবাবুও ঠিক এমন কিছুই উপলব্ধি করেছেন।

‟কিন্তু প্রকৃতির এই অত্যাশ্চর্য সৌন্দর্যময় রাজ্যে দৈবাৎ যদি আসিয়াই পড়িয়াছে, দেখিবার চোখ নাই আদৌ।„

আরণ্যক আসলে কোনো বই নয়—এটা পুরোটাই একটা অভিজ্ঞতা, একটা জার্নি, একটা অনুভূতি! বইতে দেশের নৈসর্গিক যে সৌন্দর্যের বর্ণনা লেখক দিয়েছেন, তাতে করে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ কি আসলেই আমাদের উপমহাদেশ? কখনো মনে হয় এসবের সাথে আমাদের চেনা পৃথিবীর কোনো যোগ নেই; এ অন্য কোনো পৃথিবী, অন্য কোনো জগৎ! কিংবা আমার দেখা জগতটা বড্ড বেশি ছোটো তাই! কোনোদিন আমার এসব কথা শুনে কেউ হয়তো বলেও বসবে—

“ভানুমতীর পৃথিবী কতটুকু জানিতে বড় ইচ্ছা হইল।”

কী করে আর জানবো? আমি তো একঝলকও দেখতে পাইনি যা কথক পুরো তিনটে বছরে আস্বাদন করেছেন!
“মাইলের পর মাইল ব্যাপিয়া কাশ ও ঝাউবন বর্ষার জলে ভিজিতেছে, আমার আপিসঘরের বারান্দায় চেয়ার পাতিয়া বসিয়া দেখিতাম, আমার সামনে কাশবনের মধ্যে একটা বনঝাউয়ের ডালে একটা সঙ্গীহারা ঘুঘু বসিয়া অঝোরে ভিজিতেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একভাবেই বসিয়া আছে-মাঝে মাঝে পালক উষ্কখুষ্ক করিয়া ঝুলাইয়া বৃষ্টির জল আটকাইবার চেষ্টা করে, কখনো এমনিই বসিয়া থাকে।
এমন দিনে আপিসঘরে বসিয়া দিন কাটানো আমার পক্ষে কিন্তু অসম্ভব হইয়া উঠিত। ঘোড়ায় জিন কষিয়া বর্ষাতি চাপাইয়া বাহির হইয়া পড়িতাম। সে কি মুক্তি! কি উদ্দাম জীবনানন্দ! আর, কি অপরূপ সবুজের সমুদ্র চারিদিকে-বর্ষার জলে নবীন, সতেজ, ঘনসবুজ কাশের বন গজাইয়া উঠিয়াছে-যতদূর দৃষ্টি চলে, এদিকে নাঢ়া-বইহারের সীমানা ওদিকে মোহনপুরা অরণ্যের অস্পষ্ট নীল সীমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত থৈ থৈ করিতেছে-এই সবুজের সমুদ্র-বর্ষাসজল হাওয়ায় মেঘকজ্জল আকাশের নিচে এই দীর্ঘ মরকতশ্যাম তৃণভূমির মাথায় ঢেউ খেলিয়া যাইতেছে-আমি যেন একা এ অকূল সমুদ্রের নাবিক-কোন্ রহস্যময় স্বপ্নবন্দরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়াছি।
এই বিস্তৃত মেঘচ্ছায়াশ্যামল মুক্ত তৃণভূমির মধ্যে ঘোড়া ছুটাইয়া মাইলের পর মাইল যাইতাম-কখনো সরস্বতীকুণ্ডীর বনের মধ্যে ঢুকিয়া দেখিয়াছি-প্রকৃতির এই অপূর্ব নিভৃত সৌন্দর্যভূমি যুগলপ্রসাদের স্বহস্তে রোপিত নানাজাতীয় বন্য ফুলে ও লতায় সজ্জিত হইয়া আরো সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে সরস্বতী হ্রদ ও তাহার তীরবর্তী বনানীর মতো সৌন্দর্যভূমি খুব বেশি নাই-এ নিঃসন্দেহে বলতে পারি। হ্রদের ধারে রেড ক্যাম্পিয়নের মেলা বসিয়াছে এই বর্ষাকালে-হ্রদের জলের ধারের নিকট। জলজ ওয়াটারক্রোফটের বড় বড় নীলাভ সাদা ফুলে ভরিয়া আছে। যুগলপ্রসাদ সেদিনও কি একটা বন্যলতা আনিয়া লাগাইয়া গিয়াছে জানি। সে আজমাবাদ কাছারিতে মুহুরীর কাজ করে বটে, কিন্তু তাহার মন পড়িয়া থাকে সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবর্তী লতাবিতানে ও বন্যপুষ্পের কুঞ্জে।”

নৈসর্গ তাকে নিজস্বরূপ নিয়ে ভাবায়, জীববৈচিত্র নিয়ে ভাবায়, মানসপটের অন্ধকারাচ্ছন্ন কোটর থেকে ঘুরিয়ে আনে।

“মানুষে কি চায়- উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ক্ষইয়া ভোঁতা- এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো-রস ঢুকিতে পায় না।”

“যেন এই নিস্তব্ধ, নির্জন রাত্রে দেবতারা নক্ষত্ররাজির মধ্যে সৃষ্টির কল্পনায় বিভোর, যে কল্পনায় দূর ভবিষ্যতে নব নব বিশ্বের আবির্ভাব, নব নব সৌন্দর্যের জন্ম, নানা নব প্রাণের বিকাশ বীজরূপে নিহিত। শুধু যে-আত্মা নিরলস অবকাশ যাপন করে জ্ঞানের আকুল পিপাসায়, যার প্রাণ বিশ্বের বিরাটত্ব ও ক্ষুদ্রত্বের সম্বন্ধে সচেতন আনন্দে উল্লসিত-জন্মজন্মান্তরের পথ বাহিয়া দূর যাত্রার আশায় যার ক্ষুদ্র তুচ্ছ বর্তমানের দুঃখ-শোক বিন্দুবৎ মিলাইয়া গিয়াছে…সে-ই তাঁদের সে রহস্যরূপ দেখিতে পায়। নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ…
এভারেস্ট শিখরে উঠিয়া যাহারা তুষারপ্রবাহে ও ঝঞ্ঝায় প্রাণ দিয়াছিল, তাহারা বিশ্বদেবতার এই বিরাট রূপকে প্রত্যক্ষ করিয়াছে…কিংবা কলম্বাস যখন আজোরেস্ দ্বীপের উপকূলে দিনের পর দিন সমুদ্রবাহিত কাষ্ঠখণ্ডে মহাসমুদ্রপারের অজানা মহাদেশের বার্তা জানিতে চাহিয়াছিলেন-তখন বিশ্বের এই লীলাশক্তি তাঁর কাছে ধরা দিয়াছিল-ঘরে বসিয়া তামাক টানিয়া প্রতিবেশীর কন্যার বিবাহ ও ধোপা-নাপিত করিয়া যাহারা আসিতেছে-তাহাদের কর্ম নয় ইহার স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করা।”

মানুষের প্রকৃতির প্রতি করা অন্যায় আর ধ্বংসযজ্ঞের হতাশাময় আখ্যানের বিপরীতে বিভূতিবাবু তার স্বভাবসুলভ আশার ছোঁয়াও রেখেছেন। যুগলপ্রসাদ চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা তবু একটুখানি আশা খুঁজে নিতে পারি। ধ্বংসলীলার মধ্যেও কেউ না কেউ রক্ষাকর্তাও থাকবে নিশ্চয়!

“এই জন্মান্ধ মানুষের দেশে একজন যুগলপ্রসাদ কি করিয়া জন্মিয়াছিল জানি না—শুধু তাহারই মুখের দিকে চাহিয়া আজও সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী অক্ষুন্ন রাখিয়াছি।”

যা দেখছি এ উপন্যাস নিয়ে বলতে গেলে রাত শেষ করে ভোর করে ফেলবো আমি! অথচ কতজনের কথাই তো বাদ পড়ে গেল! ভানুমতী আর তার পাহাড়ি রাজত্ব, অভাগিনী মঞ্চী আর তার হিংলাজের মালাছড়া, দুঃখিনী বাঙালিবধূ কুন্তার জীবন সংগ্রাম, রাজু পাঁড়ের অনাড়ম্বর প্রেমকাহিনি, মটুকনাথ আর তার টোল, শ্বাপদসংকুল মাঠের মাঝে নকছেদীর নতুন সংসার, নাচুনে ধাতুরিয়া আর তার শিল্পানুরাগ, ধাওতাল সাহু মহাজন আর তার অগাধ বিশ্বাস, সুরতিয়া আর তার গুড়গুড়ি, গীরিধারিলালসহ আরো কতজনের গল্পই তো ছাড়া পড়ে গেল! সে থাক। সেসব বলতে নিলে দেবতা টাঁড়বারো এসে আমায় হাত দেখিয়ে থামতে বলবে নির্ঘাত!


বইটার অনেক অনেক অনেক ভালো রিভিউ আছে। রিভিউ লিখতেও চাইনি। কিছু আবেগ মস্তিষ্কের অদৃশ্য কালির পরিবর্তে দৃশ্যমান হরফে দেখার ইচ্ছে হলো বলেই এত কথা লিখলাম। বইটা শেষ হওয়ার পর আমারও উদাস লেগেছে খুব। মনে হয়েছে প্রকৃতির সংস্পর্শে আবেগতাড়িত হয়ে ভানুমতির মতো হয়তো আমিও কোনোদিন বলে ফেলবো—

“বাবুজী, কল্কাতা থেকে আমার জন্যে একখানা আয়না এনে দেবেন? আমার আয়না একখানা ছিল, অনেক দিন ভেঙ্গে গিয়েছে।”

Happy reading!
Profile Image for Nabila Mushtarin.
55 reviews
March 1, 2023
সুন্দর বিবরণ প্রকৃতির। প্রধান চরিত্রের ক্ষণে ক্ষণে আর্য-অনার্য ভেদাভেদ ভাল লাগেনি, তবে পার্শ্ব চরিত্রের সকলেই মনে রাখার মত। কিশোর নাচিয়ে ধাতুরিয়ার পেটে-ভাতে জীবনে নতুন নাচ শিখে নাচ দেখানোতেই সন্তুষ্টি, অন্যদিকে যুগলপ্রসাদ ঘন জঙ্গলে বাহারি ফুলের বীজ রোপণ করে চলছে আপন খেয়ালে। এই "উন্নতি করিতে গিয়া আনন্দ হারাইয়া ফেলা, মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ফেলা" জীবনে এরকম বই পড়ে মনে হয় জীবন যদি ধাতুরিয়া বা যুগলপ্রসাদের মত সরল ও আনন্দময় হত, মন্দ হত না।
Profile Image for Jahid Hasan.
135 reviews160 followers
April 16, 2017
আমি জন্মেছিলাম বৃক্ষের নিবিড় ছায়ার ভেতরে। আমার বেড়ে ওঠা গাছের পাতা ঝড়ার শব্দ শুনতে শুনতে। কখনো কড়ই-শিমুলের গন্ধ, কখনোবা বাঁশের গায়ে ঠোকাঠুকির মধুর শব্দ শুনে শুনে আমি অরণ্যের স্বাদ নিয়েছি।
তাই যখন 'আরণ্যকে'র গল্প করতে যাচ্ছি-- সেটা খানিকটা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়লে আমি শুরুতেই ক্ষমাপ্রার্থি।

আমাদের এই গল্পটি শুরু হয় ১৯২৪ সালের শুরুর দিকে। সেসময় লেখক বিভূতিভূষণ ভাগলপুরে গিয়েছিলেন এক জমিদারি এস্টেটের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে। সেখানকার বিস্তৃত অরণ্যভূমি তাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে ফেলে। তাঁর পরিচয় ঘটে অদ্ভুত অদ্ভুত সব মানুষের সঙ্গে। তিনি উপলব্ধি করেন সেখানকার বন্য প্রকৃতিকে। যেখানে ঘন নীল বনভূমির গায়ে রাত নেমে এলে রূপকথার গল্পের মতো পরীর দল হাত ধরাধরি করে নাচে-গায়।

আরণ্যক হাতে তুলে নেবার সময় আমার মনে হয়েছিল সামান্য বন-বনানী নিয়ে আর কতোক্ষণ গল্প করা যায়! লেখক নিশ্চয়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাধারণ গল্পই ভিন্ন রূপে শোনাবেন।
কিন্তু না! লেখক আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে গহীন অরণ্যের বিভিন্ন রূপকে সামনে তুলে আনলেন। সেখানে অরণ্য কেবল সাধারণ বনভূমি নয়। অরণ্য সেখানে আদিম, অপূর্ব এবং রহস্যঘন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরণ্যক রচনা করেন ১৯৩৭-৩৯ সাল পর‍্যন্ত। আরণ্যকে তিনি তুলে আনেন ভাগলপুরের প্রায় আট-দশ হাজার বিঘা জুড়ে বিস্তৃত সেই জঙ্গলমহাল। যার ভেতর সামান্য বনফুল থেকে শুরু করে আছে অপরিচিত ছড়ানো- ছিটানো ঝোপঝাড় এবং কাশবন। রয়েছে কুন্তা, মঞ্চী, ভানুমতী থেকে ধাতুরিয়া এবং ধাওতাল সাহুর মতো অসংখ্য মানুষ।

আরণ্যকের পাতা উল্টাতে উল্টাতে আমি চলে যাই অরণ্যের আরো গহীনে। কল্পনায় গাছের মনোরম আড়াল বেছে নিয়ে ধর্মপ্রাণ এবং দার্শনিক রাজু পাঁড়ের মতো আমারও ভাবতে ভালো লাগে--- এই বন্য প্রকৃতি বড় সুন্দর। ফুলের দল কতকাল ধরে ফুটছে আর পাখি ডাকছে, বাতাসের সঙ্গে মিলে দেবতারা পৃথিবীর মাটিতে পা দেন এখানে।..এখানে দা-কুড়াল হাতে নিলেই দেবতারা এসে সেটা হাত থেকে কেড়ে নেন-- কানে কানে চুপি চুপি এমন কথা বলেন, যাতে বিষয়সম্পত্তি থেকে মন বহুদূর চলে যায়..
Profile Image for Zahidul.
450 reviews93 followers
January 16, 2022
বাংলা সাহিত্যে থ্রিলার ঘরানার সাহিত্য বেশি পড়া হলেও গতবছর খেয়াল করে দেখলাম আমার তথাকথিত চিরায়ত বাংলা সাহিত্য পড়ার হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। তাই এ বছর চিন্তা করেছি থ্রিলার, সায়েন্স ফিকশন, হরর, ফ্যান্টাসি ইত্যাদি সাহিত্যের সাথে সাথে যতগুলো পারি এ ধরণের সাহিত্য পড়বো। আরণ্যক দিয়ে শুরু করলাম এই পথচলা।

এই বইটা পড়া শুরু করার পর থেকেই মনে হয়েছে ভাগলপুরেই আছি আমি। বনাঞ্চল থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার এত চমৎকার বর্ণনাশৈলী আমি বাংলা সাহিত্যে খুব কম বইতেই পেয়েছি। আর বইটা শেষ করার পরে এক মুগ্ধতার ভেতরে রয়েছি, কখনো এই মুগ্ধতা কেটে গেলে বইটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার চেষ্টা করবো।
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
September 2, 2025
বেশ লম্বা একটা সময় নিয়ে বইটা পড়লাম, বইটা অনেক ভালো লেগেছে। দিন পাল্টায় মানুষ দিন দিন প্রকৃতির থেকে দূরে চলে আসে কিন্তু প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা অবান্তর । কেন যেন কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু ইচ্ছে করছে অল্পদের জন্য হলেও প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে।
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews79 followers
June 14, 2023
প্রকৃতির কোলেই আমার জন্ম। সেখানেই বেড়ে উঠা। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে প্রায়ই বন-বাদারে ঘুরে বেড়াতাম। নানান গাছের ফল, বিভিন্ন পাখির বাসার সন্ধানে কেটে যেত অসংখ্য গুমোট দুপুর। সেই আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। আমি অরণ্যকে ছেড়ে আসলাম বটে, কিন্তু অরণ্যের মোহ আমায় ছাড়ল কই?

"আসলে আমি এই নাগরিক যন্ত্রজীবনের অর্থহীন প্রতিযোগিতা এবং অর্থহীন কোলাহলের কেউ নই; একদিন গ্রাম থেকে এই যক্ষপুরীর গহবরে এসে ঢুকে পড়েছিলাম। তারপর আর বেরোতেই পারলাম না। প্রতিমুহূর্তেই ভেতরে ভেতরে তাই চাপ চাপ একটা অন্ধকার যন্ত্রণা অনুভব করি। কোথায় গেলো আমার সেই ইছামতী নদী? বাদুড়িয়া শ্মশান কিংবা ভাঙা ভাঙা জীর্ণ ধ্বংসস্তূপ? যার ভেতর একটা শব্দহীন নীরবতা ছিল আর নীরবতার ভেতর কলকা ও কল্কে আঁকতে আঁকতে আমি শুধু কথা বলেছিলাম আমার সঙ্গেই কিংবা ফুটো দেয়ালের ঝুলে থাকা টিকটিকি মাকড়সার সঙ্গে। কোথায় গেলো তারা সব কোথায় গেল?"
-(জহর সেন মজুমদার)


শহরে আসা হয়েছিল মূলত পড়াশোনার জন্য। আরো স্পষ্ট করে বললে পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকুরী। যার মাধ্যমে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

"মানুষে কি চায়- উন্নতি না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগে মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ইহা ভোতা- এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না। জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন।"

আরণ্যক আমার ক্ষুদ্র জীবনে পড়া বইয়ের মধ্যে সেরা বইয়ের তালিকাতেই থাকবে। একদম শুরু থেকেই মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। পড়লেই শেষ হয়ে যাবে এমন একটা ভাবনা মাথায় জেকে বসেছিল। এরকম পৃষ্ঠা বাচিয়ে শেষ কবে পড়েছি মনে পড়েনা। আরও কয়েকবার অরণ্যানী ও তার মায়াময় চরিত্রগুলোর মাঝে হারাতে পারলে মন্দ হয়না।

"অমন মুক্�� আকাশ, অমন নিস্তব্ধতা, অমন নির্জনতা, অমন দিগন্ত-বিসর্পিত বনানীর মধ্যেই শুধু অমনতর রূপলোক ফুটিয়া উঠে। জীবনে একবারও সে জ্যোৎস্নারাত্রি দেখা উচিত; যে না দেখিয়াছে, ভগবানের সৃষ্টির এক অপূর্ব রূপ তাঁহার নিকট চির- অপরিচিত রহিয়া গেল।"
Profile Image for Rifat.
18 reviews4 followers
November 3, 2014
"রাজু বলিল- হুজুর, আপনি চলে গেলে লবটুলিয়া উদাস হয়ে যাবে।
প্রসংগক্রমে বলি এদেশে 'উদাস' শব্দের ব্যবহার এবং উহার অর্থের ব্যাপকতা অত্যন্ত বেশি। মকাই ভাজা খাইতে খারাপ লাগিলে বলে, 'ভাজা উদাস লাগছে'। আমার সম্পর্কে কি অর্থে উহা ব্যবহৃত হইল ঠিক বলিতে পারিবনা।"

সত্যজিত এই বই নিয়ে মুভি বানাইল না কেন?
Profile Image for Israt Jahan.
64 reviews4 followers
December 15, 2022
প্রকৃতি প্রেম থাকলে পড়ে দেখতে পারো, মনে ধরে যাবে।
Profile Image for Shahab Mosharraf.
84 reviews5 followers
October 3, 2020
শুনেছিলাম বইটা প্রকৃতিপ্রেম নিয়ে কিন্তু আমার কাছে সবকিছু ছাপিয়ে উঠলো এই সরল সাধারণ মানুষগুলোকে এতটা সুন্দর ভাবে চিত্রিত করা। উপন্যাসে লেখক যেভাবে একের পর এক অনিন্দ্যসুন্দর চরিত্র পরিচয় করিয়ে দিলেন, সরল মনের মানুষগুলোকে এতটা সুন্দর চোখ নিয়ে দেখা শেখালেন, তা দেশের একেবারে সাধারণ মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসা হু হু করে বাড়িয়ে দেবার মত(সেই সাথে ভাতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও! আজকের পর আর কোনদিন মনে হয় ভাতকে অসম্মান করা চলবে না)।
Profile Image for Towkir Ahmmed Rigan.
109 reviews18 followers
July 18, 2016
প্রথমে একটা সত্য কথা স্বীকার করে শুরু করি! আমি আমার জীবনে আগে কখনো এই ধরনের উপন্যাস পড়িনি! এমন একটা উপন্যাস যে ভালো লাগতে পারে এইরকম ধারনাও ছিল না! এখন ধারণা বদলে গেছে! শুধু ভালো লেগেছে বললে অন্যায় হবে! এতটাই ভালো লেগেছে যে বইটা অনায়াসেই আমার পড়া সব থেকে ভালো লাগা প্রথম দশটা উপন্যাসের লিস্টে চলে যাবে! আমার মনে হয় সকল বাঙ্গালী পাঠকদের এই বইটা একবারের জন্য হলেও পড়া উচিৎ! ধন্যবাদ!
Profile Image for Samiha Kamal.
121 reviews118 followers
August 19, 2022
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি।
এই বইটা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। আমি সবাইকে আহবান জানাবো এই বইটা পড়ুন। প্রকৃতির সাথে মানুষের আত্নার যে সংযোগ তা আরণ্যকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে,বিশ্বসাহিত্যের ভাণ্ডারেও এমন বই খুব বেশি নেই।
হ্যাপি রিডিং। 💙
Profile Image for Shom Biswas.
Author 1 book49 followers
May 5, 2021
I have this friend. He has been frighteningly successful professionally, so much so that it would totally be BIRGing of me to first-name him here. We have kept in reasonably-regular touch over the years - dispelling the idea that super-successful professionals only keep in touch with others of their ilk, and not middle-management nobodies like me. We perhaps speak even more regularly these days, now that we have toppled over to the 40s.

We often message each other on weekday evenings, share articles we have read and movie or book recommendations. Children, family, work - regular stuff. The ‘what-next’ and ‘why-at-all’ discussions are rare, but not exactly uncommon. None of this is out of the ordinary, he is a nice guy, an old friend, and I’d like to believe we trust each other.

My friend and I have both been trained to be driven towards professional success - naturally, he is academically superior, and also possesses more professional hustle than me. Hustling, you know, is a natural state of being for people like us - middle-class, mathematically-inclined financially-ambitious sons of educated professional folks. And who hasn’t noticed that our society inordinately values people who project an image of drive and hustle. Even a few years ago, say at 35, questions like ‘why should I hustle’ never did occur to him, nor to me.

It does now. We have children. His boys are slightly older than mine. I feel it is normal to have questions like "do we have enough money to afford our children to have any career they choose; or any subject they choose to study?" - with the obvious caveat of having the standard of living they have been used to (or) have discussions on the unexpected prevalence of the born-rich or upper-middle class in almost any field where success does not equate to huge financial rewards or where success is highly volatile or takes years to materialize. Because eventually, that little person that is my flesh and blood, is all that matters.

And Aranyak. I was reading Aranyak - I read this piece to my friend - he is not Bengali but has a working understanding of the language. I had to translate parts of it.

মানুষ কি চায়? উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে? আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারাইয়াছে। অতিরিক্ত ভোগের মনোবৃত্তির ধার ক্ষইয়া ক্ষইয়া ভোঁতা - এখন আর কিছুতেই তেমন আনন্দ পায় না, জীবন তাহাদের নিকট একঘেয়ে, একরঙা, অর্থহীন। মন শান-বাঁধানো রস ঢুকিতে পায় না।

It resonated. As it would for early-40s people with a bagful of existential questions, but rarely the courage to spell them out. Life is good. And as ঈশ্বরী পাটনী has said when asking of that one wish from the Goddess, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে" - "May there be milk and rice for my child".

May there be.

Reader, do read Aranyak. The translation is good, I gifted a copy to a different friend-couple, and they loved it. I recommend this book with all my heart.
Profile Image for Jamimeeh.
51 reviews16 followers
June 16, 2020
সিলেট ছেড়ে এসেছি প্রায় চার মাস আগে। জাদুর শহরের ইট-কাঠের ঠাঁট-বাট চোখ ভোলানোর আগেই মহামারী ঘরবন্দি করে দিয়েছে, তাই বোধহয় চা বাগান আর বিরাট আকাশের মায়া চোখে মনে এখনো লেগে আছে পুরোদমে। জাদুর শহরে আবেগ অনুভূতি মূল্যহীন, রূড়তা আর কাঠিন্যের জয়জয়কার এখানে সব জায়গায়। আমি গেঁয়ো সংবেদনশীল মানুষ, মানিয়ে নিতে পারি না। এমন খুব হৃদয়হীন এক রাতে এই বই নিয়ে বসেছিলাম একটু আশ্রয়ের আশায়। বইয়ের বর্ণনা অপ্রাসঙ্গিক, এই বই পড়েন নি এমন কেউ নেই‌। আমি বরং আমার বোঝার জায়গাটা থেকে একটু বলি।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সিলেটে সবুজের মাঝে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতাটুকু পাওয়া। ভার্সিটির স্মৃতি বলতে আমি বুঝি- একদম সকাল সকাল বেলা রাগিব রাবেয়ার মাঝে দিয়ে যে রাস্তাটা মালনিছড়ায় শেষ হয়, সেখানে হারিয়ে যাওয়া, অথবা সিকৃবির থেকে একটু সামনে এগিয়ে ইকোপার্কের একলা দুঃখি বেঞ্চিতে বসে "যখন নীরবে দূরে" শোনা। আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসার ঠিক আগে আগে এয়ারপোর্ট রোডে একলা হেঁটে বেড়ানো, শেষ বিকেলে সূর্য যখন ডুবি ডুবি- তখন তেমুখি ব্রীজটার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভাবা সূর্যটা কেমন হঠাৎ ঘুমিয়ে গেল!

আরণ্যকের লবটুলিয়া, ফুলকিয়া বইহারের বর্ণনা আমার একদম নিজস্ব এইসব ছেঁড়াখোড়া স্মৃতির পাতাগুলো চোখের সামনে তুলে ধরেছে বারবার। যে মুক্তির স্বাদ লেখক পেয়েছিলেন সরস্বতী কুণ্ডের নির্জনতায়, আর কেউ জানুক না জানুক অন্তত আমি জানি- এই একই মুক্তি, একই স্বাধীনতা কোন এক জীবনে আমি চেখে দেখেছি। সেসব সময় এখন স্বপ্ন মনে হয়। আরণ্যক আমায় আমার ভুলে যাওয়া স্বপ্ন মনে করিয়ে দিয়েছে। এই স্বপ্ন চোখে নিয়ে যান্ত্রিক শহরে আরো কিছু দিন টিকে থাকার চেষ্টা করাই যায়।
Profile Image for Tasnima Oishee.
140 reviews26 followers
November 7, 2020
আমার মতোন যারা একটু "গর্তজীবি" মানুষ যারা, তাদের নিজের চোখে দেখা হয় পৃথিবীর খুব অল্পই। বাকিটা তাদের কল্পনা করে নিতে হয়, কিংবা সাহায্য নিতে হয় অন্য কোনো চোখের।

বিভূতিভূষণের বর্ণনায় আরণ্যক পড়ে আমার আবার একবার প্রকৃতি কাছাকাছি থাকবার সাধ হলো। অসংখ্যবার মনে হলো, ইশ আমার যদি এমন একটা জীবন হতো!

সত্যি সত্যিই যদি সত্যচরণের মতো একদিন সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে পারতাম প্রকৃতির আদি রূপের কাছে, তাহলে বোধহয় মন্দ হতো না। আবার কে জানে, চলে গেলে হয়তো বাইরে ঘুরতে গেলে যেমন বাসা মিস করি, বিছানায় শুয়ে এক কাপ ধোয়া উঠা গরম চা ছাড়া দিন শুরু করতে পারি না- তার জন্য হাঁপিয়ে উঠতাম। আমি নিজেই নিশ্চিত না। লেখকের চোখে এই তো বেশ ক'দিন ঘুরে আসা হলো অন্য একটা জগতে, মিছিমিছি আর কষ্ট করে বন-জঙ্গল দেখতে যাওয়া কেন?

আচ্ছা, আরণ্যকের কথা বলতে এসে এতো অপ্রয়োজনীয় অপ্রাসঙ্গিক কথা কেন বলছি? বলছি কারণ আমার মনে হয় এই বইটা পড়ে নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। বই ভালোবাসে যারা, তাদের পছন্দের তালিকায় এইটা থাকেই।

আমার একটা ইচ্ছে ছিলো সবসময়, একটা সময় আমি পাহাড়ের কাছে একটা বাড়ি বানাবো। মনুষ্যহীন নির্জন একটা জায়গায় একটা সুন্দর বাসা- ভেবেই একটা মন খারাপের দিন শুরু করতে পারতাম আমি। যদি কোনোদিন এই স্বপ্নটা সত্যি হয়েই যায়, তাহলে আমি জানি, এই বইটা পড়তে সেদিন আরো অন্যরকম লাগবে❤️

বইঃ আরণ্যক
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
পার্সোনাল রেটিংঃ ৯/১০
Profile Image for Tahsin Ahmed.
27 reviews1 follower
March 30, 2022
আমি মেলা অলস আর লেদাইনা প্রকৃতির মানুষ, কিন্তু বইটা পড়তাছিলাম আর মনে হইতাছিলো পাহাড়ে সত্যি যাওয়া যায়, ছাতিম গাছের ফুলের গন্ধ নেয়া যায়,
মানুষের জীবন টা আর কত টুকুই, শেষ বয়সে স্মৃতির খোড়াক কিছু রাখা চাই।
Displaying 1 - 30 of 573 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.